‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামের ভূঁইফোঁর একটি সংগঠন কর্তৃক দাড়ি রাখা ও টাখনুর ওপর কাপড় পরিধানসহ ইসলামের বেশ কিছু মৌলিক বিধানকে ‘জঙ্গিবাদের (সন্ত্রাসবাদ)’ লক্ষণ বা আলামত হিসেবে চিহ্নিত করে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালিয়েছে সম্প্রতি।
‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’! বাহ, কি সুন্দর নাম! সম্ভবত: তাদের এই টাইপের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার কারণেই, এবারই প্রথম জানলাম এই নামের কোনো সংগঠনের কথা! তবে নামের সাথে কাজের মিল খুঁজে পেলাম না তেমন একটা! নামের সাথে 'সম্প্রীতি' শব্দটি জুড়ে দিলেও আসলে কি এরা 'সম্প্রীতি' পক্ষের কেউ? প্রেম-প্রীতি-সম্প্রীতির বন্ধন রচনা করেন এরা? না কি হিংসা-ঘৃণা-বিদ্বেষ উস্কে দেয়ার পায়তারায় লিপ্ত? আচ্ছা, কোনো সংগঠনকে 'উগ্রবাদী সংগঠন' বলার তরিকাটা কি? কোন্ কোন্ কাজ করলে সেই সংগঠনকে উগ্রবাদি বলা যায়? আমাদের সমাজের সুশীল(!) মহোদয়গনের নিকট জানতে ইচ্ছে হয়, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের মরমে আঘাত হানা এমন হিংসাত্মক প্রচারণা চালানোর কারণে এই সংগঠনটিকে উগ্রবাদী বলা জায়েজ হবে?
গত ১২ মে রোববার দেশের প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে সন্দেহভাজন ‘জঙ্গি সদস্য’ শনাক্তকরণের ২৩ টি উপায় জানিয়ে প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সংগঠনটির আহবায়ক অভিনেতা হিসেবে পরিচিত জনৈক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনটিতে সন্দেহভাজন ‘জঙ্গি’ চেনার যে বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে- ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশুনা বৃদ্ধি, ধর্মীয় উপদেশমূলক কথাবার্তা বলা, ইসলামী শাসনব্যবস্থা, শরিয়া আইনে আগ্রহ প্রকাশ করা, ধর্মচর্চার প্রতি ঝোঁক, দাড়ি রাখা ও টাখনুর ওপরে কাপড় পরিধানসহ কিছু মৌলিক ইসলামী অনুশাসনের বিষয়।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিনয়ের সাথে বলতে চাই- জনাব, জঙ্গি শনাক্ত করতে গিয়ে আপনি মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছেন! এটাকে কি আপনার সাহস বলবো? না কি অজ্ঞতা? না কি বুঝে শুনেই এ আপনাদের সীমালঙ্ঘনের আস্পর্ধা?
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ মূলোৎপাটনের যে কোনো পদক্ষেপকে আমরা সর্বদাই স্বাগত জানাই। কিন্তু জঙ্গি শনাক্ত করার বাহানায় আল্লাহ পাকের বিধান এবং রাসুলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতকে জঙ্গিবাদের লক্ষন এবং আলামত বলার ধৃষ্টতা আপনাকে কে দিয়েছে? ইসলাম ধর্মের বিধি-বিধান নিয়ে ইঙ্গিত, কটাক্ষ, উপহাস করার কোনো অধিকার আপনার নেই! কারোরই থাকা উচিত নয়। অন্য যে কোনো ধর্মের ব্যাপারেও এমন গর্হিত মন্তব্য আমাদের নিকট রীতিমত অপরাধ। ইসলাম এবং মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে আপনার উস্কানিমূলক এ বক্তব্য দেশের প্রচলিত আইনেরও স্পষ্ট লঙ্ঘন।
পীযূষ, আপনি হয়তো জানেন না। এদেশের মুসলমানদের ধর্মের প্রতি গভীর বিশ্বাস সম্ভবত: আপনার এখনও অজানা। আপনি অজ্ঞতাবশত: সম্ভবত: এমন আস্পর্ধা দেখিয়েছেন। আস্ফালনে প্রবৃত্ত হয়েছেন।
পীযূষ, আপনি হয়তো জানেন না, আমাদের প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত পালনকারীর সংখ্যা এ দেশে লক্ষ লক্ষ নয়, বরং কোটি কোটি। কোটি কোটি মুসলমান নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবেসে তাঁর সুন্নাতকে মুহাব্বত করে দাড়ি রাখেন, আপনি তাহলে বলতে চাচ্ছেন, এই কোটি কোটি মুসলমান সকলেই জঙ্গি? আপনার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করলে আজ যদি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতেন, তাকেও তো তাহলে জঙ্গির তকমা পেতে হতো! কবিগুরুর ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে, কাউকে জঙ্গি ঠাওরানোর আপনাদের নতুন এইসব লক্ষন আর আলামত প্রত্যক্ষ করার পূর্বেই তিনি ধরাধাম ত্যাগ করে বেঁচে গেছেন!
পুরুষের জন্য টাখনু গিড়ার নিচে কাপড় পরিধান করা:
পীযূষ, এদেশের কোটি কোটি মুসলমান নামাজ আদায় করেন। আশা করছি, আপনার দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকবে এদেশের হাজারো, লাখো মসজিদে প্রতি দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃশ্য। যেসব মুসলমান নিয়মিত নামাজ পড়েন, যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী তারা অন্তত: টাখনু গিড়ার উপরে প্যান্ট বা কাপড় পরিধান করেন। আর না হলেও নিদেনপক্ষে নামাজের সময়টাতে প্যান্ট বা কাপড় ভাজ করে হলেও এটি তারা করে থাকেন। যদিও টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা থেকে বিরত থাকা শুধু নামাজের সময়টুকুর জন্য সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রতিটি মুসলিম পুরুষের সার্বক্ষনিক ২৪ ঘন্টার আমল। অনেক হাদিসের আলোকে বিষয়টি প্রমানিত এবং সুসাব্যস্ত। আপনার জ্ঞাতার্থে তিনটি হাদিস উল্লেখ করছি-
এক. হযরত আবু জুরাই থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 'টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাক। কেননা এটা অহংকারবশত হয়ে থাকে। আর আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে ভালবাসেন না।' (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৬৪ হাদীস ২৭৫; মুসনাদে আহমদ ৫/৬৩ হাদীস ২৪১৯)
দুই. আবু যর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلّمُهُمُ اللّهُ يَوْمَ الْقِياَمَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذاَبٌ ألِيْم: المُسْبِلُ وَالمَنَّانُ وَالْمُنْفِقُ سِـلْعَتَهُ بـاِلْحَلِفِ الكـاَذِبِ
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না, বরং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? তবে এরা তো ধ্বংশ, তাদের বাঁচার কোন রাস্তা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম একথা তিনবার বলেছেন। তারা হলঃ
১) যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে।
২) যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে ব্যাবসার পণ্য বিক্রি করে।
৩) যে ব্যক্তি কারো উপকার করে আবার খোটা দেয়।'' (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইব্ন মাজাহ্)।
তিন. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন,
ماَ أسْفَلَ الكعبين مِـنَ الإزاَرِ فَفِيْ النّـارِ
“লুঙ্গির যে অংশ টাখনুর নিচে থাকবে তা আগুনে প্রজ্জলিত হবে।” (বুখারী)
ইসলামী শরিয়াতে দাড়ি রাখা কি?
ইসলামী শরিয়াত মতে দাড়ি রাখার বিধান কি? এ সম্পর্কে উলামাগণের কেউ বলেছেন যে, দাড়ি রাখা ফরজ। কারণ, দাড়ি রাখার ব্যাপারে কুরআনুল কারিমে সরাসরি কোনো নির্দেশ যদিও আসেনি তবু রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নির্দেশ ব্যতিত কোনো কথা বলতেন না। আর তাই দাড়ি রাখার ব্যাপারে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ মানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলারই নির্দেশ। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-
'‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।'’ (সুরা হাশর: ৭)
কেউ কেউ দাড়ি রাখাকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বললেও অধিকাংশ আলেম উলামাদের সম্মিলিত অভিমত- দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর উপরেই আমল করা হয়।
ইবনে উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা অানহুমা বলেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﺧَﺎﻟِﻔُﻮﺍ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ﻭَﻓِّﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠِّﺤَﻰ ﻭَﺃَﺣْﻔُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻮَﺍﺭِﺏَ
''তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবে- দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে।'' (সহীহ বুখারি, হাদিস নং–৫৪৭২)
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﺟُﺰُّﻭﺍ ﺍﻟﺸَّﻮَﺍﺭِﺏَ ﻭَﺃَﺭْﺧُﻮﺍ ﺍﻟﻠِّﺤَﻰ ﺧَﺎﻟِﻔُﻮﺍ ﺍﻟْﻤَﺠُﻮﺱَ
“গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর আর এর মাধ্যমে অগ্নিপুজকদের বিরোধিতা কর।” [ মুসলিম]
সাধারণ মুসলমানদের অনেকেই মনে করে থাকেন, দাড়ি রাখা হচ্ছে সুন্নত, অতএব দাড়ি রাখলে ভাল আর না রাখলে তেমন কোনো সমস্যা নেই। একটা সুন্নত পালন করা হলো না, এই আর কি! এতে আর তেমন কি সমস্যা! আসলে এটা সম্পূর্ণই একটি ভুল ধারণা। কারণ, পূর্বেই বলা হয়েছে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব।
পীযূষ, জঙ্গির আলামত বর্ণনা করতে গিয়ে আপনি সকল মুসলমানদের অন্তরে আঘাত করেছেন। আমাদের বিশ্বাস এবং অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন। আমাদের কলিজাকে আপনি শরবিদ্ধ করেছেন। আমরা ব্যথিত, দু:খিত, মর্মাহত।
আপনার উল্লেখিত পয়েন্টগুলো ধরে ধরে যদি কথা বলার চেষ্টা করি, তাহলে আলোচনা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। আপনার তরিকায় বিশ্লেষন করলেও অনেক কথাই বলা যায়। যেমন ধরুন, জঙ্গিরা ‘তরকারী’ রান্না করতে 'হলুদের গুঁড়া' ব্যবহার করে। মুসলমানরাও 'তরকারী' রান্নায় এই 'হলুদের গুঁড়া' দেয়। তার মানে, ধরে নেয়া যায়, জঙ্গিদের সাথে মুসলমানদের তরকারি রান্নায় যেহেতু সাদৃশ্য রয়েছে সেহেতু তরকারীতে হলুদের গুঁড়া ব্যবহারের দিক দিয়ে মুসলমানদের সাথে তাহলে জঙ্গির নমুনা দৃশ্যমান! সুতরাং মুসলমানরা জঙ্গি হতেই পারে!
অথবা আপনার যুক্তিমতে একথাও বলা যেতে পারে, মুসলমানরা খুব পিঁয়াজ খায়! জঙ্গিরাও খায়! সুতরাং সকল মুসলমান জঙ্গি! যুক্তিবিদ্যাও তো তাই বলে! হায়রে দুনিয়া!
পীযূষ, আপনার উত্থাপিত কয়েকটি পয়েন্টে সামান্য আলোকপাত না করেই পারছি নে।
এক. আপনার কথা মেনে নিলে 'ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশুনা' ছেড়ে দিতে হবে। কারণ, আপনার মতে, 'ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশুনা বৃদ্ধি' জঙ্গি হওয়ার লক্ষন। কিন্তু পীযূষ, বাস্তবতা তো বলে ভিন্ন কথা। এযাবত দেশে সংঘটিত জঙ্গি হামলাগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে যাদের পাওয়া গেছে তাদের অধিকাংশই তো জেনারেল শিক্ষিত। কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়া। ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশুনা যারা বেশি করেন, সেই মাদরাসা পড়ুয়াদের কতজনকে জঙ্গিবাদের সাথে পাওয়া গেছে?
দুই. আপনার কথা মেনে নিলে 'ধর্মীয় উপদেশমূলক কথাবার্তা বলা' বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, আপনি 'ধর্মীয় উপদেশমূলক কথাবার্তা বলা' -কেও জঙ্গিবাদের লক্ষন হিসেবে চিহ্ণিত করেছেন। আমাদের ধর্মের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে- ধর্মীয় কথা একে অপরের নিকট পৌঁছে দেয়া। আমাদের প্রিয় নবিজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- 'একটি বাক্য হলেও আমার নিকট থেকে অন্যদের পৌঁছে দাও।'
বিদায় হজ্বের ভাষনেও তিনি একথা বলে গেছেন। তাঁর কথাগুলো অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব উপস্থিতগন গ্রহন করেন। আপনার কথা মেনে নিয়ে নিরবতা পালন করলে তো আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ অমান্য করা হয়, এদেশের মুসলমানরা তাহলে কার কথাকে প্রাধান্য দিবে? আপনার, না তাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর?
তিন. এমনিভাবে আপনার কথা মেনে নেয়া হলে, 'ইসলামী শাসনব্যবস্থা', কিংবা 'শরিয়া আইনে আগ্রহ প্রকাশ করা' যাবে না। 'শরিয়া আইন' এর মানে কি আপনি জানেন? 'শরিয়াহ আইন' কাকে বলে আপনার কি জানা আছে? শরিয়াহ আইন মানে হচ্ছে, বিশ্বমানবতার জন্য আল্লাহ পাক কর্তৃক আল কুরআনে বর্ণিত বিধি-বিধান সমষ্টি। ঐশীগ্রন্থ আল কুরআনে বর্ণিত এই বিধি-বিধানের প্রতি আগ্রহ না থাকলে সে মুসলমান থাকে কি করে? তার ঈমান থাকে কিভাবে? শরিয়াহ আইন চালু করতে না পারলেও কুরআনের আইনের প্রতি অন্তত: নূন্যতম মুহাব্বত যার অন্তরে থাকে না, সেই ব্যক্তির বিশ্বাসী বা ঈমানদার হওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
চার. আপনার কথামত তাহলে 'ধর্মচর্চার প্রতি ঝোঁক'ও কমিয়ে দিতে হবে। মানে, ধর্ম কোনোমতে মানলেই হলো। ধর্মচর্চা সমাজ থেকে যেন আস্তে আস্তে উঠে যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। তার মানে, নামকাওয়াস্তে ধার্মিক হতে হবে। মানে, ফাকিবাজ ধার্মিক হতে হবে। কারণ, 'ধর্মচর্চার প্রতি ঝোঁক' থাকা তো আপনার মতে জঙ্গিপনার আলামত। হায় হায়, আপনি কি পর্যায়ক্রমিকভাবে ধর্মের চর্চা সীমিতকরণের মাধ্যমে এক সময়ে ধর্মহীন সমাজের একটি প্রতিচ্ছবি কল্পনা করছেন?
পীযূষ, আপনাকে ভাগ্যবান ব্যক্তি বলে মনে হচ্ছে। মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে দেশের প্রায় অনেকগুলো জাতীয় পত্রিকায় নিজের খেয়াল খুশিমত জঙ্গি সনাক্তকরণের ছদ্মাবরণে তামাশা এবং উপহাসমূলক বিজ্ঞাপন দিলেন অথচ মামলা মোকদ্দমার এই যুগে আপনার নামে ধর্ম অবমাননার দায়ে সারা দেশের কোথাও একটি মামলাও হল না। আজব দুনিয়া। আপনিও সত্যি ভাগ্যবান বটে!
পীযূষ, আপনারা যে কাদের বদান্যতার সুযোগ নিয়ে এসিওয়ালা হলরুমে বসে জঙ্গির সংজ্ঞা বানাচ্ছেন, এদেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের তা জানতে ও বুঝতে বাকি নেই! সঠিকভাবে ইসলামের চর্চা ও বাস্তব জীবনে ইসলামের অনুসরণই জঙ্গিবাদ থেকে যুবসমাজকে মুক্ত রাখতে পারে; কিন্তু আপনাদের এই দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড প্রকৃতপক্ষে উসকানিমূলক। এ বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছে। আপনাদের ঐসব হাবিজাবি গবেষণা আর "রেডিক্যাল ইনডিকেটরকে" আমরা অবিবেচনা আর "পক্ষপাতদুষ্ট হিংসা ছড়াবার অপকৌশল'' আখ্যায়িত করে ধিক্কার জানাচ্ছি।
পীযূষ, আমরা সবসময় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। জঙ্গিবাদের ধর্ম নেই। জঙ্গিদের পরিচয় একটাই তারা জঙ্গি। তারা বিপদগামী। এদের কোন ধর্ম নেই। চোরের পরিচয় যেমন চোর হওয়া উচিত তেমনি জঙ্গির পরিচয়ও জঙ্গি হওয়া উচিত। জঙ্গির পরিচয় সনাক্তের জন্য অহেতুক ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ আজ গোটা বিশ্বের বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্ণিত। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল দেশে সকল জাতিতে বিপদগামী কম বেশি কিছু মানুষ দেখা যায়। ইসলাম ধর্মের নামে যারা জঙ্গিপনায় লিপ্ত হয়, তাদের নীতি আদর্শের সাথে প্রকৃত মুসলমানদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায়, অপরাধী তার আত্মরক্ষার জন্য অনেক কিছুই করে থাকে।
পরিশেষে প্রশ্ন রাখতে চাই, এদেশের কোটি কোটি মুসলিম আল্লাহ তাআ'লার দেয়া বিধান অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত ও নির্দেশিত টাখনু গিড়ার উপরে কাপড় পরিধান করা এবং দাড়ি রাখার যে সুন্নাতগুলো মেনে চলে ইসলাম ধর্ম অনুসরন করেন, একই সাথে যা একটি ধর্মীয় বিধানও বটে, তাহলে প্রত্যেকেই কি আপনাদের 'ইনডিকেটর অনুযায়ী' জঙ্গিপনায় জড়িত?
আপনি যদি ভুল বুঝতে সক্ষম হন, তাহলে অনুরোধ থাকবে, যেভাবে এবং যেসব পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছেপে মুসলমানদের অন্তরে আঘাত করেছেন, সেভাবে সেইসব পত্রিকায় সেই আকারে, সেই পরিমান গুরুত্ব দিয়ে মুসলমানদের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে পুনরায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের সততা প্রমান করুন। আশা করছি, সত্য আপনার উপলব্ধিতে আসবে। আপনার বোধোদয় হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আপনার কল্যান করুন। সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত করুন আপনার অন্তকরণ।
সংবাদ সূত্র:
সময় স্বল্পতার কারণে পোস্টটি পাবলিশ করার সময়ে তথ্যসূত্র যুক্ত করতে পারিনি বলে দু:খিত। এখন আপডেট করে দেয়া হল:
১. দৈনিক কালের কন্ঠ, ১২ মে, ২০ তম/ শেষ পৃষ্ঠা
২. দৈনিক যুগান্তর, ১২ মে, প্রথম পৃষ্ঠা
৩. দৈনিক জনকন্ঠ, ১২ মে, প্রথম পৃষ্ঠা
৪. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১২ মে, শেষ পৃষ্ঠা
৫. দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ মে, প্রথম পৃষ্ঠা
এই ধরণের বিজ্ঞাপন প্রচারের প্রতিবাদের কিছু সংবাদ লিঙ্ক-
১. এমটি নিউজ, ১৪ মে, পীযূষ বন্দোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক
২. দৈনিক মুক্ত আলো, ১৫ মে, অভিনেতা পীযূষকে গ্রেফতারের দাবিতে সারাদেশে মিছিলের ডাক
৩. দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৫ মে, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের দাবি : শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ
৪. দৈনিক যুগান্তর, ১৪ মে, পীযূষ বন্দোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের দাবিতে সারাদেশে মিছিলের ডাক
৫. বাংলাদেশ টুডে, ১৩ মে, দাড়ি রাখা, টাখনুর উপরে কাপড় পরা জঙ্গিবাদের লক্ষণ!
৬. আওয়ারইসলামডটকম, ১৪ মে, ‘উসকানিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার, উগ্রবাদী সংগঠন নিষিদ্ধ ও গ্রেফতারের দাবি জানাই’
৭. আওয়ারইসলামডটকম, ১৫ মে, ‘শুক্রবারের ইসলামী ঐক্যজোটের বিক্ষোভ মিছিল সফল করুন’
আপডেট ১৬.০৫.২০১৯ রাত ১২:৫০: আজকের (১৬ মে ২০১৯) দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় সম্প্রীতি বাংলাদেশ একটি প্রতিবাদ ছেপে জানিয়েছে যে, গত ১২ মে ২০১৯ ইং তারিখ দেশের অধিকাংশ জাতীয় পত্রিকায় সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর নামে প্রচারিত বিজ্ঞাপনটি তাদের নয়। আমরা তাদের এই সুন্দর কাজটির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, পাশাপাশি আমাদের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অনুরোধ, যদি সত্যি আপনারা আপনাদের বক্তব্যে সত্যবাদী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাদের সংগঠনের নাম ব্যবহার করে ইতোপূর্বে কারা এই কাজটি করেছিলেন তাদের খুঁজে বের করুন। প্রয়োজনে তাদের নামে মামলা করুন এবং আদালতের সহায়তা নিয়ে ঘটনার প্রকৃত নায়কদের পরিচয় দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করে আপনাদের আজকের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করুন।
সম্প্রীতি বাংলাদেশ প্রচারিত আজকের প্রতিবাদের নমুনা -
সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর নামে প্রচারিত ১২ মে'র বিজ্ঞাপন -
ছবি: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৯ রাত ১:১৪