ছবি: অন্তর্জাল।
গুরুত্বপূর্ণ দৈনন্দিন আমল
আপনি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত? কুরআন পড়তে পারেন না? কোনো সমস্যা নেই। কোনো চিন্তারও বিষয় নয়। চেষ্টা শুরু করে দিন ইনশাআল্লাহ। কুরআনুল কারিম পাঠ শেখা শুরু করে দিন আজ থেকেই। দৈনন্দিন জীবনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য, শারিরীক মানসিক ফিটনেসের জন্য খাওয়া-দাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, মনে রাখতে হবে, পারকালীন অন্তহীন জীবনে মুক্তি আর নাজাতলাভের জন্য ধর্মীয় বিষয়াদির গুরুত্বও প্রকৃত মুমিন মাত্রেরই নিকট সমধিক গুরুত্ববহ। যদিও আমরা এই স্থানটিতে এসে অনেকেই বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়ে পড়ি। আখিরাতপ্রাপ্তির আশায় কেউ কেউ দুনিয়ার জীবনকে একেবারেই অবজ্ঞা, অবহেলা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে চাই। পার্থিব জীবনকে অতি বেশি অবমূল্যায়ন করতে প্রবৃত্ত হই। আমরা জানি, আল কুরআনে পার্থিব জীবনকে 'ধোকার ঘর', 'খেল তামাশা' নামে অভিহিত করা হলেও আল্লাহ পাক আমাদের প্রতি ইহসান করে, দয়া করে, মায়া করে আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জীবনে কল্যান লাভ হয় এমন সুন্দর ভারসাম্যপূর্ণ দুআও শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-
وِمِنْهُم مَّن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
'আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে- হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন।'
দুনিয়া যদি এমনই অচ্ছ্যুত, অকল্যানের বস্তু হতো, তাহলে আল্লাহ পাক তার দরবারে ফরিয়াদ করার ক্ষেত্রে দুনিয়ার কল্যানকে অন্তর্ভূক্ত করতেন না। তাই দুনিয়া তথা পার্থিব প্রয়োজনীয় বিত্ত বৈভব অর্জন দোষের নয়। কিন্তু যে ভুলটি আমরা সচরাচর অধিকাংশ মুসলিম করে থাকি, সেটা হচ্ছে, পৃথিবীর আরাম আয়েশ খুঁজতে গিয়ে পরকালের আসল জীবনের কথা ভুলে যাই। গাফলাতের এই অন্ধকার থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জগতের জন্য মুনাজাতে যেমন আমরা হাত তুলি, একইভাবে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জাহানের জন্য দৈনন্দিন জীবনের অতি মূল্যবান সময়গুলোকে ইনসাফের দৃষ্টিতে ভাগ করে কাজে লাগাতে হবে।
দেখা যায়, আমরা অধিকাংশ মানুষই দৈনন্দিন জীবনের চব্বিশ ঘন্টার ভেতরে বার থেকে চৌদ্দ ঘন্টা পার্থিব আয় উপার্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবসা-বানিজ্য, চাকরি-বাকরিসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ-কর্মের পেছনে ব্যয় করি। হাতে থাকা বাকি সময়ের আরও দুই-তিন ঘন্টা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে খরচ হয়ে যায়। এরপরে অবশিষ্ট ছয় থেকে সাত ঘন্টার বাকি সময়টুকু একজন মানুষের সুস্থতার জন্য ঘুমানোর প্রয়োজন। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে ইবাদত বন্দেগী করার সময় কোথায়? আসলে এই প্রশ্নের উত্তরটা না জানার কারণেই আমাদের দ্বীন বিমুখিতার সূচনা। এটি বুঝতে পারলেই সকল কাজ সহজ হয়ে যায়। এটি বুঝতে পারলেই জীবনটা আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। আর এর সহজ উত্তর হচ্ছে, একজন মুমিন বান্দার সামগ্রিক জীবনের প্রতিটি কাজই ইবাদত বলে গন্য হবে যদি সে কাজের পেছনে উদ্দেশ্য হয়ে থাকে মহান রব্বুল আলামীন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার সন্তুষ্টি অর্জন। তার চাকরিটা ইবাদত। তার ব্যবসা ইবাদত। তার হালাল আয়ের সকল পথ ও পদ্ধতিই ইবাদত। কারণ, এসবের পেছনে তার উদ্দেশ্য, তিনি নিজের এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভরণপোষনের পূন্যময় দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন, যার পেছনে লুকায়িত রয়েছে মালিকের সন্তুষ্টি অর্জনের মহান নিয়ত। এক্ষেত্রেও চাকরি কিংবা ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থে তিনি খিদমাতে খালক করছেন মূলত:। হাদিসে বর্ণিত কথারই প্রতিধ্বনি এটা। হাদিসে বলা হয়েছে- 'স্ত্রীকে কিনে দেয়া বস্ত্র কিংবা তার মুখে তুলে দেয়া এক লোকমা খাদ্যও সাদাকাহ।'
সুতরাং, সত্যিকারের তাকওয়া যাদের অন্তরে রয়েছে, কোনো কাজই তাদের বেহুদা নয়। সুন্নত আমল জেনে সেই অনুসারে আমল করে প্রতিটি কাজে তারা সাওয়াবের অধিকারী হয়ে থাকেন। খাওয়া দাওয়ায় তারা সুন্নতের অনুসরন করেন। বাথরুম ব্যবহারের মত অতি ক্ষুদ্র বিষয়েও তারা সুন্নতের খেলাপ করেন না। এমনকি জামা-কাপড় কিংবা জুতা পরিধানের মত ঠুনকো বিষয়েও তারা সুন্নতের আমল খুঁজে নেন। এমনকি রাতের ঘুমও তাদের ইবাদত। হাদিসের মর্মার্থ এমন, 'যে ব্যক্তি ইশার নামাজ জামাআতে আদায় করলো, আবার ফজরের নামাজও। সে যেন সারাটা রাতই নামাজে অতিবাহিত করলো।'
কোনো কিছু দিয়ে আগত মেহমানকে আপ্যায়ন করাতে পারেননি, শুধু হাসি মুখে তার সাথে কথা বলেছেন আপনি, এটাও সাদাকাহ। হাদিসের ভাষ্যানুসারে, আপনি সাদাকাহর সাওয়াব লাভ করলেন।
উত্তম চরিত্রওয়ালার মর্যাদা এতই বেশি যে, তাকে তুলনা করা হয়েছে দিনভর রোজা পালনকারী এবং রাতভর সালাত আদায়কারীর মর্যাদায়।
ব্যক্তিগত জীবনের সকল কাজে কর্মে সুন্নতের পাবন্দির পাশাপাশি মন থেকে হিংসা বিদ্বেষ, অহংকার, পরশ্রীকাতরতা, হীনমন্যতা, কূপমন্ডুকতাসহ সকল প্রকারের মন্দ স্বভাব পরিহার করতে হবে। সৃষ্টি জগতের প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ পাক সকল জীবের স্রষ্টা। তিনি সকলকে খাদ্য পানীয় দেন। লালন পালন করেন। তার প্রতি আপনি যে মুহাব্বতের দাবিদার একথার প্রমান হবে তামাম মাখলূকাতের প্রতি আপনার আচরনের বহিপ্রকাশে। মালিককে ভালোবাসলে তো মালিকের কুকুরও তার নিকট প্রিয় বলে গন্য হয়। আপনি বলেন, আল্লাহ পাককে আপনি ভালোবাসেন। অথচ তাঁর সৃষ্টির প্রতি আপনার প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই- তা কি করে হয়! আসলেই কি আপনি আল্লাহ পাককে ভালোবাসেন?
আল্লাহ পাককে ভালোবাসার পাশাপাশি সেইসব আমল প্রতি দিনের আবশ্যকীয় সূচীতে যোগ করে নিতে হবে, যেগুলোর মাধ্যমে তাঁর আরও নৈকট্যলাভ সম্ভব। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মুসলমানদের জন্য দৈনন্দিন জীবনে জরুরী এমনই কিছু আমল-
১। হক্কানী উলামায়ে কেরাম ও নেককার মুত্তাকী ব্যক্তিদের বরকতপূর্ণ সুহবতলাভকে জরুরী মনে করা
দুনিয়া আখিরাতের সফলতা ও কামিয়াবীর জন্য হক্কানী উলামায়ে কেরাম ও নেককার মুত্তাকী ব্যক্তিদের সাথে মুহাব্বত, সদ্ভাব এবং শ্রদ্ধা রাখা জরুরী। মহান আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন এবং সিরাতুল মুস্তাকিম এর উপর অটল-অবিচল থাকার জন্য আল্লাহওয়ালাদের সুহবত-সংস্পর্শ অতি অপরিহার্য। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
'হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।' সুরাহ আততাওবাহ, আয়াত- ১১৯,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
'আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে।' সুরাহ আননাহল, আয়াত- ৪৩
আল্লাহ পাক আমাদের হেদায়েতের সঠিক পথে পরিচালিত করুন। সকল সৃষ্টি জীবের প্রতি তাঁর রহমতের ছায়াকে সম্প্রসারিত করুন। আমিন।
ইনশাআল্লাহ চলবে ... ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:২৯