কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি দারুন কাজ করে। বাস্তবে পরিক্ষা করার আগ পর্যন্ত আমারও বিশ্বাস এতটা পাকা ছিল না। হোমিওপ্যাথি চিকিতসা পদ্ধতির এমনসব অভাবনীয় ফলাফল দেখে আশ্চর্য্য হয়েছি। আমার যতদূর জানা, এলোপ্যাথি চিকিতসা ব্যবস্থায় হেপাটাইটিস বি পজিটিভ এর কোনো ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয়নি। এরকম আরও কিছু সমস্যায় এলোপ্যাথি চিকিতসার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এযাবত আসেনি।
সত্যিকারার্থে এই বিষয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু কিছু লোক রয়েছেন, যারা নিজেদের অতি আধুনিক ভাবেন। হোমিও চিকিতসার নাম শুনলেই অযৌক্তিকভাবে অর্থহীন বিদ্বেষমূলক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকেন। হোমিও চিকিতসার গোষ্ঠী উদ্ধারেও পারতপক্ষে ছাড়েন না। ফলে এতে তাদের নিছক শত্রুতামূলক আচরনেরই বহি:প্রকাশ ঘটে থাকে। তাদের প্রতি কোনো ক্ষোভ নয়, বরং তাদের অনুরোধ করতে চাই, হোমিও পদ্ধতি আপনি গ্রহন করুন কিংবা না করুন সেটা একান্তই আপনার নিজের ব্যাপার, কিন্তু না জেনে হোমিও চিকিতসা বিধানের বিরুদ্ধে বিষোদগারে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে দায়িত্বশীলতার পরিচয় হিসেবে একটিবার অন্তত: হোমিও চিকিতসা পদ্ধতির দোষ গুনগুলো বাস্তবে পরিক্ষা করে দেখুন। যাচাই করে নিতে অসুবিধা কোথায়?
প্রসঙ্গত: বলা সমিচীন মনে করছি, হোমিওপ্যাথি চিকিতসা পদ্ধতি কোনো এলাকা বা অঞ্চলের অজ্ঞ ও মূর্খ লোকদের উদ্ভাবিত আঞ্চলিক কোনো অপচিকিতসা পদ্ধতি নয় যে, এই চিকিতসা ব্যবস্থাটি সম্মন্ধে শিক্ষিত সমাজ জানে না। বরং, মনে রাখা প্রয়োজন, হোমিওপ্যাথি চিকিতসা পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত এবং আধুনিক জনপ্রিয় একটি চিকিতসা পদ্ধতি।
আগেই উল্লেখ করেছি, এমন অনেক রোগ রয়েছে যার একচুয়ালি এলোপ্যাথিতে কোনো চিকিতসা নেই। শুনে নয়, দেখে দেখে, বাস্তবে ফলাফল লাভ করে বুঝেছি, বিশ্বাস না করে পারিনি, হোমিও চিকিতসা পদ্ধতিতে ক্যানসারের মত মারাত্মক রোগেরও আরোগ্যলাভ সম্ভব। আমার চোখের সামনে, দেশের নামকরা এলোপ্যাথি ডাক্তারের চিকিতসা শেষে, তাদের সকল প্রচেষ্টা প্রয়োগের পরে, এমনকি রোগীর আর বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র তিন মাস- এমন কঠিন সময়সীমা বেধে দেয়ার পরে, এই রোগী শুধুমাত্র হোমিও ওষুধ সেবনে সম্পূর্ন সুস্থতালাভ করেছেন। শুধু সুস্থতালাভ করেছেন বললে একটু কম বলা হবে। যে রোগীর ত্রিমাস মাত্র আয়ুষ্কালের ব্যাপারে ২০০২ সালের দিকে এই কঠিন ভবিষ্যত বানী দেয়া হয়েছিল, সেই রোগী এখনও সুস্থাবস্থায় রয়েছেন। এটা আমার নিজের দেখা। শোনা কোনো গল্প নয়। নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা।
আমার নিকটাত্মীয়দের দু'জন যারা এইচবিএসএজি পজিটিভ (হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে) আক্রান্ত ছিলেন। এদের মধ্যে একজন বিদেশ যেতে পারছিলেন না। হোমিও ওষুধ সেবনে তার অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে। ভাইরাস টেস্টে নেগেটিভ ধরা পড়েছে। এবং অবশেষে তিনি বিদেশে যেতে সক্ষম হয়েছেন।
আরেকজন আমার কাছাকাছি থাকেন। চোখের সামনেই তার ওষুধ সেবনের দীর্ঘ (প্রায় দু'বছরকাল যাবত তিনি ওষুধ নিয়মিত সেবন করেছেন) সময়কাল প্রত্যক্ষ করলাম। এবং আশ্চর্য্যভাবে লক্ষ্য করলাম, সর্বশেষ গত তিন চার মাস আগে তার যে টেস্ট করানো হয়েছে তাতে ভাইরাস নেগেটিভ এসেছে। প্রথমে তার টেস্ট করানো হয়েছিল ইবনে সিনায়। এখানের রিপোর্টে নেগেটিভ ধরা পড়ে। রিপোর্টের উপর পুরোপুরি আস্থা আনতে না পারায় মহাখালী সরকারি কলেরা হাসপাতাল থেকে একই টেস্ট আবার করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কারন, মহাখালি কলেরা হাসপাতালের রিপোর্টকে অন্যান্য ল্যাব থেকে অধিক অথেন্টিক বলে ধরে নেয়ার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, কলেরা হাসপাতালের পরিক্ষায়ও নেগেটিভ রিপোর্টই আসে।
ছোটখাট টিউমার, আঁচিল, কিছু কিছু চর্মরোগ, ইত্যাদিসহ আরও কিছু রোগের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিতসা দারুন ফল দেয়। যারা হোমিওপ্যাথিতে ভয় পান, তাদের একবার পরিক্ষা করে দেখার জন্য অনুরোধ থাকলো।
এক বন্ধুর লজ্জাস্থানের আশপাশে অনেক আঁচিল ছিল। সংরক্ষিত অঞ্চল হওয়ায় বেচারা ডাক্তার দেখাতেও লজ্জা পাচ্ছিলেন। একবার আমাকে ঘটনা খুলে বললেন, ওষুধ দিলাম। মাস খানিক ওষুধ সেবনের পরে জানালেন, সমস্যা বেড়েছে। আবার এক মাসের ওষুধ দিলাম। এভাবে তিন বার ওষুধ নিলেন। মাস তিনেক ওষুধ সেবনের পরেও কোনো ফলোদয় না হওয়ায় সীমাহীন বিরক্ত হলেন ভদ্রলোক। আমার সাথে তার ঘনিষ্টতা বেশি থাকায় কঠিনসব তিরষ্কার বানী শুনিয়ে গেলেন এক দিন। বললেন, 'খাওয়া তো দূরের কথা, আর জীবনে যদি কোনো দিন হোমিওপ্যাথি ওষুধ ছুঁয়ে দেখি!'
রহস্যজনকভাবে এই বন্ধু আবার ফিরে এলেন। বছরখানিক পরে ভদ্রলোক এক দিন পেছনের সেই তিরষ্কারের জন্য দু:খ প্রকাশ করে জানালেন, 'তার শরীরে কোনো আঁচিল নেই। আঁচিল তো নেইই, আঁচিলের চিহ্ণ পর্যন্ত নেই।'
এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা স্মৃতিতে জমে আছে। সময় পেলে শেয়ার করার চেষ্টা থাকবে।
সুতরাং, হোমিও চিকিতসায় বারবার দেখেছি, ধৈর্য্য বড় ব্যাপার। ধৈর্য্যধারন করে নিয়মিত ওষুধ সেবন করে যেতে হয়। যাদের পক্ষে ধৈর্য্যধারন সম্ভব নয়, যাদের দীর্ঘ সময় ধরে (কোনো কোনো রোগের ক্ষেত্রে) ওষুধ সেবনের ইচ্ছে বা সুযোগ নেই তাদের জন্য হোমিওর কাছে না যাওয়াই শ্রেয়।
অবশ্য বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত হোমিওপ্যাথিতে কিছু গোঁজামিল রয়েছে। এগুলো আমার কাছেও নিদারুন বিরক্তিকর। ধুরন্দর তো সবখানেই কম বেশি থাকেন, এই পেশাতেও কিছু ধুরন্দর টাইপ লোকজন যুক্ত হয়েছেন। অরুচিকর অশ্লীল সব বিজ্ঞাপন ছেপে, ভিজিটিং কার্ডে দুনিয়ার সর্বরোগের চিকিতসায় ১০০% গ্যারান্টিযুক্ত চাপাবাজি করে প্রতারনায় কোমর বেধে নেমে থাকেন এরা। এই গ্যারান্টিওয়ালাদের খপ্পড়ে পড়ে কত মানুষ যে সর্বশান্ত হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। হারবাল চিকিতসার নামে যেভাবে অহরহ ভূয়া চিকিতসা কেন্দ্র গড়ে তুলে সাধারন মানুষদের ঠকানো হচ্ছে, হোমিওপ্যাথির নামেও এই জাতীয় ভূয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে ইদানিং ব্যাপক প্রতারনার ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এই ভূইফোঁর দুষ্টদের বিরুদ্ধে জরুরী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি।
দেশে হোমিওপ্যাথির কিছু কিছু ডাক্তার গলাকাটা ব্যবসা করে থাকেন- একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সকল ডাক্তার নন। অনেকে পানি বেঁচে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করে থাকেন ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। এটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদিও ঠিক, তবে, এর জন্য সম্ভবত হোমিও চিকিতসা ব্যবস্থাকে দায়ী করা উচিত নয়। এসব অপকর্মে সকল ডাক্তার যুক্ত নন। যারা করেন, তারা নি:সন্দেহে নিন্দনীয়। তাদের বর্জন করুন। আর তাদের মত মুষ্টিমেয় সংখ্যক স্বার্থপর অতি লোভী ব্যক্তির কারনে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত সুন্দর একটি চিকিতসা ব্যবস্থাকে খারাপ বলা কতটা যুক্তিযুক্ত?
হোমিও ওষুধ এখন দেশেও তৈরি হয়। অনেকগুলো কোম্পানী হয়েছে দেশে, যারা হোমিও ওষুধ তৈরি করে থাকেন। এদের ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে ওষুধের গুনগত মান কতটুকু রক্ষা হয়, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। কোনো কোনো ওষুধ মাত্র এক আউন্স (অরিজিনাল বিটি জার্মানি) যেখানে ১৫০০ - ১৬০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করতে হয়, দেশীয় সেই একই ওষুধ ১৫০ - ২০০ টাকায় পাওয়া যায়। দামের এই আকাশ পাতাল ফারাক থাকলে, মান কতটুকু রক্ষা হতে পারে?
আসুন, অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে হোমিও চিকিতসা ব্যবস্থা সম্পর্কে নিজের ধারনাকে স্বচ্ছ করি। সঠিক মাত্রায়, অরিজিনাল হোমিও ওষুধ সেবনের মাধ্যমে নিরোগ থাকি। সকলে ভালো থাকুন। নিরোগ থাকুন। সুন্দর থাকুন।
ছবি কৃতজ্ঞতা: গুগল।