হ্যাঁ, যাদের কারনে চলে যেতে হলো অরিত্রীকে, তাদেরকেই বলছি। এরা কি সত্যিই শিক্ষক? শিক্ষক হওয়ার নূন্যতম যোগ্যতাও কি তাদের আচরনে প্রতিফলিত হয়? ক্ষমা, উদারতা, মহত্ব, মানবিকতা না থাকলে তাদের কাছ থেকে আমাদের শিশুরাই বা কি শিখবে?
ভাবতেই আশ্চর্য লাগে, একটি শিশু পায়ে ধরে ক্ষমা চাচ্ছে! শিশুর অভিভাবক জন্মদাতা পিতা মাতা শিশুটির পক্ষে আবেদন নিবেদন করছেন! অথচ, কোনো কিছুতেই তাদের মন গলছে না, এ কেমন নিষ্ঠুরতা?
কোনো দীর্ঘসূত্রিতা নয়, ঘটনার সঠিক তদন্ত পূর্বক দ্রুত বিচার হোক।
অরিত্রি, মা, তোমাকে বলছি-
অরিত্রী, জানি, তুমি ফিরে আসবে না। চলে গেছ না ফেরার দেশে। তোমার চলে যাওয়া আমাদের কাঁদায়। আমরা নির্বাক। নিস্তব্ধ। হতবাক।
অরিত্রী, তোমাকে অপমান করেছে। তোমার বাবা মাকে অপমান করা হয়েছে। তুমি প্রতিবাদ করেছো। প্রতিবাদের বহুমাত্রিক ভাষা থাকে। প্রতিবাদের কঠিন থেকে কঠিনতর পথটিই তুমি বেছে নিয়েছো। অরিত্রী, তোমার এই প্রতিবাদটি ভিন্নতর কোনো পদ্ধতিতেও তো হতে পারতো। তোমার অবুঝ মন সে সুযোগ হয়তো দিতে চায়নি তোমাকে। অপমানের গ্লানি সইতে না পেরে জীবনের মায় ছেড়ে দিয়ে তুমি চলে গেছো দূরে, বহু দূরে।
অরিত্রী, জানি, অপমান সইতে না পেরে তুমি কেঁদেছো। কঁচি বুক তোমার ভেঙ্গে গেছে অপমানের নির্মম আঘাতে আঘাতে। তুমি ক্ষমা চেয়েছিলে। তোমাকে ক্ষমা করা হয়নি। তুমি পায়ে পড়ে কেঁদেছিলে। অভাবিত অবজ্ঞায় তোমাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
অরিত্রী, তুমি তো পারতে তাদের মত ক্ষমাহীনদের ক্ষমা করে দিতে। তুমি কেন সেটা না করে এমন নির্মম প্রতিশোধ নিতে গেলে? জানি, তুমি লজ্জা পেয়েছো। বাবা মায়ের সামনে নিজের অপমান তুমি বরদাশত করতে পারোনি। নিজের সাক্ষাতে নিজেরই জন্য বাবা মা অপমানিত হবেন এই অনুভূতি তোমাকে ক্ষমা করেনি বলে তুমিও নিজেকে ক্ষমা করতে পারোনি। নিজের অপমান না হয় মেনে নিতে পারতে। কিন্তু বাবা মায়ের অপমান? চোখের সামনে বাবা মাকে অপমান হতে দেখেছো তুমি। এই কঠিন অপমান অপদস্ততার গ্লানি তোমার সম্মানে আঘাত করেছে। তোমাকে অস্থির আকুল করে তুলেছে। তুমি সইতে পারোনি। তুমি মেনে নিতে পারোনি। তুমি নিজেকে বোঝাতে গিয়েও পারোনি। নিজের বোঝাপড়ার সাথে হেরে গেছো বারবার। অবশেষে বেছে নিয়েছো শেষ সিদ্ধান্তটি। পৃথিবীর সবচে' কঠিন সিদ্ধান্ত। না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। অরিত্রী, মা আমার, এই কঠিন সিদ্ধান্তটি তুমি কেন নিলে?
অরিত্রী, আজ কোনো শোক প্রকাশ করবো না। শোকের কোনো কথাও বলবো না। তুমি চলে গেছো, তোমাকে ফেরানোর সাধ্য আমাদের নেই। তুমি আশির্বাদ করো, তোমার চলে যাওয়ার প্রতিবাদী এই দৃশ্য দেখে আমাদের ভেতরের কলুষ কালিমাগুলো আমরা যেন দূরীভূত করতে পারি। তোমার চলে যাওয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা যেন শুদ্ধ সুস্থ হতে পারি। প্রজন্মের জন্য তোমার চলে যাওয়া দৃষ্টান্ত হয়ে থেকে যাক। তুমি যা শেখাতে চাইলে এই সমাজ জাতি তা যেন অক্ষরে অক্ষরে শিখে নিতে পারে, যাতে করে ভবিষ্যতে আর কোনো অরিত্রীকে তোমার মত এভাবে চলে যেতে না হয়।
অরিত্রী, তুমি যাদের কলিজার টুকরো ছিলে, সেই অভাগা স্বজনদের প্রতি আমাদের প্রানভরা সমবেদনা। তোমার দু:খকাতর নির্বাক বাবা আর শোকাহত দু:খিনী মায়ের জন্য আমাদের হৃদয়ের গহীন গভীর থেকে শান্তনা, সমবেদনা এবং শুভকামনা।
অরিত্রীর জন্য প্রতিবাদে সরব সকলকে ধন্যবাদ।