একবার বাগদাদ শহরে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ পাকের অস্তিত্ব নিয়ে এক বিরাট বিতর্ক আয়োজন করা হল যেখানে তৎকালীন অন্যতম সেরা ইসলামী শিক্ষাবিদ, তার্কিক শাইখ হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির আসার কথা ছিল। কিন্তু বিতর্কের দিন নির্দিষ্ট সময়ের মাত্র কিছুক্ষন পূর্বে শেখ হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির বদলে একজন তরুন এসে বললেন যে, 'এইরকম সাধারন কোনো কোনো বিতর্ক সভায় শাইখ হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির মত উঁচু স্তরের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বকে আনা ঠিক নয়; আমরা একথা বলাতে তিনি সম্মত হয়েছেন এবং তিনি তার সব থেকে ছোট ছাত্র আননুমান ইবন সাবিত (আবু হানিফা) কে পাঠিয়েছেন।'
তখন ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি শাইখ হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির জন্য নির্ধারিত আসনে বসলেন। শুরু হলো প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রথমেই নাস্তিকের প্রশ্ন-
নাস্তিকঃ "আপনার খোদা কবে জন্মগ্রহন করেছেন?"
আবু হানিফাঃ "আল্লাহ সময়, কাল, যুগের আগে থেকে আছেন। তার কোন শুরু নেই। তিনি আদি অন্তহীন।"
নাস্তিকঃ "পার্থিব জীবনের নমুনা থেকে বলুন।"
আবু হানিফাঃ "৩ এর আগে বাস্তব কত সংখ্যা?"
নাস্তিকঃ "২।"
আবু হানিফাঃ "২ এর আগে বাস্তব কত সংখ্যা?"
নাস্তিকঃ "১।"
আবু হানিফাঃ "১ এর আগে কত বাস্তব সংখ্যা?"
নাস্তিকঃ "নাই।"
আবু হানিফাঃ "যদি আপনার পার্থিব সংখ্যা ১ এর আগে কোন বাস্তব কিছু না থাকে তাহলে যিনি শাশ্বত তার আগে কি কিছু থাকতে পারে ?"
নাস্তিকঃ "আপনার খোদা কোন দিকে মুখ করে আছেন?"
আবু হানিফাঃ "যদি কোন অন্ধকার স্থানে মোমবাতি আনা হয় সেটা কোন দিকে মুখ করে থাকে?"
নাস্তিকঃ "সব দিকে।"
আবু হানিফাঃ "যদি আপনার পার্থিব কৃত্রিম আলো সব দিকে মুখ করে থাকতে পারে তাহলে যিনি আলো তৈরী করেছেন তিনি কি তা পারেন না?"
নাস্তিকঃ "আপনার খোদা কী কঠিন, তরল না বায়বীয়?"
আবু হানিফাঃ "মৃত ব্যক্তির লাশের পাশে কখনো ছিলেন?"
নাস্তিকঃ "হ্যাঁ।"
আবু হানিফাঃ "মৃত্যুর পর সে কথা বলে?"
নাস্তিকঃ "অবশ্যই না।"
আবু হানিফাঃ "মৃত্যুর আগে সে কথা বলতো। আচ্ছা, মৃত্যুর আগে যে ব্যক্তি কথা বলতে পারে কিন্তু মরার পর সে নির্জীব আর বরফ হয় কেন? কে তার এই অবস্থা করে?"
নাস্তিকঃ "তার আত্মা চলে যায়।"
আবু হানিফাঃ "আত্মা কেমন? আমাকে বলুনতো! কঠিন, তরল না বায়বীয়?"
নাস্তিকঃ "আমি জানি না!"
আবু হানিফাঃ "যদি পার্থিব আত্মার কোন সংজ্ঞা না দিতে পারেন তাহলে কিভাবে আল্লাহর অবস্থা বলা সম্ভব?"
নাস্তিকঃ "আপনার খোদা কোথায় থাকেন?"
আবু হানিফাঃ "আপনি বাটিতে যদি এক গ্লাস দুধ নিয়ে আসেন!"
নাস্তিকঃ "ঠিক আছে। আনছি।"
আবু হানিফাঃ "এখন বলুন, এর মধ্যে মাখন কোথায় থাকে?"
নাস্তিকঃ "সব খানে।"
আবু হানিফাঃ "যদি মাখনের মত সৃষ্ট বস্তু দুধের সব জায়গায় ছড়িয়ে থাকতে পারে, তাহলে আল্লাহ পাক কিভাবে একটি স্থা্নে থাকতে পারেন? এটা তো বিরাট আশ্চর্য্য!"
নাস্তিকঃ "জান্নাতে তো টয়লেট নেই! তাহলে খাবারের পর শৌচকার্য্য করবে কিভাবে মানুষ?"
আবু হানিফাঃ "মায়ের পেটে বাচ্চা ৯ মাস কিভাবে শৌচকার্য্য করে? সেখানে তো টয়লেট থাকে না! মাতৃগর্ভে যদি টয়লেটের প্রয়োজন না হয়, তাহলে জান্নাতে দরকার হবে কেন?"
নাস্তিকঃ "জান্নাতে খাওয়ার আর উপভোগ করার পর কোনো বস্তু কমবে না বরং অনবরত বাড়তেই থাকবে। এটা কিভাবে সম্ভব?"
আবু হানিফাঃ "যেভাবে জ্ঞান যত দান করা হয় তত বাড়ে!"
শাইখ হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির ছাত্রের হাতেই ধরাশায়ী হলেন নাস্তিক প্রবর! এভাবেই যুগে যুগে অপমানিত হচ্ছেন এবং হতে থাকবেন! এ যুগের ডিজিটাল মাথা বিক্রি করা অতি জ্ঞানের আগ্নিমান্দ্যে উদভ্রান্ত দিকহারাগনও এই একই পথের পথিক! তাদের জন্য শুভকামনা সতত:।
পড়ে দেখতে পারেন ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে নিয়ে আমার অারও কিছু পোস্ট-
জ্ঞানের প্রজ্জ্বলিত মশালকে নিভিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা রুখে দিন
ইমাম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি: জাতির শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস, ফকীহ এবং আল্লাহওয়ালা
ইমাম আজমের সাথে নাস্তিকের বাহাস
সংগৃহিত।