হামদ ও সানা সবটুকু আল্লাহ জাল্লা জালা-লুহুর শানে আজিমে:
আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি লা- তারাহুল উয়ূন, ওয়ালা তুখা-লিতুহুজ্জুনূন, ওয়ালা- ইয়াছিফুহুল অ-ছিফূন। ওয়ালা- তুগাইয়্যিরুহুল হাওয়াদিদ। ওয়ালা- ইয়াখশাদ্দাওয়ায়ির। ইয়া'লামু মাসাকি-লাল জিবাল ওয়া মাকাহিলাল বিহার। ওয়া আদাদা কতরিল আমতার। ওয়া আদাদা অরাকিল আশজার। ওয়া আদাদা মা- আজলামা আলাইহিল্লাইল। ওয়া আশরাকা অালাইহিন্নাহা-র। ওয়ালা- তুওঅরি- মিনহু ছামা-য়ুন ছামাআ। ওয়ালা আরদুন আরদা। ওয়া্লা বাহরুন মা ফি কারি। ওয়ালা- জাবালুন মা- ফি ওয়ারি। হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। লা- তা'খুজুহু ছিনাতুও ওয়ালা- নাউম। হুআল আহাদুচ্ছমাদ। আল্লাজি লাম ইয়াত্তাখিজ ছ-হিবাতাও ওয়ালা- ওলাদ। ওয়া খলাকাল খলকা ওয়া আহছ-হুম আদাদা। ওয়া রফাআচ্ছামাআ বিকুদরতিহী বিগইরি আমাদ। ওয়া বাছাতাল আরদা বিকুদরতিহী আলা মা ফি জামাদ। ওয়া কচ্ছামার রিযকা ফালা ইয়ানছা- বিখলকিহী আহাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুআন আহাদ। হুয়াল আলিয়্যুল আজিম।
দরুদ ও সালাম প্রিয়তম সরকারে দোজাহানের রওজায়ে আতহারে:
ওয়াচ্ছালাতু ওয়াসসালামু আলা হাবিবিনাল মুসতাফা। আল্লাজি আ'তাহু খুলুকা আদাম। মা'রিফাতা শীশ। শুযাআ'তা নূহ। খুল্লাতা ইবরাহীম। লিছানা ইসমাঈল। রিদাআ ইসহাক। ফাসাহাতা ছা-লিহ। হিকমাতা লূত। বুশরা ইয়া'কূব। জামালা ইউসুফ। ছবরা আইয়্যুব। ত্ব-আতা ইউনূস। জিহাদা ইউশা। ছওতা দাউদ। হুব্বা দানিয়াল। অকারা ইলিয়াস। যুহদা ঈসা। কুওয়্যাতা মূসা। হাইবাতা সুলাইমান। ওয়া ইলমাল খিদর। সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া আতবায়িহী ইলা ইয়াওমিদ্দিন।
সহজ ভাষায় মাযহাব, তাক্বলীদ ও লা-মাযহাবিয়্যাতের পরিচয়
'মাযহাব' শব্দটি একটি স্বীকৃত শব্দ ছিল। ছিল না কোন দাগ বহুল ব্যবহৃত এই শব্দটিতে। কিন্তু ইদানিং উক্ত শব্দে নানাবিধ কালিমা লেপনের চেষ্টা চলছে। 'মাযহাব' বিষয়ে উদ্ভট এবং অবান্তর সব প্রশ্ন তুলে স্বতসিদ্ধ এবং সুপ্রমানিত একটি বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বহুমাত্রিক প্রলোভনে, নানাবিধ ছল ছুতোয়।
ধারনা হয়, এ অপচেষ্টার মূল কারণ অজ্ঞতা কিংবা ফিতনা সৃষ্টির অপচেষ্টা। মাযহাব বিষয়ে সমালোচনাকারীরা হয়তো মাযহাব বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণাই রাখেন না। কিংবা জেনেশুনে মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করার জন্য এ বিষয়ে সৃষ্টি করে যাচ্ছেন ধুম্রজাল।
যদিও এ্ই বিষয়ক ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে বিষয়টির উপর কিছুটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম, তবু সবার বুঝার সুবিধার্থে বক্ষমান পোস্টেও কিছুটা পেছন থেকে আলোচনা শুরু করতে হবে। আশা করি, ধৈর্য্যচূতি ঘটবে না, সম্মানিত পাঠকবৃন্দের।
আমাদের অনেকের কাছেই মাযহাব বিষয়টি অস্পষ্ট। আমরা সরল ব্যাখ্যায় উক্ত বিষয়টি উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। এ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা পেতে হলে আমাদের পূর্ণ আলোচনাটি ধৈর্য সহকারে, গভীর মনযোগের সাথে উপলব্ধিতে আনয়নের চেষ্টা করতে হবে। ইনশআল্লাহ পূর্ণ আলোচনাটি পাঠের পর আশা করি এ বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার হয়ে যাবে।
মাযহাব কী?
মাযহাব শব্দের অর্থ- পথ, রাস্তা বা গন্তব্যে পৌঁছার সরনি। মাযহাব মানে পথ, যে পথের গন্তব্য- কুরআন ও সুন্নাহ। ভিন্নভাবে বললে, মাযহাব হল মাধ্যম, যা অবলম্বনের দ্বারা পৌঁছে যাওয়া যায় কুরআন এবং সুন্নাহর কাছে।
একটি কথা স্বত:সিদ্ধ যে, আমরা সবাই কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করতে চাই। অর্থাৎ কুরআনে বর্ণিত অজুর ফরজ, হাদীসে বর্ণিত অযুর সুন্নত, মুস্তাহাব, অযু ভঙ্গের কারণ, কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত নামাযের আরকান, আহকাম, ফারায়েজ, নামাযের মাসনূনাত, কতগুলি ওয়াজিব, নামায ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট কারণ কতগুলো? আমাদের দৈনন্দীন জীবনের জীবনঘনিষ্ট মাসায়েলের শরয়ী সমাধান কি? এসব বিষয়ে আমরা কুরআন ও হাদীসে বর্নিত নিয়ম নীতি মেনে আমল করে আল্লাহ পাককে খুশি করতে চাই। কিন্তু আমরা অধিকাংশ জনগনই আলেম নই। ইজতিহাদ (কুরআন হাদিসের জ্ঞানে এই পরিমান বিশেষজ্ঞ যে, কুরআন হাদিসের গভীর জ্ঞানের মাধ্যমে কুরআন ও হাদিস ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করে তা থেকে প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল বের করার যোগ্যতাকে ইজতিহাদ বলে) করার মত যোগ্যতা আমাদের অনেকেরই নেই। আর একারনে, কুরআন খুলে স্পষ্ট শব্দে অজুর ফরজগুলো দেখতে পাই না। হাদীস খুলে নাম্বারসহ গোসলের ফরজ, নামাযের বিবিধ মাসায়েল নাম্বারসহ, নির্দিষ্ট আকারে বের করতে পারি না। তখন আমরা মুজতাহিদ ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক কুরআন ও সুন্নাহ গবেষনা করে বের করা অযুর মাসায়েল, গোসলের মাসায়েল, নামাযের মাসায়েল ইত্যাদি নাম্বারসহ, আলাদা শিরোনাম দিয়ে দিয়ে তারা যা সংকলিত করেছেন, সেই পথনির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা আল্লাহ জাল্লা শানুহূ এর প্রেরিত কুরআন ও তাঁর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহের অনুসরণ করি।
তাহলে এর অর্থ কী দাঁড়াল? আমরা মানছি কিন্তু কুরআন ও হাদীস। কিন্তু আমরা নিজেরা বুঝি না বলে যিনি বুঝেন, তার বের করা মাসআলা-মাসায়েলের অনুসরণ করে মূলত: কুরআন ও হাদীসেরই অনুসরণ করছি।
এর নামই মাযহাবের অনুসরণ। মুজতাহিদ ইমামগণ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে যে মাসায়েলগুলো বের করে আলাদা শিরোনাম দিয়ে দিয়ে, নাম্বার দিয়ে দিয়ে আলাদা করে লিখে যা সংকলিত করেছেন, কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বের করা সেসব মাসআলা-মাসায়েলের সংকলনের নাম হল মাযহাব।
তো মাযহাব অনুসরণ করে আমরা কুরআন ও সুন্নাহই মূলত: অনুসরণ করছি। উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও পরিস্কার হতে পারে।
উদাহরণঃ
সূর্য যখন ডুবে যায়। পৃথিবীজুড়ে নেমে আসে অন্ধকার। তখন পৃথিবীর বুকে যে বস্তুগুলো আছে তা আমাদের চোখের পাওয়ার দূর্বল হবার কারণে আমরা সেগুলো দেখতে পাই না। তখন আমরা বাল্ব, হারিকেন, মোমবাতি, লাইট ইত্যাদি জ্বালিয়ে উক্ত বস্তুগুলোকে দেখি। তো এই যে আঁধারের কারনে কিছুক্ষন পূর্বেও যে বস্তুগুলো আমরা দেখতে পাইনি, আলোর ফোকাসের কারনে এখন দেখতে পাচ্ছি, সে বস্তুগুলো কিন্তু উক্ত আলোর ফোকাস এসে সৃষ্টি করেনি। বরং এগুলো যথাযথভাবে স্বস্থানে এতক্ষনও বিদ্যমান ছিল। আমাদের চোখের পাওয়ারের দুর্বলতার কারণে আগে থেকে থাকা যে বস্তুগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম না, আলোর প্রতিফলনে তা দেখতে সক্ষম হচ্ছি মাত্র। বাল্ব, হারিকেন, মোমবাতি, লাইট ইত্যাদির আলোর ফোকাস কোন বস্তু তৈরি করে না, বরং দেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করে মাত্র।
তেমনি কুরআন ও হাদিসের ভেতরে যে মাসয়ালা-মাসায়েলগুলো লিপিবদ্ধ করা আছে, তা আমরা কুরআন ও হাদিস খুলে নিজেদের ইলমের দুর্বলতার কারণে দেখতে পাই না। যেমন অজুর ফরজ, গোসলের নির্দিষ্ট ফরজ, সুন্নাত, মাকরূহ ইত্যাদি আলাদা আলাদাভাবে নির্দিষ্ট আকারে আমরা দেখতে পাই না। কারণ আমাদের জ্ঞান কম। ইলম কম। অথচ এ মাসআলাগুলো কুরআন ও হাদিসের ভিতরে আছে। তখন আমরা মুজতাহিদ ইমামদের জ্ঞান, তাদের ইলমের প্রদীপের আলোয় কুরআন ও হাদিসের ভেতরের মাসআলাগুলোকে দেখে থাকি মাত্র। যে মাসায়েলগুলো মুজতাহিদ ইমামগণ তাদের ইলম ও ফাক্বাহাতের ফোকাস দিয়ে কুরআন ও হাদিসের ভিতর থেকে বের করে উম্মতের জন্য উন্মোচিত করে দিয়েছেন।
মূলত আমরা মানছি কুরআন ও সুন্নাহকে। কিন্তু না বুঝার কারণে সহায়তা নিচ্ছি মুজতাহিদ ইমামগণ থেকে। পরিস্কার বুঝা গেল, মাযহাবের ইমামগণ মাসআলা বানাননি, বরং তারা কুরআন ও হাদিসের ভিতর থেকে মাসআলা দেখিয়েছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে আরো পরিস্কার ধারণা রাখতে হলে আমাদের তিনটি পরিভাষা সম্পর্কে জানতে হবে। শব্দগুলো হলঃ ১-মুজতাহিদ। ২-মুকাল্লিদ। ৩-গায়রে মুকাল্লিদ।
মুজতাহিদ কাকে বলে?
যিনি কুরআন ও সুন্নাহ ঘেটে নিজে নিজে অজু গোসল, নামায, হজ্ব ইত্যাদিসহ মানুষের জীবন ঘনিষ্ট সকল মাসায়েল, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ, মুস্তাহাব, মাকরূহ, এসব ভেঙ্গে যাবার কারণ ইত্যাদি আলাদা আলাদা করে বের করে আমল করতে সক্ষম, উক্ত ব্যক্তিকে বলে মুজতাহিদ। অর্থাৎ যিনি নিজে নিজে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে জীবন ঘনিষ্ট যাবতীয় মাসায়েল বের করে আমল করার ইলমি যোগ্যতা রাখেন তাকে বলা হয় মুজতাহিদ।
যেমন চার মাযহাবের ইমামগণ ছিলেন মুজতাহিদ।
মুকাল্লিদ কাকে বলে?
মুকাল্লিদ উক্ত ব্যক্তিকে বলে, যিনি নিজে নিজে কুরআন ও সুন্নাহ ঘেটে জীবন ঘনিষ্ট সকল মাসায়েল নির্দিষ্ট আকারে বের করতে পারে না, কিন্তু যিনি পারেন, সেই মুজতাহিদের বের করা মাসায়েল অনুপাতে আমল করে আল্লাহর বিধানের পাবন্দী করেন। উক্ত ব্যক্তিকে বলা হয় মুকাল্লিদ।
যেমন আমরা সবাই হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ।
গায়রে মুকাল্লিদ কারা?
যারা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে নিজ প্রাজ্ঞতায় জীবন ঘনিষ্ঠ সমস্ত মাসায়েল নির্দিষ্ট আকারে বের করতে পারেন না, আবার যারা পারেন, সেই মুজতাহিদের উদ্ভাবিত মাসায়েল অনুসরণও করেন না, বরং নিজে নিজে পন্ডিতী করেন, তাদের বলা হয়, গায়রে মুকাল্লিদ।
তাদের উদাহরন আমি তুলে ধরতে চাই না। সম্মানিত পাঠক, আশা করি, তাদের চিনে নিতে পেরেছেন ঠিক ঠিক ভাবেই।
কয়েকটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবেঃ
দৃষ্টান্ত-১
সমুদ্রের তলদেশে হীরা মাণিক্য জহরত রয়েছে। যা সবারই প্রয়োজন। কিন্তু সবাই ডুবুরী নয়। ডুবুরী নিজ যোগ্যতায় ডুব দিয়ে সমুদ্রের তলদেশ থেকে হীরা মাণিক্য জহরত আহরণ করে তা ব্যবহার করে।
আর যারা ডুবুরী নয়, তারা উক্ত ডুবুরীর মাধ্যমে উক্ত হীরা মাণিক্য সংগ্রহ করে ব্যবহার করে।
যারা ডুব দিতে জানে না, তারা ডুবুরীর মাধ্যমে হীরা মাণিক্য জহরত পেয়ে ডুবুরীর জন্য দুআ করে। কিন্তু শুকরিয়ায় মাথা নত করে আল্লাহর দরবারে।
আরেক দল ডুবুরী নয়। আবার ডুবুরীর কাছেও যায় না, বরং ডুব না জানা সত্বেও ডুব দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
তেমনি কুরআন ও হাদিসের অভ্যন্তরে মাসায়েলের হীরা মাণিক্য জহরত লুকায়িত। মুজতাহিদ স্বীয় যোগ্যতাবলে সে মাসআলা বের করে আমল করেন। আর মুকাল্লিদরা মুজতাহিদের আহরিত মাসায়েলের হীরা মাণিক্য দ্বারা আমল করেন।
মুকাল্লিদগণ মুজতাহিদের আহরিত মাসায়েল অনুপাতে আমল করে ইবাদত করে আল্লাহর। আর মাসায়েল সংগ্রাহক মুজতাহিদের জন্য দুআ করে।
আর গায়রে মুকাল্লিদরা মুজতাহিদের কাছে না গিয়ে মাসায়েল বের করার যোগ্যতা না থাকা সত্বেও গবেষণার নামে দ্বীনের মাঝে ফিতনার সৃষ্টি করে।
দৃষ্টান্ত-২
কোন এলাকায় নবনির্মিত মসজিদের সকল মুসল্লির জন্যই অযু করার পানি প্রয়োজন। কিন্তু সবার পক্ষে জমিন খনন করে পানি বের করে অযু করা সম্ভব নয়।
তখন জমিন খনন করতে সক্ষম কোন দানবীর ব্যক্তি এসে তার অর্থ, শ্রম ও মেধা ব্যয় করে জমিন খনন করে পুকুর কেটে কিংবা নলকুপ বসিয়ে জমিনের নিচ থেকে মুসল্লিদের জন্য পানির ব্যবস্থা করে দেয়।
খননকৃত পুকুরের পানি আল্লাহর সৃষ্টি করা। সেই পানি কেবল দানবীর ব্যক্তিটি স্বীয় মুজাহাদা দিয়ে প্রকাশ ও ব্যবহার উপযোগী করে দিয়ে মুসল্লিদের উপর ইহসান করে থাকেন। অনেক সময় পানির প্রকাশক ও ব্যবস্থাপক উক্ত ব্যক্তির নামে কুপের নামকরণও হয়ে যায়। নামকরণ ব্যক্তির নামে হলেও সবাই জানেন উক্ত পানি জমিনের নিচে জমিনের সৃষ্টি লগ্ন থেকেই ছিল এবং পানির স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা। দানবীর ব্যক্তি কেবল পানির প্রকাশক।
তখন উক্ত মসজিদের মুসল্লিরা পুকুর অথবা নলকুপের পানি দ্বারা অযু করে মসজিদে প্রবেশ করে ইবাদত করেন আল্লাহর। কিন্তু যেহেতু দানবীর ব্যক্তিটি জমিনের নিচ থেকে পানির ব্যবস্থা করে দিয়ে মুসল্লিদের উপর ইহসান করেছেন, তাই মুসল্লিগণ উক্ত পানি দিয়ে অযু করে দানবীর ব্যক্তির জন্য দুআ করে।
তেমনি কুরআন সুন্নাহের গভীরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অযু, গোসল, সালাত ইত্যাদির ফরজ, সুন্নত, মুস্তাহাব ইত্যাদি কুরআন ও হাদিসের সূচনালগ্ন থেকেই তাতে প্রবিষ্ট করিয়ে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু সবার পক্ষে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে সেসব মাসায়েল নিজে নিজে বের করে আমল করা সম্ভব নয়। কিন্তু সেই মসজিদের অযুর ঘটনার মত, সবারই যেমন অযু করা প্রয়োজন। একইরকমভাবে, সবারই তেমনি আমল করা প্রয়োজন। আর এই আমলের সুবিধার্থে মুজতাহিদ ইমামগণ তাদের মুজাহাদা মেহনত দিয়ে কুরআন ও হাদিসের ভেতর থেকে মাসায়েলগুলো বের করে, আলাদা আলাদা শিরোনাম দিয়ে দিয়ে, নির্দিষ্ট আকারে লিপিবদ্ধ করে উম্মতের জন্য প্রকাশ করে দিয়েছেন।
তখন মুজতাহিদের অনুসারীরা সেসব মাসায়েল অনুপাতে দ্বীন পালন করে, আর মাসায়েল বের করে দিয়ে ইহসানকারী মুজতাহিদ ইমামদের জন্য দুআ করেন। কিন্তু ইবাদত করেন কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার।
দৃষ্টান্ত-৩
নামাযের ইমামগণ ইমাম হবার কারণে তারা সরাসরি আল্লাহর ইবাদত করেন, আর মুসল্লিরাও ইমামের অনুসরণে ইবাদত মূলত: আল্লাহ তাআলারই করেন। কিন্তু বাহ্যিকভাবে দেখা যায়, তারা অনুসরণ করেন ইমামের।
তেমনি মুজতাহিদগণ ইমাম হবার কারণে তারা সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে মাসায়েল বের করে আমল করেন, আর মুকাল্লিদগণ মুজতাহিদ ইমামদের অনুসরণে ইবাদত করেন মূলত: আল্লাহ তাআলারই। যদিও দেখা যায়, তারা বাহ্যিকভাবে অনুসরণ করেন মুজতাহিদ ইমামের।
দৃষ্টান্ত-৪
বাংলাদেশের সংবিধানের কোন আইনী জটিলতায় কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে, উক্ত ব্যক্তি সংবিধান বিশেষজ্ঞ উকিলের কাছে গমণ করেন। আর উক্ত উকিলের পথনির্দেশনায় মুআক্কিল ব্যক্তি বাংলাদেশের সংবিধান মান্য করেন।
এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি উকিলের নির্দেশনা মানার কারণে মুআক্কিলকে সংবিধান বিরোধী আখ্যায়িত করেন না। করাটা আহমকী ছাড়া আর কিছু হতেও পারে না।
তেমনি কুরআন ও সুন্নাহ হল আল্লাহর দেয়া সংবিধান। যারা এ বিষয়ে প্রাজ্ঞ নন, তারা উক্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মুজতাহিদ ইমামদের পথনির্দেশনায় আল্লাহর সংবিধান মান্য করে থাকেন। আর এটিই আল্লাহ পাকের স্পষ্ট নির্দেশনা।
আশা করি, মাযহাব অনুসরণের হাকীকত উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে এতক্ষনে পরিস্কার হয়ে গেছে। মাযহাব মানা মানে কুরআন ও হাদিসের ভিন্ন কিছু মানা নয়। বরং কুরআন ও হাদিস বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির পথনির্দেশনায় কুরআন ও হাদিস মানার নাম হল মাযহাব অনুসরণ। আর কুরআন ও হাদিস না বুঝার পরও নিজের উদ্ভট বুঝ অনুপাতে দ্বীন মানার নামই হল 'লা-মাযহাব' বা 'গায়রে মুকাল্লিদিয়্যাত'।
আল্লাহ পাক আমাদের দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুন। দ্বীনের পথে চলতে গিয়ে সমস্ত প্রকারের ধোঁকা ও প্রতারনা থেকে বেঁচে থেকে হেদায়েতের পথে চলে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের কিসমত নসিব করুন।
শুধু আমাদের পাক ভারত উপমহাদেশে নয়, সারা বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম যে হানাফি মাযহাবের উপর আমল করে চলেছেন, আসুন আমরাও কুরআন ও সহিহ হাদিসের ভিত্তিতে সংকলিত হানাফী মাযহাব অনুসরণ করে মনের প্রশান্তির সাথে ইবাদত করে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের পথে ধাবিত হই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা দ্বীন ইসলাম নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি বর্জন করে আমাদের সহীহ দ্বীনের উপর চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।
মাযহাব বিষয়ে যারা আরও বিস্তারিত জানতে চান তাদের জন্য মাযহাব বিষয়ক নির্ভরযোগ্য একটি বইয়ের ওয়েব লিঙ্ক-
Mazhab-Ki-O-Keno- Justice Allamah Taqi Usmani
অথবা,
Mazhab Ki o Keno? Justice Allamah Taqi Usmani
কৃতজ্ঞতা: নিবন্ধটি সংকলনে আহলে হক মিডিয়ার সহায়তা নেয়ায় তাদের প্রতি সবিশেষ কৃতজ্ঞতা।
প্রথম পর্বের লিঙ্ক-
মাযহাব কি? মাযহাব কেন মানবো এবং কোনটি মানবো? -পর্ব-১
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:৩০