আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। অচ্ছলা-তু অচ্ছালামু আলা সাইয়্যিদিল আমবিয়ায়ি ওয়াল মুরছালীন।ওয়া আলা- আ-লিহী ওয়া আসহা-বিহী আজমায়ী-ন। সিয়াম তথা রোজা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহ পাকের ইবাদত এবং সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার, দাম্পত্য মিলন ইত্যাদি সিয়াম বা রোযা ভঙ্গকারী সকল কর্ম থেকে বিরত থেকে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জন, আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন, মানবিক মমতাবোধের বিকাশ, তাকওয়া ও সততা অর্জনের জন্য সকল যুগের সকল বিশ্বাসী মানুষের অন্যতম প্রধান অবলম্বনের নাম সিয়াম বা রোজা। আলোচ্য নিবন্ধে সিয়াম, রমাদান এবং আল কুরআন প্রসঙ্গ আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ পাক কুরআনে হাকীমে ইরশাদ করেন:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
''রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।'' সূরা বাকারা: ১৮৫ আয়াত।
রোজা: সাওয়াব লাভের হাতিয়ার, প্রভূর প্রিয় পাত্রে পরিনত করার মাধ্যম
রমযানের এক মাস রোজা পালন করা আল্লাহ পাকের ফরয হুকুম এবং ইসলামের অন্যতম রুকন। রমাদানের রোজায় অপরিমিত সাওয়াব লাভের সুসংবাদ রয়েছে। আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের এমন মধুর আমল আর কী হতে পারে? তদুপরি শুধু রমাদানের রোজা রেখেই ক্ষান্ত নয়, এছাড়াও যথাসম্ভব আমাদের চেষ্টা করতে হবে, যাতে বেশি বেশি অতিরিক্ত বা নফল সিয়াম পালন করতে পারি। কারন, এ ব্যাপারে হাদিসে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। ফরয ও নফল সিয়ামের ফযীলতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ ছুবহা-নাহু ওয়াতাআ'-লা বলেন:
كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلا يَرْفُثْ وَلا يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ
“আদম সন্তানের সকল কর্ম তার জন্য। একমাত্র ব্যতিক্রম হলো সিয়াম, তা শুধু আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দিব। সিয়াম হলো ঢাল। তোমাদের কেউ যে দিনে সিয়াম পালন করবে সেই দিনে সে অশ্লীল বা বাজে কথা বলবে না ও চিল্লাচিল্লি, হৈচৈ বা ঝগড়াঝাটি করবে না। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে মারামারি করে তবে সে যেন বলে, আমি সিয়ামরত, আমি সিয়াম রত। মুহাম্মাদের জীবন যাঁর হাতে তার শপথ, সিয়ামরত ব্যক্তির মুখের ক্ষুধা-জনিত গন্ধ আল্লাহ পাকের নিকট মেশকের সুগন্ধির চেয়েও প্রিয়। সিয়াম পালনকারীর জন্য দু'টি সময় রয়েছে যখন সে আনন্দিত হয়: (১) যখন সে ইফতার করে তখন সে তার ইফতারীর জন্য আনন্দিত হয় এবং (২) যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাত করবে তখন সে তার সিয়ামের জন্য আনন্দিত হবে।” বুখারী, আস-সহীহ ২/৬৭৮; মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮০৭।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ مِنَ النَّارِ كَجُنَّةِ أَحَدِكُمْ مِنَ الْقِتَالِ وَصيَامٌ حَسَنٌ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ
“যুদ্ধে তোমাদের যেমন ঢাল থাকে, তেমনি জাহান্নামের আগুন থেকে ঢাল হলো সিয়াম। আর প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করা ভাল।” ইবনু খুযাইমা, আস-সহীহ ৩/১৯৩; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২৩৮। হাদীসটি সহীহ।
রমাদানের রোজার পাশাপাশি চাই বেশি বেশি নফল রোজার আমল
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন ছাড়াও যথাসম্ভব বেশি বেশি নফল সিয়াম পালনে উৎসাহ দিয়েছেন; কারণ সিয়াম তুলনাবিহীন অনন্য একটি ইবাদত। আবূ উমামা রাদিআল্লাহু তাআ'-লা বলেন, “আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে একটি আমল শিখিয়ে দিন। তিনি বলেন,
عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لا عَدْلَ لَهُ
“তুমি সিয়াম পালন করবে, সিয়ামের মত আমল আর নেই।”
আবূ উমামা বলেন, আমি তিনবার তাঁকে একইরূপ অনুরোধ করলাম এবং তিনি তিনবারই একই উত্তর দিলেন।” এজন্য আবূ উমামা প্রায় ১২ মাসই সিয়াম পালন করতেন।” নাসাঈ ৪/১৬৫; ইবনু খুযাইমা, আস-সহীহ ৩/১৯৪; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৫৮২; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২৩৮। হাদীসটি সহীহ।
নিষিদ্ধ পাঁচটি দিন এবং পবিত্র রমাদান মাস ব্যতিরেকে সারা বছর নফল রোজা পালন করা যায়। এছাড়া নফল সিয়াম পালনের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো আশুরার দিন, আরাফাতের দিন এবং শাওয়াল মাসের ৬ দিন। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার এবং প্রতি আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ নফল সিয়াম পালন বিশেষ গুরত্বপূর্ণ ইবাদত। জেনে আনন্দিত হবেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষনা করে প্রমাণ করেছে যে, মাসে কয়েক দিন সিয়াম পালন করা দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
জান্নাতের দরজাগুলি খুলে দেওয়া হয়
এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ وَصُفِّدَتْ الشَّيَاطِينُ
“রামাদান মাস যখন আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাগুলি খুলে দেওয়া হয়, এবং জাহান্নামের দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং শয়তানগেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।” বুখারী, আস-সহীহ ২/৬৭২, ৩/১১৯৪; মুসলিম, আস-সহীহ ২/৭৫৮।
أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ
“তোমাদের নিকট রামাদান মাস এসেছে। এই মাসটি বরকতময়। আল¬াহ তোমাদের উপর এই মাসের সিয়াম ফরয করেছেন। এই মাসে আসমানের দরজাগুলি খুলে দেওয়া হয়। এবং এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই মাসে দুর্বিনীত শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়। এই মাসে এমন একটি রাত আছে যা এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি সেই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত সে একেবারেই বঞ্চিত হতভাগা।” নাসাঈ, আস-সুনান ৪/১২৯; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২৪১। হাদীসটি সহীহ।
রমাদানের একটি মাস রোজা রাখা আমাদের জন্য ফরজ। আল্লাহ ছুবহা-নাহু ওয়াতাআ'-লা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর সিয়াম লিপিবদ্ধ (ফরয) করা হয়েছে, যেরূপভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” সূরা বাকারা: ১৮৩ আয়াত।
আল্লাহ ছুবহা-নাহু ওয়াতাআ'-লা এই আয়াতে বলেছেন যে, সিয়ামের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন হবে। তাক্কওয়া অর্থ- হৃদয়ের মধ্যে আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকার এবং তাঁর শাস্তি থেকে আত্মরক্ষার সার্বক্ষণিক অনুভূতি। তাক্কওয়া বুঝতে হলে আরও ভাল করে অনুধাবন করতে হবে, যে কোনো কথা, কর্ম বা চিন্তার আগেই আপনার মনে হবে, এতে আল্লাহ ছুবহা-নাহু ওয়াতাআ'-লা খুশি না বেজার হবেন। যদি আল্লাহ ছুবহা-নাহু ওয়াতাআ'-লার অসন্তুষ্টির বিষয় হয় তবে কোনো অবস্থাতেই আপনার হৃদয় সে কাজ আপনাকে করতে দেবে না। এরই নাম তাক্কওয়া।
একথা সত্য যে, পরিপূর্ণ তাকওয়া আমরা সিয়ামের মাধ্যমে অর্জন করতে পারছি না। আমরা দেখি, একজন রোজাদার প্রচণ্ড ক্ষুধা বা পিপাসায় কাতর হয়েও কোনো অবস্থাতে পানাহার করতে রাজি হন না। নিজের ঘরের মধ্যে, একাকী, নির্জনে সকল মানুষের অজান্তে ক্ষুধা কিংবা পিপাসা মেটানোর সুযোগ থাকলেও তিনি তা মেটান না। কারণ তিনি জানেন তা করলে দুনিয়ার কেউ না জানলেও আল্লাহ ছুবহা-নাহু ওয়াতাআ'-লা অবশ্যই জানবেন এবং তিনি অসন্তুষ্ট হবেন। এটা হলো তাক্কওয়ার প্রকাশ। কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা কী দেখি? দেখতে পাই, এ ব্যক্তিই রোযা অবস্থায় বা অন্য সময়ে এর চেয়ে অনেক কম ক্ষুধা পিপাসায় বা ছোট প্রলোভনে সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, গীবত, ভেজাল, ওজনে ফাঁকি, কর্মে ফাঁকি, অন্যের পাওনা না দেওয়া ও অন্যান্য কঠিনতম পাপের মধ্যে অনায়াসে নিমজ্জিত হচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এরূপ হচ্ছে? এর অন্যতম কারণ হলো আমরা মহান আল্লাহ ছুবহা-নাহু ওয়াতাআ'-লা প্রদত্ত প্রেসক্রিপশন পাল্টে ফেলেছি। কোনো রোগে যদি ডাক্তার দুটি বা তিনটি ঔষধ দেন, আর রোগী একটি ঔষধ খেয়ে সুস্থ হতে চান তাহলে তিনি প্রকৃত সুস্থতা লাভ করতে পারবেন না। মহান আল্লাহ ছুবহা-নাহু ওয়াতাআ'-লা তাক্কওয়া অর্জনের জন্য আমাদেরকে দু'টি বিষয় একত্রে দিয়েছেন: সিয়াম এবং কুরআন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা সিয়াম গ্রহন করেছি এবং কুরআন ছেড়ে দিয়েছি। এজন্য প্রকৃত ও পরিপূর্ণ তাক্কওয়া অর্জন করতে পারছি না। আল্লাহ ছুবহা-নাহু ওয়াতাআ'-লা ইরশাদ করেন:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
“রামাদান মাস। এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে।” সূরা বাকারা: ১৮৫ আয়াত।
রমাদান এবং কুরআন একে অপরের সাথে জড়িত
লক্ষ্যনীয় যে, মহান আল্লাহ পাক কুরআনের সাথে রামাদানের সিয়ামকে জড়িত করেছেন। হাদীস থেকে জানা যায় যে, দুভাবে এ সংশ্লিষ্টতা। প্রথমত রামাদানে রাত দিন কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়ত রাতে কিয়ামুল্লাইল বা তারাবীহের সালাতে কুরআন পড়া বা শুনা।
মুমিনের অন্যতম ইবাদত কুরআন তিলাওয়াত করা
মুমিনের অন্যতম ইবাদত কুরআন তিলাওয়াত করা। আল্লাহ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর কুরআন তিলাওয়াত। কুরআন কারীমের একটি আয়াত শিক্ষা করা ১০০ রাক‘আত নফল সালাতের চেয়েও উত্তম বলে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। সারা বছরই তিলাওয়াত করতে হবে। বিশেষত রামাদানে বেশি তিলাওয়াত করা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিশেষ সুন্নাত, যাতে অতিরিক্ত সাওয়াব ও বরকত রয়েছে।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের মধ্যে অনেক মুসলিমই আজ কুরআন পড়তে পারেন না। যদি দুনিয়ার কোনো মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি আপনাকে একটি চিঠি পাঠান তা পড়তে ও বুঝতে আপনি কত ব্যস্ত হন। আর কুল কায়েনাতের স্রষ্টা এবং মালিক, আপনার আমার জীবনদাতা রাব্বুল আলামীন আল্লাহ জাল্লা শা'নুহূ তাঁর হাবীব মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাধ্যমে আপনাকে এ কিতাবটি পাঠালেন, আপনি একটু পড়ে দেখলেন না! প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আল্লাহ পাকের কাছে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে আপনার আমার সকলের। তখন কী জবাব দিবেন? একটিবার মাত্র ভেবে দেখেছেন কি, যে অলৌকিকতায় পূর্ন ঐশী কিতাব পাঠ করে এখনো, আজও হাজার হাজার দিকহারা, বিভ্রান্তির অতল তলে ডুবে থাকা মানুষেরা মুক্তির সনদ খুঁজে নিচ্ছেন, হয়ে যাচ্ছেন মুসলিম, আপনি মুসলিম হয়ে সেই মধুময় কিতাবটা একটিবার পড়লেন না! মহা এই গ্রন্থের তিলাওয়াতের তাওফিক আপনার হল না!
আহ! ভেবে আশ্চর্য্য হই, আমাদের কী হল, আমরা কেন কুরআন থেকে এত দূরে? কুরআনের সাথে সম্পর্ক আমাদের এত ভঙ্গুর কেন? আমরা তো দেখেছি, আলহামদুলিল্লাহ, অনেক নও-মুসলিম আছেন যারা মুসলিম হওয়ার পরে মাত্র ৩/৪ বছরের মধ্যে কুরআনের তিলাওয়াতের পাশাপাশি তার অর্থ বুঝে পড়ার যোগ্যতাও অর্জন করে থাকেন। আহ! আফসোস, অথচ আমরা জন্ম থেকে মুসলমান! মুসলমান মা বাবার ঘরে জন্ম নেয়ার পরেও আমরা অনেকেই কুরআন পড়তে পর্যন্ত পারি না। আমাদের সময় আমরা কিসে ব্যয় করি? প্রিয় পাঠক, আমাদের জীবনের মূল্যবান মুহূর্তগুলো আমরা কোথায় খরচ করি? মনে রাখতে হবে, আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য সম্পদ। আমরা সংবাদ শুনে, পড়ে, সংবাদ পর্যালোচনা করে, অকারণ গীবত করে, বাজে গালগল্প করে কত সময় নষ্ট করি। অথচ আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত শেখার সময় আমাদের হয় না। প্রিয় ভাই এবং বোন, আপনি নিশ্চিত থাকুন, নির্ভয় এবং নিশ্চিন্ত থাকুন, কুরআন তিলাওয়াত শিখতে বেশি সময় লাগে না। নূরানী পদ্ধতি, নাদিয়া পদ্ধতিসহ বিভিন্ন আধুনকি পদ্ধতিতে মাত্র ৩/৪ মাস পড়লেই বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত শেখা যায়। আসুন, আমরা কুরআনের মাস রামাদান উপলক্ষ্যে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
“তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে ও শিক্ষা দান করে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।” সহীহ বুখারী ৪/১৯১৯।
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا
“যে ব্যক্তি কুরআনের একটি বর্ণ পাঠ করবে সে একটি পুণ্য বা নেকী অর্জন করবে। পুণ্য বা নেকীকে দশগুণ বৃদ্ধি করে প্রদান করা হবে।তিরমিযী ৫/১৭৫, নং ২৯১০। হাদীসটি সহীহ।
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ لَهُ أَجْرَانِ
“যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে সুপারদর্শী সে সম্মানিত ফিরিশতাগণের সঙ্গে। আর কুরআন তিলাওয়াত করতে যার জিহ্বা জড়িয়ে যায়, উচ্চারণে কষ্ট হয়, কিন্তু কষ্ট করে অপারগতা সত্তে¡ও সে তিলাওয়াত করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার।” সহীহ বুখারী ৬/২৭৪৩, সহীহ মুসলিম ১/৫৪৯।
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِهِ
“তোমরা কুরআন পাঠ করবে; কারণ কুরআন কিয়ামতের দিন তার সঙ্গীদের (কুরআন পাঠকারীগণের) জন্য শাফা’আত করবে।” সহীহ মুসলিম ১/৫৫৩।
আল্লাহ পাক আমাদের রমাদানের পরিপূর্ন হক্ক আদায় করে রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। তাঁর পবিত্র কালাম মহাগ্রন্থ আল কুরআন শেখার বুঝার এবং আমল করার যোগ্যতা দানে ধন্য করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২৫