কাদিয়ান গ্রামে অভিশপ্ত মিথ্যা নবুয়তের দাবীদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কবর।
কাদিয়ানী মতবাদের প্রেক্ষাপট:
ইংরেজগন উপমহাদেশের ক্ষমতা দখলের পর এ জনপদের আজাদীকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনতার উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালিত হয়। সর্বশেষ দিল্লীর শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ এর আমলে ১৮৫৭ সালে আজাদী আন্দোলন সংঘটিত হয়। ইংরেজগন এই আন্দোলনের নাম দিয়েছিল সিপাহী বিপ্লব। শেষ পর্যন্ত কতিপয় বিশ্বাসঘাতক হিন্দু মুসলিমের চরম বিশ্বাসঘাতকতার ফলে এই বিপ্লব পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। সিপাহী জনতার সেই পরাজয়ের পর ইংরেজগন উপলব্ধি করে যে, এ যুদ্ধে যদিও হিন্দু মুসলিম উভয় জাতিই অংশগ্রহন করেছে, তথাপি বিপ্লবের মূল নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলিমগন। তারা এ সত্যটিও অনুধাবন করতে পেরেছিল যে, তারা এ দেশ মুসলমানদের হাত থেকে যেহেতু কেড়ে নিয়েছে, সুতরাং সংগত কারনেই মুসলমানরা ইংরেজদের অধীনতা আনুগত্য মেনে নিতে পারে না। মুসলমানদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে না পারলে পুনরায় সুযোগ পেলেই আবার তারা বিদ্রোহ করবে। তারা মুসলমানদের চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার মানসে তাদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে থাকে। হাজার হাজার আলেমকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেয়। মুসলমানদের থেকে নবাবী-জমিদারী কেড়ে নিয়ে প্রতিবেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্টন করতে থাকে। কিন্তু শত কূট কৌশল আর নির্যাতন নিপীড়নের ষোলকলা পূর্ন করেও জিহাদের স্পৃহাতাড়িত মুসলিম জাতির অন্তর থেকে দেশমাতৃকার আজাদীর স্বপ্ন আর জিহাদের জজবা কোনভাবেই দূরীভূত করা সম্ভব হল না। হাজী শরীয়তুল্লাহর ফরায়েজী আন্দোলন, হাজী নেসার আলী তীতুমীরের বাঁশের কেল্লার সশস্ত্র বিপ্লব প্রভৃতি ঘটনাবলী ইংরেজ জাতিকে বিচলিত করে তুলেছিল। তারা ভাবল, এত কিছু করার পরও মুসলমানরা বারবার কেন বিদ্রোহ করছে? এ বিষয়ে সঠিক তথ্য উদঘাটনের জন্য ১৮৬৯ সালে উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে একটি কমিশন বা প্রতিনিধি দল ভারতে প্রেরন করা হল। এ কমিশন প্রায় এক বছর যাবত ভারতবর্ষে অবস্থান করে পর্যবেক্ষন পূর্বক বৃটিশ গভর্নমেন্টের কাছে এ ব্যাপারে যে রিপোর্ট পেশ করেছিল, তাতে বলা হয়েছিল- 'ভারতীয় মুসলমানরা কঠোরভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। মুসলমানদের ধর্মীয় নির্দেশ রয়েছে, বিজাতীয়দের শাসন মানতে নেই। তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনেই বিজাতীয়দের শাসনের বিরুদ্ধে জিহাদের নির্দেশ রয়েছে। তাদের ধর্মীয় নেতারা ফতওয়া জারি করেছে, ভারত বর্ষ দারুল হারব (শত্রু দেশ) এ পরিনত হয়েছে। এ অবস্থায় মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরয হয়ে পরেছে। জিহাদের প্রেরনায় মুসলমানরা উম্মাদের মত আত্মাহুতি দিতে পারে।' উদ্ধৃতি সূত্র- কাদিয়ানী ধর্মমত, মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী, পৃষ্ঠা ৫০-৫১।
উক্ত রিপোর্টে যে কয়েকটি বিষয়ের সুপারিশ করা হয়েছিল তার মধ্যে বিশেষ কিছু দফা প্রনিধানযোগ্য:
১. দারিদ্র্যপীড়িত সর্বহারা মুসলমানদের একটি শ্রেনিকে উপঢৌকন ও উপাধি বিতরনের মাধ্যমে বৃটিশের অনুগত করে তুলতে হবে। তারা ভারতবর্ষকে 'দারুল আমান' (শান্তির দেশ) বলে ফতওয়া দিয়ে বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ অপ্রয়োজনীয় বলে বর্ননা করবে। তারা প্রচার করবে, যে দেশে ধর্মীয় বিধি-বিধান পালন করতে রাষ্ট্রের পক্ষ হতে কোন বাধা নেই, সে দেশের সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরয হতে পারে না।
২. এ দেশের মুসলিম অধিবাসীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পীর-মুরীদীর ভক্ত। বর্তমানে মুসলমানদের মধ্য হতে আমাদের আস্থাভাজন এমন একজন পন্ডিত ব্যক্তিকে নবীরূপে দাঁড় করাতে হবে, যে বংশ পরাম্পরায় আস্থাভাজন বলে প্রমানিত হয়। দারিদ্র্যপীড়িত ধর্ম জ্ঞানহীন মুসলমানদের মধ্যে তার নবুওয়াত চালিয়ে দেয়ার জন্য আমাদের সরকার কর্তৃক তাকে সর্ব প্রকার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার নিশ্চয়তা দিতে হবে। অত:পর তথাকথিত নবী এক সময় ঘোষনা দিবে, 'আমার নিকট এই মর্মে ওহী এসেছে যে, ভারতবর্ষে বৃটিশ সরকার আল্লাহর রহমত স্বরূপ এবং ওহীর দ্বারা আল্লাহ তাআ'লা এখন থেকে জিহাদ হারাম করে দিয়েছেন।' এভাবে মুসলমানদের অন্তর থেকে জিহাদের প্রেরনা ও উম্মাদনা দূরীভূত করা সম্ভব হবে। অন্যথায় ভারতে আমাদের শাসন দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হবে না।
৩. সুপারিশমালার মধ্যে আরও ছিল- প্রথমে সে নিজেকে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় বই-পুস্তক রচনা করবে। এ কাজে তাকে গড়ে তোলার জন্য আমাদের ওরিয়েন্টালিস্টরা তাকে উপাদান সংগ্রহ করে দিবে। আমাদের গোয়েন্দা ও প্রচার বিভাগ তার রচিত পুস্তকাদি প্রকাশ ও প্রচার কাজে তাকে সহযোগিতা করবে। এরপর তার প্রতি ভক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সে নিজেকে মোজাদ্দেদ বলে দাবি করবে। এ দাবি মুসলমানদের গলাধ:করন করানোর পর পর্যায়ক্রমে সে নিজেকে মাহদী বলে দাবি করবে। অত:পর সে মুসলিম উম্মাহর 'মসীহে মাওউদ' হওয়ার দাবি করবে। এক সময় ধীরে ধীরে সে নিজেকে নবী মুহাম্মদ )সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ছায়া (জিল্লী, বুরূজী ও উম্মতী নবী) বলে দাবি করবে। (তথ্যসূত্র: কাদিয়ানী ধর্মমত, মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী, পৃষ্ঠা ৫১-৫৫ থেকে সংক্ষেপিত। গ্রন্থ রচয়িতা বলেন- আমাদের এ বক্তব্যের কিয়দাংশ 'উইলিয়াম হান্টার' রচিত 'দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস' হতে গৃহীত। এছাড়া ১৮৭০ সালে উক্ত কমিশন ও ভারতে কর্মরত পাদ্রীগনসহ সেকালের বৃটিশ সরকারের কর্মকর্তাদের লন্ডনে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সের মুদ্রিত রিপোর্ট 'দি এ্যারাইভ্যাল অব দি বৃটিশ এম্পায়ার ইন ইন্ডিয়া', 'মির্জা কী কাহিনী খোদ মির্জা কী জবানী' এবং 'মির্জায়ী তাহরীক কা পাছ মানজার' হতে উদ্ধৃত)।
প্রতিনিধি দলের সুপারিশের প্রেক্ষিতে তৎকালীন বৃটিশ সরকারের কর্মকর্তাগন মুসলমানদের মধ্য থেকে একজন নবী দাঁড় করানোর প্রস্তাবটি ইতিবাচক হিসেবে নেয়া হয় এবং ভারতে বৃটিশ সরকারের বংশ পরম্পরা দালালদের থেকে একজন নবী দাঁড় করানোর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। প্রস্তাব ও পরিকল্পনা মোতাবেক মির্জা গোলাম আহমদকে নবী হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য তারা মনোনীত করে। তাই মির্জা গোলাম আহমদ হল ইংরেজদেরই দাঁড় করানো নবী। তথ্যসূত্র: মির্জা গোলাম আহমদ যে ইংরেজদেরই দাঁড় করানো নবী তা মির্জা গোলাম আহমদের ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৮ সনে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের উদ্দেশ্যে লিখিত তার পত্রের নিম্নোক্ত বক্তব্য থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়: 'পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতায় সরকার আমার পরিবারকে একটি অনুগত ও ভক্ত পরিবাররূপে সনাক্ত করেছেন এবং বৃটিশ গভর্নমেন্টের মাননীয় অফিসারবৃন্দ সর্বদা দৃঢ় মনোভাবসহ বিভিন্ন চিঠিপত্রে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, 'নিজের লাগানো এ চারা গাছটি' -এর ব্যাপারে সুচিন্তিত, সতর্ক ও সুনজরের মনোভাব পোষন করুন এবং অধীনস্ত অফিসারদেরকে বলে দিন তারাও যেন এ পরিবারের স্বীকৃত আনুগত্য ও আন্তরিকতার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাকে ও আমার দলকে কৃপা ও মেহেরবানীর দৃষ্টিতে দেখেন'। রেফারেন্স বই ১. কাদিয়ানী মাযহাব কা ইলমী মুহাসিবাহ (নতুন সংস্করন) প্রোফেসর মুহাম্মদ ইলিয়াছ বরনী রহ. পৃষ্ঠা ৭০২। ২. তাবলীগে রিসালাত, জিলদে হাফতম, পৃষ্ঠা ১৯-২০।
পরিকল্পনা মোতাবেক গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এক সময় নিজেকে মোজাদ্দিদ (ধর্মের সংস্কারক) বলে দাবী করে বসলেন। এরপর তিনি নিজেকে ইমাম মাহদী বলে দাবী করলেন। অর্থাৎ, হাদীসে যে ইমাম মাহদীর আগমনের সুসংবাদ রয়েছে, তিনি নিজেকে দাবী করে বরলেন যে, আমিই সেই ইমাম মাহদী। অত:পর এক সময় তিনি প্রচার করতে আরম্ভ করলেন যে, মুসলমানগন যে বিশ্বাসরাখে ঈসা আলাইহিসসালাম স্বশরীরে উর্দ্ধাকাশে উত্তোলিত হয়েছেন- এটা বানোয়াট ও মিথ্যা। আসলে মরিয়মের পুত্র ঈসা নবী আকাশে উত্তোলিত হন নি। বরং তিনি তার পরিনত বয়সে কাশ্মীরে এসে স্বাভাবিক মৃত্যুবরন করেছেন। শেষ যুগে এ উম্মত হতে ঈসা মসীহ নামে একজন মহাপুরুষের আগমনের যে কথা হাদীসে বর্নিত হয়েছে, আমিই সেই প্রতিশ্রুত মসীহ। তারপর এক সময় তিনি দাবী করলেন যে, আমি 'মোহাদ্দাছ' অর্থাৎ, তার ভাষায়- 'আল্লাহ তাআ'লার সাথে ওহীর মাধ্যমে আমার কথোপকথন হয়'। তথ্যসূত্র: এযালাতুল আওহাম, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃষ্ঠা ৩২০।
বিংশ শতাব্দির শুরুতে (১৯০১ সালে) তিনি স্পষ্টভাবে আসল কথায় চলে আসলেন এবং দাবী করলেন যে, 'আমি শরীয়তের অধিকারী পূর্ন নবী'। এরপর থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি এ দাবীর উপর অটল ছিলেন। বরং মাঝে-মধ্যে অন্য সকল নবী রাসূল হতে শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবীও করেছেন। এমনকি স্বয়ং আখেরী নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবী করেছেন। (এই শেষের স্টেপ/ প্যারার তথ্যসূত্র এবং রেফারেন্স পূর্বাপর আলোচনায় সংযুক্ত।)
নবুওয়াতের ঘোষনা দেয়ার পরপরই তিনি পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ইতিপূর্বে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদকে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষনাও করেছেন।*১ ইংরেজদের আনুগত্য করার এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধাচরন না করার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টায় নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন।*২ ইংরেজ সরকারের পক্ষে পুস্তক পুস্তিকা রচনা করে এবং বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে প্রচার করেছেন। *৩ এবং পর্যায়ক্রমে তিনি অনেক কিছু দাবী করেছেন এবং মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ ও অনৈক্য সৃষ্টির জন্য অনেক নতুন নতুন আকীদা বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছেন। তার এসব দাবীর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এবং আলোড়ন সৃষ্টিকারী জঘন্য দাবী হল, মুসলমানদের সর্বসম্মত এবং সুস্পষ্ট আকীদার বিরুদ্ধে নিজেকে তিনি নবী বলে দাবী করেছেন।
১৯০৮ সালে আহলে হাদীসের বিখ্যাত আলেম মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতশরীর সাথে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী চ্যালেঞ্জ করে মুবাহালায় অবতীর্ন হন।*৪ মুবাহালা অনুষ্ঠিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে মির্জা কাদিয়ানী লাহোর শহরে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মল-মূত্রের মধ্যে পরে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে মৃত্যুবরন করেন।*৫
===========================================================================
*১. এ সম্পর্কে স্বয়ং মির্জা কাদিয়ানীর বর্ননা নিম্নরূপ: 'অদ্য হতে ধর্মের জন্য যুদ্ধ হারাম করা হল। এরপর যে ব্যক্তি ধর্মের জন্য তরবারি উঠাবে এবং গাজী নাম ধারন করে কাফেরদের হত্যা করবে, সে খোদা ও রাসূলের নাফরমান বলে গন্য হবে'। (এস্তেহার চান্দা মানারাতুল মসীহ, পৃ: বে, তে যমীমা খোতবায়ে এলহামিয়া)।
তিনি আরও বলেন: 'আমি এ উদ্দেশ্যে বহু সংখ্যক পুস্তক আরবি, ফারসী ও উর্দু ভাষায় রচনা করেছি যে, অনুগ্রহদাতা গভর্নমেন্টের (বৃটিশের) বিরুদ্ধে জিহাদ কিছুতেই দুরস্ত নেই। বরং খাঁটি মনে আনুগত্য স্বীকার করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। একই উদ্দেশ্যে আমি বহু অর্থ ব্যয়ে সে সমস্ত পুস্তক প্রকাশ করে মুসলিম দেশসমূহে পৌঁছিয়েছি। আমি জানি, এসব পুস্তকের বিস্তর প্রভাব ঐসব দেশে পরেছে। (তাবলীগ, ষষ্ঠ খন্ড, পৃ: ৬৫) তিনি আরও বলেন: 'জিহাদ নিষিদ্ধকরন ও ইংরেজ সরকারের আনুগত্য সম্পর্কে আমি এত বেশি পুস্তক রচনা করেছি ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছি যে, ঐগুলো একত্রিত করলে পঞ্চাশটি আলমারী ভর্তি হতে পারে।' তথ্যসূত্র: তিরিয়াকুল কুলূব, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃষ্ঠা-২৭।
*২. এ সম্পর্কে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভাষ্য: 'আমি অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলছি- অনুগ্রহদাতার অমঙ্গল কামনা করা হারামী ও বদকার মানুষের কাজ। সেমতে আমার মাযহাব আমি বারবার প্রকাশ করেছি যে, ইসলাম দু'ভাগে বিভক্ত- একটি খোদার আনুগত্য করা, অপরটি ঐ সাম্রাজ্যের আনুগত্য করা, যে সাম্রাজ্য শান্তি স্থাপন করেছে এবং অত্যাচারীর কবল হতে নিজের ছায়ায় আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। সকলের জানা উচিত, বৃটিশ সরকারই এরূপ সাম্রাজ্য।' তথ্যসূত্র: গোরনামাস্ত কি তাওয়াজ্জুহ, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃষ্ঠা-৩।
*৩. এ সম্পর্কে স্বয়ং মির্জা কাদিয়ানীর বর্ননা নিম্নরূপ: 'ইংরেজ সরকারের পক্ষে আমি যেসব খেদমত করেছি তা এই যে, আমি প্রায় পঞ্চাশ হাজার পুস্তক-পুস্তিকা এবং বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে এদেশে ও অন্যান্য মুসলমান দেশে প্রচার করেছি। এ সমস্ত পুস্তক পুস্তিকার আলোচ্য বিষয় ছিল এই যে, ইংরেজ সরকার আমাদের অনুগ্রহদাতা। সুতরাং, এ সরকারের খাঁটি আনুগত্য করা, মনে প্রানে এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং দোআ করা প্রত্যেকটি মুসলমানের একান্ত কর্তব্য মনে করা উচিত। এসব পুস্তক উর্দূ, ফারসী, আরবি ইত্যাদি ভাষায় রচনা করে সমস্ত মুসলিম দেশ এমনকি মক্কা ও মদিনার ন্যায় পবিত্র শহরগুলোতেও সুন্দরভাবে প্রচার করে দিয়েছি। রোমের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল, সিরিয়া, মিসর, কাবুল এবং আফগানিস্তানের বিভিন্ন শহরেও সাধ্যমত প্রচার করেছি। ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ জিহাদের নাপাক ধারনা ত্যাগ করেছে। যা মূর্খ মোল্লাদের শিক্ষায় তাদের অন্তরে বদ্ধমূল ছি। এ মহত খেদমত আঞ্জাম দিতে পারায় আমি গর্বিত। বৃটিশ ইন্ডিয়ার কোন মুসলমানই আমার খেদমতের নজির দেখাতে সক্ষম হবে না। সূত্র: সিতারা ই কাইসুরিয়্যাহ, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃষ্ঠা-৬, মাতবায়ে দিয়াউল ইসলাম কাদিয়ান, ১৮৯৯।
*৪. 'মুবাহালা' ইসলামী শরীয়াতের একটি পরিভাষা। এ প্রসঙ্গ পবিত্র কুরআনেও আলোচিত হয়েছে। শরীয়াতের পরিভাষায় হক্ক ও বাতিল, সত্য ও মিথ্যার দ্বন্ধ অবসানে, সত্যের জয় এবং অসত্যের নিপাতের উদ্দেশ্যে আল্লাহর দরবারে চরম বিনয় ও মিনতি সহকারে উভয় পক্ষের প্রার্থনাকে 'মুবাহালা' বলা হয়।
*৫. মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার দাজ্জালের যে দৃষ্টান্তমূলক পরিনতির প্রয়োজন ছিল শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এই অভিশপ্তদের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:১৬