টিসিবির পণ্য কিনে ঠকে গিয়ে এই রম্য পোষ্টখানা মারিলাম, কেউ সিরিয়াসলি নিবেন না।
বেসরকারী চ্যানেলে আজকের সন্ধ্যার খবরে বাজার দর লাগামহীন শুনে প্রধানমন্ত্রীর মাথা গরম হয়ে গেল। দেশের মানুষ ব্যবসায়ীদের দ্বারা এতো শোষিত হচ্ছে! মন্ত্রীরা তাহলে করছেটা কি? তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে ডেকে পাঠালেন। তিনি অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন আর ভাবছেন। এভাবে সবাই অসৎ হয়ে গেলে তিনি দেশ চালাবেন কিভাবে। সবাই এমন অসৎ হয়ে যাচ্ছে কেন? এই রিপোর্ট যদি সত্য হয় তাহলে পুলিশ আর দলীয় ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে টানাটানির তো কোন অধিকার কারও নেই! । এভাবে চলতে থাকলে দিন বদল না হয়ে তো রাত নেমে যাবে!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী এসে প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি বসলেন। তাদের খুব স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। আইন শৃংখলার অবনতি ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কোন উদ্বিগ্ন ভাব তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দু'জনের নির্বিকার অবস্থা দেখে প্রধানমন্ত্রীর বেশ রাগ হলো। কিন্তু ফেটে না পড়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা বেশ নিশ্চিন্তেই আছেন মনে হচ্ছে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, অতীতের দিনগুলোর চেয়ে বর্তমান দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অনেক ভাল স্যার।
অতপর বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, দ্রব্যমূল্যও জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। বাজারে জিনিসের অভাব নেই। রোজার মাস বলে হুজুগে বাঙ্গালী বেশী করে জিনিস কিনছে। এরা রমজানের কৃচ্ছ্বতা সাধন করছে না।
এবার প্রধানমন্ত্রী রাগে ফেটে পড়লেন। গলা চড়িয়ে বললেন, আপনাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনারা টিভির খবর দেখেন না অথবা উটের মতো বালিতে মুখ গুজে বসে আছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কথা বুঝতে না পেরে মন্ত্রী দু'জন একে অন্যের দিকে আড় চোখে তাকালেন। তবে বুঝতে পারলেন প্রধানমন্ত্রী রেগে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করলেন, বেসরকারী কোন চ্যানেলের সন্ধ্যার নিউজটা দেখেছেন?
দুজন প্রায় একই সুরে বললেন, দেখেছি স্যার।
গুড! আজকের নিউজের উল্লেখযোগ্য কি কি খবর ছিল বলুন তো?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, আপনার নিউজ লিড না করে তাদের এমডির গোল টেবিল বৈঠক এর খবর কভার করেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, টিভি নিউজ ব্রডকাষ্টিং নীতিমালা করা উচিত। রাষ্ট্রপতির নিউজ তারপর প্রধানমন্ত্রীর নিউজ থাকা উচিত। আর রাষ্ট্রপতির নিউজ না থাকলে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর নিউজটাই লিড হওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বললেন, চামচামি বন্ধ করেন! আপনাদের চামচামি করতে ডাকা হয়নি! কারওয়ান বাজারের কাচা বাজার সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট করা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে ভারত থেকে কচ্ছপের ডিম আমদানী করা হয়েছে। পুলিশ এবং দলীয় ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজির কারনে প্রতিদিন দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন! ইয়োলো জার্ণালিজম স্যার! আমাদের ছাত্র সংগঠন ও পুলিশের চাঁদাবাজি এখন অনেক কমে গেছে স্যার। নির্বাচনের পর ক্ষমতা গ্রহণ থেকেই মিডিয়া গুলো খামাখা আমাদের ছাত্র সংগঠনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে দোষারোপ করছে। আপনি তো জানেন, এরা সোনার ছেলে!
আপনি একথা বিশ্বাস করেন?
না.... মানে.. আমি। স্বরাষ্টমন্ত্রী তার বক্তব্য শেষ করলেন না।
এদিকটা পরে দেখব। আগে বাজার দরটা। মিঃ বাণিজ্যমন্ত্রী, আমি বাজার ভিজিট করবো।
বৃদ্ধি পাওয়া হার্টবিট সামলে নিয়ে কাপা কন্ঠে বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, কোন বাজার স্যার? কাঁচা বাজার না পাকা বাজার?
পাকা বাজার মানে?
মানে চাউল, চিনি, আটা ইত্যাদির বাজার।
কারওয়ান বাজার। এখানে কাচা পাকা সব বাজারই আছে। তাই না?
জি স্যার।
তাহলে চলুন।
এখন কিভাবে যাবেন স্যার?
কেন? সমস্যা কি?
আপনার সিকিউরিটির ব্যাপার আছে না স্যার, দলীয় ফোরামেও আপনাকে বুলেটপ্রুফ কাচের মধ্যে বসে বৈঠক করতে হয়। এসএসএফকে বলতে হবে, ডিসি ট্রাফিককে বলতে হবে। কাউকে বিশ্বাস করা যায়? কোথায় জঙ্গী লুকিয়ে আছে?!!!
তাহলে কবে যাওয়া যায় মিনিস্টার?
আগামীকাল স্যার।
দুশ্চিন্তায় বাণিজ্যমন্ত্রী রাতের খাবার খেতে পারলেন না। আধাপেটে উঠে যেতে দেখে কুলকুলী বেগম স্বামীর পিছু নিলেন। মন্ত্রী বেসিনে এসে হাত ধুচ্ছেন।
পাশে দাঁড়িয়ে কুলকুলী বেগম জিজ্ঞেস করলেন, আধা খেয়ে উঠে এলে যে? রান্না কি খারাপ হয়েছে?
তোয়ালে হাত মুছতে মুছতে নিষ্প্রাণ কন্ঠে বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, খেতে ভাল লাগছে না।
কেন? অফিসিয়ালী কোন ঝামেলা?
বাণিজ্যমন্ত্রী কোন জবাব না দিয়ে বেডরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। কুলকুলী বেগম বুঝলেন সমস্যা হয়েছে। তিনি হাত ধুয়ে দ্রুত হেটে মন্ত্রীর পিছনে দরজা ভেজিয়ে বেডরুমে ঢুকলেন। মন্ত্রী বিছানায় সটান হয়ে পড়ে আছেন। শিয়রে বসে মন্ত্রীর টেকো মাথায় হাত বুলিয়ে স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, সমস্যাটা না বললে সমাধান দেবো কিভাবে?
প্রাইম মিনিষ্টার আগামীকাল বাজার ভিজিটে যাবেন।
যাবেন! তাতে তোমার টেনশনের কি আছে?
কি বলছো তুমি! তুমি কি ভুলে গেছো আমি কমার্স মিনিষ্টার?
ভুলবো কেন! সমস্যাটা কোথায় বলো?
আমি বলেছি সাংবাদিকরা টিভি চ্যানেলে মিথ্যা রিপোর্ট দেয়। ওরা বিরোধী দলের হয়ে কাজ করছে। বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল এবং গরীবের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে। গত কয়েকদিন যাবত আমি ব্যবসায়ীদের অনেক হুশিয়ারী সংকেত দিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
কিন্তু বাজারে এর উল্টো অবস্থা এই তো?
তাই।
সমাধান অতি সহজ।
সহজ! কিভাবে?
কারওয়ান বাজারের সব দোকানদারদের ভয় দেখিয়ে বা লোভ দেখিয়ে বলতে হবে আগামীকাল প্রাইম মিনিষ্টারের বাজার পরিদর্শনের সময় সব জিনিসের দাম কমিয়ে বলতে হবে। এবং তোমার ভাড়া করা কিছু লোক রেডি রাখবে যারা প্রাইম মিনিষ্টারের সামনে জিনিসপত্র কিনবে। প্রাইম মিনিষ্টার চলে গেলে দোকানীকে আসল দাম তুমি পরিশোধ করে দিবে।
চমৎকার! কিন্তু পরে যদি অন্য মার্কেটে ভিজিটে যায় তখন?
ঢাকা সিটির সব মার্কেটে এই ব্যবস্থা নেবে। ব্যস!
পরদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী কারওয়ান বাজার পরিদর্শনে এলেন। সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা তো আছেই। প্রধানমন্ত্রী হেটে হেটে বিভিন্ন দোকানে যাচ্ছেন, তরিতরকারী হাতিয়ে দেখছেন। দাম জিজ্ঞাসা করছেন, দোকানদাররা হেসে মূল্য বলে দিচ্ছেন।
বেগুন কত কেজি?
১০ টাকা স্যার।
কি বলছেন আপনি! গতকাল টিভির রিপোর্টে আপনারাই বলেছেন বেগুনের কেজি ৭০ টাকা।
সাংবাদিকদের কাছে আমরা বাড়াইয়া বলি স্যার!
ইন্টারেস্টিং! আর পেয়াজ কতো কেজি?
২০ টাকা কেজি স্যার!
কি বলছেন? এও কি সম্ভব?
বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা করলে সবই সম্ভব স্যার!
বাণিজ্যমন্ত্রী পাশ থেকে বললেন, আমি গত সন্ধ্যায় আপনাকে বলেছি স্যার, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়মতার মধ্যেই আছে! বিরোধী দল দলীয় সাংবাদিকদের দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে!
প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট চিত্তে বললেন, আমারও তাই মনে হচ্ছে মিঃ মন্ত্রী। আশে পাশে নিশ্চয়ই ক্রেতা আছে? কিছু ক্রেতা ডেকে এনে কেনার ব্যবস্থা করুন। আমি দেখবো।
বাণিজ্যমন্ত্রী ইশারা করতেই করতেই একজন দর্শকদের কাছে চলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে বিশজন ক্রেতা কেনা কাটা করতে চলে এলো। প্রধানমন্ত্রী ওদের কেনাকাটা দেখছেন। বিশজন চলে যাবার পর আরও দশ জন এলো।
প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, আপনি প্রতিদিন একটা করে বাজার ভিজিট করবেন এবং আজকের মতো ক্রেতা দিয়ে পণ্যাদি ক্রয় দেখাবেন। আমি বিরোধীদের অভিযোগের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেবো।
ইয়েস স্যার!
বাণিজ্যমন্ত্রী ভেতরে ভেতরে ঘামতে শুরু করেছিলেন। একে তো রমজান মাস তার উপর ভাদ্র মাসের গরম। কোট টাই টিলা করতে হবে। পড়তে হবে ফিনফিনে পাঞ্জাবী। হাজার হলেও রোজার মাস। প্রধানমন্ত্রীকে অফিসে পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোবাইলে ফোন করে বললো, আচ্ছালামু আলাইকুম স্যার! আমি কারওয়ান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলছি স্যার!
বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, ধন্যবাদ আপনাকে সভাপতি সাহেব। একসেলেন্ট কাজ দেখিয়েছেন আপনারা! প্রধানমন্ত্রী বা আমি অন্য কোন মন্ত্রী বাজার ভিজিটে আসলে এই রকম কাজ করবেন। আজকের মতো নিজেদের লোককে ক্রেতা সাজিয়ে পণ্য ক্রয় দেখাবেন। ব্যস!
এ ব্যাপারে আমার একটা কথা আছে স্যার।
কি কথা সভাপতি সাহেব?
কথা ছিল বিশজন তরিতরকারী কিনবে। কিন্তু পরের দশজন আমাদের লোক ছিল না স্যার!
তাই নাকি?
জি স্যার।
এজন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে তো?
জি স্যার।
নো প্রবলেম।
থ্যাংক ইউ স্যার!