।। নাসীমুল বারী।।
একুশ এলেই মনটা অন্যরকম হয়ে যায়। একুশের ঔরস 'ভাষা আন্দোলন'এর সুতিকাগার আজিমপুর। আমার জন্ম, বেড়ে উঠাও আজিমপুরে। ভাষা আন্দোলনের জনক 'প্রিন্সিপ্যাল আবুল কাসেম' চল্লিশের দশক থেকেই আজিমপুরেই ছিলেন। নিভৃতচারী এ মানুষটির অন্তরাত্মা ছিল মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে বাঙালির নব জাগরণ। সে বোধ আর চেতনা থেকেই ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ তিনি গড়ে তোলেন ভাষা আন্দোলনের জনক সংগঠন 'তমদ্দুন মজলিশ'। কার্যালয়টিও ছিল আজিমপুরে- ১৯ আজিমপুর রোড। তমদ্দুন মজলিশের অন্যতম সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ছাত্র-শিক্ষকদের সে আন্দোলন এত গণআন্দোলনে রূপ নেয় যে, তৎকালীন প্রাদেশিক সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার অঙ্গিকার করতে বাধ্য হয়। সে জন্য চুক্তিবদ্ধও হয়। চুক্তিটি করে ১১ মার্চ, ১৯৪৮। তখন পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনটি অরাজনৈতিক ছিল।
তারপরই রাজনৈতিক থাবায় এ আন্দোলনটি জর্জরিত হয়। ক্ষতবিক্ষত এ আন্দোলন আজ ইতিহাস বিকৃত। কিন্তু আবুল কাসেম?
না, তিনি বিচ্যুত হন নি তাঁর চেতনা থেকে ন্যূনতমও। নিভৃতে চলে এসে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাকে কার্যকরি উদ্যোগ নিয়ে স্বপ্ন গড়তে থাকেন উচ্চশিক্ষা প্রদানের জন্য। উচ্চমাধ্যমিক পর্যাযের পদার্থ, রসায়ন আর গণিত বই বাংলা ভাষায় রচনা করেন। উচ্চশিক্ষার বাংলাভাষায় রচিত বই এগুলোই প্রথম। নিজের সে বই বিক্রির টাকা এবং ড. শহীদুল্লাহ ড. এনামুল হক প্রমুখের মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুদানে গড়ে তোলেন ঢাকা শহরের উপকণ্ঠে (বর্তমানে ঢাকা শহরে) বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার প্রদানের বিশাল সম্পত্তির প্রতিষ্ঠান 'বাঙলা কলেজ'।
আজকের প্রজন্ম জানে কি এ ইতিহাস? আছে এ ইতিহাস জানার কোনো সুযোগ? আজকের আমাদের গর্বের বাংলার অস্তিত্বের মৌলিক সত্ত্বাটি হারিয়ে যাচ্ছে কালের বিকৃত হাসিতে। তখনই কষ্ট মনের দরজায় এসে জোরে কড়া নেড়ে বলে 'অকৃজ্ঞ কোথাকার'!
আসলেও জাতি হিসেবে মনে হয় অকৃতজ্ঞই। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনটা কষ্টে মুচড়ে উঠল। পুরো মাসটাই আমার এমন কষ্টে কাটে প্রতি বছর।
অনুভব করছি কষ্টটা। তখনই দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। চোখ মুছতে মুছতে বললাম, স্যার আপনার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। ক্ষমা করে দেবেন আমাদের। আপনি নাম চান নি। নামের প্রচারের পিছনে ছুটেন নি, কিন্তু বাংলা প্রতিষ্ঠা চেয়েছেন মন থেকে। তা হচ্ছে হয়ত। অন্তত এটুকুর জন্যও আমাদের দায় দিবেন না।
#
১২ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১৭