মূল্যবোধ আভিধানিকভাবে দুটি শব্দের সংযোগ। মূল্য আর বোধ। মূল্য অর্থ মান, চাহিদা, দাম। বোধ অর্থ অনুভূতি উপলব্ধি। ওই দুই শব্দের সংযোগ হয় মূল্যবোধ যার অর্থ অনুভূতির মান বা উপলব্ধির ধরন। উপলব্ধি বা অনুভূতির মানটা মন চিন্তা চেতনার সাথে সম্পর্কিত। একই সাথ সমাজ ও দেশজ পরিবেশ পরিস্থিতি জড়িত। তাই মূল্যবোধ ব্যপক অর্থে একটি দার্শনিক শব্দ হলেও ঠিক এটি কোনো বিধি বা আইন নয়। নিজের চিন্তা বোধ চেতনার সাথে ধারণ করা সামজিক ও রাষ্ট্রিয় পরিবেশের সমন্বিত ও সময়গত প্রকাশই মূল্যবোধ। ব্যাক্তি থেকে সামজিক পর্যায়ে রীতিনীতি আদর্শ আচার-আচরণের সমষ্টি ও নৈতিক ভিত্তিই মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধে ব্যক্তি, সমাজ ও সময়ের সাথে ভিন্নতা কিংবা পরিবর্তনশীলতা দেখা যায়। যেমন, আমাদের দেশে গত শতকের সত্তর দশকে একজন গৃহশিক্ষক ছাত্র ও ছাত্রীকে তার গৃহে আলাদা ব্যাচে পড়াতেন। আজকের এই একবিংশ শতাব্দির ২য় দশকে গৃহশিক্ষক ছাত্র ছাত্রীকে একই ব্যাচে পড়ান। গত সত্তর দশকে শিক্ষক কিংবা অভিভাবক একই ব্যাচে ছেলে মেয়েকে পড়ানো অনুচিত মনে করতেন। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ছেলে-মেয়ে একই ব্যাচে পড়ানো ভালো চোখে দেখতো না। এই চেতনা, এই উপলব্ধিই সেই সময়ের সমাজ ধারণ করত। তাই এটা সে সময়ের মূল্যবোধ। আজ এ সময়ে দেশ-রাষ্ট্র-বিশ্ব সভ্যতার আলোকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের চেয়ে শিক্ষা অর্জন গুরুত্ব পেয়েছে। তাই এখন গৃহশিক্ষক একই ব্যাচে ছেলে-মেয়ে পড়ানোতে কোনো সমস্যা মনে করছে না। এখন এটাই সমাজ ব্যক্তির বোধ ধারণ করেছে। এটাই এখনকার মূল্যবোধ। সময় এবং পরিবেশের সাথে মূল্যবোধের এটা পরিবর্তন হয়েছে। এই পরির্তন কোনো বিধি বা আইনে হয় নি। একান্ত নিজস্ব উপলব্ধি থেকে হয়েছে। উপলব্ধির এমন মান বা স্বরূপটাই মূলত মূল্যবোধ।
সার্বিকভাবে মূল্যবোধ সমাজ জীবনের ভাল-মন্দ, উচিৎ-অনুচিত, নীতি-নৈতিকতা, আচার-আচরণের দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ মাত্র। অনেক সমাজ বিজ্ঞানী, দার্শনিক বহু গুণিজন মূল্যবোধকে সংজ্ঞায়িত করেছেন স্ব স্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে ।