"ভাই, আপনি এরকম আওয়ামি-বিরোধী হয়ে গেলেন কেন?" এক ছোটভাই জিজ্ঞেস করল। একসময় আওয়ামিলীগার ছিলাম, সেখানে থেকে তীব্র আওয়ামিবিরোধী হয়ে যাওয়া ছোটভাই মেনে নিতে পারছেনা। ছোটভাই ব্লগের সাথী, সে ২০০৭-০৮ সালের দিকে, তাই আমার চিন্তার বিবর্তনের সাক্ষী সে।
বললাম "আমি আওয়ামিবিরোধী হইছি সেটা অবাক হওয়ার বিষয় না ছোটভাই। বরং অবাক করার বিষয় হল তুমি এখনও কিভাবে আওয়ামিপন্থি রয়ে গেলা?"
"না, মানে, বিম্পি কি আম্লিক থেকে ভাল কিছু?"
"ভাল এক্সকিউজ বাইর করছ জালিমের পক্ষ নেওয়ার জন্য" বললাম আমি, "আম্লিক না বিম্পি ভাল সেটা দেশের মানুষের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ না? তারা ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবে কে তাদের জন্য ভাল।"
"না, তা ঠিক" বলল সে, "কিন্তু গণতন্ত্র কি সবসময় ভাল?"
"শুধু যখন আম্লিক ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য গণতন্ত্র পথ খুলে দেয় তখনই ভাল? অন্য সময় ভাল না, তাই না?"
"হাহা, আপনি ভুল বুঝছেন ভাইয়া, তা বলছিনা। কিন্তু অনেক দেশেই তো গণতন্ত্র ছাড়া উন্নতি করেছে। সিংগাপুরে তো গণতন্ত্র ছিল না।"
"হুমম, এটাও ভাল এক্সকিউজ। তো আমরা কি শীঘ্রই সিংগাপুর হতে যাচ্ছি?"
"সেটাও বলছিনা..।"
"তাহলে কি বলছ?"
"আসলে আম্লিকের বিকল্প নাই মনে করি।"
সেখান থেকেই কথা শুরু করছিলাম, আবার চক্র সম্পন্ন করে শুরুতে ফিরে গেলাম। আমি তর্কে গেলাম না আর। মানুষের রাজনৈতিক বিশ্বাস ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেও দৃঢ় হতে পারে অনেক। বিশেষ করে আম্লিক আর জামাতের ভক্তদের বিশ্বাস। এদের কাছে এদের দলের বিপক্ষে আপনি দুনিয়ার সব সত্য নিয়ে আসলেও আম্লিকের/জামাতের প্রতি ঈমান দূর্বল হবেনা। কোন না কোন এক্সকিউজ নিয়ে আসবেই, এক্সকিউজ দেখে আপনি হতবাকবাকুম হয়ে যাবেন। এটার সাথে শিক্ষার কোন সম্পর্ক নাই। আমার এক্সটেনডেড পরিবারের সবাই ঘোর আম্লিক, এখানে পিএইচডি-ধারী শিক্ষিতও আছে আবার খুব কম শিক্ষিতও আছে, কিন্তু আম্লিকের প্রতি ঈমানে এদের তেমন কোন হেরফের নেই। আমার কাছের এক শ্রদ্ধেয় মুরুব্বিকে যদি কেউ সরাসরি দেখান যে শেখ হাসিনা চুরি করছে, তখন তিনি বলবেন, "দেখছ, কি সুন্দর করে চুরি করছে? শেখের বেটী বলে কথা!" তাই আম্লিকের প্রতি ঈমান আনলে তাকে আর কোন ধরণের ফ্যাক্ট দিয়ে লাভ নেই, সে ঘুরেফিরে তবুও আম্লিক কেন ভাল সেই উপসংহারে চলে যাবে।
বললাম, "এসব কথা বাদ দাও, এ বিষয়ে তোমার আর আমার বুঝ আলাদা মনে হচ্ছে, তর্ক করে কোন লাভ নেই। তোমাকে একটা গল্প শুনাই, সেটা বরং ভাল হবে।"
"ঠিক আছে, শুনান।"
"ক্লাশ ফোরে পড়ে এক ছেলে, তো তার কাছে বাংলা রচনা খুব কঠিন লাগে। সে অনেক কষ্টে একটা রচনা শিখতে পারছে, "আমাদের ছোট নদী" রচনা। কিন্তু প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় আসল কুমিরের রচনা। সে লিখল, 'কুমির নদীতে থাকে, আমাদের ছোট নদীতেও কুমির আছে। এ নদীর ছোট ছোট বাঁক আছে, বৈশাখ মাসে নদীর জল কমে আসে, তখন আমরা হেটেই নদী পার হতে পারি, নদীর পানি থেকে আমাদের চাষাবাদে সহায়তা হয়, নদীতে নৌকা চালিয়ে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে, নদীর মাছ আমাদের পুষ্টি যোগায়.....।'
শিক্ষক খাতা দেখার সময় বিরক্ত হল, ছাত্রকে বকে দিল যে কুমিরের রচনাতে নদীর রচনা লেখা চলবেনা। শিক্ষক দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় একটা চালাকি করল, পরীক্ষায় দিল গরুর রচনা, ভাবল গরুর রচনাতে নদীর রচনা লেখা সম্ভব না, গরু তো আরো কুমিরের মত নদীতে থাকেনা।
কিন্তু ছাত্র লিখল, 'আমাদের একটা গরু আছে, আমার বাবা সে গরুকে আমাদের ছোট নদীতে গোসল করাতে নিয়ে যায়। এ নদীর ছোট ছোট বাঁক আছে, বৈশাখ মাসে নদীর জল কমে আসে, তখন আমরা হেটেই নদী পার হতে পারি, নদীর পানি থেকে আমাদের চাষাবাদে সহায়তা হয়, নদীতে নৌকা চালিয়ে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে, নদীর মাছ আমাদের পুষ্টি যোগায়.....।'
শিক্ষক রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ল, মনে হচ্ছে ছাত্র তার সাথে গেইম খেলছে। বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে দিল বিমানের রচনা, ভাবল এইবার জব্দ করা যাবে ছেলেটাকে, বিমান নদীতে থাকেও না, গোসলও করেনা, এখন দেখা যাবে।
ছাত্র লিখল, ''বিমান আকাশে উড়ে, কিন্তু অনেক সময় বিমান দূর্ঘটনাবশত নদীতে পড়ে যায়, আমাদের ছোট নদীতেও বিমান পড়ে যেতে পারে। এ নদীর ছোট ছোট বাঁক আছে, বৈশাখ মাসে নদীর জল কমে আসে, তখন আমরা হেটেই নদী পার হতে পারি, নদীর পানি থেকে আমাদের চাষাবাদে সহায়তা হয়, নদীতে নৌকা চালিয়ে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে, নদীর মাছ আমাদের পুষ্টি যোগায়.....।''
ছোটভাই হাসল, বলল গল্পটা বেশ মজার। তার নাকি জানা ছিলনা আগে।
আম্লিকের সমর্থকদের জন্য আম্লিক হল সেই নদী। যে বিষয়েই রচনা লিখতে বলুন তারা শেষ পর্যন্ত নদীতে গিয়ে ঠেকবে। তাই আপনারা যারা এখনও আশা নিয়ে বসে আছেন আম্লিকের সমর্থকরা, বিশেষ করে বুদ্ধিজীবিরা একসময় আম্লিকের জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, আপনারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। যারা গালিবাজ আম্লিক, তারা তো আম্লিকের কোন দোষ কোনদিন স্বীকার করবেনা, আপনাকে মা-বাপ নিয়ে অশ্লীল কথা বলবে বা পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিবে। আর যারা একটু ভদ্র আম্লিগার, তারা আপনার সাথে আম্লিকের অপশাসন, জুলুম নিয়ে একমত হবে, তবে শেষে এসে বলবে, "তবুও এটা স্বীকার করতেই হবে আম্লিকের বিকল্প নাই।"