অমুসলিমরা কি দোজখে যাবে? বিশেষ করে যারা অসম্ভব ভাল মানুষ, কিন্তু ঘটনাক্রমে অমুসলিম, তারা? ধরেন আম্রিকার এলাবামা রাজ্যের কোন এক বয়স্ক মহিলা, সারাজীবন মানুষের সেবা করেছে, অন্যের জন্য জীবন উজার করে দিছে। কোনদিন কথায় বা কাজে কষ্ট দেয়নি কাউকে। খুব কম সামর্থ্যের মধ্যেও চেষ্টা করেছে কিভাবে অন্যের দুঃখকষ্ট লাঘব করা যায়। তিনি খ্রিস্টান ধর্ম যদ্দুর জানতেন, বুঝেছেন, সবকিছু মেনে চলেছেন, এবং তিনি আসলে অন্য কোন ধর্ম যে পৃথিবীতে আছে সেটাও জানতেন না। তো তার ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা কি? এই প্রশ্নটা এম্নিতেই স্বাভাবিক প্রশ্ন, এবং এই আধুনিক জামানায় যখন মানুষে মানুষে সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ঠ্রীয়, ভৌগোলিক, ধর্মীয়, সংস্কৃতিগত, এবং ভাষাগত সমস্ত সীমারেখা উবে যাচ্ছে, তখন এ ধরনের প্রশ্ন আরো বেশি প্রাসংগিক। আমরা প্রত্যেকেই কাউকে না কাউকে চিনি যিনি মুসলমান না, কিন্তু খুবই ভাল মানুষ। তাঁদেরকে আল্লাহ দোজখে পোড়াবে?
আমি এ পোস্টে এ বিষয়টাকে ইসলামের মনিষীরা কিভাবে দেখেছেন সেটার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব। সূত্র শেষে দেয়া হল। এ পোস্টের সমস্ত ভুল আমার নিজের, আর সমস্ত ভাল কিছুর জন্য আল্লাহর প্রশংসা। আল্লাহ আমার ভুল থেকে আপনাদেরকে হেফাজত করুন! আর ইসলামের যে সমস্ত প্রাথমিক যুগের স্কলার আমাদের জন্য এরকম কঠিন দার্শনিক প্রশ্নের সুন্দর সন্তোষজনকভাবে উত্তর দিয়ে গিয়েছেন, তাদের মর্যাদা আল্লাহ জান্নাতে আরো বাড়িয়ে দিক, তাদের কাছে আমরা কি পরিমাণ ঋণী সেটা আমরা প্রায়ই ভুলে যায়, আল্লাহ আমাদেরকে তাদের প্রজ্ঞা আর জ্ঞান থেকে লাভবান হওয়ার যোগ্য করে তুলুক!
০১.
অন্যধর্মের লোকের পরকালীন বিচার কিরকম হবে এ প্রশ্নটা আদতে প্রত্যেক ধর্মকেই মীমাংসার চেষ্টা করতে হয়। ধর্মসমূহের মীমাংসার মধ্যে এ প্রশ্নের উত্তরের দুটা বিপরীত চরমপন্থী উত্তর আছে।
প্রথমটা হল শুধুমাত্র আমার ধর্মে বিশ্বাস করলেই আপনার পরকালীন মুক্তি আছে। নাহয় আপনি মুক্তি পাবেননা, এমনকি যদি আপনি বৈধ কারনে আমার ধর্ম সম্পর্কে না জানা হেতু আমার ধর্ম গ্রহণ করেননি, তবুও আপনাকে দোজখে যেতে হবে। খ্রিস্টান ধর্ম এই মত গ্রহণ করে। মূলধারার খ্রিস্টান ডক্ট্রিন হল যিশুকে আপনি শুধুমাত্র আপনার প্রভু, ঈশ্বরের পূত্র ঈশ্বর, এবং ত্রাণকর্তা মনে করলেই আপনার মুক্তি আছে। এমনকি যদি আপনি এমাজনের জংগলে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে যিশু সম্পর্কে আপনাকে কেউ বলেনি, তবুও আপনি যিশুতে বিশ্বাস আনতে হবে, না আনলে আপনার পরকালীন মুক্তি সম্ভব না। এটা একটা চরমপন্থি উত্তর। এই চরমপন্থি উত্তরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এটাতে সৃষ্টিকর্তাকে সুবিচারক মনে হয় না। সৃষ্টিকর্তাকে বরং মনে হয় একজন পরাক্রমশালী ডিক্টেটর, যিনি নিরপরাধ মানুষ, যারা সৃষ্টিকর্তার আনুমোদিত ধর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না, তাদেরও শাস্তি দিবেন।
অন্য চরমপন্থী উত্তর হল, সবাই মুক্তি পাবে, আদতে যে কোন একটা ধর্ম পালন করলেই হল। এমনকি পালন না করলেও সমস্যা নেই। স্রষ্ঠার সন্তুষ্টির জন্য হাজার হাজার পথ আছে, যত লোক তত পথ, যেকোন একটা কিছু পথ নিলেই আপনার মুক্তি। এটা সনাতন ধর্মের অনেকেই মনে করেন। ইসলামের দর্শণের মধ্যে "পেরেনিয়ালিজম" নামে একটা ধারা আছে, তারাও এই মতের অনুসারি। এ মতের একটা তাৎক্ষণিক আকর্ষণ আছে, বিশেষ করে বর্তমানে যেহেতু ধর্মকে বিভাজন সৃষ্টির অনুঘটক হিসেবে একটা প্রচার আছে, সেজন্য এই মত খুবই জনপ্রিয় এবং পলিটিকালি কারেক্ট। যদিও শুনতে ভাল শুনায় এ মীমাংসা, কিন্তু এটা যুক্তির নিরিখে বিচার করলে খেলো দর্শণ মনে হয়। ধর্মসমূহের মধ্যে অনেক মিল থাকলেও অমিলও অনেক। এবং অমিলগুলো পরষ্পরবিরোধী। যেমন খ্রিস্টান ধর্মে যিশুকে ঈশ্বর মানতে হবে। ইসলাম বলে যিশু ঈশ্বর না, যিশুকে ঈশ্বর বলা বড় পাপ, শিরকের অপরাধ। দুটো দৃষ্টিভংগীই সঠিক হতে পারে না, কেননা একটা অপরটার বিপরীত। এরকম পারষ্পরিক বিরোধী (মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ) ভিউপয়েন্টের যেহেতু দুটাই সত্য হতে পারে না, তাই সব ধর্মই স্রষ্ঠার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য এটা যৌক্তিক কোন অবস্থান না, এটা বড়দাগে আবেগী অবস্থান।
০২.
উপরে দুই চরমপন্থি অবস্থানের ব্যাখ্যা দেওয়ার পর এখন ইসলামের দিকে তাকানো যাক। প্রথমে এটা স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিৎ যে মুসলমান হলেই পরকালীন মুক্তি অবশ্যাম্ভাবী না। কারো পাপাচার থাকলে তাকে সেটার জন্য শাস্তি পেতে হতে পারে যদিনা সৃষ্টিকর্তা মাফ করে দেন। এটা যেহেতু মুসলমানদের পরকালীন মুক্তি নিয়ে পোস্ট না, তাই এ বিষয়ে আর বিশদ ব্যাখ্যায় যাচ্ছিনা।
অমুসলিমদেরকে তিনটা ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়।
ক. যাদের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছায়নি।
খ. যাদের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছাইছে কিন্তু খন্ডিতভাবে (যেমন ভুলভাবে, প্রপাগান্ডা, বা মিথ্যার মাধ্যমে)।
গ. যাদের কাছে পরিপূর্ণভাবে ইসলামের বাণী পৌঁছাইছে। (এদের আবার দু'ভাগ: যারা ইসলামের বাণী পরিপূর্ণভাবে শুনেছে কিন্তু বুঝতে পারেনি, আর যারা বুঝতে পেরেছে কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করেনি)।
ক) যাদের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছায়নি তাদেরকে আল্লাহ ইসলামের আলোকে বিচার করবেন না। মানে উপরে এলাবামার এক খ্রিস্টান মহিলার কথা বললাম, তিনি ভাল মানুষ, কিন্তু ইসলামের কথা শুনেন নি। বা পূর্বেকার সময়ে দুই নবীর আগমনের মাঝখানে আল্লাহর বাণী অনেকটাই দূর্বল হয়ে যেতে পারে, তখন সেসময়ের মানুষ যেহেতু আল্লাহর বাণী ভালমতে শুনেনি, তাদেরকে ইসলামের আলোকে বিচার করবেন না আল্লাহ। তাদের ইসলাম সম্পর্কে না শুনার ব্যাপারটা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ইসলামের কোন কিছু কারো নিয়ন্ত্রণের বাইরে হলে তাকে সেটার জন্য আল্লাহ দায়ী করেন না। এই অবস্থানের রেফারেন্স কোরান-হাদিসে অনেক, তাই এই পজিশান নিয়ে ইসলামি স্কলারদের মধ্যে তেমন কোন দ্বিমত নাই। যেমন কোরানে আছে, "......কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।" (১৭:১৫)।
খ) দ্বিতীয় শ্রেণীর অমুসলিম হল যারা ইসলামের কথা শুনেছেন কিন্তু প্রপাগান্ডার মাধ্যমে, মিথ্যা মিশ্রিত বয়ান শুনেছেন, বা ভুল বার্তা পৌঁছেছে তাদের কাছে। যেমন ধরেন বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামবিরোধী অপপ্রচার তুংগে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে। সাধারণ অনেক মানুষের পক্ষে এ প্রপাগান্ডার আসল উদ্দেশ্য, কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা সেটা বিচার করা সম্ভব না। উপরে উল্লেখিত এলাবামার খ্রিস্টান মহিলা হয়ত ফক্স নিউজে ইসলামের কথা শুনেছেন। তিনি জেনেছেন ইসলাম মানে খুন করা, ধর্ষণ করা, লুটপাট, গণহত্যা। এমতাবস্থায় তার পক্ষে ইসলাম নিয়ে ভাল ধারণা থাকার কথা না। এ ব্যাপারে স্কলারদের মত হল কেউ শুধু ইসলাম সম্পর্কে শুনলেই হবে না, বরং ইসলাম যে সঠিক এবং সুন্দর জীবনবিধান, সেটা তার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে হবে। তাই এরকম কারো বিচারও ইসলামের আলোকে হবে না।
তাহলে উপরের দুই ক এবং খ শ্রেণীকে আল্লাহ কিভাবে বিচার করবেন? সেটা নিয়ে স্কলারদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। কেউ বলেন আল্লাহ তাদের যদ্দুর মেসেজ পৌঁছল (যেমন খ্রিস্টান ধর্মে অনেক কিছুই ইসলামের মত, মিথ্যা না বলা, প্রতিবেশিকে সাহায্য করা, মানুষকে ভালাবাসা, সমকামি যৌনতায় লিপ্ত না হওয়া, ব্যভিচার না করা ইত্যাদি), সেটা অনুসারে তাদেরকে বিচার করবেন। আবার অনেকে বলেন আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের জন্য দুনিয়ার মত অবস্থা চালু করবেন, তারপর তাদের কাছে নবী পাঠাবেন। নবীর হুকুম তারা মানলে মুক্তি পাবে, না মানলে পাবেনা।
আর ইসলামের অন্যতম প্রভাবশালী মনিষী আল-গাজ্জালির মতে এদেরকে আল্লাহ বিনা শর্তে ক্ষমা করে দিবেন।
কিভাবে বিচার করবেন সেটা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও যে ব্যাপারে স্কলারদের কোন সন্দেহ/দ্বিমত নাই সেটা হল, আল্লাহ তাদের প্রতি পরিপূর্ণ সুবিচার করবেন, তাদের প্রতি কোন ধরণের অন্যায়/অবিচার করা হবে না। এবং সে সুবিচার যে পরিপূর্ণ সুবিচার সেটা যাদেরকে বিচার করা হচ্ছে তারাও সম্পূর্ণভাবে মেনে নিবেন, তারাও জানবেন যে তাদের প্রতি আল্লাহ সম্পূর্ণ সুবিচার করেছেন।
উল্লেখ্য মুসলমানদের দায়িত্ব হল ইসলামের বাণী সবার কাছে সঠিকভাবে হিকমতের সাথে পৌঁছে দেয়া, তাই উপরের দু শ্রেণীর লোকের ইসলাম সম্পর্কে না জানার দায়িত্ব মুসলমানদের উপর বর্তায়। এ দায়িত্ব পালন হবে যদি আপনি আপনার সামর্থ্য মত ইসলামের বাণী সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মেহনতের সাথে জড়িত থাকেন। সেই দায়িত্বের আওতা খালি অমুসলিম না, যারা নামে মুসলমান কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অনেক অজ্ঞ, তাদেরকে আপনি যা জানেন সেটা পৌঁছে দেয়াও দায়িত্ব। এ দায়িত্ব সম্পর্কে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে।
গ) তৃতীয় শ্রেণীর অমুসলিম হল যাদের কাছে ইসলামের বাণী পরিপূর্ণভাবে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে দুটা ভাগ। একভাগ যাদের কাছে ইসলামের বাণী সম্পূর্ণভাবে এবং সঠিকভাবে পৌছলেও তারা সেটা বুঝতে পারেনি নিজেদের বুদ্ধির বা অন্য কোন সীমাবদ্ধতার জন্য। যেমন কোন একজন অমুসলিমকে আপনি ইসলামের বাণী সম্পূর্ণভাবে পৌঁছালেন, কিন্তু তার মানসিক সমস্যা আছে বা বার্ধক্যজনিত কারনে তিনি মেসেজের সঠিকতা বুঝতে অক্ষম। তাহলে তিনিও উপরের দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষের কাতারে পড়বে।
কিন্তু যারা ইসলামের বাণী পরিপূর্ণভাবে পেয়ে, বুঝে, গ্রহণ করল না, তাদের তো কোন বৈধ এক্সকিউজ নাই। যেমন আবু জাহেল, তার অনেক মেধা/বুদ্ধি ছিল। সে বুঝেছিল ইসলাম সত্য, তবুও গ্রহণ করেনি। সেক্ষেত্রে তার কোন এক্সকিউজ নাই। যারা বুঝল যে ইসলাম সত্য ধর্ম, তাদের জন্য পরকালে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হল ইসলাম গ্রহণ করা। আবার তাই যার মেধা যত ভাল, তার বিপদ তত বেশি। দের জন্যই বলা হয়েছে "যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত।" (৩:৮৫)।
অনেক মেধাবী লোক আছে, দুনিয়ার সব কিছুর জন্য তারা অনেক সময় দেয়, কিন্তু কোরান-সুন্নাহ বুঝার জন্য তাদের সময় নেই। তারা টপলজি বুঝে, স্ট্রিং থিয়রি বুঝে, জটিল ইকুয়েশান নিমিশেই সমাধান করে, কারন এসবের জন্য তারা জীবনের পুরা সময়টাই ব্যয় করে। কিন্তু মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, আল্লাহ আমাকে কেন সৃষ্টি করেছেন, এই অস্তিত্বের প্রধাণতম প্রশ্ন, সে প্রশ্ন নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই, সেখানে অনুমানের উপর ভিত্তি করে জীবন চালিয়ে দেন। এটা তাকে দেওয়া আল্লাহর মেধার উপর অবিচার, এবং সে ব্যাপারে তাকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করা হবে।
০৩.
উপরের আলোচনায় এটা বুঝা যায় যে ইসলাম যেমন খ্রিস্টান ধর্মের মত "খ্রিস্টান না হলে তার মুক্তি নাই, এমনকি সে বৈধ কারনে খ্রিস্টানিটি নিয়ে না শুনলেও/জানলেও", এরকম চরমপন্থি অবস্থান গ্রহণ করেনা, তেমনি "সব ধর্মই সঠিক, একটা মানলেই হল", এরকম অযৌক্তিক অবস্থানও গ্রহণ করেনা। বরং ইসলাম মধ্যপন্থি, এবং আল্লাহ পরিপূর্ণ সুবিচার দিবেন সবাইকে তার মেধা, তার অবস্থান, তার বুঝ, তার কাছে কতটুকু আল্লাহর বাণী পৌঁছল সেসবের সবকিছুকে পরিপূর্ণভাবে বিবেচনায় নিয়ে।
আমরা আল্লাহর পরিপূর্ণ সুবিচার এবং অপরিসীম মমতার উপর সম্পূর্ণভাবে ভরসা করি। কেউ আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলে অমুক দোজখে যাবে কিনা, অমুক বেহেশতে যাবে কিনা, আমাদের উত্তর হবে, "তার অবস্থান, কর্ম, বিশ্বাস, তার অন্তরের অবস্থা, তার মেধা, মৃত্যুকালীন তার হালত, এসবের পরিপূর্ণ খবর রাখেন শুধুমাত্র আল্লাহ, এবং আল্লাহ পরিপূর্ণ সুবিচারকারী, অপরিসীম দয়ালু, অভূতপূর্ব মমতাময়, অসীম ক্ষমাকারী। তাঁর বিচারের উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। বাকি সবকিছু অপ্রাসংগিক এবং অলস অনুমান।" আর আমাদের নিজেদের জন্য আমরা হাশরের বিচারের ভয়ে ভীত কিন্তু আল্লাহর অপরিসীম মমতার ব্যাপারে আশাবাদি, এ দুয়ের মাঝখানে আমাদের অবস্থান।
শেষে আশা জাগানিয়া এক ঘটনার বর্ণনা করে শেষ করছি। একবার এক মহিলা তার ছোট সন্তানকে হারিয়ে খুবই পেরেশানির মধ্যে ছিল, সবাইকে জিজ্ঞেস করে বেড়ায় তার সন্তানকে কেউ দেখেছে কিনা। সন্তানহারা মাকে কেউ দেখে থাকলে তাহলে কল্পনা করা যায় কি অবস্থা হয়েছিল তার। পাগলপ্রায় হয়ে মহিলা কোন ছোট ছেলেকে দেখলেই তার কাছে গিয়ে তাকে জড়ায়ে ধরে, কিন্তু যখন দেখে তার সন্তান না, তখন তাকে ছেড়ে নিকটে অন্য ছেলের কাছে যায়, তাকে জড়ায়ে ধরে আবার, কিন্তু যখন দেখে সেও তার সন্তান না, তাকে ছেড়ে নিকটে অন্য ছেলের দিকে যায়। উন্মত্তপ্রায় মহিলার এই অবস্থা রাসুল (সাঃ) এবং সাহাবারাও খুবই পেরেশানির সাথে দেখছিলেন, তারাও চাচ্ছিলেন যেন মহিলা তাড়াতাড়ি তার ছেলেকে ফিরে পায়, যখনই কোন ছেলের দিকে যায় মহিলা, সাহাবারা দুরু দুরু বুকে আশা নিয়ে মনে মনে চাচ্ছিলেন, আহা এই ছেলেটাই যেন মহিলার হারানো সন্তান হয়। শেষে মহিলা তার সন্তানকে ফিরে পায়, ফিরে পেয়ে কি পরিমাণ যে মহিলা তাকে চুমু দিয়ে, জড়িয়ে ধরে, আনন্দের কান্না করল। সাহাবারা সবাই খুবই আপ্লুত হয়ে গেলেন এমন একটা স্বর্গীয় দৃশ্য দেখে। সবার মুখে হাসি, রাসুল (সাঃ) সারা মুখে আনন্দ নিয়ে সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন, "তোমাদের কি মনে হয় এ মা কোনদিন তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করবে?" সাহাবারা অবাক হয়ে বললেন, "না, আল্লাহর রাসুল, কোনদিনই না। সেটা কিভাবে সম্ভব।" রাসুল (সাঃ) বললেন, "মায়ের সন্তানের জন্য যা মমতা তার চেয়ে অনেক বেশি আল্লাহর মমতা তার বান্দার প্রতি।"
যারা এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চান, তারা নিচের লিংকে আরো পড়াশুনা করতে পারেন।
সূত্র:
১. Click This Link
২. Click This Link
৩. https://www.youtube.com/watch?v=cR1hhgguS5U
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৫০