০১.
সমকামিতা বিষয়ে ইসলামে কি বলে সেটা নিয়ে আমাদের জানার দরকার আছে। ইসলামী শরীয়তে অস্বীকার করে না যে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষন থাকতে পারে, এরকম আকর্ষন থাকাকে শরীয়ত পাপ মনে করে না। বরং শুধুমাত্র যখন কেউ সমকামী যৌনতায় লিপ্ত হয়, তখনই সেটা পাপ। কারো যদি সমকামী অনুভূতি থাকে, কিন্তু সে সমকামি যৌনতায় লিপ্ত না হয়, তবে তাকে আল্লাহ বরং পুরষ্কৃত করবেন, কেননা এটা তার জন্য ব্যক্তিগত জিহাদ।
০২.
প্রশ্ন আসতে পারে সমকামী অনুভূতি থাকা স্বত্ত্বেও তাকে শরীয়ত সেরকম যৌনতার অনুমতি দিচ্ছেনা, সেটা কি কিছুটা অবিচার হয়ে গেল না? না, হয়নি। কেননা একইরকম ব্যক্তিগত জিহাদে (স্ট্রাগলে) আছেন আরো অনেক মানুষ। যেমন বিয়ে পূর্ব যৌনতার ইসলামে অনুমতি নাই। লোকে নানা কারনে বালেগ হওয়ামাত্রই তো বিয়ে করতে পারে না। বরং এখন লোকজনের বিয়ে করতে ২৫-৩০ বছর হয়ে যাচ্ছে, কারো কারো আরো বেশি হচ্ছে। অথচ স্বাভাবিকভাবে লোকে যৌনতায় সক্ষম হয় ১২-১৫ বছর বয়সে। কিন্তু এই যে ১৫ বছরের মত এত লম্বা সময় সে যৌনতায় সক্ষম হয়েও বিয়েবহির্ভূত যৌনতায় লিপ্ত হচ্ছেনা, এটাও একটা ব্যক্তিগত জিহাদ। আবার অনেকে আছেন যাদের যৌনক্ষুধা অস্বাভাবিকরকম বেশি, তারা যে কোন সময় যে কোন মেয়ে দেখলে নিজেদেরকে আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য এটা বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত যে এরকম অসম্ভব যৌনক্ষুধাযুক্ত মানুষও আছে। এরকম লোকের জন্য সারাজীবনটাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা একটা জিহাদ, কেননা বিয়ের সীমার মধ্যে যৌনক্ষুধা মিটানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ দাবি করতে পারে সে পশুকামিতায় আগ্রহী, শরীয়ত এরকম আগ্রহকেও অস্বীকার করেনা। কিন্তু শরীয়ত বলে তার জন্য ব্যক্তিগত জিহাদ হচ্ছে সেরকম অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকা। কারো কারো শিশুকামিতার প্রতি আগ্রহ থাকতে পারে, তার জন্যও একই হুকুম। কেউ কেউ ক্লেপটম্যানিয়াক হয়, মানে তার থাকে অসম্ভব রকমের চুরির প্রতি আসক্তি, কোন জিনিস তার দরকার না হলেও সে চুরি করে শান্তি পায়, আনন্দ পায়। তাদের জন্য চুরি থেকে বিরত থাকা অসম্ভব কষ্টের ব্যাপার, কিন্তু শরীয়ত বলে সেটা তার জন্য ব্যক্তিগত স্ট্রাগল। এসব স্ট্রাগলের জন্য সবাই যদি অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকে, তবে তাদেরকে আল্লাহ পুরষ্কৃত করবেন। সমকামি অনুভূতি একই রকম একটা স্ট্রাগল।
তাছাড়া আল্লাহ আদতে সবাইকে কোন না কোন স্ট্রাগল বা পরীক্ষার মধ্যে রাখেন, একেক জনের পরীক্ষা একেক রকম, সবার জন্য সবার পরীক্ষা অনেক বড় ব্যাপার। যেমন কাউকে আল্লাহ গরীব ঘরে জন্ম দেন, এজন্য সে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে সে সারাজীবন বন্ঞিত থাকে, এই অবস্থায় সে কি করছে সেটাই তার পরীক্ষা। কাউকে ধনী ঘরে জন্ম দিয়েও পরীক্ষায় ফেলেন, সে তার ধনসম্পত্তি নিয়ে কিরকম আচরন করছে সেটা তার পরীক্ষা। কাউকে অন্ধ করে দুনিয়ায় পাঠান, কাউকে বধির করে। কাউকে সুন্দর বানিয়ে, কাউকে কিছুটা অসুন্দর বানিয়ে। কাউকে লম্বা করে, কাউকে শর্ট করে। কাউকে বেশি মেধা দেন, কাউকে কম। সবার জন্য সব হালতই পরীক্ষা, সে সে হালতে তার উপর যেসব হুকুম সেসব পালন করছে কিনা সেটাই পরীক্ষা। আখিরাতে আল্লাহ সবার সব হিসেবের মীমাংশা করবেন। দুনিয়ায় যার পরীক্ষা যত কঠিন ছিল, তার হিসেব তত সহজ আখিরাতে। যেহেতু আখিরাতই আসল জিন্দেগি, দুনিয়া খুবই সাময়িক, তাই আখিরাতের জিন্দেগীতে পরীক্ষা সহজ হওয়াটাই শরীয়তের দৃষ্টিতে বেশি আবেদনময়।
০৩.
এখানে শরীয়তের যে বিষয়য়টা আমাকে মুগ্ধ করেছে সেটা হল শরীয়ত সমকামি অনুভূতিকে ক্রিমিনালাইজ করেনি, সমকামি যৌনতাকে পাপ মনে করে শুধু। অথচ শরীয়তের এ পজিশান কিন্তু হাজার বছর আগের, যখন কেউ বলতনা যে সমকামিতা কারো কারো মধ্যে স্বাভাবিক হতে পারে। তখন স্কলারদের উপর পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের কোন চাপ ছিল না, আধুনিক হওয়ার কোন ইচ্ছা তাদের ছিল না। তারা ইসলামের ভিতরে থেকেই, ইসলামের সোর্স ব্যবহার করেই কিন্তু হাজার বছর আগে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে কারো কারো মধ্যে সমকামি অনুভূতি থাকতে পারে, এবং এ অনুভূতির জন্য কোন পাপ বা অপরাধ নেই। শরীয়ত মতে বিয়ে শুধু পুরুষ এবং নারীর মধ্যে, আর বিয়ে-বহির্ভূত যৌন-সম্পর্ক পাপ। যেহেতু পুরুষে পুরুষে বা নারীতে নারীতে বিয়ে হতে পারেনা, তাই সমকামি যৌনতা বিয়েবহির্ভুত যৌনতার পাপে দোষী। আর সেজন্যই সেটা অবৈধ। মূলত যে নৈতিক কারনে সমস্ত বিয়ে-বহির্ভূত যৌনতা অনৈতিক, সে একই কারনে সমকামি যৌনতাও অনৈতিক।
০৪.
সমকামিতা বিষয়ে জোরজবরদস্তিমূলক নীতি আমাগ মত বাংলাদেশেও সামনে চাপিয়ে দিবে সাম্রাজ্যবাদীরা। তাই এ বিষয়ে মুসলমানদের তাদের দ্বীনকে ভালমতে জানতে হবে। সমকামিতা বিষয়ক পশ্চিমাদের সাম্প্রতিক আগ্রহ, এছাড়াও নারীবাদ, সেক্যুলারিজম সবকিছুই মূলত সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষার মাধ্যম। শিকাগোর পলিটিকাল সায়েন্সের অধ্যাপক জন মিয়ারশাইমারের মতে পশ্চিমা সব মতবাদই মূলত সাম্রাজ্যবাদের আসল উদ্দেশ্যকে আড়াল করে আমগ মত দেশের ভোদাই সেক্যুলার শিক্ষিতদেরকে গেলানোই উদ্দেশ্য। যেমন আফগানিস্তানে/ইরাকে আক্রমণের প্রত্যক্ষ চিয়ারলিডার ছিল পশ্চিমা নারীবাদিরা। আমাদের সেক্যুলার শিক্ষিত জনগন পুরাই ভোদাই, অথবা দালালির জন্য এক পায়ে খাড়ায়া আছে, তাই ভোদাই শিক্ষিতদেরকে দিয়ে নতুন নতুন মতাদর্শের বয়ান হাজির করে সাম্রাজ্যবাদীদের উদ্দেশ্য হাসিল করা সহজই বটে। আল্লাহ যেন আমাদের সমস্ত ফিৎনা থেকে রক্ষা করেন
সংক্ষিপ্ত রেফারেন্স: 1. https://www.youtube.com/watch?v=ECTD0d0W5ug
সংক্ষিপ্ত রেফারেন্স: 2. https://www.youtube.com/watch?v=5idZNhc-iqc
ডিটেল রেফারেন্স: https://www.youtube.com/watch?v=iaW66-ZWD9k
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ২:১৪