অনেকতো হলো...
প্রেমের প্রকার, রিলেশনের ঝগড়া, এমনকি ব্রেকআপও। কেননা এবার একদম গোড়াতে যাওয়া যাক, প্রেমের একদম শুরুটায়। যে শুরুটাকে ব্লগবন্দি করার চেয়ে দুষ্কর ও অসম্ভব কাজ কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না। তবুও লেখক সাহস করছেন... আগের লেখাগুলো যে লেখকের দুঃসাহসকে চূড়ান্ত মাত্রা দিয়ে গেছে...
অনেক ভাবলাম লেখাটা কিভাবে সাজানো যায়। সময় অনুযায়ী সাজানো যেতো কিন্তু বোরিং লাগতো... প্রকারভেদ করে লাভ নেই... কোন ফরম্যাটেই আনা যাবে না। তাই ভাবলাম বিভিন্ন Aspect বা বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে লিখি।
১.মানসিক অবস্থা: আহ্! লেখার শুরুতেই শব্দের অভাব বোধ করছি। অভাব বোধ করারই কথা। কেননা রিলেশন নিয়ে ৩টা লেখার পরও, এই পর্যায়টা নিয়ে কথা বলতে গেলে সাহিত্যিক না হওয়ার কষ্টটা প্রবলভাবে অনুভব করি।
ছোট ছোট ভালোলাগা... ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র ব্যাপারগুলো.. হীম ঠান্ডা বিকেলে ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া... বৃষ্টিতে রিকশায় পাশে বসে থাকা 'ও'-র চুল থেকে শেষ নির্যাসটুকু নেয়ার চেষ্টা... চুলের ফাঁক দিয়ে সূর্যের শেষ আলো দেখায়... ভালোবাসা...
বিরক্তিগুলোকে মনের খোরাকে পরিণত করে ভালোবাসার শুরুটা... মিলিয়ে আসা বডি-স্প্রের ঘ্রাণে পাগল ভালোবাসার শুরুটা... যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা নিজেদের দেখায় ক্লান্তি নেই... ছাতাহীন ঝুম বৃষ্টিতে ভেজায় আক্ষেপ নেই... পিচ্ছিল টাইলসে বারবার স্লাইড দিয়ে চলায় একঘেঁয়েমি নেই... "যা দেখি তাই লাগে ভালো..." আর মনে চাপা হাসি... যার কিঞ্চিৎ ঠোঁটেও খুঁজে পাওয়া যাবে... এতোটাই অদ্ভূত... এতোটাই স্বস্তির... এতোটাই অস্থির... এতোটাই আনন্দের ভালোবাসার প্রথমটা....
”আমার চোখে তো সকলই শোভন,
সকলই নবীন, সকলই বিমল,
সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো ।
তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়,
হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়—
না জানে বেদন, না জানে রোদন, না জানে সাধের যাতনা যত ।”
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সারাদিন এভাবে অর্থহীন বকবক করে যেতে পারি, কিন্তু তাও এই অনুভূতি কি-বোর্ডে আনার সামর্থ্য নেই।
একেকজনের কাছে এ অনুভূতিগুলো একেক রকম। ব্যক্তিগতভাবে, আমার কাছে ভালোবাসার শুরুটা ভোর-রাতে প্রচন্ড জ্বর ছেড়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফেরার আগের ’না ঠান্ডা, না গরম’ অনুভূতির মতো...
২. কিছু কথা: প্রায় সব রিলেশনের শুরুতেই কিছু গদবাঁধা কথাবার্তা খুবই স্বাভাবিক। এই কথাগুলো বলার বা জানার ইচ্ছে কাপলদের মধ্যে প্রবল।
● "আচ্ছা, তুমি কেন আমাকে প্রোপোজ করো নাই?"
● "আচ্ছা, তুমি আমার মধ্যে কি দেখেছিলা?
● "এতো মেয়ে থাকতে আমি কেন?"
● "আমি যখন তোমাকে প্রোপোজ করলাম, তখন তোমার কি মনে হয়েছিলো....?"
● "আমার সাথে সংসার করতে গেলে তোমার খবর হয়ে যাবে।"
মজার একটা ব্যাপার, যদিও আমরা ধরেই নেই যে, রিলেশন করা হয় (বা করাই হয়) আলটিমেটলি বিয়ের জন্য, খুব কম রিলেশনই 'একদিন দু'জনের বিয়ে হবে' - এই চিন্তা থেকে গড়ে ওঠে। রিলেশনের শুরুতে ভালোলাগা আর আবেগের ভূমিকাটাই মূখ্য... বাকি চিন্তাগুলো মাথায় আসে পরে।
রিলেশনে পরে গিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন বিষয়গুলো নিয়ে ভাবনাও শুরু হয়ে যায়। এ চিন্তাগুলো কোন কারণে ছেলেদের মধ্যে তেমন একটা কাজ করে না, যতোটা মেয়েদের মধ্যে করে। ছেলেদের মধ্যে - "যখন আসবে, তখন দেখা যাবে...." এমন একটা মনোভাব দেখা যায়।
৩. আমাদের 'প্রথম': রিলেশনের শুরু থেকেই কোন কোন বিষয় নিজেদের রিলেশনের ক্ষেত্রে প্রথমবার ঘটলো, তার হিসেব রাখা শুরু হয়। মেয়েদেরকে এই হিসেবের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি সক্রিয় (এবং কার্যকর) ভূমিকায় দেখা যায়।
প্রথম দেখা, প্রথম Date, প্রথম হাত ধরা, প্রথম গাল টেপা, প্রথম Kiss, প্রথম রিকশা জার্নি, প্রথম বৃষ্টি ভেজা, প্রথম "Love You..." বলা, একসাথে প্রথম ভ্যালেন্টাইনস ডে... এমনই নানা সব 'প্রথম' -এর হিসেব রেখে থাকেন কাপলরা...
৪. ডেটিং: প্রথম দিককার ডেটিংগুলো আর যেকোন সময়ের চেয়ে আলাদা।
● প্রাথমিকভাবে দু'জনের প্রথম দেখা ও পরের বেশ ক'বারের দেখায় কিছু লজ্জা এবং "করবো কি করবো না...." বা "করা উচিৎ হবে কিনা..." ব্যাপার কাজ করে। যতো দিন যায়, যতো রিলেশনের Intimacy (মানসিক ও শারীরিক) বাড়ে ততোই এটা স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে। এই বরফ গলাটায় একটা দারুণ Thrill আর মজা আছে। তবে খুব তাড়াতড়ি এই বরফটা না গলতে দেয়াই ভালো!
● প্রথম দিককার ডেটিং প্লেসগুলো হয় খুব সতর্কভাবে পছন্দ করা। এই এলাকায় মেয়ের আত্মীয়স্বজন বেশি, তো ঐ এলাকায় ছেলের বাসা - এসব চিন্তাও উঠে আসে ডেটিং প্লেস নির্ধারণের ক্ষেত্রে।
● প্রথম দিকে ডেটিং প্লেসগুলো খুব ঘনঘন পরিবর্তিত হতে থাকে। পরে গিয়ে হাতে গোণা নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় পরিণত হয়। জায়গাগুলো এমন যেখানে কাপল খুব রিলাক্স ও চিরচেনা একটা পরিবেশ পান।
● প্রথম দিকের ডেটগুলো দু'জনের দুরন্ত সব পাগলামিতে ভরা থাকে, পরস্পরকে চমকে দেবার প্রচেষ্টা থাকে। 'ও' Expect করছে না, এমন একটা কিছু ঘটিয়ে দেবার ইচ্ছে সবসময় মনের ভেতর কাজ করে।
৫. বন্ধুকূল ও আপনজন: বন্ধুকূলে রিলেশনের একটা বিশাল প্রভাব পড়ে -
● যদি রিলেশন ফ্রেন্ড-সার্কেলের কারো সাথে হয়ে থাকে, তবে ভিন্ন কথা। কিন্তু এর বাইরের কেউ হলে এবং তাকে ফ্রেন্ডরা না চিনলে, কে সেই মেয়ে/ছেলে তা জানার প্রবল আগ্রহ ফ্রেন্ডদের মধ্যে গড়ে ওঠে।
● বন্ধুদের সাথে কথায় কথায় রিলেশনের প্রসঙ্গ তুলে আনা এবং 'ও'-কে নিয়ে কথা বলার দারুণ আগ্রহ দেখা যায়।
● আড্ডা থেকে উঠে এসে পৃথক হয়ে ফোন ধরাটা খুবই কমন।
● "আমাদের রিলেশনটা না একদমই অন্যরকম... আমি তোকে বোঝাতে পারবো না..." অথবা "ও না একদমই অন্যরকম একটা ছেলে/মেয়ে...." - বন্ধুদের এমন কথা হরহামেশাই বলা হয়ে থাকে।
৬.ফোন-ফেইসবুকে প্রভাব: রিলেশন হওয়ার একদম ঠিক পর পর ফেইসবুকে আচার-আচরণে বিশেষ কিছু পরিবর্তন আসে -
● খুব ঘন ঘন রোমান্টিক স্ট্যাটাসের দেখা মেলে। নোট, স্ট্যাটাস বা ওয়ালপোস্ট আকারে রোমান্টিক গানের দেখা মেলে। জীবনেও রবীন্দ্রনাথের গান শোনে না এমন ছেলের ওয়ালেও কবিগুরুর দেখা মিলে যেতে পারে।
● রিলেশনের একদম ঠিক পরপরই অতি উৎসাহীরা Relationship Status পরিবর্তন করে ফেলেন। যাদের কাউকে বলতে/জানাতে সমস্যা নেই তারা কার সাথে রিলেশন সেটাও জানিয়ে দেন।
● মাঝে মাঝে স্ট্যাটাসে/ওয়াল পোস্টে এমন কিছু 'সাংকেতিক শব্দ' দেখা যাবে যা ঐ কাপল চ্যাটে বা সামনাসামনি ব্যবহার করেন এবং যার অর্থ কাপল বাদে আর কেউ জানে না। তাই কাপল বাদে বাকিরা বেকুবের মতো এই ভাবের আদান-প্রদান দেখে যান। এগুলোর Reply-ও ঐরকম সাংকেতিকই হয়ে থাকে। চোখ মারা ইমোর ব্যবহার বেশি হয়। একটা ছোট্ট শুধু হাসির ইমোর পেছনেও অনেক অর্থ লুকনো থাকে।
● পরস্পরের কমেন্টে লাইকের বন্যা বয়ে যায়। রিপ্লাইয়ের পরিমাণ দেখলে মনে হবে ফেইসবুকে যে চ্যাটিং বলে কিছু আছে তা এদের মনে নাই।
● রিলেশনের এ পর্যায়টায় স্ট্যাটাসের দৈর্ঘ্য কমে আসে। ইনফ্যাক্ট খুব রোমান্টিক দিন কাটিয়ে ফেইসবুকে দু'জনেই যে স্ট্যাটাসখানা দেন তার সাইজ খুব বেশি হলে ৮-১৫ শব্দের হয়।
● দু'জনকেই বা অন্তত একজনের মধ্যে অপরের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টের ওপর অধিকার জন্মেছে এমন আচরণ করতে দেখা যায়। কোন ফ্রেন্ড ফেইসবুকে কি বললো না বললো তা নিয়ে জবাবদিহিতাও করতে হয়।
● Newsfeed ভর্তি শুধু একে অপরের কমেন্টের রিপ্লাই আর লাইকের দেখা মেলে...
ফোনের ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবর্তনগুলো বেশ মজার -
● FnF রেট কম এমন একটি সিম দু'জনেই ব্যবহার করবে। দরকার হলে নতুন সিম কার্ড কিনবে। কেউ কেউ নতুন হ্যান্ডসেটও।
● আগে SMS-এর প্রতি তেমন একটা আগ্রহ না থাকলেও ইদানিং হাত আর থামছেই না।
● রিলেশনের প্রথম দিকে রাতে কথা বলাটা একটা বড় বিষয়। দু’জনের একজনের এক্ষেত্রে আগ্রহটা একটু বেশিই হয়। রাতে ঠিকমতো কথা না হওয়াটা তার কাছে বিশাল Discredit বলে মনে হবে। কথা না বলা নিয়ে ঝগড়া পর্যন্ত হয়ে যায়। রিলেশনের এ পর্যায়ে রাত ১ টায় শুরু করে ভোর ৫/৬ টা পর্যন্ত কথা বলাও অস্বাভাবিক না।
৭. ঝগড়া, বিরহ, ফিরে আসা ও কিছু শিক্ষা: রিলেশনের শুরুর দিকে ঝগড়া খুব একটা আনকমন কিছু নয়। ঝগড়া প্রায়ই হতে পারে। In fact এখানে একটা মজা আছে।
* রিলেশনের শুরুর দিকের ঝগড়ার টপিকগুলো Silly হয় বা খুব সহজেই এড়ানো যেতো এমন হয়। রিলেশনের আয়ু যতো বাড়তে থাকে ঝগড়ার বিষয়গুলো ততো সিরিয়াস হতে থাকে। ঝগড়া কমার কারণ, প্রথম দিকে যতোবার ঝগড়া হয়েছে ততোবার একে অন্যের ব্যাপারে একটু একটু করে জেনেছে। বুঝতে পেরেছে কোন জিনিসটা 'ও'-র পছন্দ না, কোনটা বললে 'ও'-র অস্বস্তি লাগে, বা কোন টপিকটা তুললে ও বাইরে না বললেও ভেতরে ভেতরে ঠিকই রাগ করবে। প্রতিবার ঝগড়ার পরে ১০ গুণ বেশি সময় ধরে সেই ঝগড়া মেটানোয় ক্লান্ত আর বারে বারে ঝগড়ায় ক্ষত-বিক্ষত মনটা তাই সহজ হিসেব-নিকেশটা কষে adjustment-টা আপনিই করে নেয়। আর বিষয়াদি সিরিয়াস হতে থাকার কারণ, Silly বিষয়গুলোর ঝগড়াতো আগেই শেষ... এরপর যাই হবে সিরিয়াস ইস্যুতেই হবে।*
ব্যতিক্রম: যে কাপলরা অভ্যাসবশত ঝগড়া করে থাকেন তারকাচিহ্নিত অংশ তাদের জন্য নয়।
৮. পজেসিভনেস (Possessiveness): শব্দটা বাংলা করতে গেলে ভালো শোনাবে না - 'দখলদারি মনোভাব...'। ইংলিশটায় কিঞ্চিৎ রোমান্টিকতা আছে।
● 'পজেসিভনেস' শব্দটা শুনেই আঁতকে ওঠার কিছু নেই। ন্যূনতম পরিমাণ পজেসিভনেস ছাড়া রিলেশন টিকিয়ে রাখার কথা চিন্তা করাও ভুল। বিপত্তিটা হয় যখন পজেসিভনেসটা প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত হয়ে যায়, সন্দেহের পর্যায়ে চলে যায় বা ব্যক্তি স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করে। রিলেশনের একদম শুরুতে এই লঙ্ঘণটা খুব বেশি হয়। কারণ মনের মধ্যে হারানোর একটা ভয় কাজ করে। রিলেশনে যতো সময় যায়, যতো স্থিতিশীলতা আসে, ততো এই ভয়টাও লোপ পায়। তাতে পজেসিভনেস হারায় না, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হারে আর থাকে না।
● প্রথম প্রথম 'একটু পর পর ফোন দিয়ে এনগেজ কিনা চেক করা...' বা "তোমার ওয়ালে এইটা কি লিখসে, কারা এইসব আউল-ফাউল, তোমাকে অ্যাড করসে..." - বলা কিংবা "হঠাৎ বিকেলবেলা টিএসসিতে কি করো...?" - কড়া জিজ্ঞাসার ভঙ্গিতে এমনটা জিজ্ঞেস করলেও, রিলেশনে পরে হয়তো এমন সময়ও যাবে যখন সারাদিনে একবারও কথা হয়নি।
● মজার ব্যাপার - পজেসিভনেস রিলেশন থাকা অবস্থায় ছেলেদের অনেক বেশি থাকে, আর বিয়ের পর মেয়েদের।
৯. অন্যান্য:
● এটা অনেক পুরনো কথা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠিক। রিলেশনের এই পর্যায়ের ভাবুক মন সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। ঠিক যেভাবে ব্রেকআপের পরের বিদগ্ধ মনও ঘটায়।
● রিলেশনের পরে এমন একটা সময় আসে যখন এই প্রাথমিক পর্যায়ের সাথে তারা ঐ সময়ের তুলনা করবেন... কিছু বিষয়ে আফসোস করবেন আর কিছু বিষয়ে কত ছেলেমানুষী করেছেন তা ভেবে হাসবেন।
(এটা অত্যন্ত নির্লজ্জ একটি প্রচেষ্টা জ্ঞান জাহির করার। ইনফ্যাক্ট এই পোস্টের অবজারভেশন বাস্তবতা থেকে পুরোপুরি ভিন্ন হতে পারে। লেখক দাবি করেন না এই পোস্টে বলা সব কথা বাস্তবে একদম ঠিক ঠিক মিলে যাবে, তবে কারো কারো এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মিললেও মিলতে পারে।)
একই বিষয়ে লেখকের অন্যান্য জ্ঞানগর্ভ গবেষণাসমূহ:
১. প্রেম - কত প্রকার ও কি কি - সবিস্তারে বর্ননা (১৮+ পোস্ট) ♥♂♀
২. রিলেশনের ঝগড়া
৩. ছেলেদের ব্রেক আপ