মিস উইন্ডোজ এক্সপির সাথে আমার প্রথম পরিচয় ২০০২ এ এক বন্ধুর পিসিতে। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বংশের এই সুন্দরী কণ্যার "লুনা-সৌন্দর্য্য" দেখে আমি বেশ চমকিত হয়েছিলাম। সত্যি বলতে গেলে কি সেই প্রথম দেখাতেই আমি ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আর সেদিন থেকেই মনের ভেতরে একটা কথা গেঁথে গিয়েছিলো - যেমন করেই হোক এক্সপিকে আমার চাই। সেই দেখার পরে পরবর্তী ৩ বছরে এক্সপির সাথে আমার আরো বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে, যতোবারই দেখেছি আমি নতুন করে মুগ্ধ হয়েছি।
২০০৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরের কথা। বাবার কানে আমি বিয়ের কথাটা তুললাম, আর পাত্রী কে তাও কি বলে দিতে হবে? শুনে বাবাও রাজী হয়ে গেলেন। ক'দিনের মাঝেই বিয়ের সব বন্দোবস্ত করে ফেললেন। স্বাভাবিকভাবেই একমাত্র ছেলের এই শখ মেটাতে বাবা বিয়েতে ৬৫,০০০ টাকা খরচ করলেন। বিয়ে হলো, সাথে বোনাস পেলাম শ্যালিকা উইন্ডোজ ৯৮কেও। আসলো আমার বাসর রাতের দিন। শুরুতেই আমি তার ঘোমটা তুলতে না তুলতেই সে সব হার্ডওয়্যার ঠিকমতো ডিটেক্ট করে আপনা আপনিই ড্রাইভার ইন্সটল করে নেয়। বুঝলাম শুধু সুন্দরী OSই নয়, আমি একই সাথে পেয়েছি একটি সংসারী ও গোছানো টাইপ বউ। এক্সপিকে ততোদিনে আমি অনেকবার দেখেছি, কিন্তু আজকের মতো আর কোনোদিন নয়। সে আজ ও শুধু আমার, একান্তই আমার। সে অনুভূতি, সে আনন্দ - পৃথিবীর কোন মানুষের সাধ্য কি তাকে ভাষায় প্রকাশ করে?
আমাদের শুরুটা ভালোই ছিলো। হানিমুনে আমি ওকে কোন কষ্ট দেইনি, বরং দিয়েছি কোন সফটওয়্যার ছাড়া Run করবার স্বাধীনতা, দিয়েছি সম্পূর্ণ Error বিহীন ভাবে চলার আনন্দ। ৫১২ মেগাবাইট র্যাম আর ১২০ গিগাবাইটের ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে আমি ওর আনন্দকে আরো কয়েকগুণে বাড়িয়ে দেই। প্রতি মাসে ওকে নতুন থিমে সাজিয়ে দিতাম আমি। মাঝে মাঝে ঘন্টার পর ঘন্টা গেইম খেলতাম ওর সাথে আমি, গেইম ক্লোজ দিয়ে বের হবার পর ওকে একটু ক্লান্ত দেখাতো, কিন্তু তাও মুখে একটা হাসি নিয়ে ঠিকই ডেস্কটপে ফিরিয়ে আনতো আমায়। নিয়মিত টেম্পোরারী ফাইল পিরিষ্কার করে আর Defragment দিয়ে দিয়ে ওর সেই হাসি আমি চিরদিন ধরে রাখতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু দিন যায়, মাস যায় - যায় বছরও। বাস্তবতার রূঢ় ছায়া আমাদের সম্পর্ককে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে লাগে। সংসার জীবন হয়ে ওঠে ব্যস্ততাপূর্ণ। শত শত সফটওয়্যার ইন্সটল করি আমি, গেইমের পর গেইম খেলি। ধীরে ধীরে ওর দিকে আমার নজর কমতে থাকে। আর এই সুযোগে আমারই অলক্ষ্যে ওর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে পাড়ার কিছু দুশ্চরিত্র ভাইরাস আর ট্রোজানের সাথে। প্রথমে আমি অতোটা আমল দেইনি। কিন্তু একটা সময় গিয়ে আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। একরাতে আমাদের ঝগড়া হলো, আমার আর সহ্য হচ্ছিলো না। দিলাম ওকে Format দিয়ে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে। শ্যালিকা আমার এই দুঃসময়ের সঙ্গী হলো। দুলাভাইকে অনেক বুঝালো, সংসারটাতো ধরে রাখতে হবে।
ফলাফল যা হবার তাই হলো। সিডি ঢুকিয়ে ইন্সটল দিয়ে ওকে বাপের বাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনলাম আমি। আবার সেই সংসার, আবার সেই ব্যস্ততা। তারপরে আরো অনেকদিন আমার সাথে ওর ঝগড়া হয়েছে। মাঝে মাঝে ফরম্যাট দিয়ে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। আবার কখনো কখানো বান্ধবীর বাসা থেকে System Restore দিয়ে ফিরিয়ে এনেছি। ধীরে ধীরে সংসার জীবনের যাতনা আমাকে একটু একটু করে নিঃশেষ করে দিচ্ছিলো। ও আর আগের মতো গোছানো আর সংসারী ছিলো না। বরং যেনো ছিলো অনেকটাই বেপরোয়া। কেমন যেন একটা অনিশ্চিয়তা কাজ করতো ওর মধ্যে। আগে যেমন ওকে কোন একটা কাজ করতে বলতে মোটামুটি নিশ্চিৎভাবে ধরে নিতাম ও এটা পারবে, ধীরে ধীরে ব্যাপারটা আর তেমন রইলো না। ও না বলতে শিখে গেলো। শুরু হলো আমার দাম্পত্য জীবনে কম্প্যাটিবিলিটি নামক যাতনা। আমি আর পারছিলাম না........আর না..........
২০০৭ সাল, আমার সংসার এখন আর সংসার নেই, যেনো কোন ক্লান্ত রণাঙ্গণ যে প্রতি মুহূর্তে বলছে - "এবার আমায় রেহাই দাও!" যৌতুক স্বরূপ শশুর বিল গেটসের কাছ থেকে বিয়ের সময়ই এককালীন Service Pack 1 আর Service Pack 2 পেয়েছিলাম। ২০০৮ এ এসে আমাদের মধ্যে এই সংসার নামক যুদ্ধ দেখে শশুরমশাইয়ের বোধোহয় খানিকটা দয়া হলো মেয়েটার কথা চিন্তা করে। হাজার হোক নিজের মেয়েতো, নিজের মেয়ের সংসার ভাঙতে দেখলে কোন বাবারই না খারাপ লাগে। আর তারই ফলস্বরূপ পেলাম নগদ Service Pack 3। কিন্তু কোন সার্ভিস প্যাকে কি আর সংসারের ভাঙন জোড়া লাগে? কাজ কিছুই হলো না.........
এমনই একটা সময়ে আমার জীবনে যেনো নতুন বসন্ত এলো। এক্সপির ছোট বোন উইন্ডোজ ভিসতা যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে এসেছে। আমি ওকে আগে কখনো দেখিনি। প্রথম দেখলাম আবারো এক বন্ধুর বাসায়। দেখে আমি থ! একি দেখি? এও কি সম্ভব? OS নাকি পরী? ওর Aero থিমের সৌন্দর্য্য আমার মনের ঘুমিয়ে যাওয়া অনুভূতিগুলোকে ফের জাগিয়ে তুললো। সাইডবারের সেই চাউনি আর অসাধারণ GUI এর কাছে আমার মন যেনো নতি স্বীকার করলো। ওর GUI কাছে আমার এক্সপির GUI তো অতি নগণ্য গুঁই সাপের চামড়ার মতো। মাশাল্লাহ্ শশুর আব্বা, কিছু সুন্দর মেয়ে পয়দা করছেন।
অল্প পরিচয়েই আমি ভিসতার সাথে ঘন ঘন দেখা করা শুরু করলাম। কখনো নেটে, কখনো কোন বন্ধুর বাসায় আবার কখনো বা আইডিবিতে। ওর সৌন্দর্য্যে আমি এতোটাই মুগ্ধ ছিলাম যে একদিন বাসায় এসে এক্সপিকে Vista Transformation Pack বিউটি পার্লারে পাঠিয়ে মেকওভার দিলাম। কিন্তু ওসব কি আর ওর মতো ব্যাগডেটেড মেয়ের ধাতে সয়? আবার নতুন করে ইন্সটল করতে হলো ওকে। বুঝলাম, কাক যতোই ময়ূরের পালক লাগাক না কেন, কখনো ময়ূর হতে পারে না।
আজ ২০০৮ এর শেষে এসে ভিসতা আর আমার সম্পর্ক চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। এমনই অবস্থা যে এক্সপিকে ডিভোর্স দেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি মনে মনে নিতে আমাকে আর দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয়নি। বাবাকে অলরেডি জানিয়েছিও এই সিদ্ধান্তের কথা, বাবা আশ্বাস দিয়েছেন সব ব্যবস্থা করে দেবেন। এক্সপি আমাদের এই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করার কথা যানতো, কিন্তু কখনো আমায় কিছু জিজ্ঞেস করেনি। সামান্য প্রতিবাদও করেনি। আসলে ও নিজেও জানে ওর আর বেশিদিন নেই। কোন এক অদ্ভূত কারনে এই শেষ সময়ে এসে ও আবার আগের সেই লক্ষ্মী বউয়ের মতো আচরণ করছে। আসলে মাঝে মাঝে খারাপই লাগে। তবে কি আমি ভুল কোন সিদ্ধান্ত নিলাম। না তা হতে পারে না। আপনারা হয়তো ভাবছেন, ভিসতার জন্য আমার প্রেম চিরস্থায়ী হবে। কিন্তু আসলেই কি তাই? সম্প্রতি নেটে আমার শশুরমশাইয়ের সর্ব কনিষ্ঠতম কণ্যা উইন্ডোজ সেভেনের বাল্যকালের স্ক্রিন শট আর ফিচার দেখলাম। ভবিষ্যতে উইন্ডোজ সেভেন রূপে, গুণে, সৌন্দর্য্যে ভিসতাকে ছাড়িয়ে যাবে সন্দেহ নেই কোন। আগামী ২০১০ এ উইন্ডোজ সেভেনের বেটা ভার্শন ছেড়ে বিয়ের বয়সে পদার্পণের কথা আছে। কে বলতে পারে উইন্ডোজ সেভেনের প্রেমে পাগল হয়ে আমি ভিসতাকে ছেড়ে দেবোনা?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:০৫