প্লেটোর সঠিক জন্ম তারিখ জানা যায়নি। প্রাচীন তথ্যসূত্রগুলো অধ্যয়নের মাধ্যমে আধুনিকতম বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্লেটো ৪২৮ থেকে ৪২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কোন এক সময়ে গ্রিসের এথেন্স বা এজিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এরিস্টন। ডায়োজিনিস লিরটিয়াসের প্রদত্ত তথ্যমতে এরিস্টনের পূর্বপুরুষ ছিল এথেন্সের রাজা কডরাস এবং মেসেনিয়ার রাজা মেলানথাস। প্লেটোর মা,র নাম পেরিকটিওন যার পারিবারিক পূর্বপুরুষ ছিল বিখ্যাত এথেনীয় আইনজ্ঞ এবং কবি সোলন। এ হিসেবে প্লেটো মা এবং বাবা উভয় দিক দিয়েই বিশেষ বংশমর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাছাড়াও প্লেটো সুদর্শন ও স্বাস্থ্যবান ছিলেন। বলা হয়ে থাকে আয়তাকার কাঁধের অধিকারী ছিলেন বলেই সবাই তাকে প্লেটো নামে ডাকতো। দর্শনের প্রতি অনন্যসাধারণ নিষ্ঠা ছাড়াও তার বেশ কিছু গুণ ছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তিনি সৈনিক এবং ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রভূত সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।প্লেটো যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তা শিক্ষা গ্রহণের জন্য ছিল সুবশেষ অনুকূল। এই সুযোগের সঠিক সদ্ব্যবহার করেতে পেরেছিলেন প্লেটো। সমকালীন শিক্ষার সবরকম সুযোগ সুবিধাই তিনি গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। হিরাক্লিটাসের একটি বিখ্যাত দার্শনিক মত ছিল পরিবর্তনশীল ইন্দ্রিয়জগৎ সম্পর্কে কোন স্থিত জ্ঞান সম্ভব নয়। এরিস্টটলের মতে এই দার্শনিক মতের সাথে প্লেটো বাল্যকালেই পরিচিত হয়েছিলেন। তাছাড়াও প্লেটোর জীবনে সেসময় প্রভাব পড়েছিল পারমেনাইডিস এবং পিথাগোরাসের দর্শনের।প্লেটোর জীবনে সবচেয়ে বেশি যিনি প্রভাব ফেলেছিলেন তিনি হলেন তার শিক্ষক মহামতি সক্রেটিস। তার জীবনে সক্রেটিসের প্রভাব অতি সুস্পষ্ট কারণ সক্রেটিসের সব কথোপকথন প্লেটোই লিখে গেছেন। শৈশবকাল থেকেই প্লেটোর সাথে সক্রেটিসের পরিচয় ছিল।
প্লেটো রচিত কিছু গ্রন্থাবলীর নাম
এপোলজি (Apology) এথেন্সের আদালতে সক্রেটিস কিভাবে আত্নপক্ষ সমার্থন করেন এই গ্রন্থে প্লেটো তারই বর্ননা দিয়েছেন ।
ক্রিটো (Crito) তে সক্রেটিসকে একজন বিশ্বস্ত রাজভক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে।
ইউথ্রিফ্রনে (Euthyphron) ধর্মের প্রকৃতি।
ল্যচেস (Laches) এ সাহসিকতা।
আইয়নে (Ion) অনুধ্যানবিহীন সেনাপতি এবং কবি ব্যক্তি সম্পর্কিত।
প্রোটাগোরাস (Protagoras) এটা তার অযথার্থবাদ এবং সক্রেটিসের যথার্থবাদের আলোচনা।
চারমাইডিসে (Charmydes) মিতাচার সম্পর্কে।
লাইসিসে (Lysis) বন্ধুত্ব সম্পর্কে।
রিপাবলিক (Republic) গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
জর্জিয়াসে (Gorgias) জ্ঞান এবং শক্তির তুলনামূলক উৎকৃষ্টতা সম্বন্ধে।
মেনোতে (Meno) সত্যতা এবং জ্ঞানের মাত্রাভেদ, সহজাত ও লৌকিক ধারণার প্রয়োগিক মূল্য সম্পর্কে।
ইউথিডেমাসে (Euthydemus) সোফিস্টদের ক্ষেত্রে সঠিক আদর্শগত মানদ বিষয়ক।
ক্রেটিলাসে (Cratylus) ভাষাতত্ত্ব সম্পর্কে।
ফিডোতে (Phaedo) আত্মার অমরতা।
ফিড্রাসে (Phaedrus) তার্কিকদের বিচারের প্রতিবাদ।
থিয়্যাটিটাসে (Theaetetus) রাষ্ট্র এবং দর্শন তথা ইন্দ্রিয়লব্ধ ও বৌদ্ধিক জ্ঞানের অসঙ্গতি সম্পর্কে।
পারমেনাইডিসে (Parmenides) সত্তা এবং জগতের সম্পর্ক।
সোফিস্টে (Sophist) তাদের ইন্দ্রিয়লব্ধ বিচ্ছিন্ন জ্ঞানের অসারতা এবং সার্বিক প্রজ্ঞালব্ধ জ্ঞানের যৌক্তিকতা প্রদর্শিত হয়।
ফাইলিবাসে (Philebus) সুখ এবং শুভের ধারণা।
টাইমীয়াসে (Timaeus) সৃষ্টিতত্ত্ব এবং
লজে (Laws) রিপাবলিকে স্বীয় মন্তব্যের আংশিক প্রত্যাহার এবং রাষ্ট্র ও আইন বিষয়ে মূল্যবান আলোচনা সংযোজিত হয়েছে।
প্লেটো তার The Republic গ্রন্থে সাম্যবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি তৎকালীন অর্থ সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সাম্যবাদ এর ধারণা দিয়েছিলেন। আধুনিক সাম্যবাদ হলো প্লেটোর কাছ থেকে ধার করা সাম্যবাদ। আধুনিক সাম্যবাদে শুধু ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপের কথা বলা হয়। আসলে দেখা যায় প্লেটোর সাম্যবাদের কিছু অংশ বর্তমানেও বাস্তব।প্লেটোর মৃত্যু সম্পর্কে অনেক সূত্র পাওয়া যায়। একটি বিকৃত গল্পের পাণ্ডুলিপির সূত্র থেকে জানা যায় একটি ছোট মেয়ে তার কাছে বাঁশী বাজানো অবস্থায় প্লেটো তার বিছানায় স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আরেক বর্ণনা অনুযায়ী প্লেটো একটি বিয়ের ভোজ খেতে গেলে সেখানেই মারা যান।
ফ্রান্সিস বেকন অন্যতম আরেক দার্শনিক ব্যাক্তি
স্যার ফ্রান্সিস বেকন একাধারে একজন ইংরেজ দার্শনিক, আইনজ্ঞ, কুটনৈতীক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক। আইনজীবি হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও তিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের প্রবক্তা এবং জ্ঞানান্ধতা ও গোঁড়ামি বিরোধী হিসেবে সুখ্যাত হন।ফ্রান্সিস বেকনকে অভিজ্ঞতাবাদের জনক বলা হয়। তিনি দর্শনিক চিন্তাধারার কিছু মৌলিক তত্ব প্রবর্তন করেন যেগুলোকে বেকনিয়ান মেথডও বলা হয়ে থাকে। কোন জিনিষের উৎস অনুষন্ধানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াগুলো তিনিই প্রবর্তন করেন। এইসব প্রক্রিয়াকে সংক্ষেপে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া বলা হয়।ফ্রান্সিস বেকন ১৬০৩ সালে নাইটহুড পান। তাছাড়াও ১৬১৮ এবং ১৬২১ সালে ব্যারন ভিরলাম এবং ভিসকাউন্ট সেন্ট এলবান উপাধি পান। যেহেতু মৃত্যুর সময় তার কোন উত্তরশুরী ছিল না তাই পরবর্তীকালে তার উপাধিগুলো বিলীন হয়ে যায়।
কনফুসিয়াস অন্যতম আরেক দার্শনিক ব্যাক্তি
কনফুসিয়াস বা খোং ছিঔ, তবে এখন খোং ফ়ুৎস্যি বা খোং ৎস্যি অর্থাৎ খোং গুরু নামে সুপরিচিত ।জীবনকাল, খ্রি.পূ. ৫৫১-৪৭৯ প্রাচীন চীনের প্রখ্যাত দার্শনিক এবং চিন্তাবিদ। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৫৫১ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর চীনের লু রাষ্ট্রের ছুফু শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার দর্শন এবং রচনাবলী চীনসহ পূর্ব এশিয়ার জীবনদর্শনে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। কনফুসিয়াস মূলত নীতিবাদী দার্শনিক ছিলেন। তার বিশ্বাস ছিল শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে নীতিজ্ঞান। এই প্রাচীন চীনা দার্শনিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৫