somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমরেশ মজুমদার এর বিখ্যাত উপন্যাস সাতকাহন এর চরিত্র দীপাবলী কে নিয়ে আমার কিছু প্রতিক্রিয়া

১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষা গ্রহন নারী-পুরুষ উভয়েরই জন্যই প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় শিক্ষা মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে প্রকৃতি থেকেই পেয়ে থাকে যা দ্বারা দৈনন্দিন কার্যাবলী করা সম্ভব। প্রাথমিক শিক্ষা মানুষের অর্জিত জ্ঞানকে লিখতে এবং হিসাব নিকাশ করতে সহায়তা করে। কারিগরি শিক্ষা যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও কারিগরি কাজ করতে সহায়তা করে। উচ্চ শিক্ষা মানুষকে তার মানবীয় গুনাবলী ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করে। উচ্চ শিক্ষা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উচ্চা শিক্ষা প্রদানে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই আছে শুধু সার্টিফিকেট তৈরীর কারখানা। তাই সকলের ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ ও নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নারীদের উচ্চ শিক্ষা সমাজের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনতে সক্ষম নয়। আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষা মেয়েদের করেছে অস্থিতিশীল। শিক্ষার তিনটি স্তর রয়েছে। যে প্রথম স্তরে প্রবেশ করে সে অহংকারী হয়ে ওঠে, যে দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ করে সে বিনয়ী হয় আর যে শিক্ষার তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করে তিনি মনে করেন তিনি কিছুই জানার সুযোগ পান নি তাকে আরও অনেক কিছু শিক্ষা গ্রহন করতে কবে। আমাদের উচ্চশিক্ষিত মেয়েরা জ্ঞানের প্রথম স্তরে প্রবেশ করে অহংকারী হয়ে ওঠে। অহংকার পতনের মূল। উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে মেয়েরা বিয়ে এবং সংসারে মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। মাস্টার্স পাশ করতে গিয়ে একটা মেয়ে বিয়ের বয়স পার করে ফেলে তার চেহারার লাবণ্য হারিয়ে যায় ফলে উপযুক্ত পাত্র মেলা ভার। আবার অনেক মেয়ে রূপ-লাবণ্য ধরে রাখলেও অহংকারে উপযুক্ত ছেলে না পেয়ে আজীবন কুমারী থাকার সিদ্ধান্ত নেন। আবার অনেক মেয়ে চাকুরী/ব্যবসা/ক্যারীয়ার নিয়ে এতো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে বিয়ে করার সময় পান না। আর যে সকল উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে-শাদী করা সুযোগ পান তারা সংসারে মনোযোগী হতে পারে না। দৈনন্দিন সংসারের কাজ তাদের কাছে অপাংতেয় বা অপ্রয়োজনীয় বা কাজের লোকের কাজ মনে করে। তাই শিক্ষিত মেয়েরা (তথাকথিত শিক্ষিত) অর্জিত জ্ঞানকে সংসারে কাজে না লাগিয়ে ভুল জায়গায় এসেছে মনে করে আফসোস করে সোনার সংসারকে নরকে রূপান্তর করে ছাড়ে। ইসলাম ধর্মে নারীদের যে মূল্যায়ন করেছে বা তাদের যে সংসারধর্মের শিক্ষা দিয়েছে তা অশিক্ষার ছোবলে পড়ে খুইয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন এর নামে নারীদের ঘরের বাইরে এনে ইসলাম ধর্ম বা মুসলিম উম্মার ক্ষতি করা যে পশ্চিমা বিশ্বের নীল নকশা তা নারীবাদী বা নারী উদ্যোক্তারা টের পাচ্ছেন না। বাংলাদেশের একমাত্র গারো উপজাতি মাতৃপ্রধান। কিন্তু তথা কথিত শিক্ষিত নারীগণ সমগ্র সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের প্রাধান্য দিতে গিয়ে প্রচলিত সমাজে বিশৃংখলা তৈরীতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলছে। চাকুরীজীবি নারীরা সংসারে পান থেকে চুন খসলে ডিভোর্স দিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী পরিচয় দিচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নে কি পরিবার বা সমাজের ক্ষমতায়ন হচ্ছে এটা এখন ভেবে দেখার বিষয়।
বিখ্যাত লেখক সমরেশ মজুমদার তার কালজয়ী উপন্যাস “সাতকাহন” এর মাধ্যমে দীপাবলী নামক এক আত্মপ্রত্যায়ী, সংগ্রামী উচ্চশিক্ষিত নারীর জীবনের ঘটনাবলী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। এখানে লেখকের মুন্সিয়ানার মাধ্যমে বাঙালী নারীদের জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার যে চিত্র একছেন তা প্রশংসনীয় তবে বাস্তব সম্মত নয়। উচ্চ শিক্ষা আধুনিক নারীদের চিন্তার স্বাধীনতা ও পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে চাকরি করার স্বাধীনতা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তাই বলে সংসারী হওয়ার বিপক্ষে যাওয়া সমীচীন নয়। পুরুষ ও নারীর গঠনগত পার্থক্য থাকার কারনে তাদের কাজের ধরনও আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু লেখক দীপাবলীকে পুরুষের সাথে সমান তালে চালাতে গিয়ে দীপাবলীকে একটা সম্মানজনক জায়গায় পৌঁছাতে পারলেও তার অনুসারীদের বিপথগামী করেছেন বলে মনে হচ্ছে।দূই খন্ডের দীর্ঘ উপন্যাস “সাতকাহন” এ অসাধারণ লিখনীর মাধ্যমে লেখক ইতিবাচকভাবে দীপাবলীর মাঝ বয়স পযর্ন্ত জীবনীটা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এত কোন সন্দেহ নাই। তবে শেখ খন্ডে শেষ দিকে দেখিয়েছেন যে, দীপাবলী উল্লেখযোগ্য কোন কারন ছাড়াই তার স্বামীকে ছেড়ে চাকরির উপর ভর করে একটা মেগা সিটিতে নানান প্রতিকূলতার মাঝে একাকী থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে যা বাস্তব সম্মত নয়। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে একজন মানুষ আর একজন মানুষের উপর নির্ভরশীল। একাকী বসবাস করা প্রায় অসম্ভব। প্রকৃতির নিয়ম লঙ্ঘন করে দীপাবলী কি একাকী সারাজীবন কাটোতে সমর্থ কি না সে বিষয়ে লেখক কোন ধারনা দেন নি।
দীপাবলী অশীতিপর বৃদ্ধা ঠাকুর মা কে নিয়ে কিছুদিন স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটালেও বাকি জীবন মানসিক যন্ত্রনা ও সামাজিক-পারিবারিক সমস্যায় জর্জড়িত হয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে থাকতে হবে সে বিষয়ে লেখকের কোন পর্যবেক্ষন নেই। তাই মনে হলো দীপাবলীর জীবনের কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে সংসারী করে সুন্দর পারিবারিক জীবন উপহার দেওয়া উচিৎ। সমরেশ মজুমদারে লেখা থেকে উৎসাহিত হয়ে লেখা “দীপাবলী” নামে উপন্যাসটির কাহিনী সাতকাহনের কাহিনীকে ঘিরেই এগিয়েছে। আমি সর্বদা নারীর ক্ষমতায়ন ও উচ্চ শিক্ষার পক্ষে তবে তা যেন হয় বাস্তব সম্মত ও প্রচলিত সমাজ-রাষ্ট্র কাঠামোর শৃঙ্খলা পরিপন্থী না হয়। ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে প্রতিটি নারী হোক স্বাবলম্বী ও সংসারে স্বামী-স্ত্রী হোক একে অপরের পরিপূরক।
আমার লেখা কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কোন সম্প্রদায়কে হেয় করার জন্য নয় বরং মানব জীবনের সৌন্দর্য তুলে ধরা। এতে করে কারো মনে কোন দূঃখ দিয়ে থাকলে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। বইটি পড়ে মতামত দিলে কৃতার্থ হবো। কোন ভুল/ত্রুটি দৃষ্টি গোচর হলে ধরিয়ে দিলে তা সানন্দচিত্তে গ্রহণ করা হবে এবং পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করা হবে ইনশাল্লাহ।সবার আশির্বাদ কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:০১
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঢাকায় শান্তিতে বসবাসের জায়গাগুলো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৪৪






ঢাকায় শান্তিতে বসবাস করা যায় যেসব এলাকা: একটি বাস্তবভিত্তিক পর্যালোচনা

ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী শহর, জনসংখ্যা ও যানজটের দিক থেকে অন্যতম ব্যস্ততম নগরী হলেও এখানকার কিছু কিছু এলাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হেজেমনি, কাউন্টার-হেজেমনি ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:২৪


একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে নিঃশব্দ অথচ গভীর যুদ্ধ চলে তার ইন্টেলেকচুয়াল সেক্টরে। গোলা-বারুদের বদলে এখানে অস্ত্র হয় কলম, টকশো, নাটক, পাঠ্যবই, এবং ইউটিউব। বাংলাদেশে এই হেজেমনি বহুদিন ছিল প্রথম আলো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে দলীয় সরকার কখনই জনগণের সরকার হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:২৫



সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করলেও আওয়ামী লীগ সেটা স্বীকার করলো না। সেজন্য তারা বাকশাল নামে একদলীয় শাসন শুরু করে ছিল। কিন্তু সেনা বিদ্রোহে তাদের বাকশালী শাসনের অবসান ঘটে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রস্থান-পথ কঠিন হয়ে গেছে মুহাম্মদ ইউনূসের

লিখেছেন কবির য়াহমদ্্, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ২:২৪



অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের (৮ই আগস্ট ২০২৪ থেকে চলমান...) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা ছাড়ার পথ কঠিন হয়ে গেছে।

এমনিতেই তার পদ ছাড়ার প্রবল অনাগ্রহ, তার ওপর আছে ক্ষমতা গ্রহণের পরের মাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃষ্টি ঝরছে সারাদিন

লিখেছেন সামিয়া, ৩১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪



ইচ্ছা ছিল প্রথম আষাঢ়ে ছাদে যাবো
বৃষ্টি দেখতে,
যাওয়া হয় নাই।
বৃষ্টি তো আর ক্যালেন্ডার দেখে আসে না।
সে কখনো মাসের আগেভাগেই দরজায় কড়া নাড়ে,
আবার কখনো হুট করে হাওয়ায়
হালকা জলছবি আঁকে।

বৃষ্টি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×