হিজাব আর বোরখা নিয়ে আমার যথেষ্ট পরিমানে আগ্রহ এবং কৌতূহল আছে। মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর পাচ্ছি না। মেয়ে মানুষ গুলো প্রকৃত কারনে কেন হিজাব পরে আমার জানা নাই। তবে লোকমুখে যা শুনে আসছি তার অর্থ বা ব্যাখ্যা ঠিক এই রকম।
যেমন, হিজাব করা হয় মাথার চুল ঢেকে রাখার জন্য। পর পুরুষ বা বেগানা কোন পুরুষ যেন মাথার চুল দেখতে না পায় তাই হিজাব করে মাথার চুল ঢেকে রাখা হয়। কারন চুল বের হয়ে থাকলে পুরুষ মানুষ এর কাম বাসনার উদয় হতে পারে এবং মেয়েদের দৃশ্যমান কেশবিন্যাসের কারনে শরীরে কাম উত্তেজনা দৃশ্যমান হতে পারে।
এখন আমার প্রশ্ন হল, একজন মানুষ এর সম্পূর্ণ শরীরের কোন অংশটি সবচেয়ে বেশী আকর্ষণীয়? আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন আমি অবশ্যই মুখমণ্ডলের কথা সবার আগে বলবো। কারন মানব শরীরে বা প্রথম দর্শনে সবার নজর মুখমণ্ডলের দিকেই সরাসরি চলে যায়। মুখশ্রী ভাল হলেই তাকে আমরা বলি অনিন্দ্য সুন্দর, মায়াময়, মোহনীয় , সুদর্শন অথবা সুশ্রী। মুখমণ্ডলের পর আসে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অথবা কেশ। তাহলে মুখমণ্ডলের চেয়ে কেশবিন্যাসের আকর্ষণ ক্ষমতা কি সবচেয়ে বেশী?
মুখমণ্ডলটি খোলা রেখে হিজাব করার মানে টা আমার ঠিক বোধগম্য নয়। আসল আকর্ষণীয় অংশটি খোলা রেখে কেশবিন্যাস ঢাকতে হিজাবের ফ্যাশনটা আজকাল বড় বেশী চোখে লাগে। তাহলে মুখমণ্ডল খোলা রেখে পাহাড় সমান উঁচু হিজাবি নারীরা আসলেই কি পুরুষদের লোভনীয় কামাত্ত দৃষ্টি থেকে মুক্ত? আপনি কি বলেন?
আমি বলি, কখনই না। বরং আজকালকার হিজাবি মেয়েদের ফ্যাশন দেখে নিজেই রীতিমত থতমত খাই। ইয়া বড় বড় উটের পিঠের কুঁজোর মতো মাথাটাকে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে রাখে। মুখ ভর্তি অতিরঞ্জিত মেকআপ দিয়ে রাঙিয়ে রাখে। আবেদনময়ি চোখের সাজে ইয়া লম্বা করে কাজল টানে। ঠোঁটে সলিড রঙের কড়া লিপস্টিক অথবা গ্লসি বোল্ড ঠোঁট নিয়ে ঠাটিয়ে চলে। আর পরনে ফিটিংস লম্বা আলখাল্লা। দেখেলেই মনে হয় আবেদনময়ী নারী তার সাজসজ্জা দিয়ে বোঝাতে চাইছেন তোমরা সকলে আমাকে দেখ। প্রানভরে দেখ। আমি সুন্দর করে সেজেছি তাই দেখ। কিন্তু আমি হিজাব করেছি। হিজাবের সহি সম্মানার্থে আমাকে ভদ্রভাবে দেখ। খারাপ নজরে দেখ না। খারাপ নজর দিও না কারন আমি ইসলামের বিধান অনুযায়ী হিজাব করেছি এবং পুরো শরীর বোরখা (ফিটিংস আলখাল্লা) দিয়ে ঢেকেছি। আমাকে দেখে কাম রসে ভিজে যেও না।
আচ্ছা বলুনতো, বোরখা কেমন হউয়া উচিৎ? আঁটসাঁট নাকি ঢিলেঢালা? যেন শরীরের শেপ বোঝা না যায় সেরকম। তাহলে এই হিজাবি অতিরঞ্জিত মেকআপ দিয়ে রাঙ্গানো মেয়েরা আঁটসাঁট বোরখা কেন পরে? এটা কি শরিয়ত মতো নিয়ম মেনে পরা হচ্ছে? ইসলাম কি বলে? এইরকম করে কি ইসলাম নারীদের চলার অনুমতি দিয়েছে? যদি দিয়ে থাকে অনুরোধ করি রেফারেন্স সহ বইটির নাম জানাবেন।
আর যদি এমন কোন নিয়ম না থেকে থাকে তাহলে আপনারা এই রকম ইসলাম অবমাননাকারি নারীদের বিরুদ্ধে কোন আইনি বাবস্থা নিচ্ছেন না কেন? কেন তাদেরকে ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়ার জন্য গ্রেফতার করছেন না? নাকি এই জন্য করছেন না যে, তারা আপনাদের চলার পথের আনন্দের খোঁড়াক। রাস্তাঘাটে , কলেজ, ইউনিভারসিটিতে, কর্মক্ষেত্রে ননস্টপ বিনোদন আর যৌন আকাঙ্ক্ষা নিবারনের খোঁড়াক। সাময়িক কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী বিনা মূল্যে লোভনীয় আইটেম গার্ল, যা যখন তখন দেখে তৃপ্ত হয়া যায়। বিকৃত পৈশাচিক আনন্দ পাওয়া যায়।
একটা কথা বলুনতো , যদি ধর্ম পালন করতেই হয় তাহলে তা যথার্থ ভাবে পালন করা উচিৎ কিনা বলুন? আর যদি পালন না করা যায় নিয়মকে এভাবে বিকৃত করে পালন করা কোন ভাবেই উচিৎ নয়। কারন এভাবে মতভেদ সৃষ্টি হয়। ধর্ম হয় প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্বাসে পরে ছেদ। ভিত্তি হয় নড়বড়ে। কি লাভ এই ভণ্ডামি করে। ধর্মের দোহাই দিয়ে কি লাভ এই বিকৃত ফ্যাশন করে? এর চেয়ে হিজাব আর বোরখা না পরেই মনের মতো পোশাক পড়ুন। যেমন ইচ্ছে পোশাক পড়ুন। আপনার ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ান। আপনার ইচ্ছেমত সাজুন। মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজুন। নিজেকে সুন্দর করে সাজান। কেউ কিছু বলবে না। শুধু মাত্র ধর্মের নামে ভণ্ডামি করবেন না। নিজেদের মান টুকু নষ্ট করবেন না।
আমি নারী জাতিকে কখনও অসম্মান করিনা। ওটা আমার এখতিয়ারে পরে না। আমি জানার জন্য জিজ্ঞেস করি মাত্র। আমরাও ফ্যাশন করি। দেশের বাহিরে থাকার সুবাদে পোশাকের স্বাধীনতা বাংলাদেশের চেয়ে বহু গুন বেশী। সেটাও যেমন দেখেছি আবার এখানে হিজাব/ বোরখা ধারীদের ফ্যাশন এর স্টাইল ও অন্যরকম বা চোখে লাগার মতো। আমি তো আর মধ্যা বয়স্কা নই, ফ্যাশন সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা রাখি/করি।
আমার মোদ্দা কথা হল আপনি যা খুশি পড়ুন যা ইচ্ছা পড়ুন কোন আপত্তি নেই। আপত্তি হল যখন হিজাব/ বোরখা ধারীদের কারো সাথে কথা বলি বা ইসলাম সম্পর্কে এই এরাই যখন অনেক বড় বড় বয়ান দেন বা তাদের বাবা মাকে উগ্র পন্থি হতে শুনি/দেখি সেখানেই সমস্যা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৫