বিষয়টি বর্তমান সময়ের একটি চলমান ইস্যু।একটা উক্তি দিয়ে আমি আমার লেখা শুরু করলাম, আর তাহলো,
“কলরেট নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই, আমার তো ইমু আছে।”
-জৈনিক ভদ্রলোক
এই কথা বলার মানে আবার এই নয় যে, আমি ইমু কে ব্রান্ডিং করছি অথবা কোনো সোশ্যাল নেটওয়ার্ক কে।অন্যদিকে যারা বলছেন, আমাদের ইমু আছে! তাদের কি ডাটা চার্জ পে করতে হয় না? যদিও ইন্টারনেট ভ্যাট ১৫% থেকে ৫% করেছে বি.টি.আর.সি।
যাইহোক, বেশি মনে হোক অথবা কম মনে হোক এটাও যার যার ব্যক্তি বিশেষের নিজস্ব অবস্থান থেকে মতামত।কিন্তু আমরা আজ শুধুই কথা বলবো বি.টি.আর.সির পরিবর্তিত কল রেট নিয়ে।
এই আর্টিকেলটি লিখছি মধ্যবিত্তদের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে।কারণ আমার মতে, মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি হিসেবি হয়।আর একটি বিষয় আপনাদের কাছে পরিষ্কার করছি,
অন-নেটঃ এর মানে হলো একই অপারেটর।অর্থ্যাৎ গ্রামীনফোন টু গ্রামীণফোন বা রবি টু রবি ইত্যাদি বোঝায়।
অফ-নেটঃ এর মানে হলো ভিন্ন-ভিন্ন অপারেটর।যেমন, গ্রামীণফোন টু রবি অথবা রবি টু বাংলালিংক ইত্যাদি বোঝায়।
এখন কোন অপারেটর সবচেয়ে ভালো আর কোনটি সবচেয়ে খারাপ সেটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো, পরিবর্তিত কল রেট আমাদের জন্য স্বস্তি না কি ভোগান্তির নাম!
প্রথমেই কথা বলবো, গ্রামীণফোন বা জিপি অপারেটর নিয়ে।কারণ আমি নিজেও একজন এই অপারেটরের গ্রাহক।জিপির বেশকিছু প্যাকেজ ছিলো।যেমন, বন্ধু, ডিজুস,স্মাইল, নিশ্চিন্ত, আমন্ত্রণ ইত্যাদি।এসব প্যাকেজ এত ঘনঘন পরিবর্তন হয় যে, এসবের নামই মনে থাকে না।সুতরাং কলরেট মনে থাকবে কীভাবে! যদি মনে রাখতেও যাই তাহলে ছোটখাটো নয় বড়সড় হিসেব-নিকেশের খাতা নিয়ে বসতে হবে।যার জন্য আমাদের হাতে সত্যিই সময় নেই।যাকগে, আমি বন্ধু প্যাকেজ নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি।কারণ এই প্যাকেজটি অনেক বেশি জনপ্রিয়।
এই প্যাকেজে এফ.এন.এফের একটা সুবিধা ছিলো।মোটমাট আঠারোটি এফ.এন.এফ করা যায় প্যাকেজটিতে।তার মধ্যে সুপার এফ.এন.এফ একটি।এবং এই নম্বরটি হতে হবে অন-নেট নম্বর।সুপার এফ.এন.এফের কলরেট ছিলো ২৫ পয়সা(ভ্যাট ব্যতীত) মিনিট।এছাড়া ১০ সেকেন্ডস্ পালস্।পুরো মিনিট কথা না বললে অযথা পুরো মিনিটের বিল দিতে হতো না।এবং বাকি সতেরোটি এফ.এন.এফ নম্বর অফ-নেট বা অন-নেট যে কোনো একটি হতে পারে।কিন্তু আমি বাকি এফ.এন.এফের ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিতে পারছি না কারণ এসবের কলরেট প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়।কিন্তু আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, অফ-নেটে সর্বনিম্ন কলরেট ছিলো ৬০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ছিলো ১ টাকা ৪৫ পয়সা।আমরা যারা এই প্যাকেজটা ব্যবহার করেছি তারা খুব যত্নে কিছু প্রিয় মানুষদের নম্বর এই তালিকায় রেখেছি।অনেক বেছে বেছে সেই কাজটি আমাদের অনেকেই করেছেন।কারণ আমরা হিসেবি, আমি দাবী করে বলতে পারি মধ্যবিত্তরা ভয়ানক হিসেবি।
কিন্তু পরিবর্তিত কলরেট এখন কেমন সেটা একটু লক্ষ্য করি,
১৪ই আগষ্ট, হঠাৎ রাত থেকে পরিবর্তন হয়ে যায় এই কলরেট।বলা হয়, এখন আর কোনো অন-নেট বা অফ-নেট থাকবে না।সব অন-নেট।যেখানে নতুন কলরেট নির্ধারণ করা হয় সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা মিনিট ভ্যাটসহ ৫০ পয়সা এবং যে কোনো নম্বরে সর্বোচ্চ ২ টাকা মিনিট।
এখন টেলিটকের ১০ শতাংশ কল অন-নেটে এবং বাকি ৯০ শতাংশ কল অফ-নেটে গেলে আমরা কি করতে পারি!
আমরা যারা, জিপি বা রবি বা বাংলালিংক অপারেটর ব্যবহার করছি তারা অন-নেটের কথা ভেবেই ব্যবহার করছি।এমনকি অধিক কলরেট যেন গুণতে না হয় সেজন্য পরিবার থেকে বন্ধু-বান্ধবি পর্যন্ত একই অপারেটর ব্যবহার করছি।বায়মেট্রিকের কথা না হয় বাদই দিলাম।দিনশেষে এত দৌড়াদৌড়ি আর এত হিসেব-নিকেশ করে যখন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে গেলাম ঠিক তখন অন-নেট বা অফ-নেট নামক কোনো বস্তুই নেই।দেখুন, এই অন-নেট বা অফ-নেট আপনারাই একদিন তৈরি করেছিলেন।আবার আজ আপনারাই বলছেন, এটা না কি সমস্যা!
তো সমস্যা সেটা আগে বুঝেন নাই ক্যান? আর এই পরিবর্তিত কলরেট নিয়ে আমরা এখন কোথায় যাবো? দেখা যাচ্ছে, কথা শেষ না হতেই ব্যালেন্স শেষ।সুপার এফ.এন.এফের প্রিয় মানুষটার সাথেও আর মন খুলে কথা বলা যাচ্ছে না।মনে হচ্ছে এই বুঝি ফতুর হলাম! ফোনকল একটু আটকে গেলে মনে হয় এই বুঝি ব্যালেন্স শেষ।আর বন্ধুদের ফোনকল করা হয়ে উঠে না।ভয় হয়, এই বুঝি ব্যালেন্সটা শেষ হয়ে যায়!
শেষান্তে একটা কথা বলবো, এই কলরেটে দুরত্ব তৈরি হচ্ছে আমাদের কাছের বন্ধুদের সাথে।শহরে থাকা ছেলের মায়ের সাথে।আর রাতে অপেক্ষা করা হাজারো প্রেমিক-প্রেমিকার।এই যদি হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ! তাহলে হায়! দুরত্বই ভালো।এবং আমরা তবুও চুপই আছি বরাবরের মত।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১২