সীমান্তের জলরেখা
BOUNDARY WATER
-জামাল সৈয়দ
ভূমিকা.
ছোটবেলায় সিন্দাবাদের অসাধারণ দুঃসাহসিক যাত্রা কিংবা আরব্য উপন্যাসের লৌহমোর্ষক গল্প পড়ে কে না উত্তেজিত হয়েছে। সেই সমস্ত গল্প এখনও পর্যন্ত মনের গভীরে বিরাট একটা স্থান দখল করে রেখেছে । যে কোনো গল্পের পাঠক আর সিনেমার দর্শকদের মধ্যে একটা বড় মিল হচ্ছে যে উভয়েই যে কোনো বীরত্বপূর্ণ চরিত্রকে নিজের মধ্যে ধারণ করে সেই চরিত্রের সাথে মিশে যায়। তাই সিন্দাবাদ বা আরব্য উপন্যাসের আলাদীনের মত কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর অনেক অভিজ্ঞতাই আমাদের কাল্পনিক জগতে যুগ যুগ ধরে বিদ্যমান।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের লেবার ডে'র ছুটিতে এমনই কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আমরা তিন বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্য আর কানাডা'র সীমান্তবর্তী এলাকায় ক্যাম্পিং করতে। এলাকাটির নাম বাউন্ডারী ওয়াটার কানৌও এরিয়া (BWCA)। অসংখ্য ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে ওই এলাকার জন্ম। এর মোট আয়তন হচ্ছে প্রায় তিন হাজার বর্গমাইল।মিনেসোটার মিনায়াপলিশ শহর থেকে প্রায় ৩০০ মাইল উত্তর-পশ্চিম দিকে আমেরিকা আর কানাডার ওন্টারিও সীমান্ত এলাকা নিয়ে এর বিস্তৃতি। ছোট্ট শহর গ্র্যান্ড মারিয়া থেকে প্রায় ঘন্টা দেড়েক নির্জন পথ।প্রতি বছর প্রায় দুই লক্ষ পর্যটক এই এলাকায় আসেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করবার জন্য। বেশির ভাগ পর্যটকদের উদ্দেশ্য থাকে কানৌও (নৌকা) করে বিভিন্ন দ্বীপগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্ ঘুরে ফিরে দেখা। আমাদের ভ্রমন অভিজ্ঞতাটিকে একটু উত্তেজনাপূর্ণ রূপে প্রকাশ করার জন্যে গল্পের আকারে বর্ণনা করলাম। গল্প বলে মনে হলেও আসলে আমাদের তিনজন যাত্রীর অভিজ্ঞতা বর্ণনার সাথে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ। জানুয়ারী মাসের এই হিম শীতল ঠান্ডায় এই ভ্রমন কাহিনীটা অনেকের ভালো লাগতে পারে।
এক.
আগস্ট মাসের শেষের দিক। গরম কালের শেষে মিনেসোটার উত্তরাঞ্চলের প্রকৃতি এসময় কিছুটা ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করে। কখনও কখনও ঝিরঝিরে ঠান্ডা বাতাসে ভেসে আসে শীতের আগমনী বার্তা। একটু হালকা বাতাসেই গাছের পাতাগুলো ঢেউ খেলে খেলে ঝড়ে পড়তে দেখা যায়। শীতের এই আগমনী বার্তায় অনেকেই গরম অঙ্গরাজ্যের দিকে পা বাড়াতে শুরু করে। কিন্তু ওই বছর প্রকৃতি কিছুটা তার নিয়মের অনিয়ম ঘটিয়েছে।
আমরা তিন জন যাত্রী আগস্ট মাসের তিরিশ তারিখ শুক্রবার রাতে বাউন্ডারী ওয়াটার কানৌও এরিয়াতে হাজির হলাম গ্র্যান্ড মারিয়া শহর হয়ে। মিনিয়াপলিশ শহর থেকে প্রায় সাত-আট ঘন্টার পথ। রাতে থাকবার জন্য আগেই কেবিন বুকিং করা ছিল। আট-দশটি ছোট ছোট কটেজ নিয়ে ভয়েজার কানৌও আউটফিট ক্যাম্পাস অবস্থিত।গাল লেকের কূল ঘেষে। ওখানে যেতে যেতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেল। কোনো মানুষজনের চিহ্ন নেই। একটু দেরি হয়েছে বলে ভয়েজার কর্তৃপক্ষ আমাদের একজনের নামে লিখে কেবিন নাম্বার ও ওখানে যাবার সাইন দিয়ে রেখেছিল। রাতের খাবার গ্রান্ড মারিয়া থেকেই সেরে ফেলা হয়েছিল। নিজেদের জিনিসপত্র রেখে তিনজনই কটেজের বাইরে বের হয়ে এলাম। এক সাথে এলাম কারণ সবার মনেই একটু আধটু ভালুকের ভয়।আগস্ট মাসের শেষদিকেও রাত্রিতে শুধু মাত্র টি-শার্ট পরে বাইরে বের হওয়া গেল। কি অপূর্ব সেই রাত্রি। চারিদিকের নির্জনতা। মাঝখানে বাতাসের শুনশান শব্দ। তার উপর সুউচ্চ গাছ গাছালির মাঝখান দিয়ে জোসনার আলো কাকে যেন খুঁজে যাচ্ছে।আমরা সবাই শহুরে জীবনে অভ্যস্ত। অনেকদিন হয় রাতের আকাশ দেখা হয় না। অথচ আকাশ কি অপূর্ব। লক্ষ-কোটি নক্ষত্রপুঞ্জ মিটমিট করে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছে। ঝিরঝিরে বাতাসে সূউচ্চ পাইন গাছগুলো অনবরত মাথা দুলিয়ে চলেছে। মনে হবে আকাশের তারাদের সাথে তাদের অনবরত কথোপকথন চলছে। বেশিক্ষণ রাত না জেগে আমরা সতেজ আর ফুরফুরে মন নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। পরের দিন সকালে নাস্তা খেয়ে বের হবো অজানাকে জানতে, অদেখা'কে দেখতে।
দুই.
সকাল সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠে আমরা সবাই নাস্তা সেরে নিলাম। কেবিনের দোকান কাম অফিসে গিয়ে নিরাপত্তাজনিত ভিডিও দেখে সকল প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে করতে নয়টা বেজে গেল। অতঃপর আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হলো ম্যাগনেটিক লেকের ধারে। একটা ট্রাকের উপর তিনজন বসার কানৌও নিয়ে কেবিন থেকে প্রায় দশ মাইল দূরে রেখে আমাদেরকে বিদায় জানানো হলো। ভয়েজার আউটফিট আমাদেরকে তিনটা বড় বড় ব্যাগ দিল। ওগুলোর ভেতর খাবার-দাবার, তাবু, রান্না-বান্নার জিনিসপত্র, ফার্স্ট এইড ইত্যাদি। আমাদের নিজেদের তিনটি ব্যাগ সহ মোট ছয়টি ব্যাগ ভর্তি মালামাল। দুই দিন দুই রাত্রির জন্য মনে হলো মালামাল একটু বেশিই হয়ে গেল। আমাদেরকে একটা ম্যাপ দিয়ে বলা হলো যে মোট বিশ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে অন্য পথ ধরে আমরা কেবিন এলাকায় ফিরে আসবো দুইদিন পর। প্রথম দিন দশ মাইল এবং দ্বিতীয় দিন দশ মাইল কানৌও করে অন্য পথ দিয়ে আউটফিট ভয়েজারেরা ঘাটে ফিরে আসতে হবে। যথা সময়ে ফিরে আসতে না পারলে ভয়েজার কতৃপক্ষ উদ্ধার কর্মী পাঠাবে। ওরা ধরে নিবে ফিরে না আসার মানে হচ্ছে যাত্রীদের জীবন বিপদসঙ্কুল এবং উদ্ধারকার্য অপরিহার্য।
তিন.
মাগনেটিক লেকের উপড় আমরা তিনজন মালামাল উঠিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। দিনটা ছিল ভয়াবহ রকমের চমৎকার। মনে হচ্ছিল এই রকম সুন্দর দিনে মৃত্যকেও আলিঙ্গন করা যায়। ঢাকা কলেজে পড়াকালীন সময়ে প্রাক্তন টিভি ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সাইয়ীদ স্যার একবার বলেছিলেন যে কোনো সৌন্দর্যকে প্রকাশ করবার ভাষা যখন না থাকে তখন তা উল্টোদিক থেকে শুরু করতে হয়। যেমন অনেকে কোন সুন্দরী নারীকে বর্ণনা করতে প্রায়ই বলেন অসম্ভব বা ভয়াবহ রকমের সুন্দরী। অসম্ভব বা ভয়াবহ একটা নেতিবাচক শব্দ কিন্তু এই শব্দ যখন ভালোর সাথে যায় তখন এইটা ভালোকে ধাক্কা দিয়ে অর্থের গুরুত্বকে আরো উপরে নিয়ে যায়। আরও একটি বাস্তব উদাহরণ হলো অনেকে বাসায় বা রেস্টুরেন্টে খুবই মজাদার খাবার খেয়ে বলে যে 'মরে যাবার' মত মজা। যাইহোক, প্রথমে ম্যাগনেটিক লেকের পাথুরে তীর ঘেসে কানৌও চালিয়ে আমরা ছোট ছোট কয়েকটা লেক পার হলাম।চারিদিকের নিস্তব্দতা ভঙ্গ করে আমাদের কানৌও এগিয়ে চললো। মাঝে খেয়ালী বাতাস আর বৈঠা মারার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। নিস্তব্দতার মধ্যেও যে অসম্ভব সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে তা এই রকম পরিবেশে না আসলে কখনও উপলব্ধি করা যায় না। সৌন্দর্য যে শুধু দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা আবিস্কার ও উপলব্ধির মধ্যেও নিহিত থাকে।
আমরা তিনজন যাত্রী প্রায় সমবয়সী। অজানা লেকের উপর স্বচ্ছ জলে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে চলেছি। বৈঠা মারার সাথে সাথে তিনজন'কে তিনটি কাজ ভাগ করে দেয়া হলো। একজন ম্যাপ দেখে দিক নির্দেশনা দিবে অন্যজন পানি ফিল্টার করে সবার পানির বোতল ভরে রাখবে। যে কোনো দুঃসাহসিক যাত্রার সবচাইতে বড় প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হচ্ছে পানি, ম্যাপ, পোষাক এবং খাদ্য। আর যদি ওই অভিযান কয়েকজনের সাথে হয় তাহলে অবশ্যই প্রয়োজন টিম ওয়ার্ক।কারণ যেকোনো একজনের বিপদ মানে সবার বিপদ। যাইহোক, আমরা তিনজন যাত্রী গল্পচ্ছলে কলেজ জীবনে পড়ে আসা কবিতা
The Rime of the Ancient Marinere নিয়ে কথা বললাম । ওই কবিতার কয়েকটি লাইন ছিল:
Water, water, every where,
And all the boards did shrink;
এই কালজয়ী কবিতাটি লিখেছিলেন ব্রিটিশ কবি সামুয়েল টেলর কলরিজ। নিরীহ সামুদ্রিক পাখি আলবাট্রস'কে অকারণে হত্যা করার পর সেই প্রাচীন জাহাজী'দের কে অভিশপ্ত হতে হয়েছিল। তাদের জাহাজ প্রচন্ড ঠান্ডায় সমুদ্রের মাঝে স্থির হয়ে গিয়েছিল। হত্যাকারী সেই প্রাচীন নাবিকে'র গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল মৃত আলবাট্রস পাখিটিকে। তারপর সাত দিন সাত রাত্রি যাবার পর সাপের মত একটা জলজ প্রাণী'কে দেখে নাবিকটি তার সৌন্দর্যর প্রশংসা করলো ও অভিভূত হলো। এরপরই নাবিক তার প্রায়ঃচিত্ত বা অভিশাপ থেকে অবমুক্ত হলো। ধীরে ধীরে জাহাজটি জমে যাওয়া বরফ হতে আবার সন্মুখে অগ্রসর হওয়া শুরু করলো। আমরা তিনজন সীমান্তের যাত্রী যে কোনো ধরনের অভিযোগ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। আমরা এসেছি প্রকৃতির কাছে এবং প্রকৃতির নিয়মেই চলবো। প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে সবকিছুর সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে তোলা। পানিতে বৈঠা মারার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আর মাঝে মধ্যে জলহাসের (লুন) চিৎকার ছাড়া সীমান্তে আর কিছুই শোনা গেল না। আমরা ধীরে ধীরে ম্যাগনেটিক নদী পার হয়ে অন্য একটা নদীতে গিয়ে পড়লাম।
পোর্টেজ, ঝড় ও রাত্রিবাস
চার.
তখনও ঝড় উঠেনি। আকাশে খন্ড খন্ড মেঘের আনাগোনা। সারাদিন কানৌও করে আমরা চারিদিকে পাহাড় বেষ্টিত একটা ব-দ্বীপ টাইপের জায়গাটাতে গিয়ে আটকে গেলাম। আসলে ওখানে পৌঁছানোর পর বোধদয় হলো যে আমরা হারিয়ে গেছি। কিন্তু ততক্ষনে ফিরে যাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সন্ধ্যা হতে খুব বেশী বাকি নেই। চারিদিকে পিনপতন নিস্তব্দতা ভঙ্গ করে চলেছে পাহাড়ের পাশের একটা ঝর্ণা। যেই ক্রিক বা জলাধার ধরে আমরা এই দীপ্বে এসেছি সেখান থেকেই অনবরত পানি গিয়ে পড়ছে ঝর্ণাধারায়। বড় একটা পাথরের পাশ দিয়ে ওটা বয়ে চলে গেছে অন্যদিকে। দূর থেকে দেখা যায় না তবে শব্দ বেশ স্পস্ট।তখনও পুরোপুরি সন্ধ্যা হয়নি। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। গহীন নির্জনতার মাঝে তিনজন যাত্রী আমরা। সারাদিন বেশ কয়েকটা নদী বা লেক পার হয়ে সবাই বেশ ক্লান্ত। কিন্তু মুখে কেউ তা স্বীকার করছে না। নদীর অনেকাংশে স্রোত থাকায় খুব সাবধানে এগুতে হয়েছে। তার উপর মোট পাঁচ বার সমস্ত মালামাল আর কানৌও কাঁধে নিয়ে নদীর সরুপথ গুলোর একপাশ থেকে অন্য পাশে পার হতে হয়েছে। পার হওয়া নদীর ওই অংশটুকুকে বলে পোর্টেজ। কারণ নদীর ওই সব জায়গা গুলোতে গতিপথ সরু এবং নদীও কিছুটা নিচুঁতে নেমে গেছে। তার উপর তীব্র স্রোত ও অসংখ্য পিচ্ছিল ছোট বড় পাথরের ছড়াছড়ি। কানৌও করে স্রোতের সাথে নিচুঁতে নেমে যাওয়া হতো ভয়ঙ্কর রকম আত্নঘাতী কাজ। কারণ স্রোতের ঘূর্ণির মধ্যে কানৌও পড়লে যে কোনো মুহুর্তে উল্টে যেয়ে পাথরে আঘাত করতে পারে। আর সাথে সাথে খরস্রোতা পানি এসে এতে ভর করলে তা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হবার বা স্রোতে ভেসে যাবার ভয় থাকে। উপরন্ত আমাদের সাথে বড় বড় ছয়টি ব্যাগ। এগুলোর যে কোনো একটি হারিয়ে গেলে বা পানিতে পড়ে গেলে বড় বিপদ হয়ে যাবে। কারণ ওই ব্যাগ গুলোই হচ্ছে আমদের বাকি দুই দিনের ভরসা। খাবার-দাবার থেকে শুরু করে থাকার তাবু, কাপড়-চোপড় সব কিছুই হচ্ছে ওই ব্যাগগুলো। এমনি এক নির্জনতার মধ্যে এসে পড়েছি যে আশেপাশের বিশ কি ত্রিশ মাইলের মধ্যেও হয়ত কোনো মানুষজন খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর মানুষ থাকলেও যে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে তারও নিশ্চয়তা নেই। ভয়েজার কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছিল যে স্যাটেলাইট ফোন ভাড়া নেয়া যেতো তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য কিন্তু সাহায্যের জন্য নয়। নদীগুলোর আশে পাশের প্রায় কয়েক হাজার মাইল আমেরিকার বন বিভাগ কতৃক প্রাকৃতিক পরিবেশর জন্য সংরক্ষিত। নদীগুলি আমেরিকা আর কানাডার সীমান্ত এলাকা ভেদ করে এদিক-ওদিক বয়ে চলে গেছে।
আমরা বেশ ক্লান্ত।সিদ্ধান্ত নিলাম ওই জলাধারের কাছেই একটা বড় সমতল পাথরের উপর ক্যাম্প বসাবো। আর একঘন্টার মধ্যে আমাদেরকে অন্ধকার গ্রাস করবে। ভ্রমনে বের হবার আগে নির্দেশ ছিল যেখানেই যাওয়া হোক বিকেল চার'টা নাগাদ ক্যাম্প করবার জন্য। তা না হলে পোকা-মাকড় আর অন্ধকারের ঝুকি নিতে হবে। আশেপাশে আর কোথাও সমতল জায়গা মেলেনি। সবাই মিলে চারিদিকের পরিবেশ আর একবার পরখ করে নিলাম। অন্ধকার নেমে আসার আগে অনেক কাজ। প্রথমত রাতে থাকবার জন্য তাবু খাটাতে হবে। রাতের ডিনারের জন্য খাবার রান্না করতে হবে। সঙ্গে নিয়ে আসা ছয়টি ব্যাগ থেকে সমস্ত খাবারসহ যে কোনো ধরনের গন্ধযুক্ত জিনিস বের করে গাছে ঝুলাতে হবে। কারণ ওই এলাকায় প্রকৃত বাসিন্দা হচ্ছে ব্লাক বিয়ার বা কালো ভালুক। ওরা খুবই উৎসাহী প্রাণী এবং ওদের বিচরণ ক্ষেত্রে কোথাও নতুন কিছু দেখলে ওরা অনুসন্ধিৎসু হয়ে পড়ে। তাছাড়া খাবারের তাগিদে ভালুক তাবুর ভিতরে পর্যন্ত্ চলে আসতে পারে। আর এ জন্যই গন্ধযুক্ত কোনো কিছুই তাবুতে নিজেদের সাথে রাখা যাবে না।
আমাদের একজন জলাধার থেকে পানি নিয়ে ফিল্টার করলো। আর বাকি দুইজনে তাবু বসাতে শুরু করলাম। তাবু বসানোর পর রান্নার সমস্ত জিনিস বের করে চুলায় আগুন দেয়া হলো। রান্না করা হলো তাবু থেকে বেশ খানিকটা দূরে বাতাসের বিপরীতে। কারণ হলো সতর্কতা অবলম্বন যদি তাবুর গায়ে খাবারের গন্ধ লেগে যায়। ছোট্ট একটা চুলা কিন্তু দারুন কাজ করে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার হয়ে গেল। আকাশে তখনও মেঘের ঘনঘটা। খাবারের মেনু ছিল বিফ স্টেক আর নুডল।সবাই গো গ্রাসে খেয়ে নিলাম। থালা বাসন পরিষ্কার করে খাবারের বড় ব্যাগটার মধ্যে ঢুকিয়ে চেইন বন্ধ করে দেয়া হলো। এবার ব্যাগটাকে প্রায় দশ ফুট উচুঁতে দুইটা গাছের মাঝখানে ঝুলানো হলো। তা না হলে রাতে ভালুকের দ্বারা আক্রান্ত হবার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দুইজন ব্যাগ ঝুলাতে লাগলো আর আমি তাবুর ভেতর সবার ঘুমানোর জন্য ব্যবস্থা করতে লাগলাম। এইরকম মুহুর্তে নেমে এলো ঝড়। বিদ্যুত চমকানো আর বজ্রপাতের ভয়ঙ্কর শব্দে সাড়া দীপ্বাঞ্চল কেঁপে উঠলো। খুবই কাছের একটা বিশাল গাছ দুই ভাগ হয়ে নিমিষেই ভেঙ্গে পড়ল।ভাগ্য ভালো যে কারো মাথায় পড়েনি। তাবুতে থাকা আমি প্রানপন চেষ্টা করলাম ঝড়ের কবল থেকে তাবুকে রক্ষা করতে। তাবু উড়ে চলে গেলে আমাদের রাত্রি নিবাস হুমকির মুখে পড়বে। সাহায্যের জন্য চিৎকার করাতে বাকি দুইজন এসে তাবুর তিন মাথায় তিনজন দাঁড়িয়ে রইলাম। ঝড় না থামা পর্যন্ত ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম। সারাদিনের ক্লান্তি, অচেনা গহীন বনে রাত্রি যাপন আর তার উপর ঝড়ের দাপট দেখে আমাদের মুখ শুকিয়ে গেল।
পাঁচ.
স্রষ্টার কৃপায় আধ ঘন্টা পরে ঝড়ের গতি কিছুটা কমে গেল। তবে অন্ধকার আকাশে তখনও বিদ্যুতের চমকানি থামেনি। সাথে টিপ টিপ বৃষ্টি। ইতিমধ্যে চারিদিকে অন্ধকারে ঢেকে গেছে। তাবুর ভিতরের বেশ কিছু অংশ পানিতে ভেজা। আমাদেরকে তারই ভেতর রাত্রি যাপন করতে হবে। সবাই নিজেদের ব্যাগ থেকে গরম কাপড় বের করে যার যার মত পড়ে নিলাম। পানি খেয়ে শেষবারের মত তাবুর বাইরে এসে ব্যাগে রাখা বাদাম, প্রোটিন জেল, বিস্কুট, টুথপেস্ট ইত্যাকার ছোটখাটো জিনিস ব্যাগে পেঁচিয়ে বাইরে রেখে এলাম। সাড়া রাত্রি এপাশ-ওপাশ করে সবাই দিনের আলোর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। গভীর রাতে আরও এক পশলা বৃষ্টি শুরু হলো। তবে ভেতর থেকে বৃষ্টির টিপ টিপ শব্দ শুনতে খারাপ লাগলো না। নিস্তব্দ বনে সবার কান সজাগ হয়ে রইলো যদি কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে সবার এক সাথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। প্রস্তুতি স্বরূপ তাবুর ভেতর তিনটা বৈঠা আর দুইটা বড় গাছের ডাল রাখা আছে হাতিয়ার হিসাবে। তাছাড়া সবার কাছে টর্চ লাইট ও একজনের মাথার কাছে একটা বড় ছুরি রাখা হলো। অবশেষে তাবুর উপরের অংশে হালকা সাদা রঙের আভা দেখা গেল।তার মানে রাত্রির শেষ প্রহর। আমরা এবার নিশ্চিত মনে দুই ঘন্টার মত ঘুমিয়ে নিলাম।
অবশেষে অন্ধকার বিভীষিকাময় রাত্রির অবসান হলো। তখন সকাল সাতটা কি সাড়ে সাতটা হবে। আমরা একটু উৎফুল্ল। তখনও আকাশে খন্ড খন্ড মেঘের বিচরণ তবে ভয় পাবার মত কিছু নয়। একজন ইতিমধ্যে গাছে ঝুলানো ব্যাগের কি অবস্থা তা পরখ করতে গেল। কিছুক্ষণ পর দৌড়ে এসে বললো ব্যাগ ঠিক আছে তবে সে একটা বড় কালো ভালুক'কে দেখেছে সেখানে বিচরণ করতে। তাকে দেখে প্রাণীটি অন্য দিকে চলে গিয়েছে। আমরা সবাই মিলে আর একবার ম্যাপ নিয়ে বসলাম সেদিনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করবার জন্য। সবাই এক সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে যেই পথ ধরে এই জলাধারের কাছে এসেছি সেই একই পথ ধরেই এগুতে থাকবো যতক্ষণ পর্যন্ত না ম্যাপে দেখানো একটা বড় নদী'তে উঠা যায়। আমাদের একজন সকালের নাস্তা তৈরীর জন্য বসে গেল আর বাকি দুইজন তাবু সহ অন্যান্য জিনিস গোছানো শুরু করলো। কোনো ক্রমেই আজকের দিনটাকে বসে বসে অপব্যয় করা যাবে না। আমরা অনেকটা ভালো নাস্তা খেয়ে নিলাম কারণ সামনে কঠিন একটা দিন অপেক্ষা করছে। শরীরে শক্তি না থাকলে কোন কিছুই করা সম্ভব হবে না। খাবারের তালিকায় ছিল ম্যাশ পটেটো, ডিমভাজা, বেগলস এবং সব শেষে গরম কফি।
জীবন বড়ই সুন্দর
ছয়.
নাস্তা শেষে দিনের উজ্জল আলোয় আমরা পরিবেশটাকে বেশ একটা পছন্দ করলাম। গতদিনের ক্লান্তি আর ঝড়ের ভয়ে কেউ ভালো করে চারিদিকটা পরখ করতে পারিনি। আজ মনে হচ্ছে এলাকাটি বেশ সুন্দর। চারিদিকে একটা বুনো বুনো গন্ধ আছে। মনে হচ্ছে উচু উচু গাছগুলো দাঁড়িয়ে অনবরত মাথা দুলিয়ে আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। গাছগুলোর খোলা অংশ দিয়ে নীল্ আকাশের সাদা মেঘগুলো পায়চারা করছে। এদিক ওদিক অসংখ্য প্রজাপতির উড়ে যাওয়া। তাছাড়া এখানে সেখানে বড় বড় পাথর আর ভাঙ্গা গাছের ছড়াছড়ি।অসীম উৎসাহ ও সাহসে আমরা কিছুটা সন্মুখ পানে অগ্রসর হলাম। উদ্দেশ্য কোনো পদচিহ্ন বা বের হবার পথ পাওয়া যায় কিনা। চোখে পড়ল প্রাকৃতিক রঙে রাঙানো বড় প্রাচীন পাথর। পাথরের মাঝ দিয়ে অসংখ্য ওয়াইল্ড ব্লুবেরী ফলের গাছ মাথা উচু করে আছে। মনে হচ্ছে ওরা আগন্তকদের গতিপথ পরখ করছে। পাশের জলাধার থেকে সেই পরিচিত শব্দ তখনও চারিদিকের নিস্তব্দতা ভঙ্গ করে চলেছে। কখনওবা হঠাৎ একটা বুনো পাখির ডানা ঝাপটা মেরে উড়ে যাওয়া।
তিনটা বড় ব্যাগ কাঁধে ঝুলিযে বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। কানৌও ও অন্য ব্যাগগুলো রেখে গেলাম দ্বিতীয় দফায় এসে নিয়ে যেতে।ঝোপঝাড়ে মানুষের পথচলার কোনো চিহ্ন নেই তবুও যেখানে ঝোপঝাড় কম সেইদিক দিয়েই অগ্রসর হলাম। ক্রিক বা জলাধারের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম যাতে করে লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয়ে আবার সেখানেই ফিরে আসতে পারি। যাবার পথে অনতিদূরে একটা বড় গছের আড়ালে একটা কালো ভালুক চোখে পড়লো। আমরা এক সাথে শব্দ করাতে প্রাণীটি অন্য দিকে দৌঁড়ে চলে গেল। গতকালও আমরা পোর্টেজ করার সময় জলাধারার কাছে একটা সাপ দেখেছি। প্রায় তিন ফিট লম্বা সাদা মত একটা সাপ ছো মেরে একটা ব্যাঙ ধরেই গোল হয়ে জলের স্রোতের সাথে মিশে গেল। আজ আর কোনো ভয় নেই। বুনো পথে ঝোপঝাড়ের আড়ালে উকি দিয়ে আছে অসংখ্য ছোট ছোট ব্লুবেরী ফল। সবাই কম বেশি ব্লুবেরী ফল খেয়ে নিলাম। স্বাদ খুবই মিষ্টি।
প্রায় মিনিট বিশ হাঁটার পর আমাদের গন্তব্য গিয়ে শেষ হলো সেই জলাধারের কাছে। এই জায়গাটায পানির গভীরতা ও স্রোত দুটোই কম। জলাধারের দুই পাশে ছোট বড় রঙ বেরঙের অনেক পাথর। বলা হয়ে থাকে মিনেসোটার এই অঞ্চলে নাকি পৃথিবীর সবচাইতে পরাতন পাথর আছে। কিছু কিছু পাথর নাকি প্রায় তিন বিলয়ন বছরের পুরনো। সে যাই হোক, আমরা যেদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম পানির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে ঠিক তার উল্টো দিকে তবে বেশ শান্ত। সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম কাঁধের ব্যাগগুলো এখানে রেখে আবার ক্যাম্পের জায়গায় ফেরত যাবো কানৌও ও বাকি ব্যাগগুলো নিয়ে আসতে। দ্বিতীয়বারে আমরা কাঁধে করে নৌকা নিয়ে এলাম এবং একটা গাছের সাথে বেধে রেখে আবার গেলাম বাকি ব্যাগগুলো নিয়ে আসতে।
দুপূর প্রায় তিনটার দিকে আমরা একটা বড় নদীতে এসে পড়লাম। এর আগে অবশ্য আমাদেরকে বড় বড় প্রায় চারটি পোর্টেজ পার হতে হয়েছে মালামাল ও কানৌও কাঁধে করে। প্রতিবারেই দুইবার করে আসা যাওয়া। একবার ব্যাগ ও অন্যবার কানৌও নিয়ে যাওয়া। কানৌওতে বসে সারাদিন শুধু শুকনো খাবার আর ফিল্টার করা পানি খেয়ে নিয়ে শরীরকে কর্মক্ষম রাখলাম। সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম কোথাও সমতল জায়গা দেখলে একটু বিশ্রাম নিব। ভালোভাবে ম্যাপ দেখে ও একটু কিছু খেয়ে আবার যাত্রা শুরু করবো। আজকে আর ভয় পাবার কিছুই নেই কারণ আমরা জানি আমাদের অবস্থান কোথায়।
সাত.
মানুষের জীবন হচ্ছে আকাশ আর পর্বতমালার মিলনস্থলের মত বিস্তৃত। শুরু এবং শেষের কেন্দ্রবিন্দু কোথায় তা কখনও নির্ধারণ করা যায় না। আমাদের জীবনে কিসে সুখ, কিসেই বা দুখ তাও যেন সীমানাহীন পর্বত আর সাগরের মত বিস্তৃত ও গভীর। গত রাতেও আমাদের জীবনে যে অনিশ্চিয়তা ছিলো আজকের আকাশ, নদী আর নীরবতার সৌন্দর্যে সবকিছু বেমালুম ভূলে গেলাম। গতকাল যেখানে জীবনের মানে ছিল শুধু একটি মাত্র রাতের বেচেঁ থাকার স্বপ্ন আর আজ বেচেঁ থাকার মানে মনে হচ্ছে শুধুই সৌন্দর্যের উপাসনা। বড়ই অদ্ভুত এই জীবনের চাওয়া পাওয়া। ছপাৎ ছপাৎ বৈঠা মেরে আমরা আরো দুইটা নদী পার হয়ে গেলাম। আজকে আমাদের পরিকল্পনা বিকেল চারটা নাগাদ কানৌও চালিয়ে যাওয়া ও ম্যাপে দেখানো কোনো ক্যাম্পিং স্পটে রাত কাটানো। নদীর স্বচ্ছ জলে এখনও সূর্যের আলো ঝিকিমিকি করছে। মাথার উপর দিয়ে একটা সাদা লেজওয়ালা ঈগল উড়ে গেল। নদীটা কোথাও কোথাও সরু হয়ে আর একটা নদী বা লেকের সাথে মিশে গেছে। গল্পচ্ছলে আমরা তিনজনের কানৌও গানফ্লিন্ট নদীতে গিয়ে উঠলো। এই নদীটা অনেক বড় ও স্রোতস্বনী। আমাদেরকে এই নদীর কিনার ঘেষে যেতে হলো আরো প্রায় তিন মাইলের মত। নদীর ঢেউ কে সামনের দিকে দিয়ে আমরা সবাই একসাথে বৈঠা মারা শুর করলাম। কারণ ঢেউ'কে কোনো ক্রমেই কানৌওয়ের পেটের দিকে আসতে দেয়া যাবে না। তাতে কানৌও যে কোনো মুহুর্তেই উল্টিয়ে যেতে পারে। ধীরে ধীরে ঢেউয়ের গতি বাড়তে লাগলো। আমরা পাথর বিস্তৃত তীর ঘেসে এগুতে লাগলাম। আর এক ঘন্টার মত চালিয়ে যেতে পারলেই আমরা একটা ক্যাম্পিং স্পট পাব আর সেখানেই রাতের জন্য তাবু ফেলবো।
আট.
দ্বিতীয় রাতটি ছিল আমাদের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ। সেই রাত প্রকৃতি তার সব সৌন্দর্যই আমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। হালকা ঝিরঝিরে বাতাসে সুউচ্চ বৃক্ষরাজির মাথা দোলানি। তার উপর আকাশের একপাশে চাঁদ ও তারার মেলা। মনে হচ্ছিলো আকাশে চাঁদ ও তারাদের স্কুল বসেছে। লক্ষ কোটি তারকাপঞ্জি চাঁদকে ঘিরে রেখেছে। সুন্দর একটা ক্রিকের ধারে একটা সমতল জায়গায় আমরা তাবু ফেলেছি। তাবুর তিনপাশ ঘেষে ছোট বড় গাছ আর একপাশে একটু খোলা জায়গা যা দিয়ে গানফ্লিন্ট নদীটার স্বচ্ছজল দেখা যায়। নদীর কোমল ঢেউ এসে একটা বড় পাথরে আছড়িয়ে পড়ছে বারবার। মনে হচ্ছিল গভীর রাতে কোনো অপ্সরী এসে এই গহীন বনে নৃত্যের ঝংকার তুলেছে।নদীর অন্য তীর ঘেষে কানাডার সীমান্তে অনুচ্চ কিছু পর্বতমালা অন্ধকারে অর্ধেক
ঢেকে আছে। মাঝে মধ্যে কোন এক অজানা পাখির চিৎকারে পুরো দ্বীপাঞ্চল কেঁপে কেঁপে উঠছে।তাবুর ভিতর থেকে আমরা তিনজন বাইরে বের হয়ে এলাম। এই রাতে কোনো ভয় বা আশংকা নেই। এখানে এসেছি প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে। যা দেখছি তার পুরোটাই প্রকৃতির আসল রূপ। যা শুনছি তার পুরোটাই প্রকৃতির শব্দ। সভ্য পৃথিবী থেকে আমরা অনেকটাই দূরে। কোথাও কেউ নেই প্রকৃতির এই নীরবতাকে ভঙ্গ করতে।
তাবুতে ঘুমোতে যাবার আগে কবিগুরুর ওই গানটিই বার বার মনে পড়ছিল:
কেন এ সংসারে পাঠালে আমারে
তুমি জান তা প্রভূ গো
তোমারি আদেশে রহিব এদেশে
সুখো দুখো যাহা দিবে সহিব।
তোমারে প্রানের আশা কহিব
যদি বনে কভু পথ হারাই প্রভূ
তোমারি নাম লয়ে ডাকিব।
-জামাল সৈয়দ
[email protected]
লেকভিল, মিনেসোটা, যুক্তরাষ্ট্র