ছবিসূত্রঃ Anton croos, Wikipedia.
পুরো রাস্তায় এখন থমথমে পরিবেশ। কোথাও কেউ নেই। শুধু কয়েকজন পুলিশকে লাঠি হাতে রাস্তাটি টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। তাদের চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। অনেক ধকল গেছে তাদের ওপর দিয়ে। মারামারি বন্ধ করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাদের। নতুন করে যেন আর কিছু না হয় তাই এই তৎপরতা তাদের। পুলিশের এই তৎপরতা বড়-ই মর্মযাতনা দিচ্ছে কাকগুলোকে। যদিও মারামারিটা তারা করে নি। করেছে এলাকার মানুষ। সেটাও কোনো সমস্যা না। আসল সমস্যা হলো, যে রাস্তায় মানুষেরা মারামারি করেছে সে রাস্তায় মুরগির লোভনীয় নাড়িভুড়ি পড়ে আছে। আর তাই কাকেরা তাদের জ্ঞাতি তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় আছে। পুলিশ একটু সরে পড়লেই ঐ নাড়িভুড়িগুলো তারা দখলে নেবে।
কিন্তু এই পুলিশ সরেই না। রাস্তায় চাপ চাপ রক্ত। তার সাথে পুলিশের বুটের ঠকঠক শব্দ। এই শব্দের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে পুলিশের মুখ।
"যেইডারে হাসপাতালে নিছে হেইডার কোনো খবর পাইলি?"
"না, স্যার।"
"যা অবস্থা দেখলাম। তাতে না মরলেই হয়। শ্যাষম্যাশ মুরগির প্যাডার লাইগা হাসপাতালে গেল!!!”
বলেই হো হো করে হাসতে থাকে পুলিশের দল। এই হাসিতে সন্ত্রস্ত হয় কাকেরা। তারা উড়ে গিয়ে জায়গা পরিবর্তন করে। কিন্তু নাড়িভুড়ি থেকে নজর সরে না তাদের। এই নাড়িভুড়ি সকালে যা ছিলো তার চেয়ে বেশি লোভনীয় হয়েছে এখন। মুরগির নাড়িভুড়ির সাথে মানুষের রক্ত মিশে আছে এখন। স্বাদের কথা ভেবে আরামে চোখ বুজে আসে কাকগুলোর। আরাম করে কা কা ডেকে নেয় কিছুক্ষণ।
মারামারিটা হওয়ার আগেও তারা ডেকেছিলো। তাদের ডাক শুনেই রাস্তার পশ্চিমের গেরস্ত বের হয়ে আসেন বাড়ি থেকে। বের হয়েই দেখেন এক পলিথিন ভর্তি মুরগির নাড়িভুড়ি তার বাসার সামনে পড়ে আছে। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা কার কাজ। বহুদিন ধরেই জমিজমা নিয়ে রাস্তার পূর্বের গেরস্তের সাথে তার বিরোধ চলছে। তার বাসার সামনে ময়লা ফেলবে এমন সাহস কারোই হবে না ঐ পূর্বদিকের হতচ্ছাড়াটা ছাড়া। নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না তিনি। প্রাণ ভরে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে করতে গিয়ে লাথি মেরে বসলেন পূর্বের গেরস্তের দরজায়।
গেটে বিকট শব্দ শুনে গেরস্ত বের হয়েই দেখেন তার দরজায় তার শত্রু দাঁড়িয়ে।
" তর এত বড় সাহস তুই আমার দরজার সামনে মুরগির প্যাডা হালাইছছ!!"
অভিযোগ শুনে আশেপাশে তাকিয়ে 'মুরগির প্যাডার' খোঁজ করেন গেরস্ত। অবশেষে পেয়েও গেলেন। দেখে খুশিতে ভরে উঠলো তার মন। যে কাজ তিনি বহুদিন ধরে করতে চাচ্ছিলেন সে কাজ অন্য কেউ করে দিয়ে গেছে। কিন্তু শত্রুকে জব্দ করার কৃতিত্ব অন্য কাওকে দিতে নারাজ তিনি। দম্ভ ভরে বলে বসলেন-
"হালাইছি তো কী হইছে? তর যা প্রাপ্য তাই তো পাইছছ!!”
বলেই খ্যাক খ্যাক শব্দ করে হেসে উঠলেন তিনি। তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলেন পশ্চিমের গেরস্ত। মনে হচ্ছে কে যেন তার কলিজায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আর সহ্য হলো না। একবারের চেষ্টায় মেরে ফেলার পণ করেই পূর্বের গেরস্তের গলাটা টিপে ধরলেন পশ্চিমের গেরস্ত। শুরু হলো ধস্তাধস্তি। তাদের ধস্তাধস্তি ও চিৎকারে দুই বাড়ির বিরাট সংখ্যক পরিবারের প্রায় সকলে সেখানে উপস্থিত হলো। শুরু হোলো বিরাট মারামারি। যে যাকে যেভাবে পারলো মারলো। সাথে যোগ দিলো দুই গেরস্তের সমর্থক গোষ্ঠী। মারামারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তখন পুলিশ আসে। ততক্ষণে একজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে। কয়েকজন মাথা ফাটিয়ে বসে আছে। কারো হাত ভেঙেছে, কারো পা ভেঙেছে। পুলিশ আসার পরে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যার যার বাড়িতে দৌড় দিলো। তারপর থেকেই পরবর্তী হামলার আশংকায় পুলিশ আর সে জায়গা ত্যাগ করলো না। কাকদের অপেক্ষার প্রহর বাড়লো।
সারাদিনের অপেক্ষার পর সন্ধ্যার আগে কাকদের প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো৷ সন্ধ্যার আগে আগে পুলিশেরা চলে গেল। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে সেই মুরগির নাড়িভুড়ির পলিথিনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো কাকেরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদেরই কোনো জ্ঞাতির ফেলে যাওয়া এই পিলিথিনটি খালি করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে তাদের অতিশয় কর্কশ কা কা ধ্বনি বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে সন্ধ্যার আঁধারে মিলিয়ে গেল।
সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৩