প্রসন্ন গোয়ালিনীর গোরু চুরির মামলায় কমলাকান্তকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে আনা হইয়াছে। সে সাক্ষ্য দিবার তরেই আসিয়াছিলো হেথা। কিন্তু মামলা হইতে তাহার দৃষ্টি ক্রমশ দূরে সরিয়া গিয়া দেশীয় বিচার ব্যবস্থার অসংগতির দিকেই নিবদ্ধ হইয়াছে।যাহার ফলে বিচার ভণ্ডুল হইবার উপক্রম হইয়াছে। গরীব গোয়ালীনি প্রসন্ন। এই গোরুখানিই তাহার জীবিকার সম্বল। ইহার দুধ বিক্রয় করিয়া সে বাঁচিয়া আছে। কিন্তু গোরুখানি চুরি হইয়া গিয়াছে। গোয়ালের পাশেই কমলাকান্ত আফিম খাইয়া বুদ হইয়া পড়িয়াছিলো। তাহার সামনে হইতেই তস্কর গোরু লইয়া পলায়ন করিল,কিন্তু সে দেখিলো না। উহা কেমন বিচার! তাহার পর সাক্ষ্য দিতে আনিয়াছে তাহাকে,সে কি না আদালতকেই পাইয়া বসিলো। যাই হোক এক্ষণে এ ব্যাটাকে এজলাস হইতে নামানো গিয়াছে। তস্কর ব্যাটাকে এজলাসে তোলা হইয়াছে। এইবার গোরু চুরির ফয়সালা হইবে। তাহার মুখমণ্ডলে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা দেখি দিলো। ইহা দেখিয়া কমলাকান্ত বলিলো, ওঁ মধু! মধু! মধু!
কমলাকান্তকে জেরা করা শেষ হইয়াছে বহু পূর্বে। সেখান হইতে কোনো কিছু ফয়সালা করিতে পারে নাই আদালত।উপরন্তু সে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করিয়াছে। আদালতের অসংগতি প্রকাশ করিয়া, দুই উকিল ও ধর্মাবতার বিচারককে নাজেহাল করিয়া সে স্বর্গসুখ অনুভব করিয়াছে। তথাপি সে আদালত প্রাঙ্গণ হইতে প্রস্থান করে নাই। সে তামাশা শেষ হইবার অপেক্ষায় আদালত প্রাঙ্গণে বসিয়া আছে। বিচারের ফয়সালা দেখিয়া যাইবে এই অভিপ্রায়েই সে বসিয়া আছে।
এজলাসে এইবার আসামীকে তোলা হইয়াছে। আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, আগেরদিন রাত্রিবেলা প্রসন্ন গোয়ালিনীর গোয়াল হইতে গরু চুরি করিয়া আসামী তাহার 'সংগৃহীত গরুর খামারে' নিয়া বাঁধিয়া রাখিয়াছে।প্রসন্ন সকাল বেলা উহা উদ্ধার করিয়াছে।
'সংগৃহীত গরুর খামার'!! নামখানি খাসা রাখিয়াছে!! তস্করের রুচি আছে বলিতে হইবে। বলিলো কমলাকান্ত।
প্রসন্নের সেই ময়লা শামলা পরিহিত উকিল এইবার তস্করকে জেরা করিতে লাগিলো।
উকিল- আপনি প্রসন্ন গোয়ালিনীর গোয়াল হইতে গোরু চুরি করিয়াছেন?
তস্কর- না। আমি উহা চুরি করি নাই। আমি প্রসন্নের গোয়াল হইতে গোরুখানি সংগ্রহ করিয়াছি।
উকিল-সংগ্রহ করিবার পূর্বে আপনি তাহার অনুমতি লইয়াছিলেন?
তস্কর- না। অনুমতি লওয়া আবশ্যক মনে করি নাই।
উকিল-তাহা হইলে ইহা সংগৃহীত কীরূপে? ইহা তো সরাসরি চুরি হইলো!!
তস্কর- ইহা চুরি না।ইহা সংগৃহীত।
উকিল- কীরূপে?
তস্কর- আমি উহা সংগ্রহ করিয়া আমার সংগৃহীত গোরুর খামারে নিয়া রাখিয়াছি। সকলেই বুঝিবে এইখানকার গোরুগুলি আমি সংগ্রহ করিয়াছি।
উকিল- উহা তো প্রসন্ন গোয়ালিনীর গোরু! সংগৃহীত বলিলেই কি চুরির দায় হইতে মুক্ত হওয়া যায়?
তস্কর- অবশ্যই যায়। সংগৃহীত শব্দখানার অভ্যন্তরেই প্রসন্ন গোয়ালিনীর নাম লুকাইয়া আছে।তাহার নাম উহ্য রইয়াছে।সকলেই বুঝিবে উহা আমার নহে।
সমস্ত এজলাসে হাসির কলরোল উঠিলো। কমলাকান্ত মনে মনে বলিলো, "যুক্তিখানি খাসা দিয়াছ ভায়া! সংগৃহীত শব্দের মধ্যেই মালিকের নাম সন্নিহিত।বাহ! চুরি করিয়া তাহার সহিত দায়মুক্তি। সাধু!সাধু!
এই যুক্তি আদালতে ধোপে টিকিলো না। তস্করকে জেল, জরিমানা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করিয়া প্রসন্নের গোরু প্রসন্নের হাতে তুলিয়া দিলেন ধর্মাবতার বিচারক।
তস্করকে লইয়া যাইবার জন্য হাফপ্যান্ট পরিহিত পুলিশ আসিলো। টানিয়া লইয়া যাইবার প্রাক্কালে সে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করিয়া সকলকে অভিশাপ দিয়া গেল। অভিশাপখানা ছিল এই-
" আপনারা সকলে নিজেদের বুদ্ধিমান মনে করেন তাই না? আমায় চাতুরি করিয়া শাস্তি প্রদান করিলেন! দেখিবেন!! ভবিষ্যতে আপনাদের এই বুদ্ধি আপনাদের নিকট থাকিবে না। আমি তো গোরু সংগ্রহ করিয়াছি, আমার উত্তর প্রজন্ম আপনাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ সংগ্রহ করিয়া 'ফেইসবুক' নামক সংগৃহীত খামারে সংরক্ষণ করিবে!!”
অভিশাপ শুনিয়া কমলাকান্ত কিঞ্চিৎ চিন্তিত হইলো। ফেইসবুক নামখানি সে আগে শোনে নাই। নামখানি তাহার ভালো লাগিলো। অভিশাপখানি খাসা দিয়াছে মাইরি! গোরু তো ফিরাইয়া আনিতে পারিবে।বুদ্ধি কীরূপে ফিরাইয়া আনিবে?? পরক্ষণের আবার মনে মনে বলিলো, "আমার এতো চিন্তা কিসের? আমি তো আফিমখোর!! বলিয়া নসীবাবুর আড্ডায় যাইবার পথ ধরিলো কমলাকান্ত!!
সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৬