দু-দিন ধরে জেলখানায় বসে আছে জহির। সামনে লোহার গরাদ আর বাকি তিনদিকে দেয়াল। দেয়ালগুলোর পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। চারিদিকে প্রচুর মশা। কানের কাছে সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে। কয়েকটাকে ঠাস ঠাস করে মারার পর কিছু সময়ের জন্য থেমে যায় এই ঘ্যান ঘ্যান। কিন্তু কতক্ষণ আর হাত চালানো যায়? মশা মারা থেমে গেলেই আবার শুরু হয় তাদের এই বিরক্তিকর সঙ্গীত। জহির ভেবে পায় না মশাগুলো কেন তাকে গান শোনায়? সে একজন কবি। সঙ্গীত পরিচালক তো নয়। বর্তমানে এই কামরায় সে একাই আছে কয়েদি। মাঝে মাঝে সিপাহী এসে দেখে যায়। নিজেকে একজন চিড়িয়াখানার জন্তু মনে হয় তার।
এর মধ্যেই সেন্ট্রি একজন লোককে এনে ঢুকিয়ে দিলো জহিরের কামরায়। একজন সঙ্গী পেয়ে উৎফুল্ল হলো জহির। চেহারা দেখে মনে হয় যেন অনেক দিনের আত্মীয়। নিজে যেচেই জানতে চাইলো তার পরিচয়।কিন্তু লোকটি আলাপ করতে ইচ্ছুক নয় বলে মনে হলো। তারপরও কিছুক্ষণ সাধাসাধির পর লোকটি বললো, তাকে গোরু চুরির দায়ে এখানে ধরে এনেছে।
"আহা!! গোরুচোর!! ছিলেম তো আমিও একসময়ে!! নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত জহিরের মুখ থেকে কাব্যসুধা নিঃসৃত হয়।
" বলেন কী!! আপনি কি এখনো গোরু চুরি করেন?" অন্য লোকটির কৌতুহল জাগে।
"নহে! নহে! গো ভ্রাতা
যবে হতে করিলেম কাব্যসুধা পান
তবে হতে গোরুচুরি দিলেম ছাড়ান!!”
"বাহ! আপনি তো খুব সুন্দর কবিতা লেখেন। কবি হলেন কী করে?”
" একদিন এক গৃহস্থের বাড়িতে গোরুচুরি করিতে গেলেম।গিয়ে শুনলেম গৃহস্থ কবিতা আবৃত্তি করছে।উহা শুনে কবিতার দিকে আকৃষ্ট হলেম।"
"তাহলে আপনাকে ধরে আনলো কেন বলুন তো??" অপর লোকটির বিস্ময়ের ঘোর কাটে না।
"আহা!! কী করে বলি মম দুঃখের কথা। সেই রজনী হতে আমি ফুলটাইম কবিতা চোর।
পরের কবিতা করে চুরি, কাব্যসুধা পান করি।
সেইহেতু মোরে আনিয়াছে ধরি।"
বলুন তো!! ইহা কোনো কথা? গোরু চুরি উত্তম চুরি। কবিতা চুরি কি কোনো চুরির মধ্যে পড়ে?? অন্যের কবিতা না হয় নিজের নামেই চালালেম।তাই বলে কি ধরে আনতে হবে?"
আক্ষেপ ঝরে পড়ে জহিরের কণ্ঠ থেকে।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:১০