কার্তিকের নিস্তব্ধ দুপুর।কাঠফাঁটা রোদের তাপে সেদ্ধ হবার ভয়ে রাস্তায় জনমানবের উপস্থিতি তেমন একটা নেই। পিচঢালা রাস্তা ধরে একটু দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে জলের মতো টলোমলো একটা বিভ্রম সৃষ্টি হয়,যেমনটা আগুনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় সবাই। রোদের প্রচণ্ড তাপে তৃষ্ণার্ত কুকুরের জিব বের হয়ে থাকে। সেখান থেকে লালা ঝরার কথা ছিলো। কিন্তু রোদের তাপে লালা শুকিয়ে যাওয়ায় তার লাল জিবটা ফ্যাকাসে রঙ ধারণ করে, অনেকটা কসাইদের ঝুলিয়ে রাখা সরিষার তেল মাখা বাসি মাংসগুলোর মতো।
এই নিরব নিস্তব্ধ সময়টা চঞ্চল হয়ে ওঠে কিছুক্ষণের জন্য। স্কুলের ছুটি হয়েছে। মেয়েরা দল বেঁধে বাড়ি ফিরছে। তাদের কথাবার্তা,হাসি-আনন্দে সেই মৃত রাস্তায় প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে। কথা বলতে বলতে হেলে দুলে হাত পা নাড়িয়ে পথ চলতে থাকে তারা। মেয়েগুলো দূর থেকে সেই জিব বের করা কুকুরটাকে দেখতে পায়। তৃষ্ণার্ত কুকুরটার প্রতি মায়া জাগে তাদের। তবে কুকুরটারর এই জিব বের হয়ে থাকাটা শুধুমাত্র পানির তৃষ্ণায় নয়।ঐ পথ ধরে যারা যাবেন তারা একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন সেই কুকুরটার থেকে সামান্য কিছু দূরে এক কুকুরী শুয়ে আছে। এটা মেয়েগুলোর চোখ এড়ায় না।কুকুরীকে দেখে রমণের তীব্র ইচ্ছায় কুকুরটার লালা ঝরার দৃশ্য কল্পনা করে আমোদিত হয় তারা। মুখ টিপে হাসতে থাকে। আবার তার শুষ্ক জিব তাদের মধ্যে একই সাথে করুণারও উদ্রেক করে।
এমন মিশ্র অনুভূতির সাথে পথ চলতে চলতে কুকুরটার সামনে এসে মেয়েগুলো থেমে যায়।তাদের আরক্তিম গালগুলো ফ্যাকাশে রঙ ধারণ করে কুকুরের জিবের মতো। কথা থামিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হনহন করে কুকুরটাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় তারা।
কুকুরটা এত কিছু খেয়াল করে নি। কিন্তু হঠাৎ করেই সে তার পাঁজরে একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করে। তখন সে দেখতে পায়, তার পাশে দাঁড়িয়ে লুঙ্গির ভেতর ডান হাত ঢুকিয়ে পয়তাল্লিশ বছরের পুরোনো শুকনো তালের আটির মতো প্রাচীণ বিচিদুটো কচলাতে কচলাতে আজমত আলী তারস্বরে চিৎকার করে গালিগালাজ করছে তাকে। মানুষের ভাষা সে বোঝে না। নইলে শুনতে পেত "কুত্তার বাচ্চা কুত্তা। দুনিয়াতে আইছছ খালি খালি।"
মেয়েগুলো এভাবে চলে যাওয়ায় কুত্তার ওপর মেজাজ খারাপ হয় তার। এই কুকুরটার জন্যই মেয়েগুলো এভাবে ভয় পেয়ে চলে গেল। রাগে গজগজ করতে থাকে আজমত।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২১ রাত ১১:০৫