***গল্পের প্রয়োজনে কিছু অশ্রাব্য স্ল্যাং ব্যবহার করা হয়েছে। আশাকরি সকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ***
ডান্ডি- দ্বিতীয় পর্ব
'শেষ পর্ব'
মহিলার পিছু পিছু চলছে ওরা দুজন। তার গা থেকে ভুরভুর করে মেক আপ আর পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে। তীব্র ঘ্রাণে ওদের দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। কিন্তু তারপরও মহিলার পিছু ছাড়ে না তারা। এর মধ্যেই মনির লক্ষ করে রাকিব মহিলার ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন খুলছে। মহিলা আপন মনেই হেঁটে চলেছে। একটু পরেই ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে মনিরের হাতে দেয় রাকিব। রাকিব এতো সন্তপর্ণে ও দক্ষতার সাথে কাজটি করে যে মহিলা কিছুই টের পান নি। এরপর মনিরকে ইশারা দেয় সেখান থেকে চলে যেতে। মনির সাথে সাথে দৌড় দেয় জিনিসটা প্যান্টের পকেটে নিয়ে। দৌড় দিয়ে চলে যায় টেম্পুস্ট্যান্ডের পাশের অন্ধকার গলিতে। প্রথমে মনির খেয়াল করে নি জিনিসটা। পকেট থেকে বের করে দেখে একটা মোবাইল। অভ্যস্ত হাতে মোবাইলটা বন্ধ করে সিমটা বের করে ফেলে দেয় রাস্তায়। এরপর সেখানে অপেক্ষা করতে থাকে।
মনিরকে ভাগিয়ে দিয়ে নিজের হাঁটা অব্যাহত রেখেছে রাকিব। ভাবটা এমন যেন কিছুই হয় নি। মহিলা টেম্পুতে উঠে বসলেন। সেই টেম্পুরই পা-দানিতে দাঁড়ালো রাকিব, যেন টেম্পুতে উঠে কোনো গন্তব্যে যাওয়াই তার উদ্দেশ্য। বসার পরে কোনো কারণে মহিলা ভ্যানিটি ব্যাগ খুললেন। খুলে দেখলেন, সবকিছু থাকলেও সেখানে মোবাইলটা নেই। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলেন না মোবাইলটা। তিনি টেম্পু থেকে নেমে রাকিবের হাত চেপে ধরলেন। তার থেকে রাকিবই সবচেয়ে কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তার পক্ষেই নেয়া সম্ভব। রাকিবকে জেরা করা শুরু করেন তিনি। রাকিব যথারীতি অস্বীকার করে। সেখানে লোক জমে যায় অনেক।
"আমি টোকাই। চোর না।"
"হ্যাঁ। তুই ই নিছিস। তুই ছাড়া আর কেউ ছিলো না আমার ধারে কাছে।" মহিলার কণ্ঠ থেকে ক্ষোভ ঝরে পড়ে।
"তাইলে চেক কইরা দ্যাহেন। পাইলে পুলিশে দিয়েন।"
দুজন লোক রাকিবকে চেক করে। তারা কিছু পায় না। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে থেকে এক লোক হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে বসে-
"তোর লগেরটা কই? তোর লগেই তো আরেকটারে আইতে দেখলাম।"
এবার একটু ভ্যাবাচ্যাকা খায় রাকিব। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে যথারীতি এটাও অস্বীকার করে বসে।
"কই দেখছেন? মিছা কতা কন মিয়া। আমি নিলে কী এনে থাকতাম? আমারে গরীব পাইয়া জ্বালাইতাছেন। আল্লায় ঠাডা হালাইবো আপনেগো মাতায়।"
আল্লাহর ঠাডা নিক্ষেপের অভিশাপে কারো কোনো ভাবান্তর না হলেও মহিলার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তিনি ভাবলেন, ছেলেটার কাছে কিছুই নেই। আবার তার কাছেও কোনো প্রমাণ নেই। শুধু শুধু অবিচার করলে শাস্তি অবধারিত। তিনি রাকিবকে ছেড়ে দিলেন। সাথের লোকগুলো ছাড়তে চাচ্ছিলো না। তারা বারবার মহিলাকে পরামর্শ দিচ্ছিলো রাকিবকে বেঁধে রাখলে তার ফোন পাওয়া যাবে। কিন্তু তিনি ছেড়্র দিতে বললেন ওকে। ছেড়ে দেবার পর রাকিব সেখান থেকে চলে গেল। কিন্তু লোকগুলোর ক্ষোভ প্রশমিত হলো না। তারা রাকিবকে ছেড়ে দিয়ে এবার মহিলার ওপর তাদের ক্ষোভ ঝাড়তে লাগলো।
"অরে বাইন্দা রাখলেই ফোনটা পাওয়া যাইতো আপা।"
"চেক করে তো কিছু পেলাম না। আর কী পাওয়া যাবে? তাছাড়া ফোনই তো। আরেকটা কিনে নেব।"
"তা তো নিবেনই। জামাই কষ্ট কইরা কামাই করে,আর আপনেরা এমন কইরা সেইগুলি নষ্ট করেন।"
"আমার জামাইয়ের টাকা আমি কী করব না করব সেই পরামর্শ দেয়ার আপনি কে? আমার টাকা না আমার জামাইয়ের টাকা সেটা আপনি কিভাবে জানলেন??”
" আপনার ট্যাকা হইলেই এমনে নষ্ট করবেন?? মাইনষে খাইতে পারে না আর উনি মোবাইল মাইনষেরে দিয়া বেড়ায়। হালার মাইয়া মানুষের বুদ্ধিই হাঁটুর নিচে।"
সবার মধ্যে হাসির কলরোল ওঠে। মহিলা সেখান থেকে বের হয়ে এসে একটা রিকশা ডেকে সেখান থেকে চলে যান। সবার অলক্ষ্যে তার চোখ টলটল করতে দেখা যায়।
মনির অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো। এর আগেও সে অপেক্ষা করেছে।কিন্তু আজ দেরি হচ্ছে। তার অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করছে না। তার একটু ভয় করছে।দুটো কারণ আছে এর পেছনে। প্রথমটা হলো, রাকিব যদি ধরা পড়ে যায় তাহলে ওকে মেরে আস্ত রাখবে না। যেহেতু দেরি হচ্ছে,তাতে ধরা পড়েছে বলেই আশংকা হচ্ছে তার। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, সে একটা মোবাইল পকেটে নিয়ে ঘুরছে। এই গলিতে এখন কেউ নেই। বড় ভাইদের কেউ, অথবা পুলিশ টের পেলে মোবাইল তো যাবেই, সাথে মাইর ফ্রি। ভয় এবং উৎকণ্ঠায় গলা শুকিয়ে আসে তার। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না। একটু পরেই সেখানে চলে আসে রাকিব।
"এত দেরি অইলো ক্যা? ধরা পড়ছিলা নি? মনিরের ঔৎসুক্য প্রকাশ পায়।
" আরে না। এত সহজ নি সবকিছু??"
"তাইলে দেরি করলা যে??"
"ইট্টু দেইক্যা-দুইক্যা আস্তে আস্তে আইছি।"
কথা শুনে রাকিবের জন্য গর্বে বুকটা ভরে যায় মনিরের। পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখাতে চায় রাকিবকে। রাকিব নিষেধ করে। এনে না। আস্তানায় চল আগে। তারা দুজন তাদের আস্তানায় রওনা হয়।
শহর থেকে একটু দূরে ময়লার ভাগাড়। সেখানে সারাদিনে কোনো মানুষ যায় না। শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনের ময়লার লোকেরা গাড়ি নিয়ে আসে। রাকিব মনিরের মতো বহু টোকাই তাদের জন্য অপেক্ষা করে। ময়লাওয়ালা আসা মাত্রই ময়লা ফেলতে তাকে সাহায্য করে এসব টোকাই। যদিও কোনো অর্থ তারা দাবি করে না এজন্য। তাদের কাজ শুরু হয় ময়লাওয়ালা চলে গেলে। রীতিমতো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ময়লার মধ্য থেকে বোতল এবং প্লাস্টিক সামগ্রী খুঁজে বের করে বস্তায় ভরে তারা। এই বোতলগুলো চলে যায় ভাঙারির দোকানে। তারপর সেখান থেকে লোকাল পানির ফ্যাক্টরিতে। এই বোতল বাবদ তারা অর্থ পায়। বোতল টোকানোর পর তারা একটা বড় চুম্বক সুতায় বেঁধে নিয়ে ময়লার মধ্যে ফেলে। ঠিক যেমন করে লোকেরা মাছ ধরার জন্য বরশি ফেলে। ময়লার মধ্যে কোনো দাতব বস্তু থাকলে তা চুম্বকে আটকে গিয়ে উঠে আসে। বোতলের চেয়ে লোহার দাম বেশি। প্রতিদিনই এখান থেকে ভালো আয় হয়। কিন্তু এই ভাগারে রাকিব, মনির আসে না। তাদের ডিউটি পার্কে ভিক্ষা করা। তাদের এখানে আসা নিষিদ্ধ। খালার কড়া নির্দেশ। খালাই সবকিছু ঠিকঠাক করে দেয়। বড় অদ্ভূত চরিত্র এই খালা। তাকে কখনো হাসতে দেখেনি রাকিব মনির। তাকে যমের মতো ভয় করে সকলে। সবার সব টাকা খালাকে দিতে হয়। টাকা কম হলে খালা ধরে মারে, সাথে গালি ফ্রি। রাকিব মনির দেখেছে সবার কাছ থেকে টাকা বুঝে নেয়ার পর সে কাকে যেন ফোন দেয়। তারপর এক লোক এসে কিছুক্ষণ খালার সাথে কথা বলে তারপর চলে যায়।তবে রাত বারোটার পরে যখন দুয়েকজন লোক আসে তখন খালার মুখে হাসি দেখা যায়। লোকদের ঘরে ঢুকিয়ে খালা দরজা লাগিয়ে দেয়। তখন ভেতর থেকে কাঠের ক্যাচ ক্যাচ শব্দ আর খালার কণ্ঠ থেকে উহঃ আহঃ শব্দ শোনা যায়। এই শব্দের মানে মনির না বুঝলেও রাকিব বোঝে। এসব শব্দ হলেই রাকিব মুখ টিপে হাসে। শব্দের তারতম্য অনুসারে হাসি ওঠানামা করে। যেদিন শব্দ বেশি হয় সেফিন হয়তো রাকিব বলে বসে, "মাগীরে খিচ্চা লাগাইতাছে রে!!" মনির এই কথার মানে বোঝে না। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে রাকিবের দিকে। এই অদ্ভুত চরিত্রের খালাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। তার কাছে দিনের সব ইনকাম জমা দিতে যায় তারা।
ময়লার ভাগারের পাশেই একটা ট্রাক স্ট্যান্ড। এখানে ট্রাকগুলোকে বিশ্রাম দেয়া হয়। তার পাশেই কংক্রিটের অনেকগুলো পাইপ রাখা। এই পাইপগুলোর মধ্যেই রাকিব মনির সহ আরো টোকাইরা থাকে। কংক্রিটের পাইপের এলাকা পার হবার পর একটা বস্তি। ময়লার ভাগাড় আর বস্তির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। বস্তির পাশে একটা নালা।এটা খাল ছিলো একসময়। আলকাতরার মতো কালো এবং দুর্গন্ধযুক্ত পানি বয়ে চলেছে এই নালা দিয়ে। বর্ষার দিনে এই নালার পানি বেড়ে গিয়ে বস্তি ডুবিয়ে দেয়। মানুষ, মরা কুকুর,বিড়াল, মানুষের বিষ্ঠা, ময়লা সবাই একত্রে বসবাস করে তখন।শুকনো মৌসুমে দুর্গন্ধে পেটে মোচড় দেয়।তারপরও মানুষ থাকে সেখানে। এই বস্তির সবচেয়ে বড় ঘরটায় খালা থাকে।
যথারীতি দিনের ইনকাম নিয়ে হাজির হয় রাকিব-মনির। টাকা দেয়ার আগেই খালা বলে,
"মোবাইলডা বাইর কর আগে। দেহি, কত বড় হাত মারছছ আইজকা?"
মনির তার পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলে খালা সেটা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে।তার চোখ চকচক করে। "দামি একখান জিনিস আনছছ।" বলে প্রশংসা করে তাদের।তারা খুশি হয়। "এইবার ট্যাকা বাইর কর।" খালা আদেশ দেয়। রাকিব তার পকেট থেকে টাকা বের করে খালার হাতে দেয়। টাকা দেয়া মাত্রই খালা কষিয়ে দুটো চড় বসিয়ে দেয় রাকিবের গালে।
"ট্যাকা এত কম ক্যা? "
"আইজকা ধরা খাইয়া গেছি। এইলিগা পার্কে বইতে পারি নাই বেশি।"
"বেশ্যামাগীর পোলা,মিছা কতা কছ ক্যা?” বলে আরেকটা চড় কষায়।
" মুরগী দিয়া বাত খাইছি আইজকা।"
" ফকিন্নির পুত মুরগি হান্দাইতে গেছে। তর মার ভাতাররে যে বিশ ট্যাকা দিছছ হেইডা কছ না ক্যা? কী মনে করছ? তগো খবর আহে না আমার কানে??"
" ব্যাডায় বিপদে পইড়া চাইছিলো।"
"অহন যে তুই বিপদে পড়লি! হেইডা?? কাইলকাই ব্যাডারতে ট্যাকা ফেরত আইন্না দিবি।"
ওদের ইনকাম থেকে পঞ্চাশ টাকা বের করে রাকিবের দিকে ছুড়ে মেরে তাদেরকে চলে যেতে বলে খালা। খালার ডেরা থেকে বের হয়ে এসে গালির তুবড়ি ছোটাতে থাকে রাকিব।
"খানকি মাগীর গলাডা কোনদিন যানি কাইট্টা হালাইয়া দেই রে মইন্যা।"
"এমুন করবা ক্যা বাই? "
"মাগী আমার মায়রে গাইল দিছে।"
"তুমি তুমার মায়রে দেখছ কোনোদিন?”
" না।"
"তাইলে গাইল দিলেই বা কি? "
"তারপরও কেমুন জানি লাগে মায়রে গাইল দিলে। তর-আমার মায় থাকলে আমগো বিক্কা করোন লাগতো না।"
"কি জানি? আমি বুজি না। "
তারা হাঁটতে হাটঁতে চলে যায় এক হার্ডওয়্যার এর দোকানের সামনে। দোকান তাদের পরিচিত। গিয়ে পঞ্চাশ টাকা দোকানদারের হাতে দেবার পর দোকানদার তাদের কাঙ্ক্ষিত টিনের কৌটাটি তাদের হাতে দেয়। সাথে একটা দেশলাইয়ের বক্স আর মোম। কৌটার গায়ে লেখা রবার সলিয়্যুশন। এমনিতে সবাই জুতার আঠা বলে। দোকানদার নয় টাকা ফেরত দিলে তারা প্রস্থান করে। ট্রাকস্ট্যান্ডের পাশে তাদের ডেরায় ফিরে আসে তারা। তাদের বাসস্থান একটা বড় পাইপের মধ্যে। সেখানে গিয়ে বসামাত্রই হঠাৎ একটা রিকশার বেলের টুংটাং শব্দ ভেসে আসে তাদের কানে।তাদের পাইপের সামনেই একটা রিকশা এসে থামে।তারা দেখলো, রিকশা থেকে এক হিজড়া নেমে এসেছে। নেমেই রিকশাওয়ালার হাত ধরে গালে চুমু খায়। এরপর রিকশাওয়ালা এসে তাদেরকে ধমক দিয়ে পাইপ থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। কিন্তু রাকিব দ্বিগুণ তেজে ধমক দেয়।
"ট্যাকার অবাবে মাইয়া লাগাইতে পারোছ না দেইখ্যা হিজলা লাগাস। আবার আমগো ধমক দেছ! হালা ফকিন্নিচোদা। ভাগ!! নাইলে মানুষ ডাকমু।"
রিকশাওয়ালা কোনো উচ্চবাচ্য না করে দূরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের নিচে চলে যায় সঙ্গীকে নিয়ে। এরপর মনিরকে দুটো পলিথিন আনতে বলে সে মোমে আগুন ধরায়। সোনালি আলোয় ভরে ওঠে পাইপের মধ্যখানটা। মনির পলিথিন নিয়ে এলে জুতার আঠাটির কৌটা খুলে সবটুকু আঠা একটা পলিথিনে ঢেলে নিয়ে সেটা আগুনে পোড়ায় রাকিব। সেখান থেকে অদ্ভুত মাদকতাপূর্ণ একটা ঘ্রাণ বের হয়। আঠা পোড়ানো হয়ে গেলে সেটা অন্য পলিথিনে নিয়ে তার মধ্যে নাক ঢুকিয়ে উপর্যুপরি শ্বাস নিতে ও ছাড়তে থাকে রাকিব। মনিরের রাকিবকে দেখে মনে হয় যেন শ্বাসকষ্টের রোগী। শ্বাস নিতে নিতে রাকিবের চোখ লাল হয়ে আসে। কণ্ঠ জড়িয়ে আসে। চোখ দেখে মনে হয় যেন চোখের পানি আঠালো হয়ে লেগে আছে চোখে। রাকিবের টানা হয়ে গেলে সে পলিথিনটি মনিরের দিকে এগিয়ে দেয়। মনির এই বস্তুটিতে অভ্যস্ত না।অল্পকিছুদিন হয় নেয়া শুরু করেছে। যদিও তার টানতে ভালোই লাগে। মাথা ফাঁকা হয়ে যায়। সারাদিনের কষ্ট ভুলে যায়। রাতেও ঘুম ভালো হয়। সে দেখে,রাকিব বাই বেশি খায়। সে সারাদিন অনেক মাইর খায়। এটা খেয়ে সেসব মাইরের দুঃখ সে ভুলে যায়। নাক টেনে ঘুমায়। একেবারে মরার মতো পড়ে থাকে।সকাল বেলা একেবারে নতুন মানুষ সে। মনির ভেবে পায় না, এতো ভালো একটা জিনিসের নাম ডান্ডি কেন? সে রাকিবকে জিজ্ঞাসা করে,
"বাই এইডার নাম ডান্ডি ক্যা?"
"জানি না।"
" এইডা টানলে এত বালা লাগে ক্যা?"
" পিনিক অয় হেইলিগা।"
"আমার কি পিনিক অইছে?"
"চোকের সামনে কি দেহস?"
"একখান টেবিল। টেবিলে অনেক খাওন। তুমি আর আমি বইয়া রইছি। আর তোমার মায় আমাগো খাওয়াইয়া দিতাছে।"
"আমার মা ক্যা? তরডা কই?"
" একজনই তো দ্যাকতাছি। আমার মায়রে তো আমি চিনি না।হেইলিগা ঐডা তোমার মা।"
"তারপর?"
"তুমি ডং করতাছ, খামু না কইয়া। আর আমি খাইতাছি গপাগপ কইরা।"
"হ্যানেও আমারে খাইতে দিবি না? কী খাছ এহন?"
"আঙ্গুর।"
"বালা জিনিস। খাইতে কেমুন?”
" জম্মের টক বাই।"
"বুজছি। তর পিনিক অইছে। এহন গুমা। সকালে পার্কে যাওন লাগবো।"
একথার পরই শুয়ে পড়ে তারা দুজন। কিছুক্ষণ তারা জেগে থাকে।নেশার ঘোরে ঝিমায়। এতে তারা অভ্যস্ত। তাদের প্রতিদিনের রুটিন এটা। তাদের ভালো লাগে এভাবে ঝিমোতে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে মনে হয় নিজেদের। সারাদিনের ধকল উবে যায়। দিনরাতের সকল দুঃখ-বেদনা ডান্ডিকে সমর্পণ করে তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এই ঘুম পরম শান্তির। এ-ঘুম থেকে জাগতে চায় না তারা।
**সমাপ্ত**
কিছু কথাঃ এটা গল্প হলেও এখানকার সমস্ত ঘটনা সত্যি। এখানে আমার নিজের দেখা ঘটনা, কয়েকজন টোকাইয়ের কাছ থেকে তাদের জীবনযাত্রা শুনে সেসব ঘটনার সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। কিছু জিনিস অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে কিন্তু সেগুলো সত্যি। তারা কারো না কারো অধীনে কাজ করে, নজরদারীতে থাকে। তারা এমন একটা জালে আবদ্ধ যে রাষ্ট্র কঠিন পদক্ষেপ না নিলে তাদের পুনর্বাসন করা সম্ভব না। এখানে শুধু ছেলেদের জীবন থেকে কিছু ঘটনা বর্ণিত। মেয়েদের জীবন আরো ভয়াবহ। এতটা ভয়াবহ যে তাদের সম্পর্কে লেখার মতো মানসিক শক্তি আমার এই মুহূর্তে নেই। গল্পের চরিত্রগুলো তাদের আনন্দ-বেদনা-ক্ষোভ সবকিছু গালির মাধ্যমে প্রকাশ করে।এমনকি কুশল বিনিময়ও গালি দিয়ে করে। আর তাই অশ্রাব্য কিছু গালি গল্পে আনতে হয়েছে। এজন্য আমি আবারো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি পাঠকের কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৪৭