স্বর্গের সৌন্দর্য, অপ্সরা দেখতে দেখতে বহু দিন কাটিয়ে দিয়েছেন ভৃগুমুনি। পরম সুখে স্বর্গে বাস করছেন তিনি। শুধু সুখ আর সুখ। কোনো দুঃখ নেই জীবনে তার। কিন্তু সমস্যা হলো ,সুখ হোক আর দুঃখই হোক, কোনো কিছুই বেশিদিন ভালো লাগে না। বদহজম হয় । ভৃগু মুনির মনেও ‘সুখে থাকলে ভূতে কিলায়’ রোগের সংক্রমণ ঘটে গেল নিজের অজান্তেই। তিনি বিদ্রোহী ভৃগু! তার এরকম ফুল-ফল-লতা-পাতা-নারী দেখে সময় নষ্ট করলে চলে না। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী দশ মুনির একজন! তাছাড়া সেদিন স্বর্গের অধিবাসীরা একে-অপরের সাথে বলাবলি করছিলো আর্যরা নাকি উগান্ডায় খুব কষ্টে আছে। বিষ্ণুদেব নাকি প্রতিকার করতে গিয়ে নিজে নাজেহাল হয়ে ফিরে এসেছেন!! এমনটা তো হবার কথা নয়। তিনি সর্বগুণসম্পন্ন শক্তিশালী দেবতা। তাছাড়া শেষ অবতার হিসেবে এখনো নামেন নি । তাঁর তো নাজেহাল হবার কথা নয় । এ পরিবর্তন অসম্ভব!! নাহ! গিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে আবার!!
একথা ভাবতে ভাবতেই ভৃগু মুনি বৈকুণ্ঠে চললেন বিষ্ণুদেবের কাছে। এবার আর ব্রহ্মা,শিবের কাছে গেলেন না তিনি। কারণ আগের বার ব্রহ্মা তাকে গালাগাল দিয়েছিলো । শিবতো আরেকটু হলে মেরেই ফেলতো। কিন্তু বুকে লাথি মারার পরও বিষ্ণু ব্রহ্মা আর শিবের মতো ক্রোধান্বিত না হয়ে উল্টো ভৃগুর পদসেবা করেছিলেন। এবারও হয়তো করবেন।আবার নাও করতে পারেন । করেন কি না তা দেখার জন্যই তো যাচ্ছেন !! যা হবে দেখা যাবে । ভাবতে ভাবতে ভৃগু চলে এলেন বৈকুন্ঠধামে। এসে দেখলেন বিষ্ণুদেব হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছেন। তার মাথার কাছে ভাষ্কর্যের মতো শোভা পাচ্ছে উগান্ডা থেকে আমদানিকৃত খাঁটি(?) সরিষার তেল!! ভৃগুর বুঝতে আর বাকি রইলো না।পালনকর্তা ঘুমাচ্ছেন বলেই তো উগান্ডায় আর্যরা কষ্টে আছে। আগের মতো তেজ নিয়েই ভৃগু মুনি বিষ্ণুকে গালাগাল দিলেন। বললেন, “ আর্যরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর আপনি নাকে তেল নিয়ে ঘুমাচ্ছেন??” । বলেই আগের মতো লাথি মারার জন্য পা উঁচু করলেন। কিন্তু এবার বিদ্রোহী ভৃগুকে অবাক করে দিয়ে লাথি মারার আগেই বিষ্ণুদেব উঠে বসলেন। তিনি বললেন , “ আমি সব শুনেছি। বড্ড বেশি কথা বলেন আপনি।“ এরপরই তার হাতের ইশারায় এসে হাজির হলো প্রহরীরা। তদের উদ্দেশ্য করে বিষ্ণুদেব বললেন, “ ভৃগুমুনি আমার ঘুম নষ্ট করেছেন। তিনি বৈকুন্ঠধামের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ! ওনাকে ‘বৈকুণ্ঠ নিরাপত্তা আইনে’ জেলে ভরে দাও।“ প্রহরীরা ভৃগুমুনির কোমরে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে গেল। প্রহরীরা চলে যাওয়ার পর বিষ্ণুদেব উগান্ডা থেকে আমদানিকৃত খাঁটি(?) সরিষার তেল নাকে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০৪