somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)
নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার 'কলম'।

সরকারী চাকুরীতে কোটা সংস্কারের দাবি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

০৫ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাষ্ট্রকে একটি ট্রেনের সঙ্গে তুলনা করলে, সেই ট্রেনের চালক হচ্ছে রাজনীতিবিদরা, যন্ত্রাংশ ও ইঞ্জিন হচ্ছে দেশের আমলারা এবং সমস্ত বগীতে বসা যাত্রীরা হচ্ছেন দেশের জনগণ।বগীতে বসা যাত্রীদের ঝুঁকিমুক্ত নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হলে প্রয়োজন দক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ চালক এবং উন্নত যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি ইঞ্জিন। এর বিপরীত হলে বগিতে বসে থাকা শতশত যাত্রীর জীবন হবে নিশ্চিত ঝুঁকির সম্মুখীন ।আমাদের রাষ্ট্র নামক রেলগাড়ির চালকগন কেমন দক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ তা আমরা সুবিধাভোগী চতুর জ্ঞানী ব্যক্তিরা ব্যতীত একজন সৎ নিরপেক্ষ নিরক্ষর ব্যক্তিরও জানা।এমন চালকদের গাড়ির ইঞ্জিনও যদি তৈরি করা হয় জিঞ্জিরার যন্ত্রাংশ দিয়ে তাহলে গাড়ির পরিণতি অনুধাবন করে আমাদের যাত্রীদেরই নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে সচেতন হওয়া অত্যাবশ্যক।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকুরীতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, মহান মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পোষ্যদের জন্য কোটা সংরক্ষণের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে, তবে আমাদের দেশ ও জনগণের স্বার্থে সেই কোটা কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা যৌক্তিক ভাবে ভেবে দেখা উচিত।

বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন এর মাধ্যমে দেশের প্রশাসনের বিভিন্ন শাখায় যে সকল নিয়োগ হয় সেই পদগুলো মূলত রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী পদ। এই চেয়ারগুলো যারা অলংকৃত করেন তাদের হাতেই রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্ধারণ হয়। স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে আমরা ৫৪ বছর পার করেছি, আমাদের হাতে হাতে প্রযুক্তি, ছোনের ঘরের পরিবর্তে ইট পাথরের ঘরে ঘুমাই,তিন বেলা খেয়ে পড়ে বাঁচার ব্যবস্থা হয়েছে , আসমানে আমাদের স্যাটেলাইট প্রদক্ষিণ করে,এক সময় ছেঁড়া বসনে আমাদের দিন কাটলে এখন কম বেশী সবাই রঙিন হরেক রকম পোশাক পরি।আজ এই অবস্থায় আসতে কৃষকের হাড় ভাঙা শ্রম, গার্মেন্টসে কর্মরত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের বিরামহীন পরিশ্রম, বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের শ্রম এবং প্রবাসে অবস্থানরত এক কোটি মানুষের ত্যাগ ও তিতিক্ষা রয়েছে।দেশের জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ উৎপাদন ও অর্থনীতির সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট, এই জনগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের উপর মূলত রাষ্ট্রের গতি সচল থাকে। এই জনগোষ্ঠীকে সঠিক ভাবে ও সঠিক পথে পরিচালনার জন্য নীতি নির্ধারণ,নানা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন,তাদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান ও নানাবিধ সেবা প্রদানের জন্য জনগণের করের টাকায় রাষ্ট্র প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোতে মেধাবী, সৎ, সুশিক্ষিত, উদ্যমী শিক্ষার্থীদের নিয়োগ প্রদান করবেন, এটাই রাষ্ট্রের কাছে সাধারণ মানুষের কাম্য।কিন্তু জনগণ সেবার জন্য যাদের বেতন দিয়ে সংসার চালায়, তাদের কাছ থেকে পরিপূর্ণ সেবা কি তারা পায়? এর উত্তর, সেবা পায় তবে তার জন্য আবার জনগণকে প্রায়শ বাড়তি টাকা গুনতে হয়, অর্থাৎ ঘুষ দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অর্জনকারী একজন মানুষ ঘুষ খায় এটা শুনতে বেমানান হলেও, কথিত শিক্ষিত সমাজ আজ দুর্নীতিগ্রস্ত এটাই বাস্তব সত্য। বছরের পর বছর পার হলেও এই অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ হচ্ছেনা, এবং উত্তরণের পথও আমরা খুঁজছিনা।

প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত বেশভূষায় ভদ্রলোকেরা কেন দুর্নীতিগ্রস্ত এর কারণ খুঁজতে প্রথমত যে বিষয়টি উঠে আসে তাহলো এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া।দেশের সরকারি চাকুরীর নিয়োগের প্রতিটি ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করে বাকি ৪৪ শতাংশ পদ সর্বসাধারণের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগের প্রথা চালু থাকলে এই ৪৪ শতাংশ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী নিয়োগের পরিবর্তে মন্ত্রী এম পি’দের তদবিরের ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের মেলা বসানো হয়।এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সরকারী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পর্যন্ত বিদ্যমান।আমাদের দেশে সরকারী চাকুরী মানেই শুধু বেতনের টাকায় নিজেকে স্বনির্ভর করা এবং একটি নিরাপদ জীবন যাপনকে বোঝায়।কিন্তু চাকুরী মানে নিয়োগকর্তার সেবা করা এই ধারণাই আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত।প্রশ্ন সরকারী চাকুরীর নিয়োগ কর্তা কে? উত্তর সরকার।কিন্তু সরকার পরিচালনার দায়িত্বশীলদের দায়িত্বভার অর্পণকর্তা কারা? উত্তর- জনগণ।সরকার পরিচালনার অর্থের যোগানদার কে ?উত্তর- জনগণ। জনগণ কেন তার কষ্টার্জিত অর্থ সরকারকে দেয়? উত্তরঃ তার অর্থে জীবিকা নির্বাহ করা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারীগন জনগণকে সেবা প্রদান করবে। যেখানে জনগণের কাছে তাদের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার কথা সেখানে উল্টো জনগণকেই তার কর্মচারীদের দ্বারা শোষিত হতে হয় এবং তাদের সেবা অর্থের (ঘুষের) বিনিময়ে কিনতে হয়। প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত বেশভূষায় ভদ্রলোকেরা কেন দুর্নীতিগ্রস্ত এর কারণ খুঁজতে প্রথমত যে বিষয়টি উঠে আসে তাহলো এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া।দেশের সরকারি চাকুরীর নিয়োগের প্রতিটি ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করে বাকি ৪৪ শতাংশ পদ সর্বসাধারণের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগের প্রথা চালু থাকলে এই ৪৪ শতাংশ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী নিয়োগের পরিবর্তে মন্ত্রী এম পি’দের তদবিরের ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের মেলা বসানো হয়।এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সরকারী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পর্যন্ত বিদ্যমান।আমাদের দেশে সরকারী চাকুরী মানেই শুধু বেতনের টাকায় নিজেকে স্বনির্ভর করা এবং একটি নিরাপদ জীবন যাপনকে বোঝায়।কিন্তু চাকুরী মানে নিয়োগকর্তার সেবা করা এই ধারণাই আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত।প্রশ্ন সরকারী চাকুরীর নিয়োগ কর্তা কে? উত্তর সরকার।কিন্তু সরকার পরিচালনার দায়িত্বশীলদের দায়িত্বভার অর্পণকর্তা কারা? উত্তর- জনগণ।সরকার পরিচালনার অর্থের যোগানদার কে ?উত্তর- জনগণ। জনগণ কেন তার কষ্টার্জিত অর্থ সরকারকে দেয়? উত্তর তার অর্থে জীবিকা নির্বাহ করা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারী জনগণকে সেবা করবে। যেখানে জনগণের কাছে তাদের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার কথা সেখানে উল্টো জনগণকেই তার কর্মচারীদের দ্বারা শোষিত হতে হয় এবং তাদের সেবা অর্থের (ঘুষের) বিনিময়ে কিনতে হয়।

জ্ঞান মানুষকে মহৎ করে এবং সুশিক্ষিত মানুষ হয় আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ।একজন মানুষ যখন জ্ঞান অর্জনের ভেতর দিয়ে নিজেকে তৈরি করার পর তার মেধা প্রমাণের সিঁড়িগুলো অতিক্রম করে করে কোন দায়িত্বে আসীন হন তখন তিনি বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে রেখে দক্ষতা, সেবার মানসিকতা এবং সততার সমন্বয় ঘটিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এমন মানুষেরাই মূলত একটি জাতির দিক নির্দেশনা দেয় এবং একটি স্থিতিশীল সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে। অপরদিকে কোন মানুষ যখন ঘাম না ঝরিয়ে মেধা প্রমাণের সিঁড়ি অতিক্রম ছাড়াই কোন দায়িত্বের আসন লাভ করে তখন তার মধ্যে প্রথমত প্রাপ্ত দায়িত্বভারের বিশেষ গুরুত্ববোধ উপলব্ধি হয়না।এছাড়া একজন অযোগ্য লোকের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা, যেহেতু তার যোগ্যতা দিয়ে নিজেকেই রক্ষা করতে অক্ষম তাই তার কাছ থেকে বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার আশা করা অনর্থক। এমন মানুষের কাছ থেকে দেশ ও জাতির সেবার পরিবর্তে বরং ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভানাই বেশি।নিজেকে রক্ষার চিন্তায় নিমগ্ন এমন মানুষেরাই অসৎ পথে আত্মনির্ভর হয়ে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবার প্রচেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত থাকে। যার প্রমাণ রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রের বর্তমান বিরাজমান অরাজকতা এবং আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র।রাজনীতি থেকে শুরু করে করে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্র আজ অযোগ্য মানুষদেই আধিক্যে।

মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন আমাদের আঠারো কোটি মানুষের মাথার মুকুট।বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন তাদের ঋণ রক্ত দিয়েও শোধ করার নয়।মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ তার জীবন। সেই জীবনকেই তুচ্ছ জ্ঞান করে অস্ত্র হাতে হানাদার মুক্ত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে একটি মানচিত্র ও পতাকা উপহার দিয়েছেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা।স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে দেশের সেবায় অবদান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য ত্রিশ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ ছিল একটি সময় উপযোগী প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত।দেশ আজ তার চুয়ান্ন বছরের সময়কাল পারি দিয়েছে।সময়ের প্রয়োজনে মেধা, প্রযুক্তি নির্ভর ও সুসভ্য জাতি বিনির্মাণে দেশকে নতুন করে পুনর্গঠন আজ প্রতিটি মানুষের মধ্যে অনুভূত।মুক্তি যোদ্ধার সন্তান ও তার উত্তরসূরিদের রক্তে দেশপ্রেমের ধারা বহমান।দেশের স্বার্থে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিলে প্রথম পদচারণা হবে তাদের, আমরা সেটাই কামনা করি।সরকারী প্রতিটি চাকুরীর ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের পোষ্যদের জন্য ত্রিশ শতাংশ চাকুরী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা বলবদ থাকার কারণে অনেক অসৎ মানুষ রাজনৈতিক সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধার সনদের অধিকারী হয়ে রাষ্ট্রের এই উদারতাকে অপব্যবহার করে চলছে।আমার দেখা তীব্র আত্মমর্যাদা সম্পন্ন অনেক মুক্তিযোদ্ধা জীবনে কখনোই সরকারের নিকট সনদের জন্য দ্বারস্থ হননি এবং তাদের সন্তানদের যোগ্য মানুষ হওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করে বড় করেছেন।তাদের অনেকেই যোগ্যতার মূল্যায়নে দেশ বিদেশে সম্মানজনক পদে আসীন।প্রতিটি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরি বা পোষ্যদের উচিত যোগ্য মানুষ হয়ে রাষ্ট্রের সেবায় অংশগ্রহণ করা। কোন অনুগ্রহ বা অনুকম্পায় শুধু বেতন পাওয়ার আশায় একটি চাকুরীর জন্য রাস্তায় দাঁড়ানো তার পূর্ব পুরুষের বীরত্বকেই খাটো করার হয় । আমার দেখা ছাত্র জীবনের প্রতি স্তরে মেধার সাক্ষর রাখা অনেক বন্ধু ও বড় ভাইকে দেখেছি সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার নীতির কারণে সরকারী চাকুরীতে সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়েই কোন বেসরকারী মাদ্রাসায় চাকুরী করছে অথবা শুধু জীবীকার প্রয়োজনে বিদেশের মাটিতে শ্রমিকের জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।অথচ তার মেধা দেশকে এগিয়ে নেবার স্বার্থেই সরকারের কাজে ব্যবহার হওয়া উচিত ছিল।অথচ, মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শিক্ষা জীবনের সকল স্তরে টেনেটুনে পাশ করে প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকুরীর পদ দখল করে বসে আছে।আমার মতে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরই প্রথম দায়িত্ব।আমরা যদি মেধা ও সততার উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো দাঁড় করাতে পারি তাহলে হয়তো আজ যে চাকুরীকে কর্মসংস্থান ও জীবিকা অর্জনের ভিত্তি ভেবে যে দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছি সেই ধারণাই হয়তো সবার বদলে যেতে পারে। মানুষ হয়তো সরকারী চাকুরী না খুঁজে আরও ভালো কিছু উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিজেই করে সম্মানের সহিত মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখবে।

আমাদের বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ সামাজিক ভাবে অবহেলার স্বীকার। সমাজের এই শ্রেণীর মানুষের পাশে থাকা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব।সেই লক্ষ্যে তাদের রাষ্ট্রের সেবায় অংশগ্রহণ ও সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকুরীতে কোটা সংরক্ষণ অত্যাবশ্যক।তবে অপমানের দৃষ্টি ভঙ্গীতে না দেখে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরীতে শুধু মাত্র অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে অন্যান্য কোটা একটা নির্দিষ্ট সময়কাল নাগাদ বলবদ রাখার প্রয়োজন অনুভব করি।

বিগত সময় স্রোতের বিপরীতে লড়াই করার দৃঢ় মানসিক শক্তিতে বলীয়ান ছাত্র সমাজের তীব্র আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়েই সরকার কোটা সংস্কারের এই ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে দেশের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকুরীর নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল প্রকার কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।যা ভাবা হয়েছিল, অরাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার এটি একটি ঐতিহাসিক বিজয় এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত সরকারের বড় বড় অপকর্মের মাঝে এটি একটি সময় উপযোগী বিচক্ষণ এবং প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত।
কিন্তু, ক্ষমতাসীনদের সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোন রূপরেখা আজও পর্যন্ত দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশ ছাত্রসমাজ আবারো রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে।

যদিও এই আন্দোলনকে ভণ্ডুল করার কৌশল হিসেবে কোটার সুবিধাভোগী গোষ্ঠী নানা অপবাদ ও অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করলেও বৃহত্তর সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে এবং সচেতন সাধারণ মানুষের সমর্থনে তা নস্যাৎ হয়ে গণ-মানুষের অধিকার আদায়ের দাবিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

অদূর ভবিষ্যতে সরকারি চাকুরীতে কোটা প্রথা বাতিল হয়ে গেলেই সরকারী চাকুরীতে মেধাবীদের মেলা বসে যাবে এমন ভাবাও অর্থহীন।নিয়োগ বাণিজ্যের আড়তদাররা এখনো আমাদের মাথার উপর সক্রিয় হয়ে বসে আছে, সেই সাথে চাকুরীর প্রশ্নপত্র ফাঁস,দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ ইত্যাদি সমস্যা সংক্রামক ব্যাধির মত বিরাজমান।একটি সুখী সমৃদ্ধ ও নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে দেশের সর্বস্তরের জনগণের নিজ স্বার্থে এই সংক্রামক ব্যাধিকে সমূলে নির্মূলের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া অত্যাবশ্যক।
রাষ্ট্রকে একটি ট্রেনের সঙ্গে তুলনা করলে, সেই ট্রেনের চালক হচ্ছে রাজনীতিবিদরা, যন্ত্রাংশ ও ইঞ্জিন হচ্ছে দেশের আমলারা এবং সমস্ত বগীতে বসা যাত্রীরা হচ্ছেন দেশের জনগণ।বগীতে বসা যাত্রীদের ঝুঁকিমুক্ত নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হলে প্রয়োজন দক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ চালক এবং উন্নত যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি ইঞ্জিন। এর বিপরীত হলে বগিতে বসে থাকা শতশত যাত্রীর জীবন হবে নিশ্চিত ঝুঁকির সম্মুখীন ।আমাদের রাষ্ট্র নামক রেলগাড়ির চালকগন কেমন দক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ তা আমরা সুবিধাভোগী চতুর জ্ঞানী ব্যক্তিরা ব্যতীত একজন সৎ নিরপেক্ষ নিরক্ষর ব্যক্তিরও জানা।এমন চালকদের গাড়ির ইঞ্জিনও যদি তৈরি করা হয় জিঞ্জিরার যন্ত্রাংশ দিয়ে তাহলে গাড়ির পরিণতি অনুধাবন করে আমাদের যাত্রীদেরই নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে সচেতন হওয়া অত্যাবশ্যক।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকুরীতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, মহান মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পোষ্যদের জন্য কোটা সংরক্ষণের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে, তবে আমাদের দেশ ও জনগণের স্বার্থে সেই কোটা কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা যৌক্তিক ভাবে ভেবে দেখা উচিত।

বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন এর মাধ্যমে দেশের প্রশাসনের বিভিন্ন শাখায় যে সকল নিয়োগ হয় সেই পদগুলো মূলত রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী পদ। এই চেয়ারগুলো যারা অলংকৃত করেন তাদের হাতেই রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্ধারণ হয়। স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে আমরা ৫৪ বছর পার করেছি, আমাদের হাতে হাতে প্রযুক্তি, ছোনের ঘরের পরিবর্তে ইট পাথরের ঘরে ঘুমাই,তিন বেলা খেয়ে পড়ে বাঁচার ব্যবস্থা হয়েছে , আসমানে আমাদের স্যাটেলাইট প্রদক্ষিণ করে,এক সময় ছেঁড়া বসনে আমাদের দিন কাটলে এখন কম বেশী সবাই রঙিন হরেক রকম পোশাক পরি।আজ এই অবস্থায় আসতে কৃষকের হাড় ভাঙা শ্রম, গার্মেন্টসে কর্মরত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের বিরামহীন পরিশ্রম, বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের শ্রম এবং প্রবাসে অবস্থানরত এক কোটি মানুষের ত্যাগ ও তিতিক্ষা রয়েছে।দেশের জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ উৎপাদন ও অর্থনীতির সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট, এই জনগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের উপর মূলত রাষ্ট্রের গতি সচল থাকে। এই জনগোষ্ঠীকে সঠিক ভাবে ও সঠিক পথে পরিচালনার জন্য নীতি নির্ধারণ,নানা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন,তাদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান ও নানাবিধ সেবা প্রদানের জন্য জনগণের করের টাকায় রাষ্ট্র প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোতে মেধাবী, সৎ, সুশিক্ষিত, উদ্যমী শিক্ষার্থীদের নিয়োগ প্রদান করবেন, এটাই রাষ্ট্রের কাছে সাধারণ মানুষের কাম্য।কিন্তু জনগণ সেবার জন্য যাদের বেতন দিয়ে সংসার চালায়, তাদের কাছ থেকে পরিপূর্ণ সেবা কি তারা পায়? এর উত্তর, সেবা পায় তবে তার জন্য আবার জনগণকে প্রায়শ বাড়তি টাকা গুনতে হয়, অর্থাৎ ঘুষ দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অর্জনকারী একজন মানুষ ঘুষ খায় এটা শুনতে বেমানান হলেও, কথিত শিক্ষিত সমাজ আজ দুর্নীতিগ্রস্ত এটাই বাস্তব সত্য। বছরের পর বছর পার হলেও এই অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ হচ্ছেনা, এবং উত্তরণের পথও আমরা খুঁজছিনা।

প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত বেশভূষায় ভদ্রলোকেরা কেন দুর্নীতিগ্রস্ত এর কারণ খুঁজতে প্রথমত যে বিষয়টি উঠে আসে তাহলো এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া।দেশের সরকারি চাকুরীর নিয়োগের প্রতিটি ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করে বাকি ৪৪ শতাংশ পদ সর্বসাধারণের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগের প্রথা চালু থাকলে এই ৪৪ শতাংশ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী নিয়োগের পরিবর্তে মন্ত্রী এম পি’দের তদবিরের ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের মেলা বসানো হয়।এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সরকারী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পর্যন্ত বিদ্যমান।আমাদের দেশে সরকারী চাকুরী মানেই শুধু বেতনের টাকায় নিজেকে স্বনির্ভর করা এবং একটি নিরাপদ জীবন যাপনকে বোঝায়।কিন্তু চাকুরী মানে নিয়োগকর্তার সেবা করা এই ধারণাই আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত।প্রশ্ন সরকারী চাকুরীর নিয়োগ কর্তা কে? উত্তর সরকার।কিন্তু সরকার পরিচালনার দায়িত্বশীলদের দায়িত্বভার অর্পণকর্তা কারা? উত্তর- জনগণ।সরকার পরিচালনার অর্থের যোগানদার কে ?উত্তর- জনগণ। জনগণ কেন তার কষ্টার্জিত অর্থ সরকারকে দেয়? উত্তরঃ তার অর্থে জীবিকা নির্বাহ করা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারীগন জনগণকে সেবা প্রদান করবে। যেখানে জনগণের কাছে তাদের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার কথা সেখানে উল্টো জনগণকেই তার কর্মচারীদের দ্বারা শোষিত হতে হয় এবং তাদের সেবা অর্থের (ঘুষের) বিনিময়ে কিনতে হয়। প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত বেশভূষায় ভদ্রলোকেরা কেন দুর্নীতিগ্রস্ত এর কারণ খুঁজতে প্রথমত যে বিষয়টি উঠে আসে তাহলো এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া।দেশের সরকারি চাকুরীর নিয়োগের প্রতিটি ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করে বাকি ৪৪ শতাংশ পদ সর্বসাধারণের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগের প্রথা চালু থাকলে এই ৪৪ শতাংশ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী নিয়োগের পরিবর্তে মন্ত্রী এম পি’দের তদবিরের ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের মেলা বসানো হয়।এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সরকারী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পর্যন্ত বিদ্যমান।আমাদের দেশে সরকারী চাকুরী মানেই শুধু বেতনের টাকায় নিজেকে স্বনির্ভর করা এবং একটি নিরাপদ জীবন যাপনকে বোঝায়।কিন্তু চাকুরী মানে নিয়োগকর্তার সেবা করা এই ধারণাই আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত।প্রশ্ন সরকারী চাকুরীর নিয়োগ কর্তা কে? উত্তর সরকার।কিন্তু সরকার পরিচালনার দায়িত্বশীলদের দায়িত্বভার অর্পণকর্তা কারা? উত্তর- জনগণ।সরকার পরিচালনার অর্থের যোগানদার কে ?উত্তর- জনগণ। জনগণ কেন তার কষ্টার্জিত অর্থ সরকারকে দেয়? উত্তর তার অর্থে জীবিকা নির্বাহ করা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারী জনগণকে সেবা করবে। যেখানে জনগণের কাছে তাদের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার কথা সেখানে উল্টো জনগণকেই তার কর্মচারীদের দ্বারা শোষিত হতে হয় এবং তাদের সেবা অর্থের (ঘুষের) বিনিময়ে কিনতে হয়।

জ্ঞান মানুষকে মহৎ করে এবং সুশিক্ষিত মানুষ হয় আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ।একজন মানুষ যখন জ্ঞান অর্জনের ভেতর দিয়ে নিজেকে তৈরি করার পর তার মেধা প্রমাণের সিঁড়িগুলো অতিক্রম করে করে কোন দায়িত্বে আসীন হন তখন তিনি বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে রেখে দক্ষতা, সেবার মানসিকতা এবং সততার সমন্বয় ঘটিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এমন মানুষেরাই মূলত একটি জাতির দিক নির্দেশনা দেয় এবং একটি স্থিতিশীল সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে। অপরদিকে কোন মানুষ যখন ঘাম না ঝরিয়ে মেধা প্রমাণের সিঁড়ি অতিক্রম ছাড়াই কোন দায়িত্বের আসন লাভ করে তখন তার মধ্যে প্রথমত প্রাপ্ত দায়িত্বভারের বিশেষ গুরুত্ববোধ উপলব্ধি হয়না।এছাড়া একজন অযোগ্য লোকের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা, যেহেতু তার যোগ্যতা দিয়ে নিজেকেই রক্ষা করতে অক্ষম তাই তার কাছ থেকে বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার আশা করা অনর্থক। এমন মানুষের কাছ থেকে দেশ ও জাতির সেবার পরিবর্তে বরং ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভানাই বেশি।নিজেকে রক্ষার চিন্তায় নিমগ্ন এমন মানুষেরাই অসৎ পথে আত্মনির্ভর হয়ে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবার প্রচেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত থাকে। যার প্রমাণ রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রের বর্তমান বিরাজমান অরাজকতা এবং আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র।রাজনীতি থেকে শুরু করে করে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্র আজ অযোগ্য মানুষদেই আধিক্যে।

মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন আমাদের আঠারো কোটি মানুষের মাথার মুকুট।বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন তাদের ঋণ রক্ত দিয়েও শোধ করার নয়।মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ তার জীবন। সেই জীবনকেই তুচ্ছ জ্ঞান করে অস্ত্র হাতে হানাদার মুক্ত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে একটি মানচিত্র ও পতাকা উপহার দিয়েছেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা।স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে দেশের সেবায় অবদান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য ত্রিশ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ ছিল একটি সময় উপযোগী প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত।দেশ আজ তার চুয়ান্ন বছরের সময়কাল পারি দিয়েছে।সময়ের প্রয়োজনে মেধা, প্রযুক্তি নির্ভর ও সুসভ্য জাতি বিনির্মাণে দেশকে নতুন করে পুনর্গঠন আজ প্রতিটি মানুষের মধ্যে অনুভূত।মুক্তি যোদ্ধার সন্তান ও তার উত্তরসূরিদের রক্তে দেশপ্রেমের ধারা বহমান।দেশের স্বার্থে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিলে প্রথম পদচারণা হবে তাদের, আমরা সেটাই কামনা করি।সরকারী প্রতিটি চাকুরীর ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের পোষ্যদের জন্য ত্রিশ শতাংশ চাকুরী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা বলবদ থাকার কারণে অনেক অসৎ মানুষ রাজনৈতিক সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধার সনদের অধিকারী হয়ে রাষ্ট্রের এই উদারতাকে অপব্যবহার করে চলছে।আমার দেখা তীব্র আত্মমর্যাদা সম্পন্ন অনেক মুক্তিযোদ্ধা জীবনে কখনোই সরকারের নিকট সনদের জন্য দ্বারস্থ হননি এবং তাদের সন্তানদের যোগ্য মানুষ হওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করে বড় করেছেন।তাদের অনেকেই যোগ্যতার মূল্যায়নে দেশ বিদেশে সম্মানজনক পদে আসীন।প্রতিটি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরি বা পোষ্যদের উচিত যোগ্য মানুষ হয়ে রাষ্ট্রের সেবায় অংশগ্রহণ করা। কোন অনুগ্রহ বা অনুকম্পায় শুধু বেতন পাওয়ার আশায় একটি চাকুরীর জন্য রাস্তায় দাঁড়ানো তার পূর্ব পুরুষের বীরত্বকেই খাটো করার হয় । আমার দেখা ছাত্র জীবনের প্রতি স্তরে মেধার সাক্ষর রাখা অনেক বন্ধু ও বড় ভাইকে দেখেছি সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার নীতির কারণে সরকারী চাকুরীতে সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়েই কোন বেসরকারী মাদ্রাসায় চাকুরী করছে অথবা শুধু জীবীকার প্রয়োজনে বিদেশের মাটিতে শ্রমিকের জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।অথচ তার মেধা দেশকে এগিয়ে নেবার স্বার্থেই সরকারের কাজে ব্যবহার হওয়া উচিত ছিল।অথচ, মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শিক্ষা জীবনের সকল স্তরে টেনেটুনে পাশ করে প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকুরীর পদ দখল করে বসে আছে।আমার মতে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরই প্রথম দায়িত্ব।আমরা যদি মেধা ও সততার উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো দাঁড় করাতে পারি তাহলে হয়তো আজ যে চাকুরীকে কর্মসংস্থান ও জীবিকা অর্জনের ভিত্তি ভেবে যে দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছি সেই ধারণাই হয়তো সবার বদলে যেতে পারে। মানুষ হয়তো সরকারী চাকুরী না খুঁজে আরও ভালো কিছু উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিজেই করে সম্মানের সহিত মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখবে।

আমাদের বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ সামাজিক ভাবে অবহেলার স্বীকার। সমাজের এই শ্রেণীর মানুষের পাশে থাকা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব।সেই লক্ষ্যে তাদের রাষ্ট্রের সেবায় অংশগ্রহণ ও সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকুরীতে কোটা সংরক্ষণ অত্যাবশ্যক।তবে অপমানের দৃষ্টি ভঙ্গীতে না দেখে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরীতে শুধু মাত্র অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে অন্যান্য কোটা একটা নির্দিষ্ট সময়কাল নাগাদ বলবদ রাখার প্রয়োজন অনুভব করি।

বিগত সময় স্রোতের বিপরীতে লড়াই করার দৃঢ় মানসিক শক্তিতে বলীয়ান ছাত্র সমাজের তীব্র আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়েই সরকার কোটা সংস্কারের এই ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে দেশের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকুরীর নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল প্রকার কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।যা ভাবা হয়েছিল, অরাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার এটি একটি ঐতিহাসিক বিজয় এবং সরকারের নানা সমালোচনামূলক কর্মকাণ্ডের মাঝে এটি একটি সময় উপযোগী, বিচক্ষণ এবং প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত।
কিন্তু, ক্ষমতাসীনদের সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোন রূপরেখা আজও পর্যন্ত দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশ ছাত্রসমাজ আবারো রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে।

যদিও এই আন্দোলনকে ভণ্ডুল করার কৌশল হিসেবে কোটার সুবিধাভোগী গোষ্ঠী নানা অপবাদ ও অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করলেও বৃহত্তর সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে এবং সচেতন সাধারণ মানুষের সমর্থনে তা নস্যাৎ হয়ে গণ-মানুষের অধিকার আদায়ের দাবিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

অদূর ভবিষ্যতে সরকারি চাকুরীতে কোটা প্রথা বাতিল হয়ে গেলেই সরকারী চাকুরীতে মেধাবীদের মেলা বসে যাবে এমন ভাবাও অর্থহীন।নিয়োগ বাণিজ্যের আড়তদাররা এখনো আমাদের মাথার উপর সক্রিয় হয়ে বসে আছে, সেই সাথে চাকুরীর প্রশ্নপত্র ফাঁস,দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ ইত্যাদি সমস্যা সংক্রামক ব্যাধির মত বিরাজমান।একটি সুখী সমৃদ্ধ ও নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে দেশের সর্বস্তরের জনগণের নিজ স্বার্থে এই সংক্রামক ব্যাধিকে সমূলে নির্মূলের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া অত্যাবশ্যক।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:১৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×