আমাদের জীবনটা হলো যোগ বিয়োগের খেলা।দুঃখ জরা, মৃত্যু, হতাশা,বিচ্ছেদ,বিরহ বাধা, বিপত্তি,সংগ্রাম, মৃত্যু ,জন্ম, প্রাপ্তি,আনন্দ, উচ্ছ্বাস ইত্যাদি দিয়ে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের জীবন সাজানো ।এই নিয়মের বৃত্তের বাইরে পৃথিবীর একটি মানুষও নেই ।রাস্তার ফকির থেকে সিংহাসনের উপবিষ্ট রাজা বাদশা পর্যন্ত এই বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে মানব সৃষ্টির পর থেকে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে পৃথিবীর শেষ অবধি। আমরা জন্মের আনন্দ উপভোগ করতে ভালবাসি, যাবতীয় প্রাপ্তিতে গর্বিত হই ।আমাদের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে শুধু পাওয়ার প্রত্যাশা, হারানোটাও যে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ তা নিয়ে খুব একটা চিন্তা করিনা বা ভাবনায় রাখিনা।তাই হঠাৎ কোন দুর্ঘটনা বা বিয়োগের কবলে পরলে আমরা প্রথমেই ভেঙ্গে পরি, হতাশ হই।আমরা হারানো নিয়ে না ভাবলেও আমাদের প্রত্যেকের নিয়তিতে হারানোর বেদনা অবধারিত ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে রয়েছে। এর তিক্ত স্বাদ গ্রহণ সবাইকেই করতে হয়।এছাড়া জীবন চলার পথে কোন প্রাপ্তির আনন্দকে ধরাও সহজ নয়, এটা উপভোগ করতে হলে বহু প্রতিবন্ধকতার পথ পারি দিয়ে সুখের গন্তব্যে পৌঁছেতে হয়। রাস্তার ফকিরের জীবনের সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ক্ষুধা নিবারণের অনিশ্চয়তা। এই অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেই প্রতিদিন সে রাস্তায় নামে ক্ষুধা নিবারণের আনন্দ উপভোগ এবং জীবন রক্ষার তাগিদে ।ক্ষুধাকে জয় করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়তই তাকে যেমন হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয় অপর দিয়ে রাষ্ট্রের মসনদে বসা রাষ্ট্রপতির ক্ষুধা নিবারণের চিন্তা না থকেলেও ক্ষমতা ও অবস্থান ধরে রাখার জন্য তাকেও রাজনীতির নানা প্রতিবন্ধকতা পথ পারি দিতে গিয়ে অনিশ্চয়তা ও দুরাশা দ্বারা গ্রাসিত হতে হয় প্রায় প্রতিনিয়ত ।একজনের ক্ষুধার নিবারণের অন্যজনের অবস্থান ধরে রাখার হতাশা দুরাশার জীবন । সমাজের এই উঁচু নিচু দুটি মানুষের দেহের আবরণের পোশাকের বৈচিত্র্যতার তারতম্য থাকলেও দেহের আকৃতি সমান এবং সেই দেহের মধ্যে অবস্থিত মস্তিষ্ক জীবন ভেদে যার যার অবস্থানে টিকে থাকার অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তামুক্ত নয়।আমরা রাষ্ট্রপতির জীবন যাপনের বহিরাবরণ দেখে সুখী মানুষ হিসেবে ভাবলেও ক্ষমতা হারানোর অনিশ্চয়তায় বিনিদ্র রাত্রি যাপনের সংখ্যা আমরা জানি না , আবার ফকিরের পোশাক দেখে দুঃখী মানুষ ভাবলেও শুধু রাতে উদরপূর্তির আনন্দে কত অসংখ্য রাত তার সুখনিদ্রায় পার হয় তাও আমাদের উপলব্ধিতে ধরা পড়েনা ।
সুতরাং,জীবন ভেদে অবস্থান যেখানেই হোক, সুখ দুঃখ, বিরহ বেদনা,প্রাপ্তি এবং হারানোর নিয়মের উপর মানুষের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।।তাই এই বিষয়গুলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ভেবে প্রতিটি বিষয়কে আলিঙ্গন করার মানসিক পরিপক্বতা যে মানুষ অর্জন করতে পারে তার কাছে জীবন সহজ হয়ে যায়। যে কোন প্রতিবন্ধকতার সামনে থমকে দাঁড়িয়ে থাকা মানে দুমড়ে মুচড়ে স্থবির হয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে মাদার তেরেসা’র « জীবন হল » কবিতার প্রতিটি লাইন খুব অনুপ্রেরণার:
Life Is
Life is an opportunity, benefit from it.
Life is beauty, admire it.
Life is bliss, taste it.
Life is a dream, realize it.
Life is a challenge, meet it.
Life is a duty, complete it.
Life is a game, play it.
Life is a promise, fulfill it.
Life is sorrow, overcome it.
Life is a song, sing it.
Life is a struggle, accept it.
Life is a tragedy, confront it.
Life is an adventure, dare it.
Life is luck, make it.
Life is too precious, do not destroy it.
Life is life, fight for it.
জীবনে সুস্থতার পাশে থাকে অসুস্থতা,
অর্জনের পাশাপাশি ব্যর্থতার আনাগোনা,
মিলন থাকলে বিচ্ছেদের সম্ভাবনা
পৃথিবীর একদিকে শান্তিতো অন্যদিকে যুদ্ধ
আবার দীর্ঘ দিনের শান্তির বসতি হারিয়ে মুহূর্তেই হতে হয় বাস্তুহারা ।
অবধারিত মৃত্যুরকে ঘাড়ের উপর রেখে যে জীবন চলে
সেই জীবনের শেষ নিশ্বাসের পূর্ব পর্যন্ত থাকে শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকার স্বপ্ন সংগ্রাম।
এটাই জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য ।
সর্বশেষ কথা হচ্ছে, মানব দেহের মধ্যে ধারণ করা জীবনটাই হচ্ছে আমাদের বড় সৌভাগ্যের প্রাপ্তি ।জীবনকে সহজ করতে জীবন চক্রের অবধারিত বিষয়গুলোকে জীবনে ধারণ এবং গ্রহণ করার শক্ত মানসিকতা তৈরি করা অন্যতম বড় দায়িত্ব ।যে মানুষ এই যোগ্যতা অর্জন করতে পারে একমাত্র সেই মানুষের কাছেই পৃথিবীর স্বল্প সময় কালের জীবনে স্বর্গের অনুভূতি নেমে আসে।
সাম্য সম্মান সুন্দর ধরিত্রী
১. ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩২ ০
এর আগে উজ্জ্বলের লেখা ভ্রমণ পোষ্ট পড়েছিলাম।
আজকের লেখাটাও ভালো লেগেছে।
প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, সেটাকে ভয় না করে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ফেইস করে উইন করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই জীবন।