somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিপিতা, নিভিতক ও একজন রাজকুমার

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ অন্য রকম একটা দিন পার করলে কেমন হয়?সবাই ডুব দেই রুপকথার জগতে (যেখানে সবই সম্ভব)পার্থিব জীবনের দূঃখ কষ্ট সরিয়ে রেখে সেই শৈশবের মত হারিয়ে যাইনা কিছুক্ষন রুপকথার জগতে।
=============================================

১ নিগফ্রাটিস রাজ্য

সময়টা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগের ।সারা বিশ্বে যুদ্ধের দামামা বাজছে। এর মধ্যে বার্মা ও শ্রীলন্কা সংলগ্ন দুইদেশের মাঝখানে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে সভ্যতার উথ্থান শুরু। দ্বীপ এর নাম নিগফ্রাটিস। সভ্যতায় যুদ্ধে বীরত্বে বড় দেশকে টপকে উপরে উঠে যাচ্ছিল এই দ্বীপ পরবর্তীতে তা বিরাট রাজ্যের রুপ নেয় ।এই রাজ্যের রাজা ছিলেন দয়ালু ন্যায়পরায়ন শাসক।দয়ালু হলে ও আবার অন্যায়কে তিনি দমন করতেন কঠিন হস্তে।কোন আপন পর বিবেচনায় আনতে রাজী ছিলেন না অন্যায়ের শাস্তি দিতে।
রানীমাতা ছিলেন সবার কাছে দয়ালু আপন মায়ের মত।তাদের ছিল এক পুত্রসন্তান বিদ্যা বুদ্ধি সৌন্দর্য্যে যার কোন তুলনা ছিলনা।পিদিমির আলো রাজকুমার । সে এখানকার রাজকীয় ব্যাক্তিদের চেয়ে ব্যাতিক্রম স্বভাবের।অন্য রাজকীয় ব্যাক্তিদের মত সুরা নারী থেকে সে সবসময় দুরে থাকে।

সে বেমানান ধারার রাজকুমার।অতিশয় কোমল মনের এই প্রিয়দর্শন তরুন।তার বয়স বাড়ার সাথে প্রাসাদের অভ্যন্তরে সব অনাচার আস্তে আস্তে বন্ধ হতে শুরু করেছে।মানুষ তো দুরের ব্যাপার কোন প্রানী কুকুর বিড়াল কাওকে আঘাত করা যেতনা তার সম্মুখে।তার সামনে একদিন ছাগল এর জবাই হচ্ছিল ভোজন এর জন্য।রক্ত দর্শনের পর সেই যে মাংস খাওয়া বন্ধ করেছে আর তাকে কোনদিন মাংস মুখে দেওয়ানো সম্ভব হয়নি।এতদিন তার কবিতার বিষয় ছিল প্রকৃতি এবং ভগবান।এই প্রথম তার কবিতাতে নারী এসে ঢুকে পরেছে।এখন সকালে পরীখাতে এসে বসার পিছনে তার আরেকটা মনোবাসনা কাজ করে প্রতিদিন।সেই অপরুপ মনোহারিনীকে একনজর দেখা।


২ পিপিতা ও নিভীতক

পিপিতা ও নিভীতক দুইজন আজ সারাদিনধরে ধানক্ষেতে মনের আনন্দে ছোটাছুটি করছে।কালকে নিভীতকের প্রস্তাবে পিপিতা সন্মতি জানিয়েছে।প্রথমে কিছুটা দোনোমনার পরে সন্মতি দিয়েছিল পিপিতা।তবে পিপিতা র চেয়ে নিনীভক বেশী খুশী যেন।হবেনা আবার দী্র্ঘ আটমাস ঘোরার পর পিপীতা তার দিকে মুখ তুলে চেয়েছে।

পিপিতা তাদের এই গোত্রে সবচেয়ে সুন্দরী ।তার অপরুপ দেহবল্লরী যেন প্রেমদেবী আফ্রোদিতির কথা মনে করিয়ে দেয়।তার সমস্ত শরীর যেন প্রকৃতির এক এক অপূর্ব সৃষ্টি।
তার গুনাবলীর কথা বর্ণনা করতে গেলে পুরুষদের ও গাত্রোদাহ শুরু হয়।কোন কাজে তার সজাগ দৃষ্টি সমস্ত কাজে তার বিচরনে দেখা যায় পুরুষদের চেয়ে ক্ষমতাধর শক্তিশালী এবং অতীব মনোহরা।এ হেন পিপিতাকে রাজ্যের সবপুরুষ পেতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক।এমনকি রাজকুমার ও শোনা যাচ্ছে তার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী।রাজকুমার তিন বিয়ে এর মধ্যে সম্পন্ন করে ফেলেছে।এরমধ্যে দুই স্ত্রীর সঙ্গে রাজকুমারের গতপাঁচ বছরে মোলাকাত হয়নি।এটাই এই রাজ্যের প্রথা।তার নানামহ তৃতীয় নানীকে কখনও চোখে দেখেননি।রাতের অন্ধকারে একদিন একবারের জন্য মিলিত হয়েছিলেন নানামহীর সাথে।তার মায়ের জন্ম হয়েছে এভাবে।মা শুধু একবার ই দেখেছেন বাবাকে বিয়ের রাতে।এখানকার প্রথা অনুযায়ী ছেলেরা হয় বাহিরে

সৈনিক হয়ে যুদ্ধে যাবে
খামারে কাজ করবে
ফসল ফলাবে।


বেশী মেয়েসঙ্গ এখানে নীতিবিরুদ্ধ।যারা বেশী মেয়েদের পিছনে ঘোরাঘুরি করে বাশী বাজিয়ে মেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চায়।তাদের কে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হয়।অনেক সমাজ থেকে বের করে তাদেরকে একঘরে করে রাখা হয়।এই একঘরে হয়ে থাকাটা খুব লজ্জার এবং অপমানজনক সবপুরুষের কাছে।কাজে কোন পুরুষের যদি কোন মেয়েকে পছন্দ ও হয় দৈবাৎ আসা যাওয়ার পথে তারা তাদের মাকে এবং দ্বিতীয় রাজকীয় ঘটককে পত্র দেয় ওই মেয়ের প্রনয়প্রার্থী হিসাবে।সেই নিভিতক গোত্রহীন একঘরে হিসাবে পরিচিত হল আসা যাওয়ার পথে ক্রমাগত পিপিতাকে তার হৃদয়ের বাসনা প্রকাশ করতে গিয়ে।আস্তে আস্তে পিপিতাকে খেয়াল করতে বাধ্য করল নিভিতক।নিভিতক এর সম সাময়িক যুবক সব ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ল বলা বাহুল্য। পিপিতার জন্য কমকরে হাজার কোটি প্রস্তাব চলে গিয়েছে ঘটক নরডিং এর কাছে।কেননা পিপিতাকে এই ছন্নছাড়া রামছাগল নিভিতক পেয়ে যাবে কার ও পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টের।

নরডিং যখন দেখল রাজকুমারের প্রস্তাব ও এখানে সে বাকী প্রস্তাব গুলি না পড়েই ময়লার বাক্সে ফেলে দিয়েছে।ক্রমাগত সে চেষ্টা করছে পিপিতার মা বাবার মন গলাতে।গলানোর কিছুই নাই আসলে।পিপিতার মা বাবা আনন্দে সন্মোহিত হয়ে আছে বলা যায়।তাদের মেয়ে রানী হবে এই আনন্দে দুইজনে মশগুল।কিন্তু যাকে নিয়ে এই আনন্দের কল্পনা সেই পিপিতা রাজকুমারের কথা শুনলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।

আমি যেকোন পুরুষের একনম্বর স্ত্রী হতে চাই।ইয়াক মনে হলে বমি পায়।আমার আগে সে অন্য মেয়েকে স্পর্শ করেছে।

মাবাবা অসহায়ের মতই হেসে ফেলে।

তাছাড়া নিভিতককে কে আমি আমার মন দিয়েছি।বলল সে জেদের সুরে।

নিভিতক তো এখন ও নরডিং কে কোন প্রস্তাব দেয়নি মামনি মা বাবা বোঝানোর চেষ্টা করে।

সেটার দরকার নাই । ও আমাকে সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছে বলল পিপিতা রাগতভাবে।

মাবাবা এবার আঁতকে উঠে।কেননা এভাবে প্রস্তাব এখানে নিষিদ্ধ অনাচার বন্ধ করতে।

বেবী তুমি নিভিতকের জীবন বিপন্ন করে তুলছ।তোমরা সরাসরি দেখা সাক্ষাৎ করোনা এভাবে।আমরা দেখছি কি করা যায় তোমার জন্য।

মাবাবা দুইজনে শংন্কিত চিত্তে ভাবছেন কি করা যায়।তাদের এই একটি মেয়ে।মেয়ের কোন ইচ্ছাই তারা কখন ই অপূর্ন রাখেন না।কিন্ত এই ব্যাপারে কি করবেন ভেবে ও কূল পাচ্ছেন না তারা।



৩ রাজকুমার পিদিমির

রাজকুমার পিদিমির আজ অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠেছে ।তার প্রথম বিয়ে হয়েছিল চারবছর বয়সে।এই স্ত্রীকে রাজকুমার এখনও দেখেননি।পারিবারিক ও রাজকীয় প্রথা অনুযায়ী মাত্র পচিশ বছরে তার তিনটি বিয়ে যদি ও সম্পন্ন হয়েছে এদের কাওকে পরিপূর্ণভাবে রাজকুমার না চিনে মানসিকভাবে না দৈহিকভাবে।রাস্তায় যদি কখন ও দেখা হয়ে যায় সে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেনা কোনজন তার স্ত্রী।তার প্রাসাদ সংলগ্ন পরীখা তে প্রতিদিন সে এসে বসে।কিছুক্ষনের জন্য প্রকৃতির রুপসুধা অবলকন করতে করতে সে কবিতা রচনা করে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলল সেই মেয়েটিকে আজ এখনও দেখা যায়নি।কিছুটা হতাশ হয়ে পিদিমির অন্য কাজে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করল।তার পরীখাতে কিছু মাছ সে ছেড়ে রেখেছে যেগুলির সাথে কিছুক্ষন খেলা করা তার প্রাত্যহিক রুটিনের মধ্যে পড়ে।হঠাৎ একটা খরগোশ এসে লাফ দিয়ে তার কোলে ঢুকে পড়ে।

কিরে আমার টুটটুট তুই কোথা থেকে এলি এত মনোহর রুপ নিয়ে সে খরগোশটাকে নিয়ে আদর করতে করতে চোখ পড়ে যায় সামনের পিপিতার দিকে।সম্ভবত খরগোশটি তার ।খরগোশের পিছনে ছুটতে ছুটতে অন্যমনস্কভাবে প্রাসাদের আঙিনায় চলে এসেছে সে।

বেশভূষায় বূঝল পিপিতা এই তাহলে রাজকুমার।

পিপিতা এই প্রথম রাজকূমারকে দেখল।তার ধারনা ছিল হিংস্র বয়স্ক চেহারার কাওকে দেখবে।এ রীতিমত তরুন ।অতিশয় সুদর্শন দেখতে চোখে মুখে অপরুব মায়াবী ভাব।

কিছুক্ষন দুইজন দুজনের দিকে মুগ্ধ পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইল।

এই খরগোশ তোমার?মায়াবী স্বরে পিদিমির জিজ্ঞাসা করে।

মাথা নেড়ে তার জবাব করে।

দুইজনে কিছুক্ষন চুপচাপ পরিখার পাশে বসে থাকে।

তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনলাম নিভিতকের সাথে?রাজকুমার আগ্রহে কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে।

পিপিতা এখন মনে মনে পিদিমিরের এর জন্য বেদনা অনুভব করে।এই প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বস্তি বোধ করে।

নিভিতক এমন করছিল যে ওকে বাচাতে গিয়ে আমাকে রাজী হতে হয়েছিল কুমার।অনেকটা জবাবদিহিতার ভঙ্গিতে কথা বলে।

অসুবিধা নাই তুমি সুখী থাকলে হল ।চুল নেড়ে দিল হাত দিয়ে।আমি সবসময় তোমাকে আমার কবিতাতে পাব।আমার কবিতা থেকে তোমাকে কেও ছিনিয়ে নিতে পারবেনা।বলে মধুর করে হাসল।

আমি যে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম তাকি তুমি জানতে?নরডিং চাচা বললেন তুমি রাজী না।

এখন লজ্জা আর দূঃখে পিপিতা কিছুক্ষন ম্রিয়মান হয়ে থাকে।

আপনার আরও তিনজন স্ত্রী আছেন শুনে আমি রাজী হইনি রাজকুমার।আর কোন কারন নাই।তখন তো আমি আপনাকে জানতামনা।বলল বিষন্ন সমর্পণের সূরে।

তুমি তো ভারী অব্ভুত মেয়ে।রাজকুমারের প্রস্তাব প্রত্যাখান কর।তাহলে কি এখন আবার আমার প্রস্তাব পূনর্বিবেচনা করবে কৌতুকের স্বরে পিদিমির বলে।

না এখন আর তা সম্ভবনা কুমার।আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নিভিতকের সাথে।বিষন্নভাবে মাথা নেড়ে বলে পিপিতা ।

দুজন আর ও কতক্ষন মাছদের খেলা দেখে পরীখার পাশে বসে।কতক্ষন পরে সচকিত হয়ে উঠে দাড়ায় পিপিতা।

সন্ধা হয়ে আসছে আমাকে যেতে হবে কুমার।এবার আমায় বিদায় দিন।বিষন্ন আবেগঘন গলায় বলল পিপিতা।

পিদিমির উঠল এবং হাটতে থাকল দুজন একসাথে।কিছুক্ষনের এই নীরব হাটা আজ তাদের মধ্যে এক অচ্ছেদ্য বন্ধন তৈয়ারী করে দিল।

পিপিতার বাসার কাছে পৌছতে সে বলল কুমার এখন ফিরে যান।আমার বাড়ীতে চলে এসেছি।

দুইজনের দিকে দুইজনের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন।

যে যার বাড়ীর দিকে রওনা করল।

কিছুক্ষনের মধ্যে পিছন থেকে কার ও ডাক শুনে থমকে দাড়াল।পিছনে ফিরতে দেখল পিপিতা আবার দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে।

কাছে আসতে হাতের খরগোশটি দিয়ে বলল এটা আপনি নিন।আমি কি আপনাকে একটা অনুরোধ করব রাজকুমার।

একটা কেন অনেকগুলি কর।সব শুনতে চাই।গাঢ় আবেগের স্বরে সে বলল।

আপনি আপনার স্ত্রীদের ভালবাসতে শুরু করুন আমাকে যেভাবে বাসেন।

পিদিমির হেসে ফেলল আনন্দে।তুমি অনেক চমৎকার ভাল একটা মেয়ে পিপিতা।ঠিক আছে আমি চেষ্টা করব।ওদের কার ও মুখ অবয়ব এখনও দেখিনি।অন্ধকার রাতে এক দেড়ঘন্টার দেখা ওদের সাথে।ওদের আগে তোমার মুখ অবয়ব ব্যাক্তিত্বের সাথে পরিচিত হয়ে গেছি।

দুইজনে চোখের অশ্রজলে ভাসতে ভাসতে দুইজনকে বিদায় দেয়।



৪ রঙধনুর সাতটা রঙে যেন বিচিত্র রকমের সুন্দর করে সেজেছে প্রকৃতি আজ।আজকে বিয়ে পিপিতা আর নিভিতকের।সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে ভার মুখে পিপিতা ঘুরে বেড়াচ্ছে।তাকে দেখে মনে হওয়ার কোন উপায় নাই আজ তার পরিনয় তার পছন্দের পাত্রের সাথে।একরাতের মধ্যে তার রুপরস যেন সব চুরি হয়ে গিয়েছে।তাকে দেখে মনে হওয়ার কোন উপায় নেই যে সে বিয়ের কনে।

কি হয়েছে মা তোমাকে এত উন্মনা দেখাচ্ছে কেন?বাবা এসে কোমল স্বরে জিজ্ঞাসা করে।

মা বলেন তোমার পছন্দমত তো সবকিছু করেছি মা তবে কেন হাসিমুখে থাকছনা।

আমার কথা না শুনে তোমাদের পছন্দমত করলে বোধ হয় ভাল হত বিড়বিড় করে সে বলে।

মা সচকিত হয়ে উঠলেন কি বললে মা কি বললে।
না কিছু না।সে পিদিমিরের জন্য এত বিষন্ন বোধ করছে কার ও সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলা সম্ভব হচ্ছেনা।

দৌড়ে উপাসনার ঘরে আসল।মায়ের পায়ের নীচে নিজেকে সপে দিল।

মাপ কর মা মনের এই চঞ্চলতা।বলতে গেলে নিভিতক ই আমার স্বামী।আর কয়ঘন্টা পরে মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সম্পূর্ন আত্মদান করতে হবে।কেন এখন ও এত চঞ্চলতা মা আমার মনে মা।শান্ত করে দাও মা শান্তি দাও মা।গভীর প্রার্থনায় নিজেকে নিমজ্জিত করে রাখে নিজেকে।মা বাবা উকি দিয়ে মেয়ের অবস্থা দেখে স্নেহের হাসি হাসে।

ওহ আমার বেবীর বিয়েতে টেনশন হচ্ছে দুজন এভাবে ভাবে।

৫ নিভিতককে আজকে সুদর্শন মনে হচ্ছে বরের পাগড়ি পোষাকে।ভাই বোনরা তাকে নিয়ে বেশ গর্বিত।এই গোত্রের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের মন কেড়েছে তাদের ভাই।মা বাবা বারবার স্নেহে কপালে চুম্বন করে যাচ্ছে।মনে মনে সে অনেকটা আত্মহারার মত হয়ে আছে।

বাবার বটিকাতে কাজ হয়েছে।নিভিতক খুব চালাকি করে একদিন মিষ্টি পানির সাথে খাইয়ে দিয়েছে পিপিতাকে।জটাবু বন্ধন করে চুলের বিনুনিতে।এই বিনুনীর জন্য সে কখন ও তোকে ছেড়ে যাবেনা দেখিস।বাবা নিশ্চয়তা দিল।একদিন কাজের ফাকে মাথায় হাত চুলে গিট দিয়ে সে বিনুনী পাকিয়ে দিয়েছে।
এই বিনুনী কখন ও খুলে ফেলনা পিপিতা।এ আমাদের বন্ধন মনে করবে।

পিপিতা হাসল নিভিতকের ছেলেমানুষীতে।আমি চুল আচড়াবনা ?কি বলে পাগল।বিনুনী মনে হয় এখন ও পিপিতার মাথায় থাকার কথা ভাবছে নিভিতক।

চল চল সবাই সময় হয়েছে তাড়া করতে থাকে আত্মীয় স্বজন ।অনেক ঘোড়ার গাড়ী আনানো হয়েছে।সবগুলিকে ফুল রকমারী ফূতি ব্রোকেডে সাজানো হয়েছে।বরের গাড়ীতে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে সুগন্ধি গোলাপ পানি।সবমিলিয়ে বেশ জমজমাট আনন্দমূখর পরিবেশ।মাত্র একমাইলের দূরত্বে পিপিতার বাড়ী।তারা পৌছে গেল বলে।

হঠাৎ খুব জোরে হৈ হৈ রৈ রৈ আওয়াজ শোনা গেল।নিভিতকদের সব গাড়ীগুলিকে কয়েকশত মুখোশধারী লোক এসে ঘিরে ফেলল।নিভিতককে গাড়ী থেকে নামিয়ে ঠেলতে ঠেলতে তাদের একজনের ঘোড়ায় বসিয়ে পালিয়ে গেল অতি দ্রুতগতিতে।মাবাবা চিৎকার করার ও সুযোগ পেলনা আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও।ওর বিয়ে আজ।তার আগে যেমন অতর্কিতে হামলা চালিয়েছিল তেমনি অতর্কিতে তারা উধাও হয়ে গেল শুধু বরের পোষাকে সজ্জিত নিভিতক কে নিয়ে।

মা চিৎকার করে শাপ শাপান্ত করছেন।
ওই অলুক্ষুনে মেয়ের সাথে কেন যে বিয়েতে রাজী হলাম।বিয়ের আগে আমার ছেলেটারে শেষ করে ফেলছে।ওগো আমার নিভিতককে কেও ফিরিয়ে নিয়ে আস।আহাজারীর মত চিৎকার করে কাঁদছে।
নিভিতকের দুইভাই স্বান্তনা দিতে থাকে।
চিন্তা করবেন না আম্মা আমরা ঘোড়ার পায়ের দাগ অনুসরন করে যাচ্ছি।আমরা খুজে বের করে ফেলব অবশ্যই।

আরেকজন বলল আপনারা বিয়ে বাড়ীতে গিয়ে সব ম্যানেজ করেন।আমরা আসছি।তাছাড়া আজ রাতে আরেকটা ভাল লগ্ন আছে।নাহলে পরের লগ্নে বিয়ে হবে।

খবরদার এই বিয়ের নাম মুখে আনবিনা।অলুক্ষনে মেয়ে।
দুঃখের মধ্যে দুইভাই হেসে ফেলল।আপনি দেখি আম্মা বিয়ের আগে খাটি শাশুড়ী হয়ে গেছেন।

দুই ভাই ঘোড়ার পায়ের দাগ দেখে দেখে চলতে লাগল।

৬ বিকাল গড়িয়ে সন্ধা।দ্বিতীয় লগ্ন বয়ে যাচ্ছে।এখনও নিভিতক কে পাওয়া য়ায়নি।দুইভাই টানা তিন ঘন্টা এদিক ওদিক ঘোড়া চালিয়ে কোন লোকালয়ের অস্তিত্ব খুজে পেলনা।এমনকি কিছু রাস্তা অতি্ক্রম করার পর ঘোড়ার খুরের দাগ ও খুজে পেলনা।বাতাসে পায়ের দাগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।তারা হতাশ হয়ে বাড়ী অভিমূখী রওনা হল।

পিপিতাকে মনে হচ্ছে সম্রাজ্ঞীর মত কনের পোষাকে।সবাই অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছে বরের।দ্বিতীয় লগ্ন বয়ে যাচ্ছে পিপিতার বাবা মা তাগাদা দিল।

আরও একঘন্টা পরে অলৌকিকভাবে যদিও এটা অনিবার্য হওয়া উচিত বিয়ে হয়ে গেল পিপিতা ও পিদিমিরের।লগ্নভ্রষ্টা না হওয়ার জন্য রাজকুমার হাসিমুখে পিপিতাকে বিয়ে করে ফেলল।

বাসররাত আজকে পিপিতা ও পিদিমের।দুইজনে চোখ মুখে হাসি আনন্দের উচ্ছাস এ বলে দেওয়া যায় এই বিয়েতে দুইজনে আনন্দিত।শুধু পিপিতা মাঝেমাঝে একটু অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছিল।

কি ব্যাপার আমার মনোহারিনী বারবার কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে।পিপিতার গালে টোকা মেরে বলে পিদিমির।

নিভিতকের কথা ভাবছিলাম।কি হল বলতো ?ওর কোন বিপদ হলোনাতো?চিন্তান্বিত দেখায় তার মুখ।

চিন্তা করোনা।সে ভাল আছে নিরাপদে আছে।এতক্ষনে নিশ্চয় সে তার বাড়ীতে পৌছে বলল পিদিমির হেসে।

মানে এতক্ষনে ঝটকা দিয়ে উঠে দাড়াল পিপিতা।কি বলছ কুমার?
পিদিমির উঠে প্রেয়সীর জানুতে মাথা রাখল।মাপ চাই প্রিয়তমা।তোমাকে হারানোর কথা মনে করে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।তুমি বিহীন জীবন কল্পনা করতে পারিনা আমার পিতা।
শুনে স্বাভাবিক সংস্কারে প্রথমে চিৎকার করে উঠে পিপিতা।

ওহ ভগবান আমি ভাবতে পারছিনা তুমি পিদিমির এত বড় অন্যায় কাজ করছ।

তোমার জন্য।শুধু তোমার জন্য।যদি বুঝতাম তুমি নিভিতককে ভালবেসে বিয়ে করছ তবে কখন ই এই অন্যায় করতামনা আমার পিপিতা।তোমার দৃষ্টিতে কালকে আমি আমার জন্য অনেক ভালবাসা দেখেছি।সেই ভালবাসা ই আমাকে এই কাজ করতে ইন্ধন যুগিয়েছে।শুধু চারঘন্টার জন্য নিভিতককে আমার প্রাসাদের একরুমে আটকে রেখেছিলাম।ভেবে দেখ ওর সাথে তুমি সুখী হতে পারতেনা।

পিপিতার মন এখন ভাগ হয়ে গিয়েছে দ্বিমুখী চিন্তায়।বুঝতে পারছেনা সে অন্যায় হয়ে গেলনা তো তাদের?এটা ঠিক যে সে এখন ভালবাসে পিদিমিরকে।
আহ দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এল বুকের ভিতর থেকে।কেন যে এত দোটানা মনের মধ্যে সবসময়।বলাবাহুল্য এই কথা হয়তবা পৃথিবীর সবমেয়ের ই মনের কথা।

তারপর ও একসময় তারা সুখে থাকতে শুরু করল ।

আমার গল্প ফুরালো
নটে গাছটি মুড়ালো।

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৮
২০টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×