ভূমিকা: প্রথম আলোতে এই উপন্যাসটি আমি লিখেছিলাম "নীল সাধুর হটসিটে শীলা" এই নামে।ব্লগ সংক্রান্ত ঘটনাবলী ,তার সাথে এক প্রতিষ্ঠিত নারী ব্লগার তার দৈনন্দিন জীবন, তার পরিবার,সমাজ, পরবর্তীতে তার প্রেম বিয়ে ব্যাক্তিগত জীবন ছিল এই উপন্যাসের উপজীব্য।মূল গল্পটিকে একটু পরিবর্তন করে নামটি ও পরিবর্তন করে দিচ্ছি।কেন্দ্রীয় চরিত্র এখন ও ব্লগার ।তবে তার সাথে কিছু আনুষঙ্গিক ঘটনা যোগ করা হবে প্রয়োজনে।সবাই গল্প টি আগ্রহ নিয়ে পড়লে কৃতজ্ঞ থাকব।
=============================================
মূল গল্প:
বধু কোন আলো লাগল চোখে
লাগল চোখে বধু কোন আলো।
আজ সকালের সূর্য্যের কিরনকে মনে হল এক আশীর্বাদের মত। অনেক দিন হ্যা বেশ অনেকদিন পরে আনন্দের পরিতৃপ্তির ঘুমের পর আজ উঠে এল সচেতনতার জগতে। যদিও কালও জাগা হয়েছিল অনেক রাত। কাল ছিল তাদের ব্লগের চিঠি প্রতিযোগিতার চমৎকার একটি দিন। কাল কতজনের সঙ্গে যে পরিচয় হল নুতুন করে।এতদিন যাদের জানত শুধু এক নিকের আড়ালে আজ তারা নুতুন বর্ণে নুতুন পরিচয়ে সামনে এসে দাড়াল। বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিল। কোন নিককে মনে করেছে মেয়ে দেখা গেল সে পুরুষ। কাকেও মনে করেছে বয়স্ক প্রবীন যাদের সাথে হৃদ্যতা ছিল শুধুমাত্র কমেন্টসের মাধ্যমে তাকে দেখা গেল নবীন প্রানবন্ত। সব মিলিয়ে এক আলোকিত দিন আলোকিত জগত আলোকিত মানুষদের সান্নিধ্যে যাওয়া। আবার এই আলোকিত মানুষ গুলি তাকে বসিয়েছিল এমনই উচ্চতায়।দেখা গেল সবাই তাকে চেনে। তাকে পরিচয়ও দিতে হয়নি।সবাই শোরগোল করে উঠেছিল তাকে দেখে। ফেসবুকের প্রোফাইলের মাধ্যমে সবাই তার চেহারার সাথে ও পরিচিত হয়ে গিয়েছে। একের পর একেকজন তাকে শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানিয়ে গেল।যদিও সে কালকে পায়নি কোন ও পুরস্কার বা তার চিঠিও সিলেকশনে আসেনি। তবু মনে হল তার নিজেকে এই ব্লগের প্রান।
সে আজ মজা করে এই কবিতাটি লিখল।
তোমাকে লেখা প্রথম চিঠি
পুরানো কাগজ
চিঠিপত্রের আড়াল
থেকে বের হল
চিঠিটি।
সেই চিঠিটি।
আজ তা বিবর্ণ হলুদ।
যা ছিল একসময়ে
বড় কাঙ্খিত ।
দিনে রাতে
হাজার বার
পড়ার মত।
হারিয়ে যেতে হয়েছে
ইচ্ছে করে।
যেতে দিয়েছি
ইচ্ছে করে
একসময়ে
সময়ের প্রয়োজনে
বাস্তবতায়।
কেমন আছ
এইসময়ে
ছিলে বা কেমন?
তোমার ও কি আছে
অমূল্য কোন স্মৃতি
আমার!
আমার!
শুধুই আমার ।
সবার কমেন্টস আহারে কোথায় সেই প্রেমিক?অ্যাড্রেস টা বলেন তাড়াতাড়ি।খুজে নিয়ে আসি।
চিঠি প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া দুইজনের চিঠি পড়ে সে কেঁদে ফেলেছিল।মৃতা মাকে নিয়ে লেখা চিঠি। আরেকটি চিঠি সে খুব ভালবাসা নিয়ে পড়েছিল। একজনের শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত কাংঙ্খিত রমনীকে চোখের সামনে বড় হতে দেখা তারপর তাকে হারিয়েও ফেলা।এই ব্লগার মুহূর্তে তার কাছের মানুষ হয়ে উঠল গভীর তাৎপর্যপূর্ণ আবেগের প্রকাশে।
অফিস যাওয়ার পথে ব্লগে সময় কাটাল কিছুক্ষন।ফেসবুকে ঢুকতে মজার মেসেজ টি ইনবক্সে তার দৃষ্টি কাড়ল:
তোমার কথায় যাদু
রুপে মধু
হবে নাকি
আমার বধু?
ফাজিল সামির মেসেজ।মেসেজটা পড়তে পড়তে অফিসে পৌছল। তারপর টানা ব্যাস্ততা চারঘন্টা।কাজ শেষে লাঞ্চ রুমে ব্লগে ঢুকল আবার। কালকে চিঠি নিয়ে সন্মানিত ব্লগার ওমর বিবিধ লিখেছেন। চিঠিটি পড়তে গিয়ে আবার চোখে পানি চলে আসল।
সঙ্গে সঙ্গে মার কথা মনে পড়ে গেল।
মা তুমি কেমন আছ?
মায়ের খবর জানার জন্য ফোন ঘুরাল।
মা আজকে বেশ উৎফুল্ল অনেকদিন পর।শরীরটাও ভাল। মায়ের জন্য সারপ্রাইজ হিসাবে ভাই পাঠিয়েছে বড় টিভি। বোন পাঠিয়েছে চমৎকার গহনা।সবার ভালবাসা আবেগে মা অভিভূত।শীলম আর তার অন্য দুইবোন সহ মায়ের দরকারী জিনিস কিনে মাকে মাদার্স ডের গিফট দিয়েছে।
ইশ তোরা বেশী অপচয় করিস।স্বর্নের জিনিস এখন কেও কিনে?বললেও মায়ের মুখ হাসিতে আনন্দে ঝলমল করছিল।
এইতো আমি স্বার্থক মা হিসাবে ।ভাবেন মা পরিতৃপ্ত হৃদয়ে।শীলমের বাকী তিনভাইবোনের বিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য মা তার সব গহনা বিক্রি করে ফেলেছেন।যদিও মা অন্য নারীদের মত সোনার গহনা পরতে ভালবাসেন।
২আসসালাতু খাইরুম মিনান্নার(ঘুম হইতে নামাজ উত্তম)
মসজিদ থেকে হুজুরের সুমধুর আজান ধ্বণি ভেসে আসছে।
খুব সকালে আজ ঘুম ভেঙ্গে গেল শীলমের।অনেকদিন পরে সেই ছোটবেলার মত নামাজ পড়ে কিছুক্ষন কোরানশরীফও পড়ল।কোরানশরীফ পড়া শেষে মায়ের রুমে আসল।দুরুদে শেফা পড়ে মায়ের শরীরে ফুঁ দিল।ফুঁ দেওয়ার সময় ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠল মায়ের জন্য।মায়ের শরীর অসুস্থ দীর্ঘদিন যাবত।কপালে হাত দিয়ে দেখে বেশ জ্বর আছে এখনও।তাড়াতাড়ি কিচেনে এসে চুলা ধরাল।একচুলায় চায়ের পানি চড়িয়ে আরেক চুলায় আটার পানি বসিয়ে দিল।বাবাকে দেখা যাচ্ছে বারান্দায় হাটাহাটি করছে।সম্ভবত চায়ের জন্য অপেক্ষা।তাড়াতাড়ি বারান্দায় টেবিলে বাবার জন্য চা বিস্কুট এনে রাখল।
কিরে মা তোর আজকে অফিস আছেনা?
এইতো বাবা যাব।নাস্তা রেডী করে টেবিলে রেখে যাব।তুমি মার পাশে একটু থাক বাবা।
তোর মা শুধু কান্দে।বেশীক্ষন বসলে মন খারাপ লাগে।সেইজন্য চলে আসি।
পরবর্তী দুইঘন্টা কাটে প্রচন্ড ব্যস্ততায়।সবার খাওয়ার আলাদা আলাদা প্লেটে ঢেকে যখন অফিসের পথে রওয়ানা করল তখন আটটা বেজে গিয়েছে অলরেডী।আজকে সারের বকা খেতে হবে।আর কতদিন মায়ের শরীর খারাপ বলবে।কাজে পারসোনাল জিনিসের স্থান নাই।রিক্সায় যেতে যেতে ফোনে ফেসবুকে ঢুকলপ্রায় একমাস পর। চ্যাট বক্সে প্রতিদিন আগে মজার মজার মেসেজ পেত।সামি আর বন্ধুরা সবসময় যেন তারা পোষ্টের জন্য উম্মুখ হয়ে থাকত।সামির সাথে অবশ্য এখনও সামনাসামনি পরিচয় হয়নি।প্রোফাইলে যতটুকু চেনা।
ওফস ৩৫০ মেসেজ।
কি ব্যাপারে কোন ব্লগে দেখা যাচ্ছেনা তোমাকে?সামির মেসেজ।প্রথম আলো চলন্তিকা নক্ষত্র ফেসবুক কোথাও নাই?তোমার ফোন নাম্বার পেলাম প্রোফাইলে।সেটা দেখি যায়না।ব্যাপার কি ভাল আছতো?
এক চেইন থেকে আরেক চেইন।প্রথম আলো ব্লগে ঢুকল।অসংখ্য বার্তা জমে আছে। সবার ভালবাসা ভরা মেসেজ।কিছুক্ষনের জন্য ভূলে গেল তার যাবতীয় কাজ যত পার্থিব দূঃখ যন্ত্রনা।তার অফিসের জরুরী কাজের কথা মায়ের অসুস্থতার কথা।চলে গেল সেই প্রথম পোষ্ট প্রকাশের দিনটিতে।কল্পনায় চলে গেল সেই হটসিটের অবিস্মরণীয় দিনটিতে।
(পরবর্তীতে)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৪:৪৫