পৃথিবীর সব আনন্দে
আজ আমার নিমন্ত্রন
স্বার্থক জীবন আজ
বোধ হল সব পেয়েছি।।
আলোর জাগরন হল
হৃদয় মাঝে আজ
নির্মল হাতে কে দিল
যেন কোমল পরশ
দূঃখ অলসতা অন্ধকার সরিয়ে।।
ওনার ছেলেটি মাঝে মাঝে লেখে।বাবাকে দেখায় ছন্দ কবিতা।ছেলের কবিতা পড়ে তিনি অভিভূত আজ। ওনার নাম আবদুর রহমান। কাজ করেন মার্কেন্টাইল ব্যান্ক এ। হেড ক্যাশিয়ার। তার তিনছেলে দুই মেয়ে ।
ছেলের কবিতার প্রথম দুই লাইন এখন আবৃত্তি করছেন খুশী মনে হতাশা ভূলে গিয়ে।
অনেকক্ষণ ধরে হাটছেন তিনি নিউমার্কেট এ। ঘুরে ঘুরে দেখছেন সব দোকান। এখনকার সময়ে নিউমার্কেট এ ঈদের শপিং খুব কম মানুষ ই করে। তিনি এসেছেন বাজেটের কথা চিন্তা করে। আজ তিনি বেতন পেয়েছেন। ঈদ বোনাস বেতন সহ সর্বসাকুল্যে উনিশ হাজার সাতশত টাকা।
তার দুইমেয়ের বিয়ে হয়েছে। এক মেয়ে বাহিরে থাকে বলে রক্ষা। আপাতত এখন ওখানে না পাঠালে চলবে। দ্বিতীয় মেয়ের বিয়ে হয়েছে এই বছর। নুতুন জামাই। বখশিশ ঈদ এর কাপড় দিতে গেলে তার পুরো বেতন ই খরচ হয়ে যাবে। অবশ্য এই জামাই টি বেশ ভাল। না দিলে কিছু মনে করবেনা। কিন্তু সিতারা তার স্ত্রী পাগলের মত মাতম শুরু করে দিয়েছে প্রথম বছর জামাইকে অবশ্য ভাল পাঞ্জাবী গিফট দিতে হবে। মেয়ের শ্বশুর শ্বাশুড়ি আছে এ চিন্তা করবে।
মেয়ের শ্বশুর শ্বাশুড়ির চিন্তা করব আমার কথা কে চিন্তা করে ? এত টাকা আমি কোথায় পাই। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে তিনি ভাবেন তাই।
বাড়ি ভাড়া দশ হাজার প্রথমে আলাদা করে রাখলেন। আর থাকে দশ হাজার। বড় মেয়ে অবশ্য দশ হাজার পাঠিয়েছে। বাজার খরচ হিসাবে তা তিনি রেখে দিয়েছেন আলাদা করে। অনেকক্ষণ দোকান ঘুরে ফিরে শুধু কাজের মেয়ের জন্য একটা থ্রী পিস কিনলেন সাতশ টাকায়। ভাবলেন ঈদের দিন সবাইকে একহাজার করে সালামী দিয়ে দিবেন। এই তার সামর্থ্য। অল্প দামের পোশাক স্ত্রী ই পরেনা সেখানে ছেলে মেয়ে তো আর ও পরবেনা।
২আরিফ নিশু সদ্য বিয়ে করেছে।নিশু ওনার দ্বিতীয় মেয়ে। বিয়ের পর তাদের প্রথম ঈদ। দুইজনে মোটামুটি ভাল জব করে। বেতন বোনাস মিলিয়ে মন্দ টাকা পায়নি। তবু ও বাজেটে মিলছেনা।
এই তুমি বাবাদের পাঞ্জাবী লিস্ট এ রাখনি কেন ? আর ও পাচ হাজার পাচ হাজার দশ হাজার যোগ করলাম, নিশু হেসে বলে ।
সর্বনাশ ওনাদের দিতে গেলে টাকা ম্যানেজ করতে পারবনা। তোমার ভাইবোন আমার ভাইবোন মিলে দশজন। ওদের তো সিম্পল কিছু দিতে পারবনা। জামাই দুলাভাই প্রেস্টিজের ব্যাপার। আরিফ কৌতুক করে বলে।
প্রথম ঈদ। কোনরকম ম্যানেজ করতে হবে। নিশু অনুনয়ের স্বরে বলে।
প্রথম ঈদ বলে আমার তো বেশি স্যালারী হয়নি।
আরিফ আবার লিস্ট দেখে বলে
আসল মানুষদের লিস্ট থেকে বাদ দিয়েছ নিশু।
কে নিশুর অবাক প্রশ্ন।
আমাদের আর তোমাদের বুয়ারা। এই গরীব মানুষ গুলির কে আছে তুমি আমি ছাড়া বল ?
নিশু হাসে আরিফের দিকে তাকিয়ে। সে আমি ব্যবস্থা করে রেখেছি আগে।
আচ্ছা আমরা ঈদ টা অন্যরকম করে যদি করি কেমন হয়।
যেমন নিশু হাসি মুখে তাকায়।
আমার তোমার এত কাপড়।তোমার ভাইবোনদের বড় আপা এর মধ্যে দিয়েছেন। এত টাকা খরচ না করে অন্তত একটি দিন ঈদের দিনে যার কিছু ই নাই ,নিঃশ্ব একেবারে সম্বল হীন তাদের কে এই টাকা দিয়ে ওদের আনন্দে কেন শামিল হইনা ?
ওফ সে আমি সবাইকে দিব সময় সুযোগ মত। এখন আর ও কিছু টাকা ছাড় তো বলে স্বামীর ওয়ালেট টা কেড়ে নেয় মজা করে ই।
৩ ঘরে ঢোকা মাত্র ছেলেমেয়ে স্ত্রী দৌড়ে এসেছে স্বামী কি এনেছে। শুধু কাজের মেয়ের জামাটি দিয়ে বাকি টাকা স্ত্রীর হাতে দিলেন।
যেভাবে মনে হয় তোমরা ভাগ করে নাও এই টাকা। আর না হলে আমাকে কয় টুকরা করে ভাগ করে নাও। হতাশা চাপতে না পেরে বাজে কথা টি বলে ফেললেন তিনি।
স্ত্রী ধমকে উঠলেন
সেকি কথা ! তোমার কাছে কি কেউ কিছু চেয়েছে ? এবার আসমা (বড় মেয়ে) সবার জন্য ঈদের কাপড় পাঠিয়েছে তার বান্ধবীর ছোট ভাই এর মাধ্যমে। ও কালকে এসে পৌছবে বাংলাদেশ এ। এই টাকা সংসার খরচের আমি রেখে দিলাম। চিন্তা করনা হাসি মুখে বললেন স্ত্রী।
কাজের মেয়েটি জামা পেয়ে ভীষণ খুশি।
ঈদের দিন সালাম করতে এল মেয়ে জামাই নিশু আরিফ। তিনি সেলামী দিলেন না কোন প্রথমে। পরে পাচ হাজার দিলেন লজ্জা সহকারে বললেন
এ টাকা টা আমার ব্যান্ক এর দারোয়ানের জন্য রেখেছিলাম। ওর তো দেশের বাহিরে থাকা কোন ছেলে মেয়ে নাই কিভাবে চলে ?
জামাই আনন্দে হেসে ফেলল।
আসুন বাবা আজ একটু অন্যরকম ঈদ করি। চলুন আপনি আমি তার বাড়িতে গিয়ে এই টাকাটা তাকে দিয়ে আসি। তার জন্য কিছু খাওয়ার ও নিয়ে যাই।
এতক্ষণ যা বর্ণনা করলাম এ হচ্ছে লেখক এবং রহমান সাহেব এর কল্পনা। বাস্তবে রহমান সাহেব তাই করেছেন আর সবাই যা করেন। জামাই বখশিশ ,মেয়ের জন্য দামী শাড়ী, কাজের মেয়েকে নাম মাত্র দেওয়া। এক ঈদ মানুষ অনেক সবার জন্য তো সম্ভব নয় করা। আগে তো আপনজন। স্ত্রীকে দশটার শাড়ী র সাথে বাড়তি আরেকটা কাতান কিনে দিয়েছেন। কাজের মেয়েটিকে সুতির থ্রি পিস।
ঘরে ঘরে সবাই এইভাবে রহমান সাহেব এর মত ঈদ যাপন করে। তবু ও এই ঈদ এ একবার ভেবেছিলেন অন্য রকম ঈদ করবেন।
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ঈদের সেমাই খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন অতঃপর।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৩৭