আজ শিক্ষক দিবস, রক্তদিয়ে অধিকার আদায় করতে হচ্ছে
বাবা-মা’র পর আমরা যাকে সবচেয়ে বেশী শ্রদ্ধা করি তিনি হলেন আমাদের শিক্ষা গুরু অর্থাৎ শিক্ষক। শিক্ষক আমাদের পিতৃতুল্য। পেশা হিসেবে শিক্ষকতা বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। দেশের জনগোষ্ঠীকে যাঁরা মানবসম্পদে পরিণত করেন, তাঁদের উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে দিবসটির প্রতি সরকার ও জনগণকে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দেশর সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত মহামান্য রাষ্ট্রপতিও যদি তার শিক্ষক কে সামনে দেখেন, তখন শ্রদ্ধায় মাথা নত করেন। আর সেই শিক্ষকরাই আজ সমাজে বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিস্পেসিত ও অবহেলিত। যখন তারা মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের শিক্ষাদান করবেন, ঠিক সেই সময়ে তারা রাজপথে পুলিশের টিয়ারসেল ও লাঠিপেটায় রক্তাক্ত হচ্ছে।
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে শিক্ষকদের মৌলিক অধিকার ও কর্তব্যবিষয়ক ১৪৬টি ধারাবিশিষ্ট ‘স্ট্যাটাস অব টিচার্স’ নামের এক ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরদাতারা হলেন তখনকার ইউনেসকোর মহাপরিচালক জিন থোমাস ও লিগ্যাল অ্যাডভাইজর রেনে ম্যাথিউ।
সদস্যরাষ্ট্র সহ অন্যান্য দেশে এই সুপারিশমালা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে ১৯৯৪ সালে জেনেভায় আন্তর্জাতিক এক শিক্ষা সেমিনারে সহস্রাধিক প্রতিনিধির উপস্থিতিতে শিক্ষকদের মৌলিক অধিকার ও কর্তব্যের ওপর নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ইউনেসকোর তৎকালীন মহাপরিচালক ফেডারিকো মেয়র ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। বর্তমানে বিশ্বের ১০০টিরও বেশী দেশ বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জেন্ডার সমতায় শিক্ষক’।
নানা রকম বৈষম্যের শিকার দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা অধিকার আদায়ের বিশেষ দিন হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইউনেস্কো-আইএলও ঘোষিত এই দিবসটিকে। প্রতিবছর বাংলাদেশে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে সাত লাখেরও বেশি লোক এ পেশায় নিয়োজিত। অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষক প্রাইমারি স্কুলে। বাকিরা কর্মরত আছেন মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদ্যমান। প্রায় ৯৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে।
মানব অধিকার-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ঘোষণার ২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী নাগরিকদের উপযুক্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। চাকরির নিরাপত্তা ও নিয়োগকালের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগবিধি ও চাকরির শর্তাবলি নির্ধারণে শিক্ষক সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। এতে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও অধিকার সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। মেধা আকর্ষণ ও শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বার্ষিক জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ নির্দিষ্ট রাখতে হবে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে শিক্ষককে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথাযথ সুযোগ দিতে হবে। নতুন কোর্স তৈরি, পাঠ্যপুস্তক রচনা ও পাঠ্যসহায়ক-সামগ্রী প্রস্তুতে শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনগুলো অংশ নেবে। শিক্ষকেরা একাডেমিক স্বাধীনতা ভোগ করবেন। শিক্ষকেরা সব নাগরিক অধিকার ভোগ করবেন এবং জনপ্রতিনিধিত্বের সব ধরনের পদ তাঁদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তাঁরা চাকরির শ্রেষ্ঠত্ব ও পেনশনের জন্য বিবেচ্য চাকরির মেয়াদকাল অক্ষুণ্ন রেখে ওই দায়িত্ব পালন করতে এবং মেয়াদান্তে আগের পদে বা সমতুল্য পদে ফিরে আসতে পারবেন। শিক্ষকদের আচরণবিধি স্থিতিকরণে শিক্ষক সংগঠনগুলোর ভূমিকা থাকবে। জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পর্যালোচনা করে শিক্ষকদের বেতন বাড়াতে হবে। বৃদ্ধ বয়সে সামাজিক নিরাপত্তা, চিকিৎসার সুযোগ ও অবসরভাতা দিয়ে শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্বব্যাপী শিক্ষক ইউনিয়নসমূহের ফেডারেশন এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই) ও এর ৪০১টি সংগঠন এ দিবসের ব্যাপক স্বীকৃতি অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। এ সংগঠন শিক্ষা পেশার অবদানকে তুলে ধরে প্রতিবছর জনসচেতনতা মূলক প্রচার চালায়। সারা বিশ্বের মত এবার ১৫তম বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। দিবসটিকে সামনে রেখে এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘শিক্ষকদের দিয়েই পুনরুদ্ধার শুরু’। জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব শিক্ষক দিবস ১৯৯৪ সাল থেকে পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে।
১৫তম বিশ্ব শিক্ষক দিবসের পূর্বদিন দেশের নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক-পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এসময় সাংবাদিক সহ আহত হয় প্রায় অর্ধশতাধিক। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ সময় আশেপাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। টিয়ার সেলের গ্যাস আর পুলিশের নির্মম লাঠির আঘাতের অসহায় দৃশ্য দেখে পথচারী। শিক্ষকরা হয় নির্যাতিত। স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে নির্যাতনের এই করুন দৃশ্য দেখে প্রধানমন্ত্রী তাদের সাথে বসতে সম্মত হয়েছেন। তাদের ভাগ্যে কতটুকু জুটবে তা এখন সময়ই নির্ধারণ করে দেবে।
দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মাসে বাড়ি ভাড়া পান মাত্র ১০০ টাকা! অথচ ফুটপাথেও যদি কেউ রাত কাটায় তাহলে গভীর রাতে লাঠির আঘাত কিংবা পায়ের লাথিতে ঘুম ভেঙ্গেযায়। ঘুমথেকে উঠে চোখ কচলাকে কচলাতে গুনতে হয় রাস্তায় ঘুমানোর ট্যাক্স ৫০ বা ১০০ টাকা। অথচ সারামাসের বাড়ীভাড়া বাবত এই ডিজিটাল যুগেও বরাদ্দ মাত্র ১০০ টাকা!!! আর মেডিক্যাল ভাতা পান ১৫০ টাকা। দীর্ঘদিন ধরেই এটা চলে আসছে। অথচ সরকারি শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া পান মূল বেতনের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ করে। সরকারি শিক্ষকরা বছরে দুটি উৎসব ভাতা পান পুরো মূল বেতনের সমান। সেখানে বেসরকারি শিক্ষকরা পান মূল স্কেলের ২৫ শতাংশ করে দুইবারে ৫০ শতাংশ।
দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় চার লাখের মতো শিক্ষক বেতন-ভাতা বৈষম্য থেকে শুরু করে নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। অনেকের নুন আনতে পানতা ফুরায়। শুধু বেসরকারি নয়, সরকারি শিক্ষকদেরও রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকরা নানামুখী সংকট নিয়ে শিক্ষাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
‘গত চার দশকে শিক্ষকদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে, এটা ঠিক। তবে সময় ও বিশ্বের তুলনায় এটা এখনো আশাব্যঞ্জক হয়নি। এখন মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসছে না। প্রবীণ দক্ষ শিক্ষকরা বিদায় নিচ্ছেন, কিন্তু এসব শূন্যস্থান যথাযথভাবে পূরণ হচ্ছে না।
সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যকার এসব বৈষম্য দূর করতে হবে। তা ছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও দুর্বৃত্তদের পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করায় নিরীহ শিক্ষকরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী বিদ্যাপীঠ বুয়েট যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বার বার ঘটবে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের রাজনীতির দুঃসহ স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি দেশের মানুষ।
আমরা শিক্ষকরুপী আর পরিমল দেখতে চাই না। দেখতে চাই শিক্ষকদের পিতারূপে। কোচিং বানিজ্যের নামে সারা দেশের স্কুলের শিক্ষা এখন অনেকটা কাগজে কলমে রয়েছে। ভাল রেজাল্ট করতে হলে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে কোচিং বা স্যারের বাসায় প্রাইভেট পড়ার প্রবনতা সেদিনেই মুক্ত হবে যেদিন, শিক্ষকদের সত্যিকার মর্যাদা দিতে পারবে রাষ্ট্র।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন