somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্পর্কের মায়াজাল

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ সামাজ দ্বারা নির্মিত একটি প্রাণি। ফলে সমাজের প্রায় সকল সম্পর্কের ভিতর তাকে ঢুকতে হয়।তৈরী হয় তার ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন।অধিকাংশ মানুষ মূলত: পরিবার, প্রতিবেশী, চাকরি বা নিজ নিজ কর্মের সাথে জড়িতজন এবং ঘনিষ্টজনদের সাথে মিশে থাকে।কাছের জনদের মাঝেই থাকে মানুষের অস্তিত্ত্বের সরব উপস্থিতি।ভেবে দেখেন আপনাকে যে চিনে না তার কাছে আপনার অস্তিত্ত্ব অনেকটা বস্তুগত অস্তিত্ত্বের মতো।রাস্তায় নামলে যেমন অসংখ্য ইলেকট্রিক পোল, সারে সারে গাছ, দু'ধারে বিল্ডিং অথবা কৃষিকাজ দেখেন তেমনি দেখেন অসংখ্য গাড়ী অথবা মানুষ।এই যে ঢাকা শহরে চক্ষু মেলিলেই হাজারো মানুষ চোখে পড়ে তাতে আপনার কী বা এসে যায়।অচেনা মানুষের ভিতর আপনার উপস্থিতিই বা কী আলোড়ন তৈরী করে।মোদ্দা কথা হল জীবন্ত উপস্থিতি থাকে পরিচিত জনদের মধ্যেই। এসব অবশ্য আমজনতার কথা বলছি যারা সেলিব্রেটি তাদের কথা আলাদা।তারা সকলে দেবতা আর আমরা আমজনতা!

যে কথা বলতে চাচ্ছি, ব্যক্তি মানুষ ও তার পরিচিত ভূবনের আন্ত্ঃসম্পর্ক। জীবন যাপনের নিরাপত্তার স্বার্থে পরস্পর নির্ভরশীলতা- ফলশ্রুতিতে আন্ত্ঃসম্পর্কের বহু জটিলতাও তৈরী হয়।অপরিচিত ভূবনেও জটিলতা থাকে তবে সেখান থেকে সহজেই উত্তরণ লাভ করা যায়, পরিচিত জনদের মধ্যে আর সে উপায় সহজে বের করা যায় না।সকল সম্পর্কের মূল হল যৌন বা নারী -পুরুষের সম্পর্ক।

মানুষ ষড়ঋপু দ্বারা মারাত্নকভাবে তাড়িত হয়। যৌবনে মুখ্য জায়গা দখল করে কাম।লালন ফকির বলেছেন "এ যে যৌবন কাল কামে চিত্ত কাল"।প্রেম এবং কাম জগতের সাধুদের প্রধান দু'টি তাড়না। অর্থ, ক্ষমতা, মোহ, লোভ, ঈর্ষা প্রভৃতি ছাড়তে পাড়লেও প্রেম ও কামের কাছে সাধুরা তালগোল পাকিয়ে ফেলেন।এ নিয়ে নানাবিধ ধারার সাধনা আছে ভারতীয় দর্শনে।বেশীর ভাগ সাধক গোষ্ঠী কামকে জীবন থেকে তিরোহিত করতে বলেছেন, পেরেছেন ক'জন সে প্রশ্নের উত্তর ইতিহাস।কিছু কিছু তাণ্ত্রিক সাধনায় আবার কাম ও প্রেম উভয়কে একত্রে রেখে রাজহংসের মতো (রাজহংস যেমন দুধ থেকে পানি আলাদা করতে পারে) প্রেমকে আলাদা করার কথা বলা হয়েছে।

আমাদের সময়ে এসে তাণ্ত্রিক সাধনা,ধর্মের প্রভাব বা আঞ্চলিক সংস্কৃতি সকলেই প্রায় নাই এর পর্যায়ে ঠেকেছে। ধর্মের জায়গা দখল করেছে বিজ্ঞান। যদিও বিজ্ঞান সামগ্রিকতা ধারন করতে পারে কিনা সে বিষয়ে যথেস্ট সন্দেহ তবুও এটি এখনকার ধর্ম। বিজ্ঞান মতে শরীরে বস্তুগতভাবে হরমোনের আবির্ভাবের পরেই মানুষের কাম ভাব প্রবল হয়। এবং তা ধীরে ধীরে প্রেমে পর্যবসিত হয়।কাম হল জৈবিক আর প্রেম হল আত্নিক ব্যাপার। যদিও দু'টি সম্পুর্ণ ভিন্ন বিষয় নয়, একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে সমাজ গড়ে উঠার কথা সবচেয়ে ভালভাবে বলেছেন মার্ক্স । সমাজ গড়নের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো যৌন প্যাটার্ণ। ফ্রয়েড যৌনতাকে মনোজগতের অন্যতম চালিকা শক্তি বলেছেন।
আমাদের সময়কার যৌন সম্পর্ক শ্রেণী ভিত্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।উচ্চবিত্ত ও নিন্মবিত্তের যৌন সম্পর্কের একধরণের মিল থাকলেও থাকতে পারে। মধ্যবিত্তে এসে এই সম্পর্ক ধারণ করেছে জটিল রূপ।

মানুষ জীবজগতের যে পর্বের বা গোত্রের তাদের বেশীর ভাগের মধ্যেই বহুগমন প্রবণতা। মানুষের ইতিহাসে বহুগামিতা অতি সাধারণ ঘটনা। সমাজ ব্যবস্থা গড়ণের পূর্বে আরো ভালোভাবে বললে সচেতন পর্বের পূর্বে মানুষ যে পরিবারের প্রাণি তাতে বহুগামিতাই প্রথা। আত্নিক উন্নয়ন বা সচেতন হওয়ার পরেও এই প্রবণতা চলতে থাকে। সম্পদের সাথে পরিচিত হওয়ার কালে পুরুষরা দখল করে সমাজের কর্তৃত্ব। বংশগতির উপর জীবনের অস্তিত্ত্বের কারণে সম্পদের উত্তরাধিকারে মানুষ বোধ করে নিজের অস্তিত্ত্ব। প্রাণের ধারক নারী বংশগতির ধারক। পুরুষরা নারীর জীবন প্রণালীর জাত নবজাতকের অধিকার দাবী করলো, ক্ষমতা যেহেতু পুরুষের কাছে তাই তারা নারীকে বানালো সম্পদের অংশ। অনেক ধর্মও নারী ও সন্তানকে সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।সম্পদের জন্য সন্তানের পরিচিতি জরুরী।পিতা সম্পদের মালিক তাই পিতার পরিচয়েই পুত্রের পরিচয়।

জগতকে ধারণ করতে গিয়ে নারীকে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, পুরুষ সেই ত্যাগ না করার বদৌলতে পাওয়া উৎক্রমন বা অভিগমনের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নারীকে বানিয়েছে তার সম্পদ। যে নারী মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত পশুপালন ও কৃষিকাজ গড়ে তোলে তারা আজ পুরুষের ভেতরে দেখে নিজের প্রকাশ।নারী -পুরুষ সম্পর্কের পুরো ইতিহাসে বিরাজ করছে অজ্ঞতা ও রহস্যময়তা। বাংলার প্রায় সকল স্তরের জনগোষ্ঠীর পুরুষদের মহলে প্রভাব বিস্তারকারী ধারণা হলো " সব নারী এক''। নারীদের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটি "সব পুরুষ এক"।

পণ্য জ্ঞানে পুরুষের কাছে নারীর মন অপেক্ষা দেহ প্রধান।দেহ-সম্পদের বিনিময়ই (যথা যৌতুক, দেনমোহর, ভরণ-পোষণ) নারী-পুরুষ সম্পর্ক। আবার জীবাত্মা-পরমাত্মার ধারণা থেকে পুরুষরা নিজেকে মনে করে দেবতা। কোন কোন কিতাব আবার এই ধরণের ইঙ্গিতও দিয়েছে।বাংলায় নারীদেরকে বেশীমাত্রায় রহস্যময়তা, শক্তির আধার হিসেবে উপলব্ধি করে বলেছে মা দূর্গা, মা কালি। কিন্তু কালি লয় করতে করতে নিজ স্বামী শিবের বুকে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বায় কামড় দিয়েছে।বিষয়টির নানা দিক থাকলেও প্রধান হলো স্বামী যে দেবতা বুকে পা দেওয়া অধর্ম।

মানুষের মানুষ হয়ে উঠার কারণ যে সচেতনতা, আত্মিক উন্নয়ন বা মনের আবির্ভাব তা অপেক্ষা সম্পদ মূখ্য জায়গা দখল করে সৃষ্টি করেছে নারী-পুরুষ সম্পর্কের এই রহস্যময়তা।পুরুষ নারীকে সম্পদের দৃষ্টিতে বা নারী পুরুষকে দেবতার দৃষ্টিতে দেখতে থাকলে প্রেমের সম্পর্ক নির্মাণ হতে পারে না।মানুষ জ্ঞানে খুলতে পারে নতুন দিগন্ত।


১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যদি এমন হতো.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:২৮

যদি এমন হতো....

বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা-দারিদ্র-মহামারী, যুদ্ধবিগ্রহের ধ্বংসযজ্ঞে মানুষে মানুষে, দেশে দেশে সকল বৈরীতা ভুলে একটা সুখী পরিবার গঠন করে দুনিটাকে সত্যিকার ভূস্বর্গ করতে...
শুরু হতো বাংলাদেশ থেকে। সব রাজনৈতিক দল মুক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বিকার ( কবি দাউদ হায়দার স্বরনে তারি লেখা কিছু কবিতা থেকে উৎসাহিত হয়ে)

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:০৫



জন্মেছি, এও এক ঘটনা মাত্র।
কারও ইচ্ছেতে নয়, কারও অনিচ্ছেতেও নয়।
রক্তের গন্ধে ভরা এক সকালে
আমি নেমে এসেছি, অপ্রত্যাশিত চিৎকারে ।

শহরের ধুলো, গলির বিক্রি হয়ে যাওয়া রোদ,
বাসের পাদানিতে ঝিমিয়ে পড়া শরীর,
সবকিছু দেখেছি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের পাশে আমেরিকা-ইসরায়েল। পাকিস্তানের পাশে কারা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩


গত রাতে ইসরায়েল থেকে ভারতে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে গেছে একটি কার্গো বিমান। তাতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির গাইডেড মিসাইল বিপুল পরিমাণে আছে। এই মিসাইলগুলো অতি নিখুঁতভাবে মেঘ, বৃষ্টি বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত ও পাকিস্তান উভয় সম্পূর্ণ কাশ্মিরের দখল পেতে মরিয়া

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৩



ভারত হয়ত এবার যুদ্ধকরেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। পাকিস্তানও হয়ত যুদ্ধকরেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। এমতাবস্থায় ভারতের পাশে ইসরাইল এবং পাকিস্তানের পাশে চীন থাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×