কয়েকদিন আগে কাওরান বাজারে ফুটপাথের ওপর একটা দৃশ্য দেখে থমকে গিয়েছিলাম।
অনেকটা অভিভূতও হয়েছিলাম বলা যায়।
বেশ রাত হয়ে গেছে তখন, প্রায় দশটা বাজে। কাওরান বাজার আন্ডারপাস বরাবর যে লম্বা ওয়াকওয়ে, সেখানে অজস্র ঘরহীন মানুষ শুয়ে থাকে। এরকমই এক জায়গায় দেখি, দু'টি অল্পবয়সী ছেলে, দেখে মনে হলো দুই ভাই, একজনের বয়স বড়জোর ১৬/১৭, আরেকজনের কিছু কম, ১৩/১৪ হবে। সামনে বিছানো পলিথিনে কিছু একটা খাবার রাখা (ভাত বা মুড়ি হবে হয়তো), মুখোমুখি তারা খেতে বসেছে। দেখার মত দৃশ্যটা হলো, ছোট ভাইটি বড় ভাইটিকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। বড় ভাইয়ের তাতে খুব একটা আগ্রহ নেই, সে অবহেলা ভরে মুখের কাছ থেকে ছোটভাইয়ের গ্রাস সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তাতে ছোটভাইয়ের আগ্রহ বিন্দুমাত্রও কমছে না, সে আবার অসীম ভালোবাসায় খাবারের গ্রাস তুলে দিচ্ছে ভাইয়ের মুখে, ভাবখানা এমন "খাও, এই যে আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি, আমার হাত থেকে খাও !"
দৃশ্যটি আমি ভুলতে পারিনি... দৃশ্যটি অনেক ভাবিয়েছে আমাকে। আমি সমাজবিদ নই, সমাজতত্ত্ব নিয়ে তেমন কিছু জানিও না। আমি জানতাম সমাজের স্তরবিভাগের সাথে সাথে ভালোবাসার চেহারা, রং- রূপ বদলায়। কিন্তু ভালোবাসা বা মমতা, মূলে যে সেটা একই জিনিস, এবং কত আবেদনময় আর কি অদ্ভুত সুন্দর তার বহি:প্রকাশ, এই দৃশ্যটি না দেখলে হয়তো তা ওভাবে আমার আর অনুভব করা হতো না...
এই যে রাস্তায়, ফুটপাথে, সিগনালের ধারে কত অজস্র মা তার শিশু কোলে নিয়ে বসে থাকে, কেউবা ভিক্ষে করে। আজকাল শোনা যাচ্ছে, এগুলো সবই ব্যবসায়িক ধান্ধা, These are rental babies. হওয়া খুবই স্বাভাবিক, কে জানে, হয়তো ওদের মত অবস্থায় থাকলে আমরাও ওরকম করতাম। কিন্তু তবু আমি ঐসব মায়ের মুখে বিপুল ভালোবাসার চিহ্ন দেখতে পাই। কি অসীম মমতায় তারা শিশুটিকে বুকে আগলে রাখে , শিশুটিও কি পরম নির্ভরতায় মায়ের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকে! দৃশ্যগুলো মনে কি অদ্ভুত দাগ কেটে যায়........
এই ভালোবাসাই তো পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
কোথায় যেতাম আমরা, যদি না থাকতো এই ভালোবাসা?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০৯