কি মনে করে আজ মাথায় ভূত চাপলো, ভাবলাম ছুটির দিন আছে, সিনেপ্লেক্সও বাসার কাছাকাছি আছে, যাই, একটা মুভি দেখে আসি। সঙ্গে ছিল আমার দুই বোন, ওরাও ধুয়া তুললো- আজ নাকি শুভ বিবাহ ছবিটা রিলিজ হচ্ছে, দেখলে সেটাই দেখা যাক (মনপুরার তো আর টিকেট পাওয়া যাবে না, শুধু শুধু কষ্ট করে কি লাভ !)। কে জানতো, এই মুভি আদ্ধেক দেখতে দেখতেই বমি চাপতে চাপতে হল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে?!?
এর আগে সিনেপ্লেক্সে একটাই বাংলা মুভি দেখেছিলাম সেটা হচ্ছে 'ঘরের লক্ষ্মী'। ঠিক ভালো লাগেনি, ভেবেছিলাম সিনেপ্লেক্সে এত টাকা খরচ করে অন্ততঃ বাংলা মুভি আর দেখবো না। যেহেতু আজকে মাথায় ভুত চেপেই গেলো, কাজেই সে কথা আর মনে থাকলো না। মনে হলো, দেবাশীষ বিশ্বাসের বানানো ছবি তো নেহাত খারাপ হবার কথা না। ট্রাই করেই দেখা যাক না !
তাড়াহুড়া করে তিনজন বেরোলাম ৪ঃ১০ এর শো ধরবো বলে। গিয়ে দেখি ৪ঃ১০ এর টিকেট নেই (আমি ঠিক শিওর না প্রথ্ম শো এর টাইম কয়টায় ছিলো), নিলে ৬ঃ৩০ এর টিকেট নিতে হবে। এদিকে তখন মাত্র ৪টা বেজেছে। কি করবো এতক্ষণ? আমার বোনেরা বুদ্ধি দিলো, নো প্রব, সময় নষ্ট করা কোনো ব্যাপারই না, ঘুরে খেয়ে উইন্ডো শপিং করে ঠিক কাটিয়ে দেয়া যাবে।
অতএব কাটলাম টিকেট। তারপর বিভিন্ন রকম দোকান-পাট ঘুরে, মেয়েদের নামাযের ঘরে নামায পড়ে, ফুড কোর্টে একগাদা আজেবাজে খেয়ে যখন সিনেপ্লেক্সে ঢুকলাম তখন দেখি, শুভ বিবাহের দর্শকদের লাইনে দাঁড়িয়ে (!) হলে ঢুকতে আহবান জানানো হচ্ছে।
ছবির শুরুতে দেখি ফেরদৌসের সাথে পুর্ণিমার ব্যাপক নাচাগানা। এইটা আসলে পূর্ণিমার গেস্ট আপিয়ারেন্স, সে পুরা মুভিতে আর কোথাও নাই। আচ্ছা ভালো কথা। তারপর মুভি যতই আগায়, দেখি একে তো কাহিনী খুবই অস্বাভাবিক স্লো, এবং একটা বিশেষ হিন্দি মুভির সাথে হুবহু মিলে যায় ! নায়িকার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে (নায়িকা হচ্ছে অপু বিশ্বাস, হেভি সুন্দরী ) এক প্রবাসীর সাথে যাকে নাকি সে ভালোবাসে, অথচ তার পিচ্চিকালের ফ্রেন্ড হচ্ছে ফেরদৌস ! ফেরদৌস একগাট্টি মেয়ের সাথে প্রেম করে ছ্যাঁকামাইসিন খেয়ে অবশেষে বুঝতে পারে যে হি ইজ ইন লাভ উইথ অপু, অথচ তদ্দিনে নায়িকার বিয়ে ঠিকঠাক। কাজেই নায়ক নায়িকার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় এই বিয়ে ভাঙার জন্য, যেহেতু ছোটবেলা থেকেই সে এই বাড়িতে মানুষ হয়েছে, কাজেই সর্বত্র তার অবারিত দ্বার। তারপরে হবু বরের (রিয়াজ) সাথে পাল্লা দিতে থাকে নায়িকাকে বগলদাবা করার জন্য, এবং অবশেষে সফল হয়।
পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন এটা কোন মুভির নকল। জ্বি হ্যাঁ, এটা হলো 'মেরে ইয়ার কি শাদি হ্যায়' এর একেবারে হুবহু নকল। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এই ছবির কাহিনী তো বটেই, এমনকি সংলাপগুলো পর্যন্ত আগাগোড়া নকল করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও নকল করা হয়েছে, অথচ এই ছবির সংগীত পরিচালক হলেন বাপ্পা মজুমদার, ইমন সাহা এবং শওকত আলী ইমন এর মত বড় বড় সঙ্গীতজ্ঞ ! এত খারাপ লাগছিলো দেখতে, কি আর বলবো। অবশেষে সুড়সুড়ি দেয়া কানিজ সুবর্ণার গান (শারারা শারারা গানটার জায়গায় এখানে কানিজের নাচানাচি যুক্ত গান দেয়া হয়েছে) এর পর যখন ইন্টারমিশন দিলো, তখন আর সহ্য করা গেলো না, "লাথি মারি এই মুভির মুখে", "গুষ্টি কিলাই"... ইত্যাদি বলতে বলতে বেরিয়ে চলে এলাম।
ছবির বাকিটুকু সৌভাগ্যবশতঃ আমার দেখা হয়নি। আমার বোনেরা তখনো ছিলো, দেখেছে শেষ পর্যন্ত। ওরা আমাকে খুব অনুরোধ করেছিলো পুরোটা দেখে যেতে, পয়সাটা উসুল করতে। বলা বাহুল্য, সে কথা আমি শুনিনি, ঘরে ফিরে এসেছিলাম। পরে ওরা ফিরলে ওদের কাছ থেকে শুনলাম, দেবাশীষ বাবু ওই একটা মুভি থেকেই শুধু নকল করে ক্ষান্ত হননি, শেষ দৃশ্যে এক নায়ক যখন নায়িকাকে আরেক নায়কের হাতে হ্যান্ডওভার করে, সেই দৃশ্যটি আবার 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়' এর শেষ দৃশ্য থেকে নকল করেছেন !
অধিক আর কি বলিবো ?! আমাদের মুভিমেকার দের কাছে যে আমার অনেক প্রত্যাশা তা কখনই বলি না, কিন্তু দেবাশীষের মত লোক, যিনি একটা ভালো মুভিমেকিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন (স্বর্গীয় দিলীপ বিশ্বাসের সন্তান, আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তবে বলবো, দিলীপ বিশ্বাস নিশ্চয়ই সন্তানকে হুবহু হিন্দি মুভির নকল বানানো শেখাননি), তার কাছ থেকে এটা শুধু আমি কেন, কেউই অন্ততঃ এমন জিনিস আশা করবে না। আমার কথা হচ্ছে, আজকাল পুরোপুরি মৌলিক মুভি পাওয়া সম্ভব না, কাজেই টুকটাক দু'একটা ব্যাপার নকল হলে দোষ দেয়া যায় না, কিন্তু তাই বলে এমন নির্লজ্জ নকল ! এরকম পরিচালকরা দর্শকদের কি ভাবেন? গাধা, না উজবুক? যদি তাই ভেবে থাকেন তবে আবারো বলতে বাধ্য হব, ছিঃ ! এমন মুভি মানুষ দেখে !