somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাস জীবন - ১: প্রস্ততি পর্ব

১৪ ই অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রবাসে আছি দুই বছরের থেকে কিছু বেশী সময় ধরে। এই সময়টাতে বিভিন্ন স্বাদের বেশ কিছু অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি, যার বেশ কিছু খুব চমকপ্রদ, কিছু বিচিত্র আর কিছু কষ্টদায়ক।

পড়াশোনার স্বার্থে বিদেশে থাকতে হবে আরও দুই বছরের মতো। তারপর আশা করি আমার দেশের মাটির গন্ধে বাকী জীবনটা কাটাতে পারবো। ডায়েরী লেখা আমাকে দিয়ো কোন কালেই হয়নি।

এই যে টৃকরো টুকরো প্রবাস স্মৃতিগুলো, এরা বোধহয় হারিয়েই যাবে। তাই ভাবছি প্রবাস জীবন নামে ধারাবাহিক ভাবে লিখব। এটি হবে অভিজ্ঞতাগুলোকে ধরে রাখার একটা প্রচেষ্টা। প্রবাস জীবন হবে একেবারে আমার নিজের আনন্দের জন্য লেখা। আপনাদের সাথে শেয়ার করছি, যদি ভালো লাগে, খুশী হবো। কারো কাছে আপত্তিকর বা অ-প্রয়োজনীয় মনে হলে শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

আজ থাকলো প্রস্ততি পর্ব, একটু পেছন থেকেই শুরু করছি।

# বিদায় কর্পোরেট জীবন
--------------------------------
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বছরে এসে ঠিক করলাম শিক্ষকতা করলাম। বি ফার্ম করার পর একটি কোম্পানীতে জয়েন করি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফার্মাসিস্ট হিসাবে। সেখানে কাজ করতে করতেই মাষ্টার্স। অদ্ভূত একটা জীবন ছিলো। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্লাস, তারপর দৌড়ে প্রেস ক্লাব এবং সেখান থেকে বাস নিয়ে অফিসে। তারপর দুপুর ২টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত অফিস করে বাসায় ফেরা।

থিসিস করার সময় কাজের সময় পাল্টে গেলো। তখন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অফিস করি। তারপরের গন্তব্য সোজা কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বেলা ৩টা থেকে রাত্র ১০টা-১১টা পর্যন্ত ল্যাবে কাজ করে তারপর একটা রিকশা নিয়ে মোহাম্মদপুর। এভাবে দুটি বছর কাটিয়ে দেবার পর অনেকটা হুট করেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে কর্পোরেট জীবন আর নয়, শিক্ষকতা করবো। প্রফেশনালি যারা কাছাকাছি ছিলেন তারা বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কর্পোরেট বেতন আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বেতনের কথা তুলে আকারে ইঙ্গিতে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক দূর্দশার কথাও স্মরণ করিয়ে দিলেন কেউ কেউ। কিন্তু নিজের ক্যারিয়ার ডিসিশন শেষ পর্যন্ত নিজেই নিলাম।

২০০০ সালে এম ফার্ম পাশ করার পরই জয়েন করলাম একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে আড়াই বছর কাটানোর পর অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হলো, ২০০৩ এর অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলাম লেকচারার হিসাবে।

# স্কলারশিপ প্রাপ্তি
-----------------------
বন্ধুরা তখন জমকালো চাকরি করছে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীতে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক সহপাঠী আবার দেখলাম প্রচন্ড দক্ষতার সাথে মনবুশো স্কলারশীপ নিয়ে জাপান চলে যাচ্ছে পি এইচ ডি করতে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ক্যারিয়ারের প্রথম কাজ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা নেয়া বা পি এইচ ডি করা। জাপান নিয়ে মনের ভিতর একটা ভীতি ছিল, জাপানি ভাষাই সম্ভবত: এর কারণ। মনের সুখে কথা বলতে পারবোনা আর দীর্ঘদিন একজায়গাতে কাটাতে হবে এটা আমার চিন্তারও বাইরে। আর ওদের অবিশ্বাস্য রকমের কাজপাগল স্বভাব আমার মত ফাকিবাজের জন্য খুব আদর্শ জায়গা হবেনা এই বিশ্বাস থেকেই কোনদিন জাপানে স্কলারশীপের জন্য আবেদন করিনি।

ঠিক করলাম কোন ইংলিশ স্পীকিং দেশে পি এইচ ডি করবো। তারমানে পছন্দ সীমিত হয়ে গেলো। হয় ইউরোপীয় নয়ত আমেরিকান কোন বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে প্রথম সুযোগ আসবে সেখানেই দৌড়। কিন্তু আমাকে স্কলারশীপ দিবে কে?

ইংল্যান্ডে আসার জন্য কমনওয়েলথ স্কলারশীপ একটা প্রেষ্টিজিয়াস এওয়ার্ড। সাথে ফ্যামিলি নিয়ে যাবার সুযোগ রয়েছে। আমেরিকা যেতে হলে জি আর ই তে ভালো করতে হবে এবং তারপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টশীপের জন্য আবেদন করতে হবে। সাথে ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়াটা নিশ্চিত নয়। ততদিনে যেহেতু মন আর ঘর দুটোই বেধে ফেলেছি, ফ্যামিলি সাথে করে নিয়ে যাওয়াটা সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা রাখলো। অতএব কমনওয়েলথ স্কলারশীপকেই প্রায়োরিটি দেবার সিদ্ধান্ত নিলাম।

শুরু হলো আবেদন পর্ব। বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশনের বারান্দায় বসে মৌখিক সাক্ষাতকারের অপেক্ষা। প্রতি বছর পরিচিত মুখেদের দেখা পাচ্ছি। সবার স্বপ্নই উড়াল দেবার। দুই বারের ব্যর্থ চেষ্টার পর ৩য় বছরে এসে বাংলাদেশ থেকে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত হলাম। এরপর বাকী রইল কমনওয়েলথ কমিশন ইউ কে থেকে চূড়ান্ত মনোন্নয়ন। বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশন থেকে জানালো প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে মনোনীতদের শতকরা ২০-২৫ ভাগ চূড়ান্ত মনোন্নয়ন লাভ করে।

শুরু হলো অপেক্ষা পর্ব। প্রায় প্রতিদিন মেইল বক্স চেক করি, প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই করি। বিভিন্ন জনের সফলতা ব্যর্থতার খবর আসতে থাকে, কিন্তু আমার জন্য কোন খবর নাই। চার মাসের অনন্তকালের প্রতীক্ষার পর ২০০৫ সালের মার্চ মাসে পেলাম সেই বহুল প্রতীক্ষিত চিঠি। আমাকে কমনওয়েলথ স্কলারশীপের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। সেশন শুরু হবে অক্টোবর ২০০৫ থেকে। এর মধ্যে ভর্তি, ভিসা সহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার একগাদা নির্দেশ নামা।

শুরু হলো দীর্ঘ প্রবাস জীবনের প্রস্ততি পর্ব।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১২:৫৩
৩৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগারদের হতে হবে দেশের চিন্তাশীল সমাজের অগ্রনায়ক

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৬

আমার ৭ বছর ১১ মাসের ব্লগিং ক্যারিয়ারে ১০,০৭৩টি কমেন্ট করেছি। প্রতি পোস্টে গড়ে যদি ২টা করে কমেন্ট করে থাকি, তাহলে, আমি কম করেও ৫০০০টি পোস্ট পড়েছি। এর অর্থ, বছরে প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের শাহেদ জামাল- ৭৮

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭



আমার বন্ধু শাহেদ। শাহেদ জামাল।
খুবই ভালো একটা ছেলে। সামাজিক এবং মানবিক। হৃদয়বান তো অবশ্যই। দুঃখের বিষয় শাহেদের সাথে আমার দেখা হয় মাসে একবার। অথচ আমরা একই শহরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত গেলেন সন্তু লারমা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪২





বাংলাদেশ বড় একটা গেইমে পড়তে যাচ্ছে আর এই গেইমের ট্র্যাম্পকার্ড সন্তু লারমা!!

আমি হাসিনারে বিশ্বাস করলেও এই সন্তুরে বিশ্বাস করতে চায়না। সন্তু মোদি আব্বার কাছে যাচ্ছে শান্ত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৃষ্টির ঋণ....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ রাত ৮:২৭

সৃষ্টির ঋণ....

মধ্য দুপুরে ডেল্টা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সিএনজি, বাইক, উবার কিছুই পাচ্ছিনা। অনেকটা পথ হেটে বাংলা কলেজের সামনে বেশকিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা রিকশা পেয়েছি....ঘর্মাক্ত ষাটোর্ধ কংকালসার রিকশাওয়ালাকে দেখে এড়িয়ে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

হেফাজত ইসলামের মহাসমাবেশ: প্রধান ইস্যু কি কেবল নারী সংস্কার কমিশন বাতিল ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ রাত ১১:১৪


হেফাজত ইসলাম মে মাসের তিন তারিখ এক বিশাল সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে প্রায় বারো দফা দাবী তুলে ধরা হয়। সরকার যদি বারো দফা দাবী মেনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×