আমার খালাতো ভাই ও ভাবীর বিয়েটা পরিবারের বাকি কারও মতো হয় নি। হি ভাইয়া ছিলো কোঁকড়া চুলের ছেলেটা, যে আঁকতে খুব পছন্দ করতো, কিন্তু ক্লাসে খুব একটা ভালো করতো না। সা ভাবী ছিলো ভালো মেয়েটা, যে চারুকলায় ঢুকেছিলো ক্লাসে প্রথম হওয়ার জন্য। হি কিভাবে কিভাবে যেন সা এর প্রেমে পড়ে গেলো, আর সা একটুও বুঝতে পারলো না। একদিন বিকেলে, যখন হি ও সা চারুকলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিচে বন্ধুদের কর্ম কান্ড দেখছিলো আর খুব হাসছিলো, হি একটু হাসি থামিয়ে বললো: তোর চোখগুলা খুব সুন্দর!
তারপর একদিন পাগল ছেলেটা আর ভালো মেয়েটা চুইংগাম চাবাতে চাবাতে বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা টাকা নিয়ে বিয়ে করে ফেললো। যদিও অনেকদিন কষ্টে ছিলো, এখন সা আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ভাবী, বড়দের সবচেয়ে প্রিয় বউ। হি আগে গিটার বাজাতো আর আঁকতো, আর সা আঁকতো আর সাজাতো। এখন ওদের একটা মেয়ে ও দুটো ছেলে আছে, তিনজনই দেখতে অসাধারন রকমের সুন্দর! বড় মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই খুব সুন্দর আঁকে, মেঝো ছেলেটা, রাসিফ, যার বয়স এখন চার কিংবা পাঁচ, বড় হয়ে খুব ভালো কবি কিংবা লেখক হবে। ছোট ছেলেটার প্রতিভা এখনও প্রকাশ পায় নি, কিন্তু ও ভীষণ জেদি, হি ভাইয়ার মতো।
নিচের কবিতাটার সবগুলো ছবি রাসিফের মাথা থেকে এসেছে (আইসক্রীম মেঘ ছাড়া)! আমি শুধু ওর কথাগুলো নিয়ে ছন্দ মিলিয়েছি। ও আমার দেখা দ্বিতীয় ছেলে, যে খুব, খুব ট্যালেন্টেড!
পুকুর নামের বাটির মাঝে ময়লা পানির স্যূপ,
চারিদিকে দারুচিনি দাঁড়িয়ে আছে চুপ;
তুমি যদি সিঁড়ি বেয়ে নেমে যেতে চাও,
ছ'টি পায়ে শুঁড় উচিয়ে পিঁপড়ে হয়ে যাও!
সবচেয়ে বড় মেয়ে পিঁপড়ে কোথা থেকে এলো?
চিবিয়ে সে মশারি আর কম্পিউটার খেলো!
হই হুল্লোড় পড়ে গেলো পিঁপড়ে রাজত্বে -
এত্তো কিছু খেয়ে ফেলে পারেই না নড়তে!
তারপর সেই ছোট্ট ছেলে অবাক চোখে তাকায়,
ভাবনা ভরা মাথাটা একটু খানি ঝাঁকায়,
ইয়া বড় এক কেঁচি খুঁজে নদীতে দেয় ডুব -
সাঁতার কেটে ফেলতে আজ ইচ্ছে করলো খুব!
আর তুমি যদি মেঘগুলোকে ভাবো আইসক্রীম,
আট আনায় কিনতে পারো টিকটিকির কিছু ডিম,
গাছের গুঁড়ি চকলেট হয়ে দেবে আজ ধরা,
মনে মনে লিখবে শুধু অদ্ভুত এক ছড়া।
ছোট ছোট চুল তোমার, ছোট্ট মাথাটাও,
বিরাট বড় মনটা তাতে কিভাবে আঁটাও?