somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাতাল

২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তুই একটা হারামজাদি! তুই একটা স্বার্থপর নারী; তুই একটা নিকৃষ্ট চোরনী। তোর কারণেই আজ আমি ঘুষখোর। বসার ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন চৌধুরী মুর্তজা করিম৷ তারপই শিশুদের মতন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলেন তিনি৷

আরও দু’জন মানুষ আছেন বসার ঘরে। একজন হলেন মিতা চৌধুরী- চৌধুরী মুর্তজা করিম সাহেবের স্ত্রী। অন্যজন মিতার চৌধুরীর ছোট বোন, চৌধুরী মুর্তজা করিম সাহেবের শ্যালিকা। তিনি একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। গরম গরম চিংড়ি কাটলেট খেতে খেতে গল্প করছেন দু’বোন। টিভিতে চলছে রিতার প্রিয় অনুষ্ঠান মিরাক্কেল। তবে টিভির দিকে তাঁদের মনোযোগ নেই। দু’বোন যে বসে বসে অলস গল্প করছেন তাঁদের ভাবসাব দেখে তাও মনে হচ্ছে না। কাটলেট চিবোতে চিবোতে তাঁরা খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছেন। চৌধুরী মুর্তজা করিমের কথাগুলো শুনে তাঁদের কথা থেমে গেল।

স্বামীর কথায় মিতা চৌধুরীকে কিছুটা অাহত মনে হল এবং তাঁকে কিছুটা অপ্রস্তুতও দেখাচ্ছে। ছাদের দিকে তাকিয়ে বললেও চৌধুরী মুর্তজা করিম কথাগুলো তাঁকেই বলেছেন। তা তিনি বলতেই পারেন এবং মাঝে মধ্য বলেনও। স্বামী হিসেবে তারঁ কাছে যৌক্তিক অযৌক্তিক কত আব্দারই করেন মিতা চৌধুরী। সেসব আব্দারের কারণে স্বামী যদি তাকে স্বার্থপর বলেন তাতে তিনি কিছু মনে করেন না। কিন্তু এখন ছোট বোনের সামনে এভাবে বলাতে তিনি কিছুটা আহত এবং কিছুটা অপমাণিতও বোধ করলেন। তিনি তো কাউকে ঘুষ খেতে শিখিয়ে দেন নি। দেশটা তো কোনো ইউটোপিয়া না। এখানে সবাই ঘুষ খায়। তিনি নিজ থেকেই লোভে পড়েছেন, ঘুষ খেতে শুরু করেছেন৷ তবে তিনি কোনো উত্তর দিলেন না। মাতাল মানুষের কথার উত্তর দিয়ে লাভ নেই।

সরকারি কর্মকর্তা চৌধুরী মুর্তজা করিম খুব যে নিয়মিত পান করেন তা না। মাঝে মাঝে সন্ধ্যায়, বিশেষ করে ছুটির দিনের কোনো কোনো সন্ধ্যায় তিনি বোতল, পানি, বরফ সাজিয়ে বসে পড়েন। ভাল ভাল কিছু কালেকশন তাঁর সব সময় থাকে। আজ বিকেলের দিকে একটু হাঁটতে বের হতে চাইলেন। মিতা চৌধুরী বললেন, রিতা তোমার জন্য চিংড়ি কাটলেট বানাচ্ছে। খেয়ে বের হও। কাটলেট তৈরি হতে হতে শুরু হয় বৃষ্টি। তিনি কিছুক্ষণ জানালায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখেন। তারপরই বসে যান বোতল সাজিয়ে৷ মিতা চিংড়ি কাটলেট নিয়ে এলে বলেন অাজ হবে চিংড়ি কাটলেট উইথ হুইস্কি৷

এমনিতে তাদের দাম্পত্যজীবন সুস্থ স্বাভাবিক৷ কেবল মুর্তজা করিম যেদিন মদ গিলেন সেদিনই ব্যাপারটা ঘটে৷ মদ গিলতে গিলতে চৌধুরী মুর্তজার করিমের ভেতরকার বিবেকবোধটা জেগে ওঠে৷ তিনি কান্নকাটি করেন, নিজেকে ঘুষখোর বলে ধিক্কার দিতে থাকেন৷ অনেক সময় গালাগালও করেন স্ত্রীকে৷ তবে অাবার রাতের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যান তিনি৷

স্বামীর এমন অাচরণে স্বভাবতই বেশ অশ্বস্তিতে পড়ে যান মিতা চৌধুরী৷ ছোট বোনের সামনে লোকটা অার কী কী বলে বসেন কে জানে! অশ্বস্তি থেকে বাঁচতে মিতা চৌধুরী রিতাকে বলল, বৃষ্টি থেমে গেছে৷ চল ছাদে যাই৷ ভাল লাগবে৷ রিতাও এখান থেকে বাঁচার পথ খুঁজছিল৷ বলল, চলো অাপু৷

যাও যাও, ছাদে গিয়ে শলাপরামর্শ করো গে দু'বোন৷ ফ্ল্যাট সব ভাইদের নামে কিনলে হবে? বোনের নামেও কিনে দিও একটা৷ যদিও এসব অার ফিরে পাবা না এই জীবনে৷ অাত্মীয়-স্বজন খাবে ঘুষখোরেরও ধন৷ ও মনো রে ... হাঃ হাঃ হাঃ৷ হাসতেই থাকেন চৌধুরী মুর্তজা করিম৷ তাঁর হাসি যেন থামার নয়৷ মিতা রিতা সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করেন না৷ মাতালের কথায় কান দিতে নেই৷ তাঁরা বেড়িয়ে যান ঘর থেকে৷
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৩০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওরা সাতজন - বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে প্রধান অন্তরায় !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১:২৬


সংকট ঘনীভূত; ড. ইউনূস কে ঘিরে একটি চক্র সক্রিয়-শিরোনামে মানবজমিন পত্রিকা একটা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট করেছে। ড.ইউনূস কে ব্যবহার করে ইন্টেরিম সরকারের ভিতরে চারজন ও বাইরে তিনজন এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৩ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০১



ডক্টর ইউনুস এই দেশের ক্ষমতায় আর থাকতে চাচ্ছেন না। তবে এর দায় ভারতের নয়, পলাতক স্বৈরাচারী আওয়ামিলীগেরও নয়। এই দায় সম্পুর্নভাবে এই দেশের বৃহত্তম রাজনৈ্তিক দল বিএনপির। অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের দরীদ্র সমাজ এখনো ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১:৪৪

বেরিয়েছিলাম উত্তরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মানিক মানিক মিয়া এভিনিউ পার হওয়ার সময়ে, খামারবাড়ির সামনে গোল চত্বরে হঠাৎ চোখ গেলো। চত্বর ঘিরে সারি সারি মানুষ শুয়ে আছেন। গত সরকারের আমলে আমার এলাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পিনাকী গং-এর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার ও সামাজিক প্রতারণা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে মে, ২০২৫ ভোর ৫:৪৬


এই পোস্টটি মূলত ঢাবিয়ানের পোস্ট "বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক" এবং জুল ভার্নের পোস্ট "আব তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া!"-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেখা।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওগো ভিনগেরামের নারী, তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি......

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:২৯


সেই ছোটবেলায় আমার বাড়ির কাছেই একটা বুনো ঝোপঝাড়ে ঠাসা জায়গা ছিলো। একটি দুটি পুরনো কবর থাকায় জঙ্গলে ছাওয়া এলাকাটায় দিনে দুপুরে যেতেই গা ছমছম করতো। সেখানে বাস করতো এলাকার শেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×