somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিজানুর রহমান মিলন
আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলন যেন মাছের মায়ের পুত্র শোক!

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দেশে দেশে যতগুলো সামরিক ক্যু হয়েছে এবং সরকার উৎখাত হয়েছে এর ৯৯% সংঘটিত হয়েছে আমেরিকার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ হস্তক্ষেপে। এই পর্যন্ত প্রায় শতাধিক দেশে আমেরিকা সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে রেজিম চেঞ্জে জড়িত ছিল এবং এর মধ্যে অনেক দেশে রেজিম চেঞ্জে জড়িত থাকার কথা আমেরিকা পরবর্তীতে নিজেই স্বীকার করেছে! ক্যু বা রেজিম চেঞ্জের কথা বাদই দিলাম। যেখানে ক্যু কাজ করে না সেখানে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ, সরকারের বিরুদ্ধে মিডিয়ার নিরন্তর অপপ্রচার এবং একসময় সামরিক আগ্রাসনের পথ প্রশস্ত করা ও তা বাস্তবায়ন করা। এসব তো আপনাদের চোখের সামনেই উদাহরণ হিসাবে আছে।

গুপ্ত হত্যায় আমেরিকার জুড়ি এই বিশ্বে দ্বিতীয় কোন দেশ বা কেউ আছে কী? দেশে দেশে প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা এবং সামরিক নায়কদের গুপ্ত হত্যা করার মত ইতিহাস বিশ্বের আর কোন দেশের নেই। প্রতিপক্ষ কোন দেশের অগ্রগতি থামানোর জন্য সেই দেশের এলিট শ্রেণিদের হত্যা এবং বিজ্ঞানী ও বুদ্ধীজীবিদের হত্যায়ও আমেরিকার জুড়ি নেই! দেশে দেশে হত্যা, গণহত্যা এবং দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে মিলিয়ন মানুষ হত্যায়ও আমেরিকার নজির অনন্য!

বিশ্বে আমেরিকার অবস্থান এমনই যে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় এসকল অপরাধ করেও আমেরিকা পার পেয়ে যায়। কারণ বিশ্বে অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রধান মাধ্যম ডলার এবং দেশটির সামরিক সক্ষমতা! আমেরিকার সাম্রাজ্য টিকে আছে এই দুইটি খুটির উপর ভর করে। ডলারকে যদি আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রধান মাধ্যম হিসাবে আজকেই বাদ দেওয়া যেত আগামীকালকেই আমেরিকা বিশ্বে আর দশটা স্বাভাবিক দেশের মত একটি দেশ হত আর পতন হত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের রাজা ও স্বৈরাচার শাসিত দেশগুলোই এর প্রধান বাধা। নিজের গদি রক্ষার নিমিত্তে তারা আমেরিকার সাথে ডিলে আবদ্ধ যে তারা তাদের তেল ডলারে বিক্রি করবে এবং আমেরিকার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা তারাই। যতদিন এই দেশগুলো তাদের তেল ডলারে বিক্রি করবে এবং আমেরিকার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা হয়ে থাকবে ততদিন পর্যন্ত মার্কিন সাম্রাজ্য ক্ষয়িষ্ণু হতে হতে নিভু নিভু করে হলেও জ্বলবে। আর ঠিক এই কারণে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যসহ তাদের বংশবদ শাসকদের শাসন সম্পর্কে কোন উচ্চবাচ্য করে না তা যত নিকৃষ্ট শাসনই হোক না কেন!

তাহলে আমেরিকা গণতন্ত্রের কথা কেন বলে? আমেরিকা গণতন্ত্রের কথা বলে আসলে নিজের স্বার্থ অর্জনের জন্য। আমেরিকার অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র যেমন অস্ত্র তেমনি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বাক স্বাধীনতা এই তিনটিও আমেরিকার অস্ত্র। তাদের অপরাধ ঢাকার জন্য, দেশে দেশে আগ্রাসন সৃষ্টি ও দখল দারিত্বের বৈধতা দেওয়ার জন্য এবং সেই দেশের সম্পদ লুটপাটের বৈধতার জন্য আমেরিকা এই তিনটার কথা বলে। আমেরিকার কথা যে সরকার শুনবে না আমেরিকা শুধু সেই দেশেই এই তিনটা কায়েমের(!) জন্য উঠেপড়ে লাগে। এর সাথে যোগ দেয় আমেরিকার নেতৃত্বে প্রায় পুরো পশ্চিমা বিশ্ব এবং তাদের কর্পোরেট মিডিয়া। এই মিডিয়াগুলো বারবার মিথ্যা ও বানোয়াট কথা প্রচার করতে করতে একসময় অধিকাংশ মানুষের মনে হয় এটাই সত্য! যেমন সাদ্দামের হাতে গণবিধবংসী অস্ত্রের কথা। ইরাক যুদ্ধের পর এখন তারাই স্বীকার করছে এসব মিথ্যা ছিল। তাহলে এই মিথার জন্য যে লাখ লাখ মানুষ মারা গেল, বাস্তু হারা হল, কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হল এবং একটি দেশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হল এর জন্য বুশ, ব্লেয়ার গংদের শাস্তি হল না কেন? এরা অপরাধ করে কিন্তু বেশ কয়েক বছর পর ওয়াইনের বোতলের ছিপি খুলতে খুলতে সেটা এমনভাবে স্বীকার করে যেন তাদের অপরাধের জন্য কিছুই হয়নি!

আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব যদি সত্যি বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয় তাহলে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ আজকে ইউকের কাঠগড়ায় কেন? কেন আমেরিকার হাতে তাকে তুলে দেওয়া ও হত্যার জন্য সকল বন্দোবস্ত করা হয়েছে? জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের অপরাধ হল সে আমেরিকার কুকর্ম ফাঁস করেছে। ইসরায়েলের সকল অনায়, অপরাধ এবং কুকর্মের বিরুদ্ধে পুরো পশ্চিমা বিশ্ব নিরব! শুধু নিরবই নয় রীতিমত ইসরায়েলকে শতভাগ নিরুঙ্কুশ সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যহতভাবে করে যাচ্ছে। এমনকি নিজেরা বাক স্বাধীনতার তল্পিবাহকের ভান করলেও বাস্তবে বাইরের বিশ্বের কোন রাজনৈতিক নেতার তো বটেই এমনকি পশ্চিমা কোন নাগরিক কর্তৃক ইসরায়েলের সমালোচনা তারা সহ্য করতে পারে না। কৃষ্ণাঙ্গ ও আদিবাসীদের ক্ষেত্রে তাদের নির্মমতা সারা বিশ্ব দেখেছে। কিছুদিন আগেও জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গকে আমেরিকার পুলিশ শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। কয়েক মাস আগেও ফ্রান্সে প্রতিবাদীদের নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে ফ্রান্সের পুলিশ। অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ তাদের বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসের অন্যতম নজির!



তবে তারা নিজ নিজ দেশে ডেমোক্রেসি বা প্লুটোক্রেসি বা অ্যারিস্টোক্রেসি নামে বা যে নামেই হোক একটা কার্যকরী তন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে যেটা মাফিয়া তন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। যে মাফিয়া তন্ত্র হয়তো তাদের জন্য ভাল। যেমন হায়েনারা অন্য পশুদের ভক্ষণ করে নিজেরা ভাল থাকে শুধু নয় দলবদ্ধভাবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকে। কিন্তু এতে হায়েনাদের হিংস্র পরিচয়ের কোন ভাটা পড়ে না।

যাইহোক, জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের পাশে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিল ইরানের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহম্মদ মোসাদ্দেক, কঙ্গোর প্যাট্রিস লুবুম্বা, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্নো, চিলির আলেন্দো, মিশরের মুরশিসহ মার্কিন ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাচ্যুত বিশ্বের সকল রাষ্ট্রপ্রধানের ছায়ামুর্তি!

সেই আমেরিকা যখন গণতন্ত্রের জন্য সম্মেলন করে সেটা মাছের মায়ের পুত্রের শোকের মতই দেখায়!
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতায় যাবার আগেই নারী বিদ্বেষ শুরু

লিখেছেন অপলক , ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১০:১১

সংবাদ সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া হলো নারী সাংবাদিককে, যা বললেন মুফতি ফয়জুল করিম

বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের এক নারী সাংবাদিক মনিকা চৌধুরীকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামী দলগুলো নারী বিদ্বেষী - এটা একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১১:২৯

আরবের দেশগুলোকে আমাদের দেশের নারী আন্দোলনের নেত্রীরা দেখতে পারেন না হিজাব ইস্যুর কারণে। অথচ, আরব দেশ কাতার বি,এন,পি'র চেয়ারপারসনকে চার্টারড প্ল্যানে করে দেশে পাঠাচ্ছে। আরো কিছু উদাহরণ দেই। আওয়ামী লীগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী কমিশন বিতর্ক: সংস্কারের ভাষ্যে প্রান্তিকতার অনুপস্থিতি ও বিশ্বাসের সংঘাত

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ ভোর ৪:০৬


বাংলাদেশে নারী-অধিকার প্রশ্নে বিতর্ক নতুন নয়, তবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাবনা যেন একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছুড়ে দিয়েছে। বাল্যবিবাহ, পারিবারিক আইন, নারী-পুরুষের ভূমিকা ও ধর্মীয় বিধানের নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীনীতি ইস্যুতে তথাকথিত চুশীলদের নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ সকাল ৮:৫৩

নারীনীতি ইস্যুতে তথাকথিত চুশীলদের নিয়ে কিছু কথা



ইদানিং নারীনীতি নিয়ে দেশে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। আলেম-ওলামা এবং ইসলামপন্থীরা যখন পাশ্চাত্যঘেঁষা নারীনীতির সুপারিশকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন, তখনই মূলত এই আলোচনার বিস্তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারদের হতে হবে দেশের চিন্তাশীল সমাজের অগ্রনায়ক

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৬

আমার ৭ বছর ১১ মাসের ব্লগিং ক্যারিয়ারে ১০,০৭৩টি কমেন্ট করেছি। প্রতি পোস্টে গড়ে যদি ২টা করে কমেন্ট করে থাকি, তাহলে, আমি কম করেও ৫০০০টি পোস্ট পড়েছি। এর অর্থ, বছরে প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×