আরব আমিরাতের পর ইসরায়েলকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বীপ রাষ্ট্র বাহরাইন। অবশ্য ঘোষণা দেওয়ার সামর্থ্যটুকুও তাদের নেই। ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্প নিজেই এই ঘোষণা দিয়েছেন। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য চমক দেখানোই তার উদ্দেশ্য। কারণ ইসরায়েলের প্রতি কার ভালবাসা কতটুকু তার পরীক্ষা দিতে হয় আমেরিকার কংগ্রেস/সিনেট এবং প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের। ওমান, সুদান ও সৌদি আরবও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার লাইনে আছে।ইসরায়েলের সাথে এদের পরকীয়া চলতেছিল বহুদিন থেকেই। ট্রাম্প চমক দেখানোর জন্য ভাবলেন আর পরকীয়া নয় এবার বিয়ে। যেই ভাবা সেই কাজ। আরব আমিরাত ও বাহরাইনকে দিয়ে শুরু হল। সৌদি আরব যেহেতু পালের গোদা তাই সম্ভবত সবার শেষেই সৌদি আরব ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিবে।
বাহরাইন সৌদি আরবের স্যাটেলাইট রাষ্ট্র। নিশ্চিৎভাবে সৌদির অনুমতি নিয়ে ট্রাম্পের নির্দেশেই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে বাহরাইন। মূলত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাহরাইন, ওমান ও সুদানের দ্বারা মঞ্চ প্রস্তুত করতেছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের ইসরায়েলকে স্বীকৃতি সম্ভবত এবছর নাও হতে পারে। ট্রাম্পের পুনরায় জয়ের অপেক্ষায় রয়েছে সৌদি আরব। ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হলে ইসরায়েলকে সৌদি আরবের স্বীকৃতির পাশাপাশি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই (এমবিএস) হবেন সৌদি আরবের পরবর্তী রাজা! আর ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত হতে না পারলে এমবিএস এর রাজা হওয়ার স্বপ্ন সম্ভবত তিমিরই থেকে যাবে।
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে ট্রাম্পের এরকম আরো কিছু চমক হয়তো থাকবে। চমক যাই থাক ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা সত্যি ক্ষীণ। সমস্ত হিসাব নিকাশ বলছে ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত হতে পারবেন না। এইজন্য ট্রাম্প আরব মিত্রদের দ্বারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতির নাটক করে ইহুদি লবির শতভাগ সমর্থন আদায় করতে চাচ্ছেন। কারণ মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও প্রশাসন যন্ত্র সম্পূর্ণরুপে ইহুদিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু কথা হল এইসব চমক তাকে নির্বাচনের দৌড়ে এগিয়ে রাখতে কতটুকু ভূমিকা রাখবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষে। কারণ মিত্র-মিত্র শান্তি চুক্তির তেমন কোন গুরুত্ব নেই। প্রকৃত অর্থে আমেরিকার আরব মিত্রদের কাছে ইসরায়েলের স্বীকৃতি আদায় হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোন বিষয় নিয়। মার্কিন আরব মিত্রদের সাথে ইসরায়েলের গোপন সম্পর্ক বহুদিনের পুরনো যা আগেই বলেছি। ১৯৭৩ সালে সর্বশেষ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পরেই এই সম্পর্কের শুরু। তাই আমেরিকার সবাই জানে মার্কিন বংশবদ এসব আরব শাসকদের দ্বারা ইসরায়েলের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ট্রাম্পকে তেমন বেগ পেতে হয়নি। ট্রাম্পের একটা নির্দেশই যথেষ্ট হয়েছে। কারণ আরব রাজতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শাসকেরা ক্ষমতায় শুধুমাত্র টিকে আছে আমেরিকার সমর্থনের কারণে। তাদের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণরুপে আমেরিকার হাতে বন্দি। আমেরিকাই হল তাদের কর্তা। আর কর্তার ইচ্ছায় কর্ম।
ইসরায়েলকে স্বীকৃতির মাধ্যমে আরব শাসকদের অর্জন যে একেবারেই শূন্য হবে তা নয়। তবে এর মাধ্যমে আরবরা জাত ভাই ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও স্বপ্ন পুরোপুরি বিসর্জন দিল। ইসরায়েলকে স্বীকৃতির মাধ্যমে আরব রাজা ও স্বৈরাচারী শাসকগণ মিত্র ইসরায়েল ও আমেরিকার তৈরি নিরাপত্তা বলয়ে আরো শক্তপোক্তভাবে আবদ্ধ হল। এর মাধ্যমে আরব আমিরাত ও সৌদি আরব প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সহযোগী হিসাবে আবির্ভূত হবে এবং এরফলে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরো স্পষ্ট হবে। এই মেরুকরণের প্রথম লক্ষ্য বস্ত ইরান এবং পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু সম্ভবত তুরস্ক।
১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর ইসরায়েলের পাশাপাশি আরব রাজা ও স্বৈরাচারী শাসকেরা ইরানকেই তাদের অস্তিত্বের প্রধান হুমকি মনে করে। সে লক্ষ্যেই কিন্তু ইরাক-ইরান যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা শক্তি ও আরবদের ইরানের সাথে বিরোধের সূত্রও এখানেই নিহিত। অন্যদিকে যদিও তুরস্কের সাথে ইসরায়েলের গভীর সম্পর্ক আছে তথাপি তুরস্ক এই মেরুকরণের বাইরে নয়। কারণ সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের লক্ষ্য ইসরায়েলের সহযোগী হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে একক আধিপত্য বিস্তার করা এবং শত্রুদের শায়েস্তা করা বিশেষ করে ইরানকে। ইরানের পাশাপাশি তুরস্কও তাদের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। সিরিয়া, লিবিয়া, কাতার ও ইয়েমেন যুদ্ধের ঘটনাবলী সেইদিকে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ইসরায়েলকে অবম্বন করে আরব রাজা ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকারদের টিকে থাকার চেষ্টাই হবে সম্ভবত সর্বশেষ চেষ্টা।