somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিজানুর রহমান মিলন
আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইরান সফরের আড়ালে

০৪ ঠা মে, ২০১৬ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাই ইরান সফরে গেছেন।সাথে নিয়ে গেছেন উচ্চ পর্যায়ের বিশাল বাণিজ্য প্রতিনিধি। করবেন গুরুত্বপূর্ণ নানান অর্থনৈতিক চুক্তি। ১৯৬২ সালে ইরানের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর এটাই কোনো দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইরান সফর। দৃশ্যত ইরানের সাথে দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার কথা বললেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইরান সফরকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ কোরিয়া হল মার্কিনিদের অন্যতম বন্ধুবর রাস্ট্র। উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার যুদ্ধ, উত্তেজনাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই কোরিয়ার বিরোধ বাধলে যুক্তরাস্ট্র সবসময় দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষাবলম্বন করেছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা ও সামরিক শক্তি মূলত যুক্তরাস্ট্রের উপরই নির্ভরশীল। বিপরীতে ইরান হল একটি মার্কিন বিরোধী রাস্ট্র এবং সেই সুবাদে মার্কিন বিরোধী রাস্ট্রগুলোর সাথে ইরানের গভীর অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আছে। দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের বন্ধু রাস্ট্র ও উত্তর কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের শত্রু রাস্ট্র।দুই কোরিয়ার মধ্যকার বিরোধ কারো অজানা নয়। উত্তর কোরিয়া তার অনিয়ন্ত্রিত সামরিক ও পরমানু কর্মসুচির কারণে জাতিসংঘ ও যুক্তরাস্ট্রের অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন কঠোর নিষেধাজ্ঞার সম্মুখিন। সেইসব নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠ হল দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া চায় উত্তর কোরিয়াকে বাগে আনতে কিন্তু উত্তর কোরিয়া স্বভাবতই বেয়াড়া রাস্ট্র। মার্কিন বিরোধী রাস্ট্র হিসাবে উত্তর কোরিয়ার সাথে ইরানের গভীর সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে।শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু-এই নীতিতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ ইরান ও উত্তর কোরিয়া।পশ্চিমারা দাবি করে থাকে ইরানের ব্যালাস্টিক মিসাইলের অগ্রযাত্রা শুরু হয় উত্তর কোরিয়ার দেওয়া প্রযুক্তির হাত ধরে।আজকে ইরান ব্যালাস্টিক মিসাইল প্রযুক্তিতে অনেকদূর এগিয়ে গেছে যার বেশিরভাগই নাকি অবদান উত্তর কোরিয়ার তেমনি উত্তর কোরিয়ার মহাকাশ কর্মসুচিতে ইরানেরও ব্যাপক অবদান আছে বলে পশ্চিমা মিডিয়া দাবি করেছে। শুধু তাই নয় ইরান ও উত্তর কোরিয়া দুটি দেশই পরমানু কর্মসুচির কারণে জাতিসংঘ ও মার্কিন কঠোর নিষেধাজ্ঞার শিকার। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠতে দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। একে অপরের পাশে দাড়িয়েছে দুটি দেশ। যদিও পশ্চিমাদের সাথে পরমানু চুক্তি করে ইরান আপাতত নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই পেয়েছে কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পিছু ছাড়েনি যুক্তরাস্ট্র। ইরানের ব্যালাস্টিক মিসাইল কর্মসুচির কারণে ইরানের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা শুরু করেছে যুক্তরাস্ট্র। এই নতুন ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি কতদূর পর্যন্ত যায় তা দেখতে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।


যাইহোক, ইরানের উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরপরই ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন নেতারা ঘন ঘন ইরান সফর করলেও কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইরান সফরকে দেখা হচ্ছে ভিন্ন দৃষ্টিতে। এরকম পরিস্থিতিতে ইরানের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির পিছনের রহস্য কি তা নিয়ে বিশ্লেষকেরা শুরু করেছেন নানান বিশ্লেষণ।অবশ্য আগে থেকেই ইরানের তেলের অন্যতম ক্রেতা ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। তারপরেও ধারণা করা হচ্ছে ইরানের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার পিছনের উদ্দেশ্য হল উত্তর কোরিয়াকে ইরান থেকে বিচ্ছিন্ন করা। এই মূল নীতিকে লক্ষ্য করে ইরানের সাথে সম্পর্ক গভীর করতে মনোযোগী হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাই। তিনি সে কথা প্রকাশ্যে বলেছেনও। উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রন করতে তেহরানে তিনি ইরানি নেতাদের সহায়তা কামনা করছেন। এমনকি ইরানি প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকে তিনি উত্তর কোরিয়ার উপর জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ইরানের সহায়তা কামনা করেছেন। জবাব ইরান বলেছেন, তারা পরমানু অস্ত্রের বিরোধী এবং বিশ্ব থেকে পরমানু অস্ত্রের বিলুপ্তি চায়।অবশ্য ইরান তার পরমানু কর্মসুচি নিয়ে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় একথা আগে থেকেই বলে আসছে কিন্তু উত্তর কোরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ইরান দক্ষিণ কোরিয়াকে কতটুকু সহায়তা করবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। যেখানে ইরান নিজেই একই কারণে জাতিসংঘ , যুক্তরাস্ট্র ও ইউরোপের অনৈতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার শিকার। ইরান যদি উত্তর কোরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়াকে সত্যি সত্যি সহায়তা করে থাকে তা হবে সত্যি দু:খজনক। কেন দু:খজনক তা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই তবে আমরা আশা করতেই পারি ইরান তা করবে না। কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়ার হাতে গোনা যে ক’টি বন্ধু রাস্ট্র আছে তাদের থেকে উত্তর কোরিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে উদ্যেগী হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাই। তিনি উত্তর কোরিয়াকে বাগে এনে মার্কিনিদের জন্য আর একটি সেবাদাসী সৃষ্টি করতে চান। তিনি কতটুকু সফল হবেন তা সময় বলে দিবে। তবে উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া অনেকাংশে দায়ী।বিশ্ববাসী জেনে গেছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে কে স্বাধীন আর কে পরাধীন। তাই যুক্তরাস্ট্রের সহায়তায় উত্তর কোরিয়ার উপর চাপিয়ে দেওয়া দু:খ দুর্দশার জন্য ইতিহাস দক্ষিণ কোরিয়াকে ক্ষমা করবে না।মার্কিন অন্যতম প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরবকে নিরাপত্তা দিচ্ছি আমরা। তাদের উচিৎ এজন্য আমাদেরকে তাদের রাজস্বের ভাগ দেওয়া। একটি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন দেশ ও জাতির জন্য এই কথা যে কত বড় লজ্জাজনক তা কি প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাই উপলব্ধি করতে পারেন ?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ সকাল ১০:৩০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×