somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিথ্যাবাদীরা সত্য প্রত্যাখ্যানের যে কৌশল অবলম্বন করে

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সত্য মিথ্যার চিরকালীন দ্বন্দ্বে মিথ্যাবাদীরা কি কৌশলে প্রভাব খাটিয়ে কিছুদিনের জন্য টিকতে পারে তার নিয়ে ওস্তাদ নোমান আলী খান কুরআন হাদীস ঘেটে তাদের ৫টি কৌশলের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এক খুৎবাতে। লিখা একটু বড় হতে পারে একটু ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইলো।

মিথ্যাবাদীদের কৌশল গুলো বলার আগে দেখি আল্লাহ সত্যকে কিভাবে চিত্রায়িত করেছেন কুরআনে। সত্য সবসময় আগ্রাসী আর মিথ্যাকে সামনে পেলেই চুরমার করে ফেলে:

“আমরা সত্যের দ্বারা মিথ্যার উপর আঘাত হানি, ফলে তার মগজ চুরমার হয়ে যায়, তখন দেখো! তা অন্তর্হিত হয়। আর ধিক তোমাদের প্রতি! তোমরা যা আরোপ কর সেজন্য।“

সুরা আম্বিয়া ১৭

সত্যের নিজের কোন অস্ত্র লাগেনা। মিথ্যাকে মারার জন্য সত্য নিজেই এক অস্ত্র। কোন বিষয়ের সত্য মিথ্যা একসাথে রাখলে সত্য একদম নিঃশেষ করে দেয় মিথ্যা কে। সত্য খুবই আগ্রাসী এ ব্যাপারে।
সত্যের আগমনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তারাই হয় যারা এতদিন মিথ্যা কিছু তথ্য আর বিশ্বাসের উপর ভর করে বিশাল বিশাল ইমারত তৈরি করে নিয়েছে আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম অন্ধ ভাবে তা মেনে চলছে।

এইসব অহংকারী মিথ্যাবাদীরা কিভাবে সত্যকে নিশ্চিতভাবে জানার পরও প্রথম যে কৌশল এর আশ্রয় নেয় তা হল By Force বা পেশী শক্তি আর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে। যেমন

ছোট দুর্বল এক ছেলে তার এক বড় ভাইকে বির বির করে বলল:
২+২=৪
বড়ভাই বলে উঠল ভারী গলায় “না ২+২ =৫”
“কিন্তু দেখেন দুই হচ্ছে এক যোগ এক আর...”
“থাম, আমি বলছি ৫ , তাই ৫ এখন অফ যাও”

ইব্রাহীম (আঃ) যখন তাদের গোত্রদের বলল তোমরা ভুল ইলাহদের প্রার্থনা করছে আর জবাবে ওরা বলে
তাই না? ওকে জীবন্ত পুড়াও।
শুধু জোর খাটিয়ে পেশী শক্তি আর হুংকার দিয়ে সত্যকে দূরে ঠেলে দেয়।

দ্বিতীয় কৌশল হল চরিত্র হনন। আগের উদাহরণে আসি।

-“জান ভাইয়া ২+২=৪”
“তাই না? তুমি তো বাইট্টা, ঠিকমত হাটতেও পারনা আর আমারে শিখাইতে আইসো না?”

মুসা (আঃ) যখন সত্যের দাওয়াত নিয়ে আসল তখন ফিরআউন বলত - ও আর কি দাওয়াত দিতে আসছে? ও নিজেও একজনকে খুন করে পালিয়ে গেছিল আর এখন যাদু করে বেড়ায়। কি আশা কর আর ওর থেকে?

এইভাবে যখন কেউ সত্য কথা সম্মুখে বলে তখন যে লোকটি কথাটি বলল তাকে নিয়ে, তার চরিত্র নিয়ে এরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

তৃতীয় কৌশল হল বিশাল এক জনসমাগমের আয়োজন করা আবেগী মানুষদের নিয়ে।

এটি হল ফিরাউনের কৌশল। মুসা (আঃ) কে হেনেস্তা করার জন্য নিজের মানুষদের নিয়ে বিশাল এক জনসমাগম করেছিল।মুসা(আঃ) তার মোজেজা দেখাবেন আর ফিরাউনের যাদুকরেরা যাদু দেখাবে। মুসা (আঃ) যাই বলবেন আর যাই করবেন আর তখনই লোকেরা Boooooooooo করে উঠবে। সত্য কথা হলেও। মোটামুটি এই হল কৌশল।

পরে অবশ্য যাদুকরেরা ঐ জনসমাগমেই ঈমান আনলেন আর ফিরাউন যাদুকরদের বলল আমি জনতাম তোমরা এইখানে আসার আগে মুসার সাথে গোপন আলাপ করে এসেছিলা!

যখনই যুক্তিতে পেরে উঠেনা, তখনই এই সমমনা জনতার প্রয়োজন হয় আর এতেই প্রমান হয় তাদের যুক্তির দৌড় কতদুর। এই জনতার কোন একজনের সাথে যদি ব্যক্তিগত কথা বলা যায় দেখা যাবে যুক্তিসহ কথা বার্তা হচ্ছে কিন্তু ঐ যখনই জনসমুদ্রে যায় তখন আর কিছুর ধার ধারে না, যা বলছি তাই, তুমি ভণ্ড!

চতুর্থ কৌশলটা একটু গভীর আর ভয়ংকরও বটে। তা হল সে দাওয়াত নিয়ে আসছে সত্যের উপর তার নিজের আনুগত্যের প্রশ্ন তুলবে তারা। ইমোশনাল ব্ল্যাক-মেইল করা। যেমন

একজন তার বাবাকে বলল, বাবা তোমার আয়ে তো সুদ জড়িত একটু ...
এইতো শুরু হল বাবার,

“তোমাকে বড় করছে কে? এতদিন দিনের পর দিন কষ্ট করে খাওয়ছি পড়াইছি আর এইসব কথা শুনাও না এখন? কি পালতেছি আমি!!?? খুব ইসলাম পালন করতেছ তাই না? দেখতেছিত কেমন ইসলাম। ইসলাম এই শিখাইছে না? বাবা মাদের সাথে এই আচরণ শিখছ না?......”

যাই হোক ছেলে যে সুদের প্রসঙ্গ তুলে আনলে সেটি এই কৌশলে ঢাকা পড়ে গেল।

নবী (স) কে উদ্দেশ্য করে কাফেররাও বলত যে সে নাকি শান্তি আনতে চাচ্ছে অথচ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আসার পর অশান্তি আরও বেড়ে গেছ। ভাই-ভাই, স্বামী স্ত্রী, বাবা-ছেলে বন্ধন ভেঙ্গে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

আর সর্বশেষ আর সবচেয়ে জনপ্রিয় কৌশল হল ভুলভাবে উদ্ধত করা। সোজা বাংলায় তেনা পেঁচানো। ফেসবুকের জামানায় এটা তো আরও বেশি হয়।
যেমন কেউ একজন বলল তুমি যেটা করছ ঐটা তো হাদীসে নিষেধাজ্ঞা আছে।
অন্যজন বলল ঐ হাদীসটা কে বর্ণণা করেছে?
জানি না
ও, জানও না? (দলবল নিয়ে হেসে উঠল) আর হাদীসের কথা বল না??

আর কেউ একজন কমেন্ট করল। আর অন্যজন আসে মুল কমেন্ট নিয়ে কিছু না বলে কমেন্টের বানানে কি ভুল হল আর অন্য প্রসঙ্গ টেনে এনে মুল কথা থেকে অনেক দূরে সরে এসে পেঁচাল পাড়ে।

এই হল মোটামুটি কৌশল গুলো। সত্য আসার পর মানুষ কেন তা অস্বীকার করে এই সব কৌশলের আশ্রয় নেয় তার কারণ বিশ্লেষণ করলে একটাই উপসংহার আসে। তা হল মানুষের Ego বা অহংকার।


##নোমান আলী খানের Quranic Imagery লেকচার অবলম্বনে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও আমার ভাবনা

লিখেছেন মেহেদী তারেক, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৪০

অবশেষে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হলো
আমি সবসময়ই প্রজ্ঞাপন দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে ছিলাম। কারণ, বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী এখনো দলটিকে সমর্থন করে। এত বড় একটি জনগোষ্ঠীর মতামত কিংবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিষিদ্ধ নয়, শুধু নড়াচড়া বন্ধ: আওয়ামী লীগ, ‘কার্যক্রম’ ও বিরোধীদের বিভ্রান্তির রাজনীতি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই মে, ২০২৫ রাত ১:৫২


“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে”—এই লাইনটি ফেসবুকে ঝড় তুলেছে, চায়ের কাপে তুফান এনেছে, এবং কিছু বিরোধী রাজনীতিকের মুখে সাময়িক হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু একটু থামুন ! খেয়াল করুন: বলা হয়েছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঁচলে বাঁধা সংসার

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১১ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০



আমি তখন কলেজে পড়ি। সবেমাত্র যৌথ পরিবার ভেঙে মায়ের সঙ্গে আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হয়েছে। নতুন সংসার গুছিয়ে নিতে, মা দিনের প্রায় সবটা সময় ঘরকন্নার কাজে পার করে দিতেন। ঘরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫



কেন জানি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছা করছে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। হাতে থাকবে চাবুক। যেখানে অন্যায় দেখবো লাগাবো দুই ঘা চাবুক। সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

লিখেছেন নতুন নকিব, ১১ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×