১. বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব: ৭০ হাজার বছর পূর্বে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে বিপুল পরিবর্তন সাধিত হয়। এর ফলে মানুষের ভাষার বিকাশ ঘটে এবং মানুষ জটিল সামাজিক বাস্তবতা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলে। এসব উন্নতিই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে তুলে।
২. কৃষি বিপ্লব: কৃষি বিপ্লবের ফলে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ার কারণে জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু খাদ্যে পুষ্টিগুন হ্রাস পায় কারণ তারা একই ধরণের শস্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। সেই থেকে ব্যক্তিগত সম্পদ, পারিবারিক উত্তরাধিকার এর ধারণার উদ্ভাব হয়। কৃষি বিপ্লবের ফলে মানুষ প্রথম ভবিষৎ এব ভাবনা ভাবতে শুরু করে। তারা শস্য মজুদ করে। এর পূর্বে মানুষ দিনের খাদ্যের চাহিদা দিনেই মেটাতো।
৩. বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান: বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লবের প্রায় ৫৮ হাজার বছর মানুষ শিকারী সংগ্রাহক ছিল কৃষি বিপ্লবের সুচনার আগে। হোমো সেপিয়েন্স এর সবচেয়ে লম্বা সময় যেহেতু শিকারী সংগ্রাহ সমাজে বাস করেছে তাই মানুষের আচার আচরনের বৃহৎ অংশই সেই প্রবৃত্তির দ্বারা চালিত হয় অবচেতন মনেই। যেমন- এখন খাদ্যের অভাব না থাকলেও আমার উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন খাবার খেতে বেশী পছন্দ করি।
৪. বৈজ্ঞানিক বিপ্লব: বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ফলে পুরাতন ধ্যান ধারনা ও প্রথাকে পিছনে ফেলে চিন্তা, পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষনের মাধ্যমে বাস্তবতা বিচার শুরু হয়। যা সামাজিক বাস্তবতার ব্যপক পরিবর্তন ঘটায় এবং আধুনিক পৃথীবির ভিত রচনা করে।
৫. কাল্পনিক বাস্তবতা: মানুষের সামগ্রিক বিশ্বাস, পুরাণ ও কাহিনী সামাজিক বাস্তবতা তৈরী করে। এই কাল্পনিক বাস্তবতা মানুষকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসে এবং সমাজ ব্যবস্থা পরিচালনা করতে সহায়তা করে। মানুষ হয়ে উঠে সামাজিক জীব। ধর্মীয় ও সামাজিক নানা ধরনের একই গল্পে বিশ্বাস রাখার কারেণে মানুষের মধ্যে পারস্পারিক বিশ্বাস, আস্থা ও সহযোগীতার মনোভাব জন্ম নেয়। সবাই একই গল্প এবং কল্পিত সামাজিক বাস্তবতায় বিশ্বাস রাখে বলেই টাকা, সম্রাজ্য ও ধর্ম এর উদ্ভব হয় এবং নানান সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক সংস্থা ও সংগঠন গড়ে উঠে। টাকা মানুষের অর্থনৈতিক লেনদেন এ গতি আনে। সম্রাজ্য নতুন সভ্যতা তৈরী করে। ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষকে একত্রিত রাখে। টাকা, সম্রাজ্য ও ধর্মের কারণে মানুষের সভ্যতার উন্নতি ঘটতে থাকে।
৬. জ্ঞান বৃক্ষ ও জ্ঞানের প্রসার: মানুষ নানা বিষয়ের জ্ঞান নানা দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করে নতুন নতুন অন্তঃদৃষ্টি তৈরী করে এবং সেই জ্ঞান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রসার লাভ করে। এই প্রক্রিয়ার মানুষ পূর্বপ্রজন্মের জ্ঞানের সাথে নিজেদের অন্তর্দৃষ্টি যোগ করে ক্রমাগত উন্নতি বজায় রেখেছে।
৭. বাস্তসংস্থানের ও খাদ্য শৃংখল: মানুষের খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য অনেক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। আগুন আবিষ্কারের ফলে যা মানুষের খাদ্য নয় তাও মানুষ নিজেদের খাদ্যে পরিণত করেছে, ফলে খাদ্য শৃংখল নষ্ট হয়েছে এবং অনেক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। নগরায়নের ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণী তাদের আবাস হারিয়েছে। মানুষ অন্য প্রাণীদের উপর পূর্ণ কতৃত্ব অর্জন করেছে। নিজেদের জন্য উপকারীদের প্রাধন্য দিয়ে বাকিদের যথাসম্ভব বিনাশ করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:২৭