somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাজী মেহেদী হাসান
আমি বাই ব্লাড বাংলাদেশি। কারো মাস্তানি ভালো লাগে না, কিন্তু সহ্য করি। সবসময় ভাবি: আহা, সবাইকে যদি মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিতে পারতাম। আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনর্থক একটা বিষয় নিয়ে পিএইচডি করছি।

কথা দিয়েছেন রাইট থমসন

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তিনি খেলোয়াড় নন। কিন্তু তাকে বলা হয় স্পোর্টস সেলিব্রেটি। এমন বিখ্যাত যে তাকে দেখলেই হাজারো মানুষ সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তিনি হলেন রাইট থমসন। ইএসপিএন ম্যাগাজিন, অনলাইন ও টেলিভিশনের জন্য সারা দুনিয়া ঘুরে খেলাধুলার খবর সংগ্রহ করেন তিনি। এই পৃথিবীর অন্যতম সেরা ক্রীড়া লেখক বলা হয় তাকে। খেলাধুলা জগতের প্রায় সব কিংবদন্তিকে নিয়ে বড় বড় স্টোরি লিখেছেন। তিনি তার কলমের কালিতে আরো রঙিন করেছেন বস্কার মোহাম্মদ আলী, বাস্কেটবলের মাইকেল জর্ডান, গলফার টাইগার উডস, ফুটবলার নিওনেল মেসি, ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকর সহ অনেক কিংবদন্তির বর্নাঢ্য জীবন।

গত এপ্রিল মাসে রাইট থমসন এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অক্সফোর্ড শহরে, ইউনিভার্সিটি অব মিসিসিপিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা স্কুলের আয়োজনে। নন ফিকশন লেখকদের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার একটি প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে, স্কুল । থমসন এসেছিলেন এর একটিতে যোগ দিতে। আমেরিকান সাংবাদিকতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্পোর্টস রিপোর্টার হওয়ার আগ্রহ বেশি। মি. থমসন তাদের কাছে পরম আদর্শ। এজন্য সাউদার্ন জার্নালিজম সেন্টারের মিলনায়তনটি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যেই তার জন্ম। নিজের মাটিতে দাড়িয়ে নিজের এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছিলেন মাঝে মাঝেই।

থমসন বলছিলেন, আমি কোনদিন ভাবিনি স্পোর্টস রিপোর্টার হবো। ইউনির্ভাসিটি অব মিসৌরিতে পড়ার সময় স্থানীয় এক সংবাদপত্রে যোগ দিই। সম্পাদক আমাকে একটি বাক্সেটবল টূর্নামেন্ট কভার করতে পাঠালেন। এর পর থেকে আমি স্পোর্টস রাইটার হয়ে গেলাম।

কেন তার লেখা মানুষ এক নিঃশ্বাসে মানুষ পড়ে শেষ করে? প্রশ্ন ছিল রাইট থমসনের কাছে। “ আমি বিখ্যাত লোকদের ছোট ছোট আর সাধারণ আনন্দ, দুঃখ, ইচ্ছা তুলে আনি। আর সাধারণ লোকজনের বড় বড় অর্জন, প্রত্যাশা। আমার মনে হয়, মানুষ এগুলোই জানতে চায়”।

আমি অনুষ্ঠানটি যখন দেখছিলাম তখন মি. থমসন সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না। আমি ভাবছিলাম এই রিপোর্টারকে নিয়ে মানুষের এত উৎসাহ কেন? পরে জানলাম মাইকেল জর্ডান, টাইগার উডস—এরা আমেরিকানদের কাছে ঈশ্বরের মতো। তাদের কাছাকাছি যে মানুষটা যেতে পারে—সে মানুষ সর্ম্পকে তাদের কৌতুহল খুব স্বাভাবিক।

অনুষ্ঠান শেষে মি. থমসন অটোগ্রাফ দিতে বসলেন। বিভিন্ন খেলোযাড় কিংবদন্তিদের নিয়ে লেখা তার নতুন বই ‘দ্যা কস্ট অব দিস ড্রিমস ‘ এর কয়েকশ কপি মুর্হুতেই হাওয়া হয়ে গেল। বইটি লেখা হয়েছে উসাইন বোল্ট, মাইকেল জর্ডান, টাইগার উডসের মতো সেলিব্রেটিদের স্ট্রাগল নিয়ে। পাশাপাশি বাজিকর, জুয়াড়ি ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের খপ্পরে পড়ে খেলোয়াড়দের জীবন ও খেলার সৌন্দর্য্য কিভাবে নষ্ট হচ্ছে তার প্রামাণিক বিবরণ থমসনের বইটি। লবিতে অটোগ্রাফ ও সেলফির ভিড়টা যখন হালকা হলো, তখন আমিও এগিয়ে গেলাম পরিচিত হতে। আমার পরিচয় দিয়ে বললাম, তুমি তো অনেক বড় স্পোর্টস রিপোর্টার, ক্রিকেট সর্ম্পকে কি জানো?

আমি প্রশ্নটা এজন্যই করলাম কারণ আমেরিকানরা ক্রিকেট সর্ম্পকে খুব সামান্য জ্ঞান রাখে। গত একবছরে আমি কয়েকজন আমেরিকান স্পোর্টস রিপোর্টারের সাথে পরিচিত হয়েছি যাদের ক্রিকেট নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। অন্যদিকে আমি বেসবল, বাস্কেটবল, আমেরিকান ফুটবলে আগ্রহ পাইনা। ফলে সেই সব রিপোর্টারের সাথে আড্ডা জমে না।

আমার প্রশ্নের জবাবে থমসন যে উত্তর দিল, তাতে আমার দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হলো। তিনি বললেন, ‘’ ক্রিকেট হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় জনপ্রিয়তম খেলা। এই জনপ্রিয়তাকে পুজি করে আইসিসি বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল হয়ে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান। ভারতের বিসিসিআই, পাকিস্তানের পিসিবি, ইংল্যান্ডের ইসিবি বা তোমাদের বাংলাদেশের বিসিবি—সবগুলোই এক একটা দুর্নীতির আখড়া।“

এবার আমি তার সাথে কথা বলার আগ্রহ পেলাম। কারণ তিনি একমাত্র আমেরিকান যাকে আমি পেলাম—তিনি ক্রিকেটকে আমার চেয়ে ভালো জানেন। আমার সম্পুরক প্রশ্ন, কেন তুমি ঢালাওভাবে দোষারোপ করছো?

থমসন হাসলো তারপর বললো, ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে--প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন চরিত্র নেই। নির্দিষ্ট কাঠামো নেই। যখন যা খুশি, তাই করছে। নিজেদের স্বার্থে এরা যে কোন সময় যা খুশি করতে পারে। এরকম আর অন্য কোন সংস্থায় তুমি খুজে পাবে না। এদের সব নিয়ম খেলার মাঠে, মাঠের বাইরে ক্রিকেট পরিচালনাকারীদের কোন নিয়ম নেই।

আমরা ক্রিকেট খেলা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি কখনো নীতি নিধারকদের নিয়ে ভাবিনি। থমসন বললেন, আমি ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ কভার করতে তোমাদের বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। ক্রিকেটের প্রতি এত ভালোবাসা-সারা বিশ্বে আমি কোথাও দেখিনি।

থমসন জানালেন, তিনি সাধারণ বাস্কেটবল, বেসবল আর ফুটবলের সংবাদ লেখার পাশাপাশি, ইএসপিএন ম্যাগাজিনে ক্রীড়া জগতের সেলিব্রেটি ও স্পোর্টস জগতের দুর্নীতি নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন। তিনি খেলোয়াড়ের সাক্ষাৎকার নেয়ার চেয়ে তার আশেপাশের লোকজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে স্টোরি লিখেন। গলফার টাইগার উডস, তাকে সাক্ষাৎকার দেননি। তাতে কি হয়েছে, উডসের বাবা, বোনসহ অসংখ্য লোকজনের সাথে কথা বলে স্টোরি লিখেছেন থমসন। একজন সাংবাদিকতার শিক্ষক জানালেন, থমসনের লেখা এত জনপ্রিয় যে, তার ইএসপিএন ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যায় ছাপা হয়। আর তার লেখা ছাপা হলে ম্যাগাজিন বিক্রি অনেকগুন বেড়ে যায়।

শচীন টেন্ডুলকর নিয়ে লিখতে গিয়ে কয়েকমাস ধরে ভারতের অনেক মানুষের সাথে কথা বলেছেন। তিনি তুলে এনেছেন এক সাধারণ শচীনকে, যে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করেন। তিনি হোটেলে যে স্যুট বুক করেন, এক কক্ষে থাকে তার পুজা অর্জনার বিগ্রহ। অন্য কক্ষে তার সাথে থাকে আইফোন-আইপ্যাড। পশ্চিমা সাংবাদিক থমসনের চোখে এটা শচীনের জীবনের বৈপরীত্য। আমি থমসনকে বললাম, পশ্চিমে যে রাতভর পার্টি করে সে হয়ত চার্চে যেতে আগ্রহী নয়। কিন্তু আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষ ধর্ম-আধুনিকতার সমন্বয় করে নিয়েছে। আমি জানি, ও অনেক পড়াশুনা করে। আমার সাথে তর্ক করতে পারতো। তা করলো না। ওর পশ্চিমা ভদ্রতা হলো, অন্য সংস্কৃতিকে সম্মান করা।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, বাংলাদেশের কোন জিনিসটা তোমার সবচেয়ে ভালো মনে আছে? থমসন হেসে বললো, ‘মশা। তোমাদের বিমানবন্দরে নামতেই দেখলাম বড় বড় মশা কামড়াচ্ছে। তোমাদের দেশের মানুষ অসাধারণ। সবাই আমার সাথে কথা বলতে চায়, কিছু না কিছু খাওয়াতে চায়। এটা আর সারা পৃথিবীতে আমি দেখিনি। আর ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা। তুমি যদি আমার লেখা পড়ো, সেখানে দেখবে আমি বাংলাদেশ নিয়ে লিখেছি।“

থমসনকে বিদায় দেবার পর ইন্টারনেটে তার সর্ম্পকে ও তার লেখাগুলো পড়লাম। অসাধারণ একেকটি গল্প। অসাধারণ তার লেখা। একবার শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না। বিসিবি’র সমালোচনায় একটু খারাপ লেগেছিলো। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট দর্শকদের যে শ্রদ্ধা থমসন করেছেন তার লেখায়, তার প্রতি আমার বিমুগ্ধতা বেড়ে গেল। মনে পড়লো থমসন কথা দিয়েছে, ‘তোমাদের দেশের মানুষ অসাধারণ। আমি সুযোগে পেলে আবারো যাবো বাংলাদেশে’।

সম্প্রতি প্রকাশিত রাইট থমসনের লেখা বই।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:০৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×