আমরা বসবাস করছি আমাদের তৈরি করা কিছু নিয়মনীতির মধ্যে । যেখানে আছে কিছু লিখিত নিয়ম, অলিখিত পিছনের নিয়ম এবং লিখিত নিয়ম না মানার রীতি ও অলিখিত পিছনের নিয়ম মানার রীতি ।
এখন আসল প্রসঙ্গে আসা যাক, এখন একটি শিশুকে তার শিক্ষা জীবন শুরু করতে হয় কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে । কিছু দিন আগ পর্যন্ত একটি শিশুকে তার শিক্ষাজীবনের প্রারম্ভেই মুখোমুখি হতে হত বিশাল এক কর্মযজ্ঞের। একটি কোমল মতি শিশুর জীবনের গুরুত্বপুর্ণ অংশ শুরু হত তারই মত আরও হাজার হাজার শিশুর সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে। বয়সের অনেক আগেই শুরু হয়ে যেত পাল্লা দিয়ে তাদের পড়ালেখা, করতে হত তাদের সাথে প্রতিযোগিতা কে কাকে টপকাতে পারে । যখন সময় মনের আনন্দে খেলার, যা কিছু তা করার তখন তাকে চিন্তা করতে হত কার চেয়ে কত বেশি ওয়ার্ড মুখস্ত করা যায়, কত বেশি সময় পড়া যায়। যখন অভিভাবকদের সময় তার সন্তানের সাথে খেলার, তখন তাকে চিন্তা করতেন কোন কোচিং এ পড়লে তার সন্তা্ন ভর্তি পরিক্ষায় বেশি প্রশ্ন কমন পাবে । কিন্তু এখন এই ব্যবস্থার হয়েছে পরিবর্তন । এসেছে নতুন নিয়ম। এসেছে লটারির মাধ্যমে ভর্তি পদ্ধতি। কিন্ত পরিবর্তন হয়নি কিছু পিছনের নিয়মের । যেমন ভর্তি বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নামিদামী বিদ্যালয়গুলোর উচ্চহারে উন্নয়ন ফি নেয়ার অথবা ডোনেশন বা উৎকোচের।
জানুয়ারি মাস যেটা কিনা আমাদের দেশের কচি বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তির মৌসুম, যে সময়ে কচি কচি বাচ্চারা অপেক্ষা করে নতুন বইয়ের জন্য, যখন বাচ্চারা স্কুলে যাবার স্বপ্নে বিভোর সে সময়ে দেশের নামিদামি বিদ্যালয় অপেক্ষা করছে এই বিশাল ভর্তি বাণিজ্যের জন্য দরকারি লালকলম আর ফি এর রিসিট নিয়ে ।
আর লটারিতে যারা ভর্তির সুযোগ পায় না সেই সব সন্তানের বাবা-মাকে নিতে হয় আশ্রয় যার জন্য অপেক্ষা করছে এলাকার এমপি মন্ত্রীরা এবং স্কুলের সভাপতিরা। তারা বিশেষ কোটায় ভর্তি করিয়ে দিচ্ছে সেই সব সন্তানদের দেশের নামিদামী বিদ্যালয়গুলোতে কিছু কাঞ্চনের বিনিময়ে। এই সময়টা অর্থাৎ ভর্তির মৌসুমটা মিরপুর, ধানমন্ডি, মতিঝিল, গুলশান এলাকার এমপিদের সবচেয়ে খুশির সময়, বলা যেতে পারে ঈদও। কেননা এই সময়েই তাদের হাত উপচে পড়ে কচি কচি বাচ্চাদের অভিভাবকদের কষ্টের টাকায়। তারা তাদের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ায় আর অভিভাবকরা অর্থাৎ আমাদের সচেতন মা-বাবারা তাদের সন্তানদের ভালো স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য খুজতে থাকে এমপি মন্ত্রীদের পরিচিতদের। যেকোনো ভাবে একটি সুপারিশ বা স্কুলে একটি একমিনিটের ফোনকল অথবা কাগজে কিছু লেখা ও ডেজিগনেশনসহ সীলমোহর ও সই। এবং সেই সাথে কিছু উপহার বিনিময়।
যাক ভর্তি শেষ, মা-বাবারা নিশ্চিত সন্তান ভাল স্কুলে ভর্তি হয়েছে। যাক না কিছু টাকাইতো গেলো। সন্তান বড় হলে সুশিক্ষিত হবে, অনেক টাকা রোজগার করবে। এখন আশার শুরু।
কিন্তু মা বাবারা ভাবেন না তার এই সন্তানের জীবন গড়ার পথ তৈরি হয়েছে অবৈধ পথে , তারা ভাবেন না তার সন্তানের শিক্ষাজীবনের পথচলা শুরু হয় কিছু লোভী, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির সুপারিশে। তারা হয়তো ভাবেন না তার এই আদরের সন্তানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ২০,০০০ বা ৩০,০০০ কিংবা ৫০,০০০ টাকার বিনিময়ে প্রাপ্ত একটি ফোনকল অথবা ডেজিগনেশন সহ সইয়ের মাধ্যমে। যখন এই শিশুটি বড় হয়ে জানবে তার জীবনের শুরু এভাবে সে কি শিখবে তার শিক্ষকের কাছে। শিক্ষকের নৈতিকতার বাণী কি তার কানে বাজবে? কেননা সে নিজেই এখানে এসেছে নৈতিকতার দেয়াল ডিঙ্গিয়ে। এই শিশুটির কাছে আমরা কি আশা করতে পারি, কি আশা করতে পারে দেশ, জাতি, সমাজ বা তার পরিবার। এটাই এখন আমাদের প্রশ্ন?
একটি সন্তানের তার নিজের জীবন গড়ার পথটি যখন শুরু হয় অবৈধ ভাবে তার কাছে আর যাই হোক বৈধতা আশা করা যায় না............।।আমরা আশা করতে পারি না। আমাদের আশা করার অধিকার থাকে না......।