বক্ষবন্ধনীর জলিল, জলিলের বক্ষবন্ধনী (মোস্ট ওয়েলকাম ২ – রিভিউ লেখার অপচেষ্টা)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
-আমি দেশে থেইকা ফিরতেসি ৪ তারিখ। এর মইদ্ধে যেমনে পারস টিকেট ম্যানেজ কইরা রাখবি।
-এতো পাগল হইসিস ক্যান? মাত্র তো আসলো হলে; আস্তে ধীরেও তো দেখা যাইব।
-আরে বেটা কইস না; আমি জলিল ভার্জিন।
-(খানিক নিস্তব্ধতা) মানে?
-মানে এহনও হলে গিয়া জলিলের কোন মুভি দেখি নাই। পুরা ৪০ বছর বয়সে ভার্জিন থাকার মতন অবস্থা।
অতঃপর যা হবার তাই। এরে ওরে ফোন করে টরে রশীদ সাহেব আরও দুইজন জোগাড় করিয়া হাজির হইয়া গেলেন বলাকায়। গুনিয়া গুনিয়া চারখানা একশত টাকার নোট খরচা করিয়া সিটে গিয়া বসিয়াও পড়িলাম সকলে।
মুভি শুরু হইল। জনৈক বাঙালি বিজ্ঞানী হাসান মইন খান কোন এক মেডিকেলে বসিয়া গবেষণা করিয়া ক্যান্সারের ভ্যাকসিন (মতান্তরে গিলিয়া খাইবার টিকা, তথ্যসুত্র – বিজ্ঞানীর সংবাদ সম্মেলন) আবিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছেন। উনাকে পাহারা দিবার জন্য একদল পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু গুন্ডারা যখন আক্রমণ করিল; কেউ গুন্ডাদের একখানা পশমও স্পর্শ করিতে পারিলেন না। আবির্ভাব ঘটিল হিরোদের হিরো, চাক নরিসের পিতাজী, রজনীকান্তের গুরু, অসম্ভবকে সম্ভব করা হিরো অনন্ত জলিলের। উনি আসিয়াই ল্যান্ড করিলেন একখানা গাড়ির ছাদে। পাশ হইতে আরও দুইখানা গাড়ি নিউটন সাহেবের মাধ্যাকর্ষণ সুত্রকে পুটু মারিয়া উড়িয়া একটা আরেক্টার সাথে ধাক্কা খাইল। একখানা সানগ্লাস আর দুইখানা বোতাম খোলা জলিল(আরিয়ান) সবাইকে মাটিতে শোয়াইয়া দিলেন বিনা আঁচড়ে।
নিজের আবিষ্কার জনসেবায় কাজে লাগাইবার সঙ্কল্প লইয়া পুরো ফর্মুলা একখানা হার্ডড্রাইভে (জি হ্যা; পেনড্রাইভের দিন কি আর আছে!! দিন বদলাইসে না?) ভরিয়া বিজ্ঞানী সাহেব নিজ গৃহে বিশাল নিরাপত্তার মদ্ধে পিসির কমান্ড প্রম্পটে পাসওয়ার্ড দিয়া লুকাইয়া রাখিলেন। এরই মাঝে দৃশ্যপটে আগমন ঘটিল নায়িকার। বান্ধবীদের সাথে নিজেকে আরিয়ানের মেয়েবন্ধু হিসেবে জাহির করিয়া ভাব নেওয়ার সময় আরিয়ান সাহেব শুনিয়া ফেলিলেন। ছদ্মবেশ লইয়া আবার নায়িকার সাথে এই নিয়া কিঞ্চিৎ রগড়ও করিয়া আসিলেন এর মধ্যে।
পর পর দুইবার বিজ্ঞানীকে নিরাপত্তা প্রদানের পুরস্কার স্বরূপ বিজ্ঞানীর নিরাপত্তার সমস্ত দায়িত্ব তুলিয়া দেওয়া হইল আরিয়ানের হাতে। কিন্তু বিধি বাম। বিজ্ঞানীর নাতনী, নায়িকা বর্ষাকে কিডন্যাপে ব্যর্থ হইয়া তার প্রতিবন্ধী ভাইকে তুলিয়া নিয়া গেল সন্ত্রাসীরা। অতঃপর অতি মূল্যবান বুলেট খরচা না করিয়া গাড়িতে ভরিয়া খাদ হইতে ঠেলিয়া ফালাইয়া দেওয়ার মতন কষ্টসাধ্য সিস্টেমের ভিতর দিয়া যাওয়া লাগলো কিডন্যাপারদের; শুধু মাত্র অল্প কিছু পয়সার অভাবে ! যাই হোক, যা বলতেসিলাম। নায়ক দৌড়াইয়া ঘটনাস্থলে পৌছাইলেন, জলন্ত গাড়ি হইতে হবু শ্যালককে উদ্ধার করিলেন, এবং পিছন ফিরিয়া গাড়িকে ইশারা করিলেন। গাড়ি বিস্ফোরিত হইল।
এর আগে পরে কোন এক সময় নায়িকার মনের মাঝে দুই তিনখানা গানও হইয়া গেল। এত কনফিউশনের মাঝে সবগুলোর হিসাব রাখা সম্ভব হইয়া উঠে নাই। তবে গানের ফটোশপ এর কারদানি দেখিয়া ঠিক করিলাম, বাসায় পৌছাইয়াই আমার প্রথম কাজ হইবে নিজ কম্পিউটার হইতে ফটোশপ সফটওয়ারখানি আনইন্সটল করা। পাশ থেকে বন্ধু অভয় বাণী দিল; ইহা ফটোশপের কাজ না রে পাগলা, মাইক্রসফট পেইন্টের কাজ। আমিও সংকল্প ত্যাগ করিয়া সায় জানাইয়া ২০ কোটি টাকা খরচ হইল কোন দিক দিয়া – ভাবিতে ভাবিতে আবার মুভিতে মনোনিবেশ করিলাম।
এর মাঝে হাজার দশেক সাঙ্গপাঙ্গ লইয়া গুন্ডারা আবার আক্রমণ করিল। এইবার আর শেষ রক্ষা হইল না। বিজ্ঞানীকে পিছু হইতে ধাওয়া দিতেই উনি সুড়সুড় করিয়া হেলিকপ্টারে উঠিয়া বসিলেন। গুন্ডারা তাদের কর্ম হাসিল করিয়া থাই ক্লাবে বিয়ার খাইতে এবং গ্যাঙ্গাম নাচ নাচিতে চলিয়া গেল। এইদিকে চাকুরী হইতে ইস্তফা সহ রিমান্ড – নানা প্রক্রিয়া শেষে নায়ক পরিণত হইলেন ফ্রিল্যান্সারে। পুলিশ রিমান্ডে নিয়া চালাইল অমানুষিক নির্যাতন। তবে আশা এবং আশঙ্কার কথা; সেই নির্যাতন হইতে পালাইয়া আরিয়ান আরও উজ্জ্বল, আরও উন্নতবক্ষা হইয়া চকচকে আয়নার ন্যায় চেহারা লইয়া বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন। পথিমদ্ধে নায়িকার সাথে দেখা। উহাকে লইয়া দিনভর এবং রাতভর কোপাকুপি শেষে একের পর এক মুদি দোকানে আলু পটল কেনার মতন এক একটা ভিলেনকে উপরে পাঠায় দিতে থাকিলেন, উদ্ধার করিয়া আনিলেন বিজ্ঞানীকে, দেশও হাফ ছাড়িয়া বাচিল।
বুলেট পয়েন্ট ১ – দরকারবোধে গানের দৃশ্য না থাকলে নাই। বান্দরবান, কক্সবাজার সহ আমাদের দেশে সুন্দর জায়গার অভাব নাই। এইরকম চুলচামড়া মার্কা এডিটিং দিয়া গানের ব্যাকগ্রাউন্ড বানানোর আইডিয়া ক্যান যে মাথায় আসছে আল্লাহ জানে !
বুলেট পয়েন্ট ২ – দুনিয়ার তাবত একশন সীন স্লো মোশনে দেখাইলেই হলিউড হইয়া যায় না। যেই ফাইট সিন দেখলে ঘুমে ধইরা যায়; তা না রাখাই ভাল।
বুলেট পয়েন্ট ৩ – সাধারণত সাকিব খানের মুভিতেও নায়ক প্রায় সময়েই মাইর খায়; কথায় কথায় মাইর খায়। শেষমেশ উইঠা সব হোতায়া ফালায়। এই মুভিতে একমাত্র রিমান্ড সিন ছাড়া আর কোন সিনে কেউ নায়কের গায়ে একটা আঁচড়ও দিতে পারে নাই; একদম শেষ পর্যন্ত। ব্যাপারটা খুব ইরিটেটিং হয়ে গেসিল এক সময়।
বুলেট পয়েন্ট ৪ – ক্যান্সার যে ছোয়াচে রোগ; এই জিনিস আমি আজকে জানলাম। তাও আবার কুকুরের মাদ্ধমে ক্যান্সার মানুষ এর শরীরে ছড়ায়। এবং ক্যান্সারের জীবাণুর কালার নীল, উহাকে টেস্টটিউবে ভরিয়া রাখা যায় ! পুরো বায়োলজিরই পুটু মেরে দিলেন কাহিনীকার !
বুলেট পয়েন্ট ৫ – সবরি কলার সাইজের লাখ তিনেক গুলি প্রত্যেকটাই জলিল ভাইরে সালাম দিয়া পাশ কাটায় গেল, আর উনার আকাশে চ্যাগায়া উড়তে থাকা অবস্থায় (আমার জিন্দেগিতে কাউরে পরথম আকাশে চ্যাগাইতে দেখলাম ) করা গুলিও মিস হয় না, what kind of sorcery is this !
বুলেট পয়েন্ট ৬ – মোবাইল দিয়া থ্রি জি চালাইয়া কেম্নে সিসিটিভি ইশারা কইরা কন্ট্রোল করে কিছুই বুঝা গেল না !
ডিস্ক্লেইমারঃ ইহা শুধুমাত্রই সিনেমাটা দেখিয়া আমার নিম্নবুদ্ধির খানিকটা রসিকতা ধরণের রিভিউ লেখার চেষ্টা মাত্র। সিনেমাটাকে খাটো করিয়া দেখানোর বা এই ধরণের কোন কিছুরই অভিপ্রায় আমার ছিল না; নাইও। ধন্যবাদ।
৩৪টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন