somewhere in... blog

আদর , তোমার জন্য এ আমার খোলা চিঠি

০৬ ই জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আদর আমার ,
আজ এই মেঘলা আকাশের বাদল দিনে খোলা চিঠি দিলাম ভাসিয়ে ইথারের এক অসীম সীমানায়। এ চিঠি যদি কখনো ভুল করেও তোমার চোখে না পড়ে ক্ষতি নেই কিছু । আমি জানব এ চিঠি তোমার কপোল ছুঁয়ে গেছে , তোমার এলোমেলো চুলে নাড়া দিয়ে গেছে , চোখে জল এনে দিয়ে গেছে তোমার জমিদার বাড়ির সেই পরিপাটি করে সাজানো দোতলার এক হাসনা হেনা ফুলের গন্ধে ভাসা সুন্দর ঘরটিতে বসে ।
আজ আমি বলব , হ্যাঁ সবই খুলে বলব তোমাকে। আজ আর তোমাকে জেরা করতে হবে না সবাইকে লুকিয়ে , তোমাকে বলতে হবে না আমার দু গালে হাত দিয়ে " জান ,সত্যি করে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা ? " আমার বুকে মাথা রেখে তোমাকে আর চোখের জল ফেলে বলতে হবে না , " একটি বার ,শুধু একটি বার বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো "।

প্রিয়তমা আমার
আমি সেদিন বলতে পারিনি , আমার না বলা কত কথা , কত জমানো কষ্ট কত ব্যাথা -বেদনা । আমার বুকটা হাহাকার করে উঠেছে , দুমড়ে-মুচড়ে গেছে অকুল পাথারে ওঠা ঝড়ো তুফানে পড়া এক ভেঙ্গে যাওয়া জাহাজের মতো । আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা তুমি জানতে চেয়েছো ! উহ্ কি করে বোঝাবো আমার বুকের ভেতরে কি হচ্ছে ! লক্ষ লক্ষ দামামা আর হাজারো সাইরেন আমার বুকে করুণ সুরে বেজে উঠেছে মুর্হুমূহু । আমি তোমাকে বলতে পারলাম না। আমার চেয়েও বেশী ভালোবাসতে পারে তোমাকে এ পৃথিবী আর কে আছে ? আমার বুকটা ভেঙ্গে চুরে একাকার হয়ে গেল অথচ চোখে জল এলো না ! আমি খুব শক্ত করে তোমার মুখের ওপর বলে দিলাম , না বাসি না , তোমাকে ঘৃণা করি প্রচন্ড, প্রচন্ড ... তুমি চলে যাও , আর কখনো আমার সামনে এসো না ! কখনো না , ভুল করেও না....আমি তোমার মুখ আর দেখতে চাই না !

আদর আমি কাঁদলাম , কতক্ষণ কাঁদলাম আমি জানি না , সে কান্না আমার আজো শেষ হয়নি , জানি আর কখনো শেষ হবে না , জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমাকে কাঁদতে হবে । আমার পাপের কোন শেষ নেই । কত পাপ করেছি আমি তোমার সঙ্গে। কত ব্যাথা দিয়েছি , কত কাঁদিয়েছি তোমায় কারণে -অকারণে ....। তবু তোমার চোখের জল আমি মুছিয়ে দিইনি । কি দারুণ ব্যাপার তাই না ! আমি তো পুরূষ মানুষ , আমি সব পারি । আমার হৃদয় যে ইস্পাত দিয়ে গড়া , আমি যে সিংহ রাশির পুরুষ , আমাকে কোন মেয়ের সামনে কাঁদলে চলে না , আমাকে হাসতে হবে , উঠে দাড়াতে হবে , সবার সামনে হাসি মুখ নিয়ে খোঁজ খবর রাখতে হবে। বুকের ভেতর যত কষ্টই থাকুক আমাকে এগিয়ে যেতে হবে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত নিয়ে , সিংহের মতো গর্জন করে .......তবেই না আমি সুপুরূষ !

সত্যি তো ? আমি কি আসলেই পুরূষ হতে পেরেছি ? জীবনের আজ এ পর্যায়ে এসে আমাকে কাপুরূষ মনে হয় । না হলে কেন আমি তোমাকে সেদিন ওভাবে ফেলে রেখে পালিয়ে এলাম এই শহরে ? কেন আমি আসার সময় একটিবারও তোমাকে বলে এলাম না ? কেন আমি তোমার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে এলাম না ? সবকিছু জানার পরও তুমি যখন আমার কাছে চলে আসতে চাইলে আমি কেন তোমাকে ঠিকানা দিলাম না ? আমি কেন এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না ? সারাজীবন আমি বলতাম , যারা পাপী তারাই মসজিদ-মন্দিরে যায় প্রার্থনা করতে , তাদের পাপ কমাতে । আমার কথা শুনে তুমি হাসতে , আমাকে বোঝাতে কিন্তু কখনোই আমার ওপর জোর করনি। আজ আমাকে জোর করার মতো কেউ নেই , আজ আমাকে কেউ মন্দিরে যেতে বলে না । আজ আমি নিজেই প্রতি সপ্তাহে একদিন মন্দিরে যাই , আমার পাপের ভার কমাতে , জানি তাতে পাপ কমে না বরং আরো বেড়ে যায় বহুগুন। হায় ভগবান ! অসীম তোমার খেলা , আমাকে পাপী বানিয়েই ছাড়লে , তোমার কাছে নিয়েই ছাড়লে.....নাস্তিক হতে দিলে না !

তোমার কাছে থাকতে তোমার জন্মদিন কবে যেত আমি ঠিক পেতাম না । তুমি আমাকে সারাজীবনই আত্নভোলা মানুষ বলেছো । কোন কিছুই ঠিক মনে রাখতে পারতাম না । অথচ আজ আমার কেমন যেন স্মৃতির পাতায় পাতায় লেখা সবকিছু মনে পড়ছে , কোন কিছুই আমি ভুলতে পারছি না। বুদ্ধদেব গুহর সেই লাইনটি আজ আমার খুব মনে পড়ে - " প্রাসাদ যে আমার একদিন অনুপম ছিল , আজকের ধ্বংসাবশেষই তার প্রমাণ ।" কি নিদারূণ সত্য , কি ভয়ংকর সুন্দর এ বাণী , কি গভীরতা এর মাধুর্যের ! আর সে গভীরেই আজ আমি ডুবে গেলাম ! আজ আমাকে ফেরানোর কেউ নেই , কেউ আজ আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে না , আদর করে আমাকে আজ কেউ মুখে খাবার তুলে দেয় না , আমার জন্য আজ সকালের নাস্তা বানিয়ে কেউ পালিয়ে নিয়ে আসে না , মন্দিরের বেদীতে বসে কেউ আজ আমার জন্য প্রার্থনা করে না , সকাল থেকে সন্ধ্যার বাতাসে আজ আমার জন্য কেউ বসে থাকে না অধীর আগ্রহে.....। কখন আমি আসব , কখন এসে তোমার সামনে ওই সোফাটায় বসব , সেই একটু দেখাতেই তুমি শান্তি পেতে , তোমার হাসি ভরা মুখ দেখে আমার যে কি হতো তা বোঝাতে পারব না । আমি জানি আজও সেই সোফাটা তোমার বেডরুমের একপাশে বসে আছে , ওখানে তুমি ছাড়া আর কারোর বসা নিষেধ। আজো আমার প্রিয় খাবার গুলো তোমার মুখে ওঠেনি । তোমার শ্বশুর বাড়ির সবাই জানেন, অতসব সুন্দর সুন্দর খাবার গুলো তোমার নাকি ভালো লাগে না ! তাহলে বলো সন্ধ্যাবেলায় আমার মুখে কি করে রুটি -কাবাব ওঠে ? কি করে সারাদিনের ক্লান্তির মাঝে আমি কফি খাবো ? কি করে টেংরা -ইলিশ- খাসীর মাংশ , আলপেনলিব চকোলেট , আইসক্রীম , আচার ,আম-কাঠাঁল-লিচু -কুল -আঙ্গুর-আপেল আমার মুখে ওঠে ? আরো কত কি যে আমার জীবন থেকে বাদ হয়ে গেল !

মনে পড়ে এক বৃষ্টি মুখর দিনে তুমি ঠিক এমনই সময় এসেছিলে আমার ঘরে । তুমি গান পছন্দ করতে । গান শুনতে চাইলে , আমি শোনাই নি । তুমি কষ্ট পেয়েছিলে খুব আর তাই বড় অসময় এসে গেল আমার জীবনে । গীটারের তার ছিড়ে গেল । আমি আর সে গীটারে হাত দিইনি আজো । যার জীবন থেকে হারিয়ে গেল দীপশিখা তাকে কিভাবে আর জ্বেলে রাখা যায় !
আমি যখন সময় কাটানোর জন্য অথবা কাজের জন্য বের হয়ে যাই দুরের পথে তখন নীল আকাশের দিকে আমার চোখ চলে যায় । আচ্ছা তুমি তো নীল আকাশ ভালোবাসতে , ওই নীল আকাশের কোন এক মেঘের ফাঁকে তুমি আমাকে লুকিয়ে রাখতে পারো না ? আমার আর এ জীবন ভালো লাগে না , সব কিছু কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে । এই শহরে এত মানুষ , এত কোলাহল , এত ব্যস্ততা , এত মুখ তবু সেই হাজারো মানুষের ভীড়ে একটি প্রিয় মুখ মেলাতে যাই , পারি না । শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আজ আমার কিছু নেই । আমার দীর্ঘশ্বাস তুমি কি এখন শুনতে পাও ? শুনতে না পেলে খুশী হবো খুব , আমি তো তোমার সুখই চেয়েছিলাম ..........।
আমার অপমান তুমি সহ্য করতে পারোনি । তুমি বলেছিলে আমাকে বড় হতে হবে , অনেক বড় , এত বড় হতে হবে যে আমার পা থাকবে মাটিতে কিন্তু মাথা থাকবে উঁচু হয়ে। সমাজের মানুষ আমাকে এক নামে চিনবে । আদর আমি এখন আর কত বড় হবো ........?

সিগারেট আমি কখনো সহ্য করতে পারতাম না । সারা জীবন আমার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মাদকের বিরুদ্ধে বলে এসেছি । পান-বিড়ি-সিগারেটকে না বলেছি অথচ দ্যাখো নিয়তির কি নির্মম পরিহাস , আজ আমার সিগারেটকেই বড় বেশী আপন মনে হয় ! সিগারেটের শেষ আগুনটা এসে যখন আমার আঙ্গুল দুটোকে পুড়িয়ে দেয় তখন মনে হয় শ্মশানের ওই আগুন জ্বলা চিতাটায় সেদিন কেন ঝাঁপ দিলাম না ? আমার সীতাকে , আমার দেবীকে যে কত কাল আগে ,কত যুগ আগে , কি নিদারুণ ভাবে , নিজের হাতে ওখানে তৃতীয়বার শেষ বিসর্জন দিয়েছি !


তোমার বিস্ময়
০৬.০৬.০৮







সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৪
২৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউসুফ সরকার

লিখেছেন তানভীর রাতুল, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৭

নৈতিকতা এবং নীতিবোধ কখনোই আইনের মুখে পরিবর্তিত হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া উচিত নয়”)।

নৈতিকতা ও নীতিবোধ কখনোই সহিংসতা বা আইনী চাপের মুখে বদল হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাক-ভারত যুদ্ধ হলে তৃতীয় পক্ষ লাভবান হতে পারে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৭



সাবেক ভারত শাসক মোগলরা না থাকলেও আফগানরা তো আছেই। পাক-ভারত যুদ্ধে উভয়পক্ষ ক্লান্ত হলে আফগানরা তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করতেই পারে।তখন আবার দিল্লির মসনদে তাদেরকে দেখা যেতে পারে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার গাড়ি কাহিনী

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৬

আমার জীবনে যত শখ আছে, তা একে একে পূরণ করছি। খোদাকে এজন্যে অশেষ ধন্যবাদ। আমার অনেক শখগুলোর একটি হচ্ছে - গাড়ি। আজ কেন যেন মনে হলো, আমার পুরনো আর নতুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

একবারে ৫০টি ফ্রি AI টুলের নাম বাংলায় সিরিয়ালসহ !!

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৪৭

আপনার কাজ হবে আগের থেকে ১০ গুণ দ্রুত!
আপনার দৈনন্দিন কাজকে আরও সহজ, স্মার্ট ও গতিশীল করতে নিচে ৫০টি অসাধারণ ফ্রি AI টুলের তালিকা দেওয়া হলো। এই টুলগুলো ব্যবহার করলে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিদ্যা যদি অন্তরে ধারণ করা না যায় তবে সেটা কোনো কাজে আসে না।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:২৮


ঘটনাটি যেন দুঃস্বপ্নের চেয়েও নির্মম। ধর্মের পথপ্রদর্শক একজন ইমাম, যার কাজ মানুষকে সহনশীলতা, দয়া ও ন্যায়বিচারের শিক্ষা দেওয়া — তিনি নিজেই স্ত্রীর সামান্য বাকবিতণ্ডায় মত্ত হয়ে উঠলেন হত্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×