নেই কেন সেই পাখি, নেই কেন?
নেই কেনো সেই পাখি? সকাল থেকেই আমাকে এই গানে পেয়েছে। হাজারবার মনে হয় গানটা বেজেছে আমার ল্যাপটপে আর আমার মনে। গুন গুন করেছি যে কত শত বার। এই নেই কেনো সেই পাখি নেই কেনো, নেই কেনো সেই পাখি? লাইনটার মাঝে যে প্রশ্ন এবং হাহাকারটা আছে আসলে সেই প্রশ্ন আর হাাহাকারটার সাথে আমার নিজের হাহাকার আর প্রশ্নটা মিলে যায়। তবে প্রশ্ন মিললেও তার উত্তর মেলেনা আর তাই বার বার প্রশ্ন জাগে মনে নেই কেনো সেই পাখি নেই কেনো? নেই কেনো সেই পাখি? তোমাকে জিগাসা করি, তুমি কেনো নেই? তুমি কেনো নেই আমার চারপাশে? আমার নয়ন সন্মুখে? হাত বাড়িয়ে হাতের মুঠোয় ধরতে পারিনা কেনো তোমার হাত? চাইলেই জড়িয়ে ধরা যায় না কেনো তোমাকে ? তুমি নেই কেনো? কেনো নেই পাখি? হাজারও বার এই প্রশ্ন করেছি তোমাকে।
প্রশ্নটা তোমাকে করলেই তুমি অবলীলায় বলে দাও , নেই কেনো? এই প্রশ্ন তো তোমার নিজেরই জানা। কেনো নেই সেটা তোমার নিজের চয়েজ ছিলো। তুমি নিজেই ডিসাইড করেছিলে। এখন আমাকে প্রশ্ন করছো কেনো? নিস্ফল আক্রোশে রেগে যাই আমি প্রায়ই।মাঝে মাঝে খেপেও উঠি, রাগ করে দুদিন কথা বন্ধ রাখি তারপর আর পারি না। সব ভুলে আবার নির্লজ্জের মত কথা বলি যেন কিছুই হয়নি। তুমিও ঠিক তেমনই যেন কিছুই হয়নি। আকাশে বাতাসে অন্তরীক্ষে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া হয় না আমার। আমার হাহাকারের উত্তর গুমরে মরে বুকের মাঝে। আকাশে তাকাই। বাতাসে পাতি কান। আকাশ নিশ্চুপ চেয়ে রয়। বাতাস বয়ে যায় নিজের মনে। তার সময় নেই কারো জন্য। তোমারও সময় নেই এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ভাববার। তুমি চিনেই ফেলেছো আমাকে। তুমি জেনেছোও এই প্রশ্ন শুধু আমারই হবার কথা। তাতে এই বিশ্বসংসারের আর কারো মাথা ব্যথা নেই। তোমারও নেই। নিজেকেই আবার প্রশ্ন করি তাই-
বনে যদি ফুটলো কুসুম
নেই কেন সেই পাখি, নেই কেন?
নেই কেনো সেই পাখি?
কোন সুদূরের আকাশ হতে আনবো?
আনবো তারে ডাকি
নেই কেন সেই পাখি, নেই কেন?
নেই কেন সেই পাখি?
সেই অজানা আকাশ হতে সেই চিরচেনা পাখিটিকে আর ডাকা যায়না। চেনা পাখি আজ অচিন পাখি। সুদূরের আকাশ পথে তার বাস। গান আামাকে খুব প্রভাবিত করে। আর তাই গানের কথা আর সূর হু হু বাঁজে আমার হৃদয় কুঠুরে। আবার এই সূর পাখা মেলে উড়েও যায় ঐ দূর দিগন্তরে। ছড়িয়ে যায়। উড়িয়ে দেয় তার যাবার পথে সূরের রেনুগুলি ব্যথার পরশ হয়ে। হাওয়ার পালকে ভাসে তার রেশ। আমার হৃদয়ে জাগে মর্মস্পর্শি অবাক ভালোবাসা। পুস্পবনে পত্রপল্লবে লাগে তার দোলা। আমি বিমর্ষ হয়ে উঠি। হেমন্তের উদাসী বিকেলের মাতাল হাওয়ায় ওড়ে আমার মন। চারিদিকে এত আনন্দ যজ্ঞ, এত আয়োজন। তবুও আসন্ন শীতের আগমনী সন্ধ্যায় বিষন্ন হই আমি। তুমি কোথাও নেই। কোথাও নেই তুমি। বুকের মধ্যে সূরের কাঁদন। আর-
হাওয়ায় হাওয়ায় মাতন জাগে
পাতায় পাতায় নাচন লাগে গো
এমন মধুর গানের বেলায় সেই
সেই শুধু রয় বাকি-
সবই আছে, সবাই আছে চারপাশ ঘিরে। শুধু তুমিই নেই। যেই তুমি থাকলে এই পৃথিবীটাই হয়ত বদলে যেত। প্রতিটা ভোর শুরু হত খুব অন্যরকম করে। প্রতিটা রাত হয়ে উঠতো স্বপ্নময় জ্যোস্না সুন্দর। সেই অপূর্নতায় ছেয়ে থাকে আমার হৃদয়ে। সেই অপূর্নতা গান হয়ে কাঁদে আমার বুকের মাঝারে। নিজেকে আবারও প্রশ্ন করি। এই অপূর্নতাটাই কি আসলে জীবনের মহা প্রাপ্তি? নয়তো পেয়েও তো কত অপ্রাপ্তি রয়েই যায়। মিথ্যে সান্তনা হয়ত। তবুও কেনো কাঁদে মন ? জাগে হাহাকার ? কোথায় এই মনের ঠিকানা। মনই জানে না।
উদাস করা, হৃদয় হরা
না জানি কোন ডাকে?
সাগরপাড়ের বনের ধারে
কে ভুলালো তাকে?
বিষন্ন হই আমি। আমার মন কেঁদে ফেরে সেই সাগরের পাড়ে, সেই অজানা বনটির ধারে। আমি হারিয়ে ফেলেছি তোমাকে। তুমি আজ বাঁধা অন্য খাঁচায় পাখি। কানে ভাসে সেই মন ভুলানো উদাস করা সূর। যেই সূর ভুলিয়েছে তোমাকে। যেই সূরে ভুলেছো তুমি আমার দেওয়া দুঃখগুলোকে। দূর পাহাড়ের বনের ধারে সেই অচিন দেশের পানে মন ছুটে যায় আমার। জানতে ইচ্ছে করে সেই অচেনা মায়াবিনীকে যে ভুলালো তার যাদয়স্পর্শি গানে আমার সোনার পিঞ্জর খুলে ছেড়ে দেওয়া পাখিটিকে।। আমি উদাস হই। অলখে গড়ি তার বিমূর্ত ছায়া আর কায়া আমার চোখের পাতায়। ভ্রান্তিবিলাসে শুনি তার সেই মন ভুলানো গান। আমার ফাগুন বৃথা বয়ে যায়-
নেই কেনো সেই পাখি???
এই প্রশ্নের যেমন কোনো জবাব নেই। এই ব্যথারও নেই কোনো উত্তর। প্রশ্ন, ব্যথা, দ্বিধা দ্বন্দ, বেদনা ও ব্যকুলতায় কেটে যায় বেলা।
দিন ফুরিয়ে আসে, সময় ঘনায়, অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে আসে। থাকে শেষের অপেক্ষা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:৪৩