somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিলেকোঠার প্রেম-৯

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর ঠিক পরের দিনই কোনো এক ছুটির দিন ছিলো সেদিন। বাসাতেই ছিলাম আমরা দু'জন। সকাল থেকেই আমার ভীষন গরম গরম খিঁচুড়ি আর সেই ধোঁয়া ওঠা খিঁচুড়ির সাথে এক চামচ গাওয়া ঘি আর বেগুন ভাঁজা খেতে ইচ্ছা হচ্ছিলো। সকালে উঠেই রেঁধেও ফেলেছিলাম মুগডাল আর কালিজিরা পোলাও চালের বেশ সুস্বাদূ খিঁচুড়িও। সেই খিঁচুড়ি আর বাসায় বেগুন ছিলো না তাই বেগুনের অভাবে ডিম ভাঁজা খেলাম আমরা দু'জনে আমাদের সেই হার্ডবোর্ড আর মোড়া দিয়ে বানানো টেবিলে বসে। কিন্তু খেয়ে উঠতেই হড়হড় করে সব বমি হয়ে গেলো। আমার অবস্থা দেখে শুভ্র ভীষন ভয় পেয়ে একেবারেই কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়লো। কয়েকদিন ধরেই শরীরটা ভালো যাচ্ছিলো না সেটা সে জানতো তবে আমি সেদিন আন্টির বলা কথাটা একেবারেই চেপে গেছিলাম ওর কাছে। খানিক লজ্জায় আর খানিক সন্দেহে।

আচমকা এ ঘটনার রেশ কাটতেই শুভ্র আমাকে ধুঁইয়ে মুছিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে এক হাতে সব ঘর বাড়ি সাফ করতে শুরু করলো। আমার খুবই লজ্জা লাগছিলো। বারবার বলছিলাম শুভ্র আমি সব ঠিক করছি একটু ওয়েট করো। শুভ্র বললো, একদম চুপ করে শুয়ে থাকো। এত পন্ডিতি করতে হবে না। আমার সত্যিই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো কারণ আমি এমনিতেই বোকার মত কাজ করে ঘরবাড়ি নোংরা করে ফেললাম আবার সেটা এখন শুভ্রকে পরিষ্কার করতে হচ্ছে। ছি ছি কি যে লজ্জা হচ্ছিলো আমার। খুব কষ্ট হচ্ছিলো হঠাৎ ওকে বমির মত এমন নোংরা জিনিসটাই সাফ করতে বাধ্য করে ফেললাম। যাইহোক কিছু করার নেই জোর করে যে ওর থেকে কেড়ে নিয়ে নিজেই কাজে নামবো সে অবস্থাও তখন নেই। উঠতে গেলেই মাথা ঘুরে উঠছিলো।

এরপর দিন দুই পরেই আরেক কান্ড শুভ্রের এক বন্ধু কই থেকে যেন বড় সড় এক ভেটকীমাছ উপহার দিলো। সেটা কেটে কুটে আনলো শুভ্র নিজেই মাছওয়ালা থেকে। কিন্তু রান্নার পর আমার মনে হচ্ছিলো এই বাজে গন্ধের মাছটা তো খাওয়ার অযোগ্য। নিশ্চয় শুভ্রের কোনো শয়তান বন্ধু শুভ্রকে ঠকিয়ে এই পঁচা মাছটাই দিয়েছে। আমি বললাম শুভ্র দেখো মাছটা কি বিচ্ছিরি গন্ধ। শুভ্র বললো, কই নাতো। ঠিকই তো আছে। আমি সে মাছ মুখে তুলতে পারলাম না বরং যতক্ষন শুভ্র খাচ্ছিলো আমি নাক চেপে বসে রইলাম এবং অবাক হয়ে ভাবছিলাম শুভ্র এই বাজে মাছটা খাচ্ছে কিভাবে। তারপর আর পারলাম না। শুভ্রের খাওয়া শেষ হলে বাকী মাছটা কিচেনে গিয়ে জানলা দিয়ে ঐ ডোবার পানিতে চুপি চুপি ফেলে দিলাম। রাতে শুভ্র তো সে কথা শুনে অবাক। ভাবছিলো আমি বুঝি পাগল টাগল হয়ে গেছি।

এর মাঝে আরেক ছুটির দিনে আমরা সাভারে গেলাম। আমাদের সাথে শুভ্রের আরও কয়েকজন বন্ধুও ছিলো। ওর এক বড়লোক বন্ধুর বাবার বাগানবাড়িতেই সেই পিকনিকের আয়োজন হয়েছিলো। পিকনিক ছিলো নামেই আসলে সেটা ছিলো তাদের পুকুরে মাছ ধরার উৎসব। সবাই মিলে বড়শী নিয়ে টোপ লাগিয়ে মাছের আশায় বসে বসে এক গাঁদা চুনোপুটি ধরলো। ধরলো তো ধরলো আবার ছেড়ে দিয়ে আয় তানা মহোৎসাহে সবাই মিলে সেই মাছ ভাগাভাগি করে বাড়ি বয়ে নিয়ে এলো। এখন এই সব মাছ কাঁটবে কে? আমি বাবা কিংবা দাদার জনমেও ছোট মাছ কেনো বড় মাঝারী মেঝ সেজো কোনো মাছই কাটিনি। শুভ্রও জানেনা মাছ কেমনে কাটে। আমি সব রকম স্মৃতি শক্তির পরীক্ষা দিয়ে মনে করতে লাগলাম। ছোট থেকে কেমনে কেমনে কে কবে মাছ কেটেছিলো। নিজের মনকে সান্তনা দিলাম। বাসার কাজের মানুষেরা যদি অনায়াসে বড় বড় রুই কাতলা কেটে ফেলতে পারে। আমি কেনো এত লেখাপড়া শিখে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে এই সামান্য ছোট ছোট চুনোপুটি কাঁটতে পারবোনা? দূর! এটা কোনো একটা ব্যপার হলো?

আমি সেই ভর সন্ধ্যায় কোমরে আঁচল বেঁধে মাছ কাঁটতে বসলাম বড়সড় বটিটা নিয়ে। ওমা এক হাতে ধরি তো আরেক হাতে কই থেকে কুচ করে একটা কাটা ফুটে যায় আবার আরেক হাতে ধরি তো ঐ হাতে কুচ করে কাঁটা ফুটে যায়। আমি তো উহ আহ করতে করতে শেষ মেষ রণে ভঙ্গ দিলাম। আমার করুণ অবস্থা দেখে শুভ্র বললো, থাক বাবা কোনোই দরকার নেই এই দুঃসাহসী কাজ করার। তার থেকে চলো এসব কাউকে দিয়ে দেই। কিন্তু দেবো কাকে? এই ভর সন্ধ্যায় তো কোনো ফকিরও পাওয়া যাবে না। জানি এইখানে পড়তে গিয়ে মা হাসান ভায়ের মনে সবার আগে প্রশ্ন আসবে কাটাকাটির কি দরকার ছিলো ফ্রিজে রেখে দিলেই তো হত। ঢুকিচেপা আপা ভাববে হায়রে নবাব নন্দিনী এত সোজা কাজটাও পারলি না? সামু পাগলা আপু আনমোনা আপু আর মিরর আপু মনে হয় বুঝলেও বুঝতে পারে এই মাছ কাটার সমস্যার কথাটা। যাইহোক সবার জ্ঞাতার্থে বলে রাখি তখনও ফ্রিজ কেনা হয়নি। এত কিছুর পরে ফ্রিজ কেনো কেনা হলো না সেটা আজও এক রহস্য।

সে যাইহোক বলছিলাম যে কথা। শেষ মেষ মাছগুলো পাশের বাসার আন্টিকে দিতে গেলাম। বললাম আন্টি যদিও ক্ষুদ্র জিনিস তবুও আপনাকে দিতে চাচ্ছি এ কারণে আমরা আজ মাছ ধরতে গিয়ে এক রাশ চুনোপুটি ধরে এনেছি। এখন এই মাছ কাঁটতেও জানিনা আর বাসায় ফ্রিজও নেই। তাই আপনাদের কাজের লোক আছে ভাবলাম ওরা কেটে দিলে আপনারা হয়ত মাছগুলো খেতে পারবেন। নয়ত শুধু শুধু নষ্ট হবে তাজা মাছগুলো। উনি হাসলেন। স্নেহময় হাসি। বললেন বেচারা মাছ কাটতে জানোনা তো কি হয়েছে? আমাকে একটু জানালেই তো হত। আমাদের মীনা কেটে দিয়ে আসতো। আমি বললাম না না কোনো দরকার নেই। আপনারাই খেয়ে ফেলেন। আর কষ্ট করে ওকে আমাদের বাসায় পাঠাতে হবে না। উনি বললেন ঠিক আছে কাল দুপুরে এই মাছের চচ্চড়ি রেঁধে খাওয়াবো তোমাকে।

যাহোক অনেক কষ্টে তবুও সেই মাছের একটা সুরাহা হলো কিন্তু কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই মাছের কাঁটা ফোটা আঙ্গুলগুলো কাঁটার বিষে ফুলে ঢোল হয়ে উঠলো। আমি দু হাত নাড়াতেই পারিনা। মাছ কাটতে গিয়ে এমন খুনাখুনি অবস্থা আগে কখনও কোনো মানুষের জীবনের ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই তবে সেই বিভিষিকাময় রাতের কথা মনে পড়লেই আমার দুহাত আর নড়ে না যেন। শুভ্র দুঃখিত মুখে আমার দুহাত কোলে নিয়ে মুখোমুখি বসে রইলো। যেন মাছ ধরে আর সেই মাছ আমি কাটতে গিয়ে হাত ফুলিয়ে ফেলায় সে অনেক বড় অপরাধের কাজ করেছে। রাত গভীর হচ্ছিলো। আমার ঘুম আসছিলো না। ঘুম না আসার কারণ আমার হাতে ব্যথাই শুধু নয়। কারণটা আমার চুল। আমি চুল বেনি না বেধে ঘুমাতে পারিনা। এদিকে হাতের ব্যথায় বেনী করার জো নেই। আবার এলোমেলো খোলা চুলে ঘুমেরও অভ্যাস নেই। আমার সমস্যার কথা শুভ্রকে জানালাম। শুভ্রের মুখ আলোকিত হয়ে উঠলো। যাক এতক্ষনে একটা কিছু করার পেলো যেন আমার জন্য। লাফ দিয়ে উঠে বললো, ওহ এই কথা! নো প্রবলেম আমি তোমার বেনী বেঁধে দিচ্ছি।

তারপর সে চিরুনী আর হেয়ার ব্যান্ড নিয়ে তার মন প্রাণ দিয়ে সেদিন এমন বেনী বাঁধলো। সেই বেঁনীর কথা মনে পড়লেই আমার প্রাণে বাঁজে। মোর বধু যেন বাঁধা থাকে বিনুনী ফাঁদে। হ্যাঁ এখন আর বেনী করিনা আমি। বেনী ছাড়াই এলোচুলে ঘুমাতেও শিখে গেছি। তবুও দৈবে সৈবে বেঁনী বাঁধতে গেলেই শুভ্রের সেই বেঁনী বাঁধার ঘটনাটা মনে পড়ে। শুভ্র বাঁধা পড়ে থাকে আমার বেনীর মাঝেই। হ্যাঁ তার কারণ শুভ্র তার মন প্রাণ দিয়ে লালঝ্যাল করে যে বেনী বাঁধলো সেই বেঁনি দেখে আমি হাসবো কি কাঁদবো ভেবে না পেয়ে মনকে সান্তনা দিলাম আহারে বেচারা থাক এমনিতেই মাছের কারণে হাত ফুলেছে ভেবে নিজেকে দোষী ভাবছে আর এখন আবার বেনীর বও হয়নি জেনে আরও কষ্ট পাবে। সেই ঝ্যালঝেলে বিনুনী নিয়েই কোনোমতে ঘুমাতে গেলাম সেদিন রাতে।

দিন দিন শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো আমার। শুভ্র বললো, তোমার কি হলো বলোতো? বুঝেছি তোমার আসলে এ বাড়িতে ঠিক স্যুট করছে না। আজীবন এসি ছাড়া ঘুমাতেই পারতে না তুমি কিন্তু এখন গরমে ঘেমে নেয়ে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসো। নিজের বাড়িতে এক গ্লাস জল গড়িয়ে খাওনি আর এখন মাথার রাজ্যের কাজ নিয়ে ঘুরে বেড়াও। একই সাথে জব করছো ঘরবাড়ি সামলাচ্ছো। নাহ হুট করে আসলেই তোমার এই ভ্যাগাবন্ডকে বিয়ে করে ফেলাটা মোটেও ঠিক হয়নি। কাল থেকে তুমি আর কোনো কাজ করবে না। আমি সব কাজ করবো যতদিন আমার জব না হয়। আর তুমি শুধু আরাম করবে মহারাণী। আমি হাসতে হাসতে মারা যাচ্ছিলাম শুভ্রের কথা শুনে। বললাম কাল সকালে তুমি তাহলে হাতে বানানো রুটি বানাবে ওকে? আর সাথে সুজির হালুয়া। তারপর সিদ্দিকা কবিরের বইটা এনে দিলাম হাতে। বললাম এই নাও এখনই রুটি র সুজির হালুয়া কেমনে বানাতে হয় শিখে রাখো।

শুভ্র বললো, ফাজলামো না চলো কালই আমরা ডক্টরের কাছে যাই তোমার একটা চেক আপ দরকার। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। নাহ এভাবে চলবে না। শেষে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি শুনলে বলবে কি দায়িত্বজ্ঞানহীনরে বাবা মেয়ের এত বড় অসুখ কিন্তু ডক্টরের কাছে নিলোনা ? নাহ কালই উনাদেরকে একটা ফোন করতে হবে। জানাতে হবে তোমার শরীরটা ভালো নেই। আমি ওর মুখ চেপে ধরলাম। এ্যই না, খবরদার না। বাবা মাকে কিছু জানাতে হবে না। আমি ঠিক হয়ে যাবো। আমার কিছু হয়নি। নয়ত এতদিন কোনো খবর নেই এখন যদি বিপদে পড়ে জানাতে যাই তো ভাববেন এখন বিপদে পড়ে এসেছেন ছুটে। শুভ্র বললো, এত ইগো কিন্তু ভালো না। হাজার হোক মা বাবাই তো। চলো আমরা দেখা করি গিয়ে। আমি বললাম আচ্ছা সে পরে দেখা যাবে। এখন যাও ফ্রেশ হাউজে। মুড়ি আর গুড় কিনে আনো। আমার এখন মুড়ি আর গুড় খেতে ইচ্ছা হচ্ছে। শুভ্র হা করে তাকিয়ে রইলো। মুড়ি আর গুড় আমার খেতে ইচ্ছে করছে দেখে সে এমন হা তাকিয়ে রইলো নাকি ভাবছিলো হঠাৎ আমার এমন খাই খাই স্বভাব হলো কেমনে তাই বুঝি।

এইভাবে কিছুদিন চলার পর একদিন আবারও মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। কিচেনে মাছ ভাঁজছিলাম। এত দেখে শুনে ফ্রেশ মাছ কিনে এনে ভাঁজতে বসলাম আর সেই মাছ থেকে হঠাৎ এমন বিদঘুটে গন্ধ! পুরোই ভূতুড়ে ব্যপার। ভাবতে না ভাবতেই টলে উঠলো মাথাটা। তারপর আর কিছু মনে নেই আমার। জ্ঞান ফিরলো যখন ততক্ষনে তুলকালাম হয়ে গেছে। বাসার কাছেই এক ক্লিনিকের বেডে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। আর চোখ মেলতেই দেখলাম মা আমার মুখে ঝুকে আছে আর বাবা গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে কিছুটা দূরে। আর শুভ্র আর এক কোনায় কাচুমাচু দাঁড়িয়ে এক অপরাধীর মত। থ্রি কোয়ার্টার বাসায় পরা প্যান্ট আর কুচকানো গোলাপী গেঞ্জিটাই পরা। এই দৃশ্য দেখে এত কিছুর মাঝেও আমার ভীষন হাসি পেলো। হাসি পেলো এটা ভেবে আমার কেতাদূরস্ত পিতা তার জামাই এর জামা কাপড়ের এই ছিরি দেখে হার্ট এটাক যে করেননি এই বেশি। কিন্তু মুখখানা আষাড়ের আঁধার। হঠাৎ আমার বাবার মুখের সাথে আমার শ্বাশুড়ি মায়েরও আমাকে প্রথম দেখে আষাঢ়ের আঁধারের সেই মুখের সাথে মিল খুঁজে পেলাম আমি।

কিন্তু ভাবনায় ছেদ পড়লো। হঠাৎ মা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেললেন। বাবা বিরক্ত মুখে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অন্য সময় হলে মায়ের এমন কান্নায় ধমকে উঠতেন হয়ত। কিন্তু আজ কেনো যেন কিছুই বললেন না। হয়ত আমার দেওয়া এই আঘাত মায়ের বুকে শেলের মত বিঁধেছে সে কথা তিনি ততদিনে বুঝে গেছেন। মা বললেন আমি কিছুদিন তোমাকে আমার কাছে রাখতে চাই। আমার সাথে চল। শুভ্র কিছু বলছিলোনা। আমি ওর দিকে তাকালাম। মা বা বাবা কেউই শুভ্রের দিকে না তাকিয়েই কথা বলছিলেন। মা বাবাকে বললেন আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই। বাবা চুপ করে রইলেন। তবে সে মুখে মৌনতাই সন্মতির লক্ষন। আমি বুঝলাম উনারা শুভ্রকে পুরোপুরি উপেক্ষা করছেন। আমি বললাম মা তুমি চিন্তা করো না। আমি হুট করে চলে গেলে শুভ্র একা থাকবে। আমরা দুদিনের মাঝেই দুজন তোমার সাথে দেখা করে আসবো। থেকেও আসবো কয়েকদিন তোমাদের বাড়িতে। এখন থাক। আমি কথা দিচ্ছি দুদিনের মাঝেই আসবো আমি।

এ কথা শুনে মা কিছুক্ষন নতমুখে বসে রইলেন। বাবা তাড়া লাগালেন। ঠিক আছে চলো তাহলে। এখন তো ও সুস্থ্য আছে । যাইহোক ডক্টর কতগুলো টেস্ট দিয়েছে। সেসব টেস্ট করিয়ে ফেলো তাড়াতাড়ি। সব বিল দেওয়া আছে। টেস্ট করেই চলে আসো বাড়িতে। বাবা বেরিয়ে গেলেন। সাথে মাও। বাবা এমন করে বললেন যেন আমি কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলাম। আবার ফিরে যাই যেন। আর সব বিল এডভ্যান্স দিয়ে দেবার কথাটাতেও আমার চরম অপমান হলো। এ অপমান আমার না। শুভ্রের জন্য অপমান। ওর মুখটা ছোট হয়ে গেছে।
শুভ্র কখনও কারো অপমান গায়ে মাখেনা ঠিকই কিন্তু বুঝতে তো পারে। নার্স এক গাদা অষুধ টষুধ নিয়ে রুমে ঢুকলো। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো শুভ্রের জন্য। ইচ্ছে করছিলো ওকে বুকে জড়ি্যে ধরি। ওর সব কষ্ট দুঃখ অপমান শুষে নেই যা বাবা আজ দিয়ে গেলো তাকে খুব অবলীলায় কয়েকটি মাত্র কথার ভেতরেই।

নার্সের কথায় ঘোর কাটলো। নার্স বললো, এখন রোগী সুস্থ্য আছে। বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। প্রেগনেন্সী টেস্ট দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত উনি প্রেগনেন্ট। ভয়ের কিছু নেই। নার্সের কথা শুনে আমার মাথা লজ্জায় হেট হয়ে গেলো। শুভ্র বোকার মত হা করে তাকিয়ে ছিলো আমার মুখের দিকে। আমি বোকা বোকা মুখ করে বললাম, চলো বাসায় ফিরে যাই.....
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৩
৪০টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×